০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ফ্ল্যাট কেনার নামে প্রতারণার নিখুঁত ছক, বোঝেনি ব্যাংকও

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:০৩:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৭২ বার দেখা হয়েছে

এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক বা ক্রেতা সেজে ঢাকা ব্যাংকসহ ১১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আর এনআইডি পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করতো নির্বাচন কমিশনেরই নিম্ন শ্রেণির কয়েকজন কর্মকর্তা। জালিয়াতিতে জড়িত ৪৪ জনকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। 

চক্রটির ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- আল আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম বিদ্যুত, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান। আজ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়েজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

তিনি বলেন, ভুয়া এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযােগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর খিলগাঁও থানায় এবং গত ১৩ ডিসেম্বর পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। ওই মামলা দুটির তদন্তে নেমে ঘটনার মূলহোতা বিপ্লবকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে ডিবি। 

জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানান, ভুয়া এনআইডি তৈরির সাথে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিচের শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী। ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন তিনি। বিপ্লবের দেওয়া তথ্যে ডিবি পুলিশ আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। আল আমিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার সাথে জড়িত অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়।

তার দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যুতকে গ্রেফতার করা হয়। বিদ্যুত এবং আল আমিন তাদের অন্যান্য সহযােগীদের প্রয়ােজন অনুয়ায়ী কখনও ক্রেতা, আবার কখনও বিক্রেতা, কখনও জমির মালিক, কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সাজাতেন। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করতেন। আর রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে দিতেন। 

যেভাবে প্রতারকরা ব্যাংকের চোখে ফাঁকি দেয়
তারা প্রথমে ব্যাংকে গিয়ে ফ্ল্যাট কেনার জন্য লােনের বিষয়ে পরামর্শ করেন। নিয়মমাফিক তখন ব্যাংক কর্মকর্তারা ফ্ল্যাট পরিদর্শন করার বিষয়ে জানান। প্রতারকরাও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে ফ্ল্যাট দেখতে যান। এরইমধ্যে কৌশলে প্রতারক দল ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকের কাছে থেকে তার এনআইডি কার্ড এবং ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে রাখেন। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তারা গিয়ে দেখেন কাগজপত্র সব ঠিক আছে।  

এরপর প্রতারকরা নির্বাচন কমিশন অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর মাধ্যমে ফ্ল্যাট মালিকের দেওয়া এনআইডি হুবহু নকল করে শুধুমাত্র ছবি পরিবর্তন করে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে। ভুয়া এনআইডি কার্ড নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বা সার্ভারে সার্চ দিলে ব্যাংক কর্মকর্তারা তা সঠিক দেখতে পায়। 

প্রতারকরা ১/২ মাসের জন্য একটি অফিস ভাড়া করেন। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সেই অফিস পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা ভিজিটে গিয়ে অফিস গােছানাে, সবকিছু সঠিক আছে দেখতে পান। ফ্ল্যাট, রেজিস্ট্রেশন করার দিন ব্যাংকের লােক উপস্থিত থাকেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনআইডি সার্ভারে এনআইডি কার্ড এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট সঠিক পাওয়ায় ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হওয়ার ১/২ দিন পর পে-অর্ডারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকরদের ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য লোনের টাকা পরিশােধ করে দেন। প্রতারকরা যখন লােনের কিস্তি পরিশােধ করে না তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের দেওয়া এনআইডি কার্ডের তথ্য সার্ভারে অনুসন্ধান করলে ভুয়া এনআইডি কার্ডের কোনো তথ্য দেখতে পান না। তখন ব্যাংক বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হয়েছেন।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কয়েকটি ব্যাংকসহ মোট ১১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা ব্যাংকের প্রায় দেড় কোটি টাকা চক্রটি আত্মসাৎ করেছে। এসব প্রতারণায় ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ৪৪ কর্মচারিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে ডিবি পুলিশকে জানানো হয়েছে।

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

ফ্ল্যাট কেনার নামে প্রতারণার নিখুঁত ছক, বোঝেনি ব্যাংকও

আপডেট: ০৫:০৩:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১

এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক বা ক্রেতা সেজে ঢাকা ব্যাংকসহ ১১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আর এনআইডি পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করতো নির্বাচন কমিশনেরই নিম্ন শ্রেণির কয়েকজন কর্মকর্তা। জালিয়াতিতে জড়িত ৪৪ জনকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। 

চক্রটির ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- আল আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম বিদ্যুত, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান। আজ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়েজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

তিনি বলেন, ভুয়া এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযােগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর খিলগাঁও থানায় এবং গত ১৩ ডিসেম্বর পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। ওই মামলা দুটির তদন্তে নেমে ঘটনার মূলহোতা বিপ্লবকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে ডিবি। 

জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানান, ভুয়া এনআইডি তৈরির সাথে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিচের শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী। ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন তিনি। বিপ্লবের দেওয়া তথ্যে ডিবি পুলিশ আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। আল আমিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার সাথে জড়িত অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়।

তার দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যুতকে গ্রেফতার করা হয়। বিদ্যুত এবং আল আমিন তাদের অন্যান্য সহযােগীদের প্রয়ােজন অনুয়ায়ী কখনও ক্রেতা, আবার কখনও বিক্রেতা, কখনও জমির মালিক, কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সাজাতেন। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করতেন। আর রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে দিতেন। 

যেভাবে প্রতারকরা ব্যাংকের চোখে ফাঁকি দেয়
তারা প্রথমে ব্যাংকে গিয়ে ফ্ল্যাট কেনার জন্য লােনের বিষয়ে পরামর্শ করেন। নিয়মমাফিক তখন ব্যাংক কর্মকর্তারা ফ্ল্যাট পরিদর্শন করার বিষয়ে জানান। প্রতারকরাও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে ফ্ল্যাট দেখতে যান। এরইমধ্যে কৌশলে প্রতারক দল ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকের কাছে থেকে তার এনআইডি কার্ড এবং ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়ে রাখেন। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তারা গিয়ে দেখেন কাগজপত্র সব ঠিক আছে।  

এরপর প্রতারকরা নির্বাচন কমিশন অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর মাধ্যমে ফ্ল্যাট মালিকের দেওয়া এনআইডি হুবহু নকল করে শুধুমাত্র ছবি পরিবর্তন করে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে। ভুয়া এনআইডি কার্ড নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বা সার্ভারে সার্চ দিলে ব্যাংক কর্মকর্তারা তা সঠিক দেখতে পায়। 

প্রতারকরা ১/২ মাসের জন্য একটি অফিস ভাড়া করেন। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সেই অফিস পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা ভিজিটে গিয়ে অফিস গােছানাে, সবকিছু সঠিক আছে দেখতে পান। ফ্ল্যাট, রেজিস্ট্রেশন করার দিন ব্যাংকের লােক উপস্থিত থাকেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনআইডি সার্ভারে এনআইডি কার্ড এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট সঠিক পাওয়ায় ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হওয়ার ১/২ দিন পর পে-অর্ডারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকরদের ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য লোনের টাকা পরিশােধ করে দেন। প্রতারকরা যখন লােনের কিস্তি পরিশােধ করে না তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের দেওয়া এনআইডি কার্ডের তথ্য সার্ভারে অনুসন্ধান করলে ভুয়া এনআইডি কার্ডের কোনো তথ্য দেখতে পান না। তখন ব্যাংক বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হয়েছেন।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কয়েকটি ব্যাংকসহ মোট ১১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা ব্যাংকের প্রায় দেড় কোটি টাকা চক্রটি আত্মসাৎ করেছে। এসব প্রতারণায় ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ৪৪ কর্মচারিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে ডিবি পুলিশকে জানানো হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: