১২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ফারইস্টকে পুনরুদ্ধারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত-নিরীক্ষার সুপারিশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:২০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুন ২০২১
  • / ৪১৬৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মন্দ ঋণ ও লোকসানের ভারে নিমজ্জিত শেয়ারবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।  দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছেন না। একসময়ের মুনাফায় থাকা কোম্পানির এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরির লোকসানি কোম্পানি।

আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোম্পানিটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে সম্প্রতি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন ও আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই কোম্পানিতে সংগঠিত সব দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে অতিসত্বর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এ দুরবস্থার পেছনে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনাসহ ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে পুনরুদ্ধারে ৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।  দ্রুত এই ব্যবস্থা কার্যকর না করলে আর্থিক খাতে আরেকটি বড় রকমের কেলেঙ্কারির ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।  এতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আর্থিক খাতের আশঙ্কার এই বিষয়টি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অবহিত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

চিঠিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণের উদ্দেশ্যে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ টিমের মাধ্যমে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে কোম্পানির সামগ্রিক আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতির পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ পূর্বক উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সূত্র জানায়, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ২৯ মার্চ বিএসইসি কর্তৃক সাবেক সিনিয়র সচিব ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল মকবুলের নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। একইসঙ্গে বিএসইসির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ওই কোম্পানির আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অডিট কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা জারি করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়,  কোম্পানির  সামগ্রিক আর্থিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। এমনকি পিকে হালদারের কোম্পানিকেও বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছে।  এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতিসত্বর বিএসইসি এবং দুদকের তদন্ত করা প্রয়েজন।  আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটির এ দুরবস্থার পেছনে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম ভরসা, পূর্বতন চেয়ারম্যান এম এ খালেক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রফিকুল আলম, কোম্পানি সচিব নাজমুন নাহারে চরম আর্থিক অনিয়মের মুখ্য ভূমিকা দৃশ্যমান।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সমন্বিত লোকসানের পরিমাণ ১৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে শুধু ২০১৯ সালে।  এছাড়া বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩২৩ কোটি টাকা বাবদ দেনা রয়েছে। ওই ঋণের বিপরীতে প্রতি কোয়ার্টারে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর কল লোন ২৩.১২ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিতে প্রায় ৩২২ কোটি টাকা, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮৬ কোটি প্রায় এবং সাধারণ আমানতকারীদের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ ও অপরিশোধিত সুদ বাবদ আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় ৭৯০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেনা রয়েছে।

এদিকে, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০১ সালে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর থেকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালোই ছিল। তবে ২০১৭ সাল থেকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে।  সর্বশেষ তিন বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।  এ পরিস্থিতির  জন্য কোম্পানির সাবেক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যর্থতা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএসইসিকে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি।  কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি।  কমিশন সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সান্তনু সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।  তাই এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করব না।’

ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কোম্পানি সচিব নাজমুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার।  কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব পালন করার কারণে আমি অথরাইজড সিগনেটরি ছিলাম।  তাই বেশ কিছু জায়গায় আমার স্বাক্ষর থাকতে পারে।  তবে আমি ব্যক্তিগত স্বর্থ হাসিলের জন্য একটি টাকাও হেরফের করি নাই। তাই দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি উন্মোচনের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম ভরসা ও পূর্বতন চেয়ারম্যান এম এ খালেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা মোবাইল ফোন ধরেননি।  ফাররইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জারিয়াব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’

১৬৪ কোটি ৬ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ১১৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ঋণাত্মক রিজার্ভ রয়েছে। আর কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৪১.৮৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১২.৪২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ০.০৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.৬৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বুধবার (৮ জুন) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৩.৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।সূত্র:রাইজিংবিডি

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

ফারইস্টকে পুনরুদ্ধারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত-নিরীক্ষার সুপারিশ

আপডেট: ১২:২০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মন্দ ঋণ ও লোকসানের ভারে নিমজ্জিত শেয়ারবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।  দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছেন না। একসময়ের মুনাফায় থাকা কোম্পানির এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরির লোকসানি কোম্পানি।

আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোম্পানিটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে সম্প্রতি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন ও আর্থিক বিবরণী বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই কোম্পানিতে সংগঠিত সব দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে অতিসত্বর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এ দুরবস্থার পেছনে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনাসহ ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে পুনরুদ্ধারে ৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।  দ্রুত এই ব্যবস্থা কার্যকর না করলে আর্থিক খাতে আরেকটি বড় রকমের কেলেঙ্কারির ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।  এতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আর্থিক খাতের আশঙ্কার এই বিষয়টি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অবহিত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

চিঠিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণের উদ্দেশ্যে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ টিমের মাধ্যমে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে কোম্পানির সামগ্রিক আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতির পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ পূর্বক উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সূত্র জানায়, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ২৯ মার্চ বিএসইসি কর্তৃক সাবেক সিনিয়র সচিব ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল মকবুলের নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। একইসঙ্গে বিএসইসির নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ওই কোম্পানির আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অডিট কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা জারি করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়,  কোম্পানির  সামগ্রিক আর্থিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। এমনকি পিকে হালদারের কোম্পানিকেও বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছে।  এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতিসত্বর বিএসইসি এবং দুদকের তদন্ত করা প্রয়েজন।  আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটির এ দুরবস্থার পেছনে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম ভরসা, পূর্বতন চেয়ারম্যান এম এ খালেক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রফিকুল আলম, কোম্পানি সচিব নাজমুন নাহারে চরম আর্থিক অনিয়মের মুখ্য ভূমিকা দৃশ্যমান।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সমন্বিত লোকসানের পরিমাণ ১৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে শুধু ২০১৯ সালে।  এছাড়া বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩২৩ কোটি টাকা বাবদ দেনা রয়েছে। ওই ঋণের বিপরীতে প্রতি কোয়ার্টারে ২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর কল লোন ২৩.১২ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিতে প্রায় ৩২২ কোটি টাকা, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮৬ কোটি প্রায় এবং সাধারণ আমানতকারীদের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ ও অপরিশোধিত সুদ বাবদ আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় ৭৯০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেনা রয়েছে।

এদিকে, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০১ সালে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর থেকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালোই ছিল। তবে ২০১৭ সাল থেকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে।  সর্বশেষ তিন বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।  এ পরিস্থিতির  জন্য কোম্পানির সাবেক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যর্থতা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএসইসিকে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি।  কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি।  কমিশন সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সান্তনু সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।  তাই এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করব না।’

ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কোম্পানি সচিব নাজমুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার।  কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব পালন করার কারণে আমি অথরাইজড সিগনেটরি ছিলাম।  তাই বেশ কিছু জায়গায় আমার স্বাক্ষর থাকতে পারে।  তবে আমি ব্যক্তিগত স্বর্থ হাসিলের জন্য একটি টাকাও হেরফের করি নাই। তাই দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি উন্মোচনের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম ভরসা ও পূর্বতন চেয়ারম্যান এম এ খালেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা মোবাইল ফোন ধরেননি।  ফাররইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জারিয়াব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’

১৬৪ কোটি ৬ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ১১৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ঋণাত্মক রিজার্ভ রয়েছে। আর কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৪১.৮৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১২.৪২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ০.০৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.৬৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বুধবার (৮ জুন) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৩.৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।সূত্র:রাইজিংবিডি

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: