০১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মায় পিনাক-৬ এর ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনার আজ ৭ বছর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অগাস্ট ২০২১
  • / ৪১৭০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আজ পিনাক-৬ দুর্ঘটনার ৭ বছর। আজকের এই দিনে পদ্মায় স্মরণকালের ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। সরকারি হিসাবে, এতে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৬৪ জন।

উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। সাত বছরেও তাদের কারও পরিচয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। আজও পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন যাত্রীরা।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট সময়টা ছিল ঈদ-পরবর্তী দিন। কর্মস্থলে ফেরা আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে (বর্তমান বাংলাবাজার-শিমুলিয়া) পদ্মা নদীতে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট এমভি পিনাক-৬ ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ডুবে মারা যান শতাধিক যাত্রী।

আর তাই ঈদ আসলেই পিনাক ডুবিতে নিহতের স্বজনের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কোনো কোনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সন্তান হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা আজ সহায়হীন। অনাদরে বেঁচে আছেন মৃতের মতো পড়ে থেকে।

শিবচরে পিনাক ৬ ডুবিতে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, এই দিনটিতে তারা হারানো স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য দোয়া-মাহফিল করে থাকেন। মিলাদ-মাহফিল এর মাধ্যমে স্মরণ করেন তাদের। নীরব-নিস্তব্ধ বাড়ির চারপাশজুড়ে যেন বিষাদের ছায়া।

পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর এলাকার মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন। এমনই আরেক পরিবার উপজেলার সন্যাসীচর ইউনিয়ের দৌলতপুর গ্রামের। ঢাকায় ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পিনাক-৬ ডুবির দুর্ঘটনায় মারা যান ফরহাদ মাতব্বর। স্ত্রী শিল্পী, এক বছরের সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লালসহ মারা যান তারা। যাদের লাশও শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

শিবচরের কাদিরপুর এলাকার দুই বোন ও তাদের এক খালাতো বোনেরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাবার সঙ্গে ঢাকা ফিরছিল তারা। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর পদ্মার প্রবল স্রোতে ঠেলে বাবা ভেসে উঠতে পারলেও সন্তানদের আর বাঁচাতে পারেনি। বছরের এই সময়টায় স্বজন হারানো শিবচরের ১২ থেকে ১৪টি পরিবারে নতুন করে জাগিয়ে দেয় স্বজন হারানোর বেদনা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

নিহত হীরার বাবা আব্দুল জলিল মাতব্বর জানান, মেয়ে হারানো বেদনা এখনো কাঁদায়। আমি চাই আমার মতো যেন কোনো বাবাকে এভাবে মেয়েকে হারাতে না হয়। তাছাড়া লঞ্চ মালিকদের অনুরোধ করব, যাতে তারা তাদের লঞ্চের ধারণক্ষমতার বাইরে কোনো যাত্রী না তোলে এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারি যেন থাকে।

মাদারীপুর বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর আক্তার হোসেন জানান, পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর খুব সাবধানতার সাথে লঞ্চ চলাচল করা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী ওঠানো হয় না। এছাড়াও ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হয় না।

শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান জানান, ‘পিনাক-৬ ডুবিতে উদ্ধারকৃত যে সব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তা পৌর কবরস্থানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে দাফন করা হয়। তবে এ পর্যন্ত লাশের খোঁজে কেউ আসেনি।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, পিনাক ৬ ডুবিতে অনেকেই মারা গেছেন। লঞ্চ ডুবিতে নিখোঁজও হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। আমরা সব সময়ই লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যাত্রী পারাপার না করতে।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

পদ্মায় পিনাক-৬ এর ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনার আজ ৭ বছর

আপডেট: ১২:৫৯:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আজ পিনাক-৬ দুর্ঘটনার ৭ বছর। আজকের এই দিনে পদ্মায় স্মরণকালের ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। সরকারি হিসাবে, এতে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৬৪ জন।

উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। সাত বছরেও তাদের কারও পরিচয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। আজও পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন যাত্রীরা।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট সময়টা ছিল ঈদ-পরবর্তী দিন। কর্মস্থলে ফেরা আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে (বর্তমান বাংলাবাজার-শিমুলিয়া) পদ্মা নদীতে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট এমভি পিনাক-৬ ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ডুবে মারা যান শতাধিক যাত্রী।

আর তাই ঈদ আসলেই পিনাক ডুবিতে নিহতের স্বজনের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কোনো কোনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সন্তান হারিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা আজ সহায়হীন। অনাদরে বেঁচে আছেন মৃতের মতো পড়ে থেকে।

শিবচরে পিনাক ৬ ডুবিতে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, এই দিনটিতে তারা হারানো স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য দোয়া-মাহফিল করে থাকেন। মিলাদ-মাহফিল এর মাধ্যমে স্মরণ করেন তাদের। নীরব-নিস্তব্ধ বাড়ির চারপাশজুড়ে যেন বিষাদের ছায়া।

পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর এলাকার মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান লঞ্চডুবিতে মারা গেছেন। এমনই আরেক পরিবার উপজেলার সন্যাসীচর ইউনিয়ের দৌলতপুর গ্রামের। ঢাকায় ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পিনাক-৬ ডুবির দুর্ঘটনায় মারা যান ফরহাদ মাতব্বর। স্ত্রী শিল্পী, এক বছরের সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লালসহ মারা যান তারা। যাদের লাশও শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

শিবচরের কাদিরপুর এলাকার দুই বোন ও তাদের এক খালাতো বোনেরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাবার সঙ্গে ঢাকা ফিরছিল তারা। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর পদ্মার প্রবল স্রোতে ঠেলে বাবা ভেসে উঠতে পারলেও সন্তানদের আর বাঁচাতে পারেনি। বছরের এই সময়টায় স্বজন হারানো শিবচরের ১২ থেকে ১৪টি পরিবারে নতুন করে জাগিয়ে দেয় স্বজন হারানোর বেদনা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

নিহত হীরার বাবা আব্দুল জলিল মাতব্বর জানান, মেয়ে হারানো বেদনা এখনো কাঁদায়। আমি চাই আমার মতো যেন কোনো বাবাকে এভাবে মেয়েকে হারাতে না হয়। তাছাড়া লঞ্চ মালিকদের অনুরোধ করব, যাতে তারা তাদের লঞ্চের ধারণক্ষমতার বাইরে কোনো যাত্রী না তোলে এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারি যেন থাকে।

মাদারীপুর বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর আক্তার হোসেন জানান, পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর খুব সাবধানতার সাথে লঞ্চ চলাচল করা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী ওঠানো হয় না। এছাড়াও ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হয় না।

শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান জানান, ‘পিনাক-৬ ডুবিতে উদ্ধারকৃত যে সব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তা পৌর কবরস্থানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে দাফন করা হয়। তবে এ পর্যন্ত লাশের খোঁজে কেউ আসেনি।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, পিনাক ৬ ডুবিতে অনেকেই মারা গেছেন। লঞ্চ ডুবিতে নিখোঁজও হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। আমরা সব সময়ই লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যাত্রী পারাপার না করতে।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: