০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

যে কারণে চাঙ্গা বাজারেও ব্যাংকবিমুখ বিনিয়োগকারীরা!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
  • / ৪৩৯১ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বরাবরই ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ নেই। মূলত আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় সব ধরনের কোম্পানিকে কর ছাড় সুবিধা দেয়া হয়েছে। বছর শেষে ছাড় পাওয়া খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা আরও বাড়তে পারে। তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

অপরদিকে ব্যাংক, এনবিএফআই ও বিমা কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়নি কোনো কর ছাড় সুবিধা। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই এসব খাতের শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও বিমা খাতের শেয়ারসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় কিছুটা বিক্রয় চাপ বাড়ে পুঁজিবাজারে। এর ফলে পুরো সপ্তাহে বিক্রয় চাপ দেখা গেছে। এতে লেনদেন বৃদ্ধি পায় আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অবশ্য এই সময়ে বৃদ্ধি পায় অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে বাজার মূলধনও আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯৯০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। গত ১০ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহটিতে বিক্রয় চাপে ছিল ব্যাংক, সিমেন্ট, পাট, টেলিকম, জ্বালানি ও খাদ্য খাতের শেয়ারদর, যা কমে যায় আগের সপ্তাহের চেয়ে।

অধিকাংশ শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধিতে গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সব মূল্য সূচকই বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে ১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট, ডিএস৩০ সূচক এক দশমিক ৫১ পয়েন্ট ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ছয় দশমিক ৩১ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৫টি কোম্পানি ও ইউনিট ফান্ড অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২১১টির, কমে ১৪২টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।

বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু বছরের শেষের দিকে মহামারি পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলে ব্যবসায় ফেরে কোম্পানিগুলো। বছর শেষে ব্যাংক, খাদ্য, ওষুধসহ কয়েকটি খাতের কোম্পানি আশাব্যঞ্জক লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

এর মধ্যে ব্যাংক খাত ছিল অন্যতম। এ কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি পেতে থাকে। অভিহিত দরের নিচে থাকা অনেক ব্যাংকেরই শেয়ারদর বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে অভিহিত দরকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে তালিকভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র তিনটি অভিহিত শেয়ার মূল্যের নিচে রয়েছে।

গত ৩ জুন আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা খাতের কোম্পানির জন্য কোনো করছাড় সুবিধা দেওয়া হয়নি। এর ফলে হতাশ হয়ে যান বিনিয়োগকারীরা। ধীরে ধীরে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন অনেকেই। বিক্রয় চাপে কমে যায় শেয়ারদর। গত সপ্তাহ শেষে আগের চেয়ে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর কমে যায় চার দশমিক ছয় শতাংশ।

একইভাবে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায় পাট খাতে তিন দশমিক এক শতাংশ, সিমেন্টে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ, খাদ্যে এক দশমিক চার শতাংশ এবং টেলিকমে এক দশমিক তিন শতাংশ।

অপরদিকে আলোচিত সময়ে সর্বোচ্চ গেইনারে ছিল বস্ত্র খাত ১০ দশমিক তিন শতাংশ। এছাড়া ট্যানারিতে আট দশমিক পাঁচ শতাংশ, আইটিতে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ, সিরামিকে ছয় দশমিক আট শতাংশ, জীবন বিমা খাতে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ ও প্রকৌশল খাতে চার দশমিক সাত শতাংশ গেইনারে ছিল।

ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক তিন শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। এরপরই বস্ত্র খাত ১২ দশমিক ছয় শতাংশ, প্রকৌশল ১০ দশমিক চার শতাংশ, ব্যাংক আট দশমিক ছয় শতাংশ, এনবিএফআই ছয় দশমিক সাত শতাংশ ও জীবন বিমা খাত চার দশমিক আট শতাংশ অবদান রাখে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহ শেষে সর্বোচ্চ শেয়রদর বৃদ্ধি পায় ফরচুন শুজ লিমিটেডের। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৫১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষ দশে উঠে আসে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, রিং শাইন টেক্সটাইলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিংস মিলস, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, নুরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, দেশ গার্মেন্টস, আনওয়ার গ্যালভানাইজিং ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

অপরদিকে এই সময়ে শেয়ারদর বিবেচনায় একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ লোকসান গুনে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া লোকসান গুনতে দেখা যায় সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বিডি, এক্সিম ব্যাংক, জনতা ইন্স্যুরেন্স, এবি ব্যাংক, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, জিবিবি পাওয়ার ও নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x
English Version

যে কারণে চাঙ্গা বাজারেও ব্যাংকবিমুখ বিনিয়োগকারীরা!

আপডেট: ১১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বরাবরই ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীদের তেমন আগ্রহ নেই। মূলত আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় সব ধরনের কোম্পানিকে কর ছাড় সুবিধা দেয়া হয়েছে। বছর শেষে ছাড় পাওয়া খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা আরও বাড়তে পারে। তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

অপরদিকে ব্যাংক, এনবিএফআই ও বিমা কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়নি কোনো কর ছাড় সুবিধা। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই এসব খাতের শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও বিমা খাতের শেয়ারসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় কিছুটা বিক্রয় চাপ বাড়ে পুঁজিবাজারে। এর ফলে পুরো সপ্তাহে বিক্রয় চাপ দেখা গেছে। এতে লেনদেন বৃদ্ধি পায় আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অবশ্য এই সময়ে বৃদ্ধি পায় অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে বাজার মূলধনও আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯৯০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। গত ১০ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহটিতে বিক্রয় চাপে ছিল ব্যাংক, সিমেন্ট, পাট, টেলিকম, জ্বালানি ও খাদ্য খাতের শেয়ারদর, যা কমে যায় আগের সপ্তাহের চেয়ে।

অধিকাংশ শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধিতে গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সব মূল্য সূচকই বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে ১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট, ডিএস৩০ সূচক এক দশমিক ৫১ পয়েন্ট ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ছয় দশমিক ৩১ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৫টি কোম্পানি ও ইউনিট ফান্ড অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২১১টির, কমে ১৪২টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।

বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু বছরের শেষের দিকে মহামারি পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলে ব্যবসায় ফেরে কোম্পানিগুলো। বছর শেষে ব্যাংক, খাদ্য, ওষুধসহ কয়েকটি খাতের কোম্পানি আশাব্যঞ্জক লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

এর মধ্যে ব্যাংক খাত ছিল অন্যতম। এ কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি পেতে থাকে। অভিহিত দরের নিচে থাকা অনেক ব্যাংকেরই শেয়ারদর বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে অভিহিত দরকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে তালিকভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র তিনটি অভিহিত শেয়ার মূল্যের নিচে রয়েছে।

গত ৩ জুন আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা খাতের কোম্পানির জন্য কোনো করছাড় সুবিধা দেওয়া হয়নি। এর ফলে হতাশ হয়ে যান বিনিয়োগকারীরা। ধীরে ধীরে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন অনেকেই। বিক্রয় চাপে কমে যায় শেয়ারদর। গত সপ্তাহ শেষে আগের চেয়ে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর কমে যায় চার দশমিক ছয় শতাংশ।

একইভাবে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায় পাট খাতে তিন দশমিক এক শতাংশ, সিমেন্টে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ, খাদ্যে এক দশমিক চার শতাংশ এবং টেলিকমে এক দশমিক তিন শতাংশ।

অপরদিকে আলোচিত সময়ে সর্বোচ্চ গেইনারে ছিল বস্ত্র খাত ১০ দশমিক তিন শতাংশ। এছাড়া ট্যানারিতে আট দশমিক পাঁচ শতাংশ, আইটিতে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ, সিরামিকে ছয় দশমিক আট শতাংশ, জীবন বিমা খাতে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ ও প্রকৌশল খাতে চার দশমিক সাত শতাংশ গেইনারে ছিল।

ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক তিন শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। এরপরই বস্ত্র খাত ১২ দশমিক ছয় শতাংশ, প্রকৌশল ১০ দশমিক চার শতাংশ, ব্যাংক আট দশমিক ছয় শতাংশ, এনবিএফআই ছয় দশমিক সাত শতাংশ ও জীবন বিমা খাত চার দশমিক আট শতাংশ অবদান রাখে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহ শেষে সর্বোচ্চ শেয়রদর বৃদ্ধি পায় ফরচুন শুজ লিমিটেডের। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৫১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষ দশে উঠে আসে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, রিং শাইন টেক্সটাইলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিংস মিলস, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, নুরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, দেশ গার্মেন্টস, আনওয়ার গ্যালভানাইজিং ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

অপরদিকে এই সময়ে শেয়ারদর বিবেচনায় একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ লোকসান গুনে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া লোকসান গুনতে দেখা যায় সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বিডি, এক্সিম ব্যাংক, জনতা ইন্স্যুরেন্স, এবি ব্যাংক, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, জিবিবি পাওয়ার ও নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে।

ঢাকা/এসআর