যানবাহন আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কখনো কাজের প্রয়োজনে আবার কখনো বিনোদন-ভ্রমণে আপনাকে সহায়তা নিতে হয় যানবাহনের।

নিজস্ব বাহন হোক অথবা গণপরিবহন, তা ব্যবহারে কিছু শুদ্ধাচার অনুসরণ আপনার যাত্রাপথকে করবে স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ। আর দলবদ্ধ ভ্রমণে সহজ কিছু নীতিমালা ও আচরণ-অভ্যাস আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে অনাবিল আনন্দের।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব

যাত্রী হিসেবে যা করণীয়

১. পথে নেমেই সচেতন থাকুন− কোনোরকম তাড়াহুড়ো নয়, কয়েক মিনিট সময় বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না। মনে রাখুন, আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব অন্য পথচারী, ড্রাইভার, কন্ডাক্টর কিংবা রাস্তায় চলাচলকারী কোনো পরিবহনের নয়। যে-কোনো দুর্ঘটনার দায়ভার অন্য কারো হলেও ভোগান্তি একান্তই আপনার।

২. কোথায় যাবেন, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে এবং ভাড়া নির্দিষ্ট করে অথবা টিকেট সংগ্রহ করে গাড়িতে উঠুন।

৩. অন্য কেউ ট্যাক্সি বা রিকশা ডেকে থাকলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটি নিজের জন্যে ডাকবেন না।

৪. রিকশাচালক/ অটোরিকশা-ট্যাক্সি-বাসের ড্রাইভার ও কন্ডাক্টর, বয়স যা-ই হোক তাদেরকে ‘আপনি’ সম্বোধন করুন।

৫. বেশি ভাড়া চাইলে রূঢ় আচরণ না করে শান্তস্বরে দরদাম করুন অথবা অন্য বাহনের খোঁজ করুন।

৬. কাঙ্ক্ষিত ভাড়ায় আরেকটি বাহন পেয়ে গেলে সেটাতেই উঠুন। প্রথম চালক যদি একই ভাড়ায় যেতে ইচ্ছুক হয়ে পুনরায় ডাকাডাকি করে, তবুও তাকে এড়িয়ে যান। এ ধরনের হঠকারিতাকে প্রশ্রয় দেবেন না।

৭. নিয়মভঙ্গ করে রাস্তার মাঝখানে যানবাহন দাঁড়ালেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাতে ওঠা এবং নামা থেকে বিরত থাকুন।

৮. যানবাহনের জন্যে অপেক্ষমাণ থাকাকালে ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়ান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচলে অসুবিধার কারণ হবেন না।

৯. যে যানবাহনে টিকেট কেটে ওঠার নিয়ম, তাতে বিনা টিকেটে উঠবেন না। যাত্রার শেষ পর্যন্ত টিকেট সংরক্ষণ করুন। পুরনো টিকেট ব্যবহার করবেন না।

১০. গন্তব্যে পৌঁছে রিকশা/ ট্যাক্সির ভাড়া দ্রুত মিটিয়ে দিন।

১১. গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই কোনো প্রয়োজনে রিকশা/ অটোরিকশা মাঝপথে দাঁড় করিয়ে সময় নিতে চাইলে শুরুতেই চালককে জানান।

১২. রিকশাচালককে দিয়ে কোনো ভারী বস্তু বিল্ডিংয়ের ওপরে ওঠাতে হলে তাকে বখশিশ দিন।

১৩. ভাংতি না থাকলে বা কোনো কারণে ভাড়া সামান্য বেশি নেয়ায় হইচই করবেন না, ক্ষুব্ধ হবেন না।

১৪. বাহনে বসা ও ওঠানামার ক্ষেত্রে মহিলা শিশু প্রবীণ প্রতিবন্ধী ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার দিন এবং প্রয়োজনে দরজা খুলে নামতে তাদের সহযোগিতা করুন।

১৫. যানবাহনের ভেতর থেকে যানবাহনের বাইরে বয়োজ্যেষ্ঠ কারো সাথে কথা বলতে হলে−পরিস্থিতি বুঝে নেমে দাঁড়িয়ে কথা বলুন।

১৬. এমনভাবে বসুন যাতে পাশের আসনের যাত্রীর কোনো অসুবিধা না হয়।

১৭. লাইট ফ্যান জানালা এসি ব্যবহারে অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করুন।

১৮. কোনো কারণে যানবাহন ছাড়তে দেরি হলে উত্তেজিত হবেন না, ভাড়া দিতে গিয়ে চালকের উদ্দেশ্যে কটু মন্তব্য করবেন না।

১৯. ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিজ দায়িত্বে রাখুন। যাত্রাপথে অপরিচিত কাউকে নিজের ব্যাগ ও জিনিসপত্র দেখে রাখার দায়িত্ব দেবেন না।

২০. অন্য যাত্রীদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপে সংযত থাকুন। দেশ/ রাজনীতি/ সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে যাবেন না। অপর পক্ষ আগ্রহ দেখালেও কৌশলে এড়িয়ে যান।

২১. ‘তাড়াতাড়ি যান/ ওভারটেক করেন’ বলে গাড়ি চালাতে তাড়া দেবেন না। চালককে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করতে উদ্বুদ্ধ করবেন না।

২২. রাস্তায়/ গাড়ির জানালা দিয়ে থুতু ফেলবেন না। এটি অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা অভ্যাস। তাছাড়া বাতাসের তোড়ে তা কারো গায়ে ছিটেও যেতে পারে।

২৩. বমির প্রবণতা বা মোশন সিকনেস থাকলে আগে থেকে প্রস্তুতি (প্রয়োজনীয় ওষুধ, পলিব্যাগ, রুমাল, টিস্যু পেপার, পানির বোতল ইত্যাদি) রাখুন।

২৪. ট্রাফিক জ্যামে অস্থির হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না। শান্ত হয়ে বসুন, অটোসাজেশন চর্চা/ দোয়া/ প্রার্থনা করুন, যা পথের ক্লান্তি কমিয়ে দেবে। মনে মনে দিনের কাজের পরিকল্পনা বা পর্যালোচনাও করে নিতে পারেন।

২৫. যানজটকে কাজে লাগান বইপড়া, সংবাদপত্রে চোখ বোলানো, লেখালেখির প্লট বা অন্যান্য সৃজনশীল চিন্তায়। অর্থাৎ গাড়িতে বা জ্যামে বসে করা সম্ভব এমন কাজের জন্যে ওই সময়টাই নির্ধারণ করুন। দেখবেন সময়টা সুন্দরভাবে কাজে লাগছে।

২৬. হকার বা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা এলে ধমক দেবেন না। ভদ্রভাবে বলুন যে, আপনি কিছু কিনতে চাচ্ছেন না।

২৭. যানবাহনে জানালার পাশে বসে ফোনে কথা বলতে হলে যে হাত ভেতরের দিকে সে হাতে ফোনসেটটি ধরুন।

২৮. বাহন থেকে নামার সময় দরজা ডানপাশে হলে প্রথমে ডান পা আর দরজা বামপাশে হলে প্রথমে বাম পা দিয়ে নামুন।

২৯. আরোহী যখন আপনি একা আর আপনার পরিচিত কেউ তার নিজের গাড়ি চালাচ্ছেন, তখন আপনি তার পাশের সিটে বসুন। ভাড়াগাড়িতে আপনার ইচ্ছানুযায়ী যে-কোনো সিটে বসতে পারেন।

৩০. যানবাহনের ভেতরে ও বাইরে−বাদামের খোসা, খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, ব্যবহৃত টিস্যু পেপার ইত্যাদি ফেলবেন না। নিজের কাছেই রেখে দিন। সুযোগমতো ডাস্টবিনে ফেলুন।

৩১. মোটর সাইকেলে চালকসহ দুজনের বেশি ওঠা থেকে বিরত থাকুন। চালক ও আরোহী−দুজনই হেলমেট পরুন।

৩২. ওড়না, শাড়ির আঁচল বা পোশাকের কোনো অংশ রিকশা বা অটোরিকশার চাকায় পেঁচিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন হোন।

৩৩. গাড়ি থেকে নামার আগে ভালো করে দেখে নিন কিছু ফেলে যাচ্ছেন কিনা।

৩৪. বাহনে ওঠার সময় চালককে সালাম দিন এবং গন্তব্যে পৌঁছে ধন্যবাদ দিন।

আরো পড়ুন: শীতে গরম পানি পান করা কি ভালো না ক্ষতিকর

যানবাহনে বর্জনীয়

১. একটি গন্তব্যের জন্যে টিকেট কেটে তার চেয়ে অতিরিক্ত পথ যাওয়া।

২. জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সিট ছেড়ে বার বার ওঠা।

৩. সিট কভারে হাত মোছা। জুতোসহ পা সিটে তুলে দেয়া।

৪. সিটের পেছনে বা বাহনের গায়ে লেখা, আঁকাআঁকি বা কাটাকুটি করা, আঁচড় কাটা, গদি ছেঁড়া।

৫. অন্যদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে−যানবাহনের ভেতরে এমনভাবে বসা ও ব্যাগ রাখা।

৬. চালক ও তার সহযোগীকে ধমক দেয়া ও গালিগালাজ করা।

৭. অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু খাওয়া এবং তাকে খাবার অফার করা।

৮. চলন্ত অবস্থায় গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলা, গল্প করা। বাহনের জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বাইরে বের করা।

৯. চালক বা যাত্রীদের উপস্থিতিতে একান্ত পারিবারিক বা অফিসিয়াল আলাপ করা।

১০. অন্যের ব্যক্তিগত গাড়িতে ড্রাইভারকে গাড়ি চালানোর বিষয়ে অথবা কোন পথে যাবে−সে নির্দেশনা নিজ থেকে দেয়া।

১১. ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহন থেমে থাকা অবস্থায় কেনাকাটা করা।

ঢাকা/কেএ