০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ব্যাংকের শেয়ারে লাগামহীন ধস: আতঙ্কে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৩৭০ বার দেখা হয়েছে

করোনা মহামারি পরবর্তী সময় ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে থমকে পড়া বৈশ্বিক অর্থনিতীতে নতুন আরো বিরূপভাব যোগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাত। তিন দিনের ব্যবধানে সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার এ দু’টি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ব্যাংকের শেয়ারে লাগামহীন ধসে আতঙ্কে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা।

তিন দিনের ব্যবধানে দুই ব্যাংকের ধসের পরও মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদ- এই আশ্বাস দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি জানান, ব্যাংকে গচ্ছিত গ্রাহকদের অর্থ পুরোপুরি নিরাপদ। ওই সময় একজন সাংবাদিক বাইডেনকে জিজ্ঞেস করেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, কেন এমনটি হলো এ ব্যাপারে আপনি এখন পর্যন্ত কী জানেন? আর আপনি কী মার্কিনিদের নিশ্চয়তা দেবেন এর বড় প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বে না?’

ওই সময় কোনো কথা না শুনেই বাইডেন হেঁটে চলে যাওয়া শুরু করেন। তখন আরেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, ‘আরও ব্যাংকে কি ধস নামবে প্রেসিডেন্ট?’ ওই সময় সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের পরও বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর শেয়ারে দরপতন হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ঢুকেছে অন্যান্য ব্যাংকগুলোও হয়ত বর্তমান সংকটে ধাক্কা খাবে। আর এ শঙ্কায় ব্যাংকের শেয়ারে দরপতন হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার দিনের শুরুতে স্পেনের সানতানদার এবং জার্মানির কমার্জব্যাংকের শেয়ার একটা সময় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

ইউরোপের ব্যাংকগুলোর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যাংকগুলোর ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি ছিল। যদিও সোমবার মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে এ সংকট সহজেই মোকাবিলা সম্ভব। দেশে কোনো তারল্য সংকট নেই।

এমন পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভ সুদ হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করবে। উল্লেখ্য, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিন ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা অব্যাহতভাবে সুদ হার বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।

গত শুক্রবার সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতন হওয়ার পর প্রায় সব গ্রাহকের অর্থ আটকে যায়। যেহেতু এ ব্যাংকটির সঙ্গে স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন বেশি ছিল, ফলে ব্যাংকে টালমাটাল পরিস্থিতি ও অর্থ আটকে যাওয়ার পর ওই কোম্পানিগুলোর কর্মীদের বেতন আটকে যায়।

এর আগে বাইডেন বলেন, এফডিআইসি যদি ব্যাংক নিয়ে নেয়, যারা ব্যাংক পরিচালনা করে, তারা আর করবে না। ব্যাংকে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ নন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, তারা জেনেশুনে ঝুঁকি নেন। যখন তা শোধ হয় না, তখন বিনিয়োগকারীরা অর্থ হারান। পুঁজিবাদ এভাবেই কাজ করে।

প্রসঙ্গত, ঘটনার শুরু সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়া দিয়ে। গত বুধবার মাত্র ৪৮ ঘন্টায় ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যায়।ব্যাংকটির এই অবস্থার মূল কারণ গুজব। বুধবার হঠাৎ চাউর হয়ে যায়, গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। ঘাটতির পরিমাণ এতটাই যে, ব্যাংকের ব্যালান্স শিটের কিনারা করতেই প্রয়োজন অন্তত ২২৫ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন: ২২ হাজার বিক্ষোভকারীকে ক্ষমা করল ইরান

এই গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর এসভিপি থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রাহক নিজেদের ব্যাংক হিসাব খালি করে টাকা তুলে নেন এসভিপি থেকে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার এসভিপির সবগুলো শাখায় মোট ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের প্রায় সবাই টাকা তুলে নেওয়ার পর এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

উল্লেখ্য, দেউলিয়া হওয়া সিলিকন ভ্যালির যুক্তরাজ্য (এসভিবি-ইউকে) শাখা মাত্র ১ ব্রিটিশ পাউন্ড বা ১২৭ টাকায় কিনেছে এইচএসবিসি। যুক্তরাজ্য শাখাকে উদ্ধারের জন্য চুক্তিতে এই মূল্য প্রতীকী হিসেবে রাখা হয়েছে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় নিউইয়র্কের সিগনেচার ব্যাংকটিও দেউলিয়া হয়ে যায়। গত রোববার (১২ মার্চ) বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যাংকটি। সিলিকনের মতো তার গচ্ছিত অর্থ ও যাবতীয় নথিপত্র অধিগ্রহণ করেছে সরকার। বহু মানুষ এই ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ রেখেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংকটির অগ্রগতি থমকে যায়। মার্কিন প্রশাসন অবশ্য গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে। সোমবার থেকেই তারা তাদের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

ব্যাংকের শেয়ারে লাগামহীন ধস: আতঙ্কে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা

আপডেট: ০১:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩

করোনা মহামারি পরবর্তী সময় ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে থমকে পড়া বৈশ্বিক অর্থনিতীতে নতুন আরো বিরূপভাব যোগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাত। তিন দিনের ব্যবধানে সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার এ দু’টি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ব্যাংকের শেয়ারে লাগামহীন ধসে আতঙ্কে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা।

তিন দিনের ব্যবধানে দুই ব্যাংকের ধসের পরও মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদ- এই আশ্বাস দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি জানান, ব্যাংকে গচ্ছিত গ্রাহকদের অর্থ পুরোপুরি নিরাপদ। ওই সময় একজন সাংবাদিক বাইডেনকে জিজ্ঞেস করেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, কেন এমনটি হলো এ ব্যাপারে আপনি এখন পর্যন্ত কী জানেন? আর আপনি কী মার্কিনিদের নিশ্চয়তা দেবেন এর বড় প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বে না?’

ওই সময় কোনো কথা না শুনেই বাইডেন হেঁটে চলে যাওয়া শুরু করেন। তখন আরেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, ‘আরও ব্যাংকে কি ধস নামবে প্রেসিডেন্ট?’ ওই সময় সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের পরও বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর শেয়ারে দরপতন হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের মনে ভয় ঢুকেছে অন্যান্য ব্যাংকগুলোও হয়ত বর্তমান সংকটে ধাক্কা খাবে। আর এ শঙ্কায় ব্যাংকের শেয়ারে দরপতন হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার দিনের শুরুতে স্পেনের সানতানদার এবং জার্মানির কমার্জব্যাংকের শেয়ার একটা সময় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

ইউরোপের ব্যাংকগুলোর চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ব্যাংকগুলোর ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি ছিল। যদিও সোমবার মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে এ সংকট সহজেই মোকাবিলা সম্ভব। দেশে কোনো তারল্য সংকট নেই।

এমন পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভ সুদ হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করবে। উল্লেখ্য, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিন ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা অব্যাহতভাবে সুদ হার বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।

গত শুক্রবার সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতন হওয়ার পর প্রায় সব গ্রাহকের অর্থ আটকে যায়। যেহেতু এ ব্যাংকটির সঙ্গে স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন বেশি ছিল, ফলে ব্যাংকে টালমাটাল পরিস্থিতি ও অর্থ আটকে যাওয়ার পর ওই কোম্পানিগুলোর কর্মীদের বেতন আটকে যায়।

এর আগে বাইডেন বলেন, এফডিআইসি যদি ব্যাংক নিয়ে নেয়, যারা ব্যাংক পরিচালনা করে, তারা আর করবে না। ব্যাংকে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ নন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, তারা জেনেশুনে ঝুঁকি নেন। যখন তা শোধ হয় না, তখন বিনিয়োগকারীরা অর্থ হারান। পুঁজিবাদ এভাবেই কাজ করে।

প্রসঙ্গত, ঘটনার শুরু সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়া দিয়ে। গত বুধবার মাত্র ৪৮ ঘন্টায় ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যায়।ব্যাংকটির এই অবস্থার মূল কারণ গুজব। বুধবার হঠাৎ চাউর হয়ে যায়, গুরুতর আর্থিক ঘাটতিতে ভুগছে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক। ঘাটতির পরিমাণ এতটাই যে, ব্যাংকের ব্যালান্স শিটের কিনারা করতেই প্রয়োজন অন্তত ২২৫ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন: ২২ হাজার বিক্ষোভকারীকে ক্ষমা করল ইরান

এই গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর এসভিপি থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রাহক নিজেদের ব্যাংক হিসাব খালি করে টাকা তুলে নেন এসভিপি থেকে।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার এসভিপির সবগুলো শাখায় মোট ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের প্রায় সবাই টাকা তুলে নেওয়ার পর এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

উল্লেখ্য, দেউলিয়া হওয়া সিলিকন ভ্যালির যুক্তরাজ্য (এসভিবি-ইউকে) শাখা মাত্র ১ ব্রিটিশ পাউন্ড বা ১২৭ টাকায় কিনেছে এইচএসবিসি। যুক্তরাজ্য শাখাকে উদ্ধারের জন্য চুক্তিতে এই মূল্য প্রতীকী হিসেবে রাখা হয়েছে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় নিউইয়র্কের সিগনেচার ব্যাংকটিও দেউলিয়া হয়ে যায়। গত রোববার (১২ মার্চ) বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যাংকটি। সিলিকনের মতো তার গচ্ছিত অর্থ ও যাবতীয় নথিপত্র অধিগ্রহণ করেছে সরকার। বহু মানুষ এই ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ রেখেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংকটির অগ্রগতি থমকে যায়। মার্কিন প্রশাসন অবশ্য গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে। সোমবার থেকেই তারা তাদের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/এসএ