০৮:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পিকে হালদারের প্রতারণার ফাঁদে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১
  • / ৪৮০৭ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স থেকে লুটপাট হয় দুই হাজার কোটি টাকা। শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে মর্টগেজ ছাড়াই ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। কোম্পানিগুলো হলো : ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।

জানা গেছে, আরবি এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম অ্যান্ড তালহা এন্টারপ্রাইজ, ক্রসরোড কর্পোরেশন, মেরিন ট্রাস্ট, নিউটেক, এমএসটি মেরিন, গ্রিন লাইন ডেভেলপমেন্ট, মেসার্স বর্ণসহ প্রায় ৩০টির মতো অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যার রেকর্ডপত্র এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিমের কাছে। এ অনিয়মের সঙ্গে পিকে হালদার, ওইসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ প্রায় ৭৫ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। তাদের আসামি করে আরও ৩০টি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে। পিকে হালদার সিঙ্গাপুর, ভারত এবং কানাডায় চার শতাধিক কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স প্রায় ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মর্টগেজ ছাড়াই প্রায় ২০০০ কোটি টাকা জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রদানের রেকর্ডপত্র পাওয়া গেছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে ভিন্ন খাতে ওই অর্থ বের করে নেওয়া হয়। ওই ঋণ পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডিসহ প্রায় ৭৫ জনকে আসামি করার মতো প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কাগুজে-ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি করে নেওয়া এসব ঋণের অর্থ নানা পর্যায় পেরিয়ে যোগ হতো পিকে হালদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এমনই এক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান কনিকা এন্টারপ্রাইজ। গুলশান এভিনিউ নর্থ বাণিজ্যিক এলাকায় ঠিকানা ব্যবহার করা কনিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক দেখানো হয়েছে রাম প্রসাদ রায়কে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৫ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ মঞ্জুর করা হয়। অথচ পিকে হালদারের মালিকানাধীন ২৫.৬০ কোটি টাকা মূল্যের ২০০ শতাংশ জমি বন্ধক হিসেবে দেখানো হয়। ঋণের বিপরীতে হিসাবটিতে কোনো আদায় বা বিক্রয় লব্ধ অর্থ জমা প্রদান করার নজির পায়নি দুদকে।

আরেকটি প্রতিষ্ঠান মুন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ শংখ বেপারীর মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১৭৬তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় ৩৫ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ মঞ্জুর হয়। এখানেও ঋণের বিপরীতে প্রশান্ত কুমার হালদারের মালিকানাধীন প্রায় ১৯.৩৪ কোটি টাকার মূল্যে ১৫০ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়। অবাক করার বিষয় এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও কনিকা এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা একই। এখানেও ঋণের বিপরীতে হিসাবটিতে কোনো আদায় বা বিক্রয় লব্ধ অর্থ জমা প্রদান করার নজির ছিল না।

ঢাকা/এইচকে

শেয়ার করুন

x
English Version

পিকে হালদারের প্রতারণার ফাঁদে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি

আপডেট: ০৯:৩২:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও তার সহযোগীদের যোগসাজশে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স থেকে লুটপাট হয় দুই হাজার কোটি টাকা। শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে মর্টগেজ ছাড়াই ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। কোম্পানিগুলো হলো : ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।

জানা গেছে, আরবি এন্টারপ্রাইজ, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম অ্যান্ড তালহা এন্টারপ্রাইজ, ক্রসরোড কর্পোরেশন, মেরিন ট্রাস্ট, নিউটেক, এমএসটি মেরিন, গ্রিন লাইন ডেভেলপমেন্ট, মেসার্স বর্ণসহ প্রায় ৩০টির মতো অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যার রেকর্ডপত্র এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিমের কাছে। এ অনিয়মের সঙ্গে পিকে হালদার, ওইসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ প্রায় ৭৫ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। তাদের আসামি করে আরও ৩০টি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে। পিকে হালদার সিঙ্গাপুর, ভারত এবং কানাডায় চার শতাধিক কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স প্রায় ৩০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মর্টগেজ ছাড়াই প্রায় ২০০০ কোটি টাকা জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রদানের রেকর্ডপত্র পাওয়া গেছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে ভিন্ন খাতে ওই অর্থ বের করে নেওয়া হয়। ওই ঋণ পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডিসহ প্রায় ৭৫ জনকে আসামি করার মতো প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কাগুজে-ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি করে নেওয়া এসব ঋণের অর্থ নানা পর্যায় পেরিয়ে যোগ হতো পিকে হালদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এমনই এক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান কনিকা এন্টারপ্রাইজ। গুলশান এভিনিউ নর্থ বাণিজ্যিক এলাকায় ঠিকানা ব্যবহার করা কনিকা এন্টারপ্রাইজের মালিক দেখানো হয়েছে রাম প্রসাদ রায়কে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৫ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ মঞ্জুর করা হয়। অথচ পিকে হালদারের মালিকানাধীন ২৫.৬০ কোটি টাকা মূল্যের ২০০ শতাংশ জমি বন্ধক হিসেবে দেখানো হয়। ঋণের বিপরীতে হিসাবটিতে কোনো আদায় বা বিক্রয় লব্ধ অর্থ জমা প্রদান করার নজির পায়নি দুদকে।

আরেকটি প্রতিষ্ঠান মুন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ শংখ বেপারীর মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১৭৬তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় ৩৫ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ মঞ্জুর হয়। এখানেও ঋণের বিপরীতে প্রশান্ত কুমার হালদারের মালিকানাধীন প্রায় ১৯.৩৪ কোটি টাকার মূল্যে ১৫০ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়। অবাক করার বিষয় এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও কনিকা এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা একই। এখানেও ঋণের বিপরীতে হিসাবটিতে কোনো আদায় বা বিক্রয় লব্ধ অর্থ জমা প্রদান করার নজির ছিল না।

ঢাকা/এইচকে