০৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪

তারল্য সংকট কাটাতে দৈনিক ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ধার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১০৩৪৭ বার দেখা হয়েছে

নগদ অর্থের সংকট মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একদিনে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। বাকি ৪৩১ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে রেপো সুবিধার আওতায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমা সমন্বয় ও গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই মূলত এ অর্থ ধার করা হয়। এর মধ্যে তারল্য সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংক ধারের সিংহভাগ অর্থ নিচ্ছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে পড়েছিলো। বর্তমানে অধিকাংশ দেশ সংকট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো মূল্যস্ফীতি কমানো সহ কোনো ক্ষেত্রেই ভালো ফলাফল ঘরে আনতে পারে নি। বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে একসাথে বেড়েছিলো বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের দাম। অন্যান্য দেশ ডলারের দামে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ দেখিয়েছে। বাংলাদেশে এখনো ডলারের দাম বৃদ্ধির দিকে। ডলার কেনা-বেচায় অনেক ব্যাংক মানছে না আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা।

সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণও বেড়েছে। এরফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে।

আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকে আমানত জমা হচ্ছে কম, ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময় ধরেই তারল্য সংকটে ভুগছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি আর খেলাপি ঋণ। এ অবস্থায় অনেক ব্যাংকই তাদের মূলধন পর্যাপ্ততা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক দায়দেনা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের তুলনায় যার পরিমাণ ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ঋণপত্রের একটি অংশ ইতোমধ্যে ফোর্স ঋণে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা।

আরও পড়ুন: ৫০ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার: এডিবি

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এভাবে ধার করা একটি রুটিন প্র্যাকটিস, যা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। ২০২২ সালেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, স্পেশাল রেপো এবং লিকুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপকভাবে তারল্যের জোগান দিয়েছে। তারল্য সহায়তার আওতায় ব্যাংকগুলোয় এরই মধ্যে অর্থের জোগান বাড়ানো হয়েছে।

দেশের অর্থনীতি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়লেই আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। আবার দেশের সরকারও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অধিকাংশ ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিচ্ছেন। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর সরকারকে ঋণ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে।

সমাপ্ত অর্থবছর সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রেকর্ড ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে পুরো অংশই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া। ওই অর্থবছর ৯৭ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ঋণ নেয় সরকার। ডলার বিক্রি ও সরকারকে ঋণ দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বেশি আয় করে।

বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক রেকর্ড ডলার বিক্রি করে। এসময় রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিলো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

ঢাকা/টিএ

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

তারল্য সংকট কাটাতে দৈনিক ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ধার

আপডেট: ০৭:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

নগদ অর্থের সংকট মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একদিনে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। বাকি ৪৩১ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে রেপো সুবিধার আওতায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ জমা সমন্বয় ও গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই মূলত এ অর্থ ধার করা হয়। এর মধ্যে তারল্য সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংক ধারের সিংহভাগ অর্থ নিচ্ছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে পড়েছিলো। বর্তমানে অধিকাংশ দেশ সংকট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো মূল্যস্ফীতি কমানো সহ কোনো ক্ষেত্রেই ভালো ফলাফল ঘরে আনতে পারে নি। বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে একসাথে বেড়েছিলো বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের দাম। অন্যান্য দেশ ডলারের দামে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ দেখিয়েছে। বাংলাদেশে এখনো ডলারের দাম বৃদ্ধির দিকে। ডলার কেনা-বেচায় অনেক ব্যাংক মানছে না আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা।

সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশে। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণও বেড়েছে। এরফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে।

আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকে আমানত জমা হচ্ছে কম, ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘ সময় ধরেই তারল্য সংকটে ভুগছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি আর খেলাপি ঋণ। এ অবস্থায় অনেক ব্যাংকই তাদের মূলধন পর্যাপ্ততা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক দায়দেনা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের তুলনায় যার পরিমাণ ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ঋণপত্রের একটি অংশ ইতোমধ্যে ফোর্স ঋণে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা।

আরও পড়ুন: ৫০ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার: এডিবি

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এভাবে ধার করা একটি রুটিন প্র্যাকটিস, যা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। ২০২২ সালেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, স্পেশাল রেপো এবং লিকুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপকভাবে তারল্যের জোগান দিয়েছে। তারল্য সহায়তার আওতায় ব্যাংকগুলোয় এরই মধ্যে অর্থের জোগান বাড়ানো হয়েছে।

দেশের অর্থনীতি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়লেই আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। আবার দেশের সরকারও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অধিকাংশ ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিচ্ছেন। সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর সরকারকে ঋণ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে।

সমাপ্ত অর্থবছর সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রেকর্ড ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে পুরো অংশই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া। ওই অর্থবছর ৯৭ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ঋণ নেয় সরকার। ডলার বিক্রি ও সরকারকে ঋণ দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বেশি আয় করে।

বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক রেকর্ড ডলার বিক্রি করে। এসময় রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিলো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

ঢাকা/টিএ