০৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রমজানে স্বাস্থ্য সমস্যা ও প্রতিকার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:১৬:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মে ২০১৮
  • / ৪৩৫০ বার দেখা হয়েছে

শুক্রবার থেকেই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এই এক মাস আমাদের প্রতিদিনকার খাবার-দাবার ও জীবন যাত্রায় অনেক পরিবর্তন হবে। রমজানে রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, অবশ্যই মঙ্গলজনক। তবে রমজানে চাই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার। এটি সুষম ও পরিমিতও হওয়া চাই। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রোজার মাসে খাবার সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়। সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার, একটু পরে সন্ধ্যারাতের খাবার এবং শেষরাতে সেহরিতে। সারাদিন রোজার শেষে শরির, বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ, খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির যোগান চায়। ইফতারীর দু’একটি খেজুর ও একটু শরবত সে যোগান দিতে পারে। সাথে পিঁয়াজু, ছোলা, মুড়ি, শশা শরীরের অন্যান্য চাহিদা মিটায়। তবে এগুলো মটেও স্বাস্থকর না।

সন্ধ্যা রাতের খাবারে ভাত বা রুটি, প্রচুর সবজি, দু’এক টুকরা মাছ বা মাংস, দুধ এবং ফল থাকা উচিৎ। সেহরিতে একটু হালকা খাবারই ভালো। ইফতার ও ঘুমানোর মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে।

একটু দেরিতে হজম হয়, রোজায় সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ। এগুলো বেশিক্ষণ পেটে থাকে। দেরিতে হজম হয় এমন খাবারের মধ্যে আছে কম ঢেঁকি ছাঁটা চাল, আটা, ডাল, মাংস ইত্যাদি। আর দ্রুত হজম হয় এমন খাবারের মধ্যে আছে চিনি, মিষ্টি, ময়দা ইত্যাদি।

খাবারের তালিকায় আঁশযুক্ত খাবারও থাকতে হবে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে আটা, সীমের বিচি, ছোলা, শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি। শরীরের খনিজ লবণের অভাব পূরণের জন্য শাক-সবজি ও ফলমূল দরকার। খেজুরে আছে শর্করা, আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। কলায়ও শর্করা, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে।

মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমাণে কম খাওয়া উচিৎ। বেশি মশলাযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিতে হবে।

রমজান মাস ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করার উপযুক্ত সময়। যাদের শরিরের ওজন বেশি বা স্বাভাবিক, রমজানে খেয়ে খেয়ে তাদের ওজন যেন না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যাদের ওজন কম বা কোনো মতে স্বাভাবিক, খেয়াল রাখতে হবে রমজানে তাদের ওজন যেন না কমে।

রোজায় রোজাদারগণের মধ্যে কতোগুলো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য: খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ না থাকলে বা প্রচুর পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সুতরাং রমজানে আঁশযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।

বদহজম ও বায়ু: অতিভোজন, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার ইত্যাদি খেলে এমন হতে পারে। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে। যেমন ডিম। অতএব, এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এ ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে।

বুক জ্বালা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা করা: রমজান মাসে প্রায়শই পাকস্থলির এসিড বেড়ে যায়। পাকস্থলির এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে বুক জ্বলা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা হতে পারে। অতিভোজন, বেশি মশলাযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার এসিডের মাত্রা বাড়ায়। ধূমপানও এসিডিটি বাড়ায়। খাদ্যের আঁশ পাকস্থলির এসিড হওয়া কমায়। খাবার গ্রহণে সংযত হতে হবে। পাকস্থলির এসিড উৎপাদন কমায়, এমন ওষুধ আছে। ডাক্তারের পরামর্শে এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

অতিরিক্ত দুর্বলতা: রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে গেলে এমন হতে পারে। রক্তচাপ কমে গেলেও এমন হতে পারে। রাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। খাবার হতে হবে সুষম। সেহেরি অবশ্যই খেতে হবে।

যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন, রোজা রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।

রোজায় মেনে চলুন কিছু বিষয়:

. ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়া

. শীতল স্থানে অবস্থান করা

. ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

. পর্যাপ্ত ঘুম

. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

. ভারী কাজ বর্জন

. ধীরে ধীরে খাবার খান

শেয়ার করুন

x
English Version

রমজানে স্বাস্থ্য সমস্যা ও প্রতিকার

আপডেট: ০৩:১৬:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মে ২০১৮

শুক্রবার থেকেই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এই এক মাস আমাদের প্রতিদিনকার খাবার-দাবার ও জীবন যাত্রায় অনেক পরিবর্তন হবে। রমজানে রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, অবশ্যই মঙ্গলজনক। তবে রমজানে চাই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার। এটি সুষম ও পরিমিতও হওয়া চাই। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সুষম খাদ্য গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রোজার মাসে খাবার সাধারণত তিনবার খাওয়া হয়। সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার, একটু পরে সন্ধ্যারাতের খাবার এবং শেষরাতে সেহরিতে। সারাদিন রোজার শেষে শরির, বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ, খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির যোগান চায়। ইফতারীর দু’একটি খেজুর ও একটু শরবত সে যোগান দিতে পারে। সাথে পিঁয়াজু, ছোলা, মুড়ি, শশা শরীরের অন্যান্য চাহিদা মিটায়। তবে এগুলো মটেও স্বাস্থকর না।

সন্ধ্যা রাতের খাবারে ভাত বা রুটি, প্রচুর সবজি, দু’এক টুকরা মাছ বা মাংস, দুধ এবং ফল থাকা উচিৎ। সেহরিতে একটু হালকা খাবারই ভালো। ইফতার ও ঘুমানোর মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে।

একটু দেরিতে হজম হয়, রোজায় সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ। এগুলো বেশিক্ষণ পেটে থাকে। দেরিতে হজম হয় এমন খাবারের মধ্যে আছে কম ঢেঁকি ছাঁটা চাল, আটা, ডাল, মাংস ইত্যাদি। আর দ্রুত হজম হয় এমন খাবারের মধ্যে আছে চিনি, মিষ্টি, ময়দা ইত্যাদি।

খাবারের তালিকায় আঁশযুক্ত খাবারও থাকতে হবে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে আটা, সীমের বিচি, ছোলা, শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি। শরীরের খনিজ লবণের অভাব পূরণের জন্য শাক-সবজি ও ফলমূল দরকার। খেজুরে আছে শর্করা, আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। কলায়ও শর্করা, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে।

মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমাণে কম খাওয়া উচিৎ। বেশি মশলাযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিতে হবে।

রমজান মাস ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করার উপযুক্ত সময়। যাদের শরিরের ওজন বেশি বা স্বাভাবিক, রমজানে খেয়ে খেয়ে তাদের ওজন যেন না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যাদের ওজন কম বা কোনো মতে স্বাভাবিক, খেয়াল রাখতে হবে রমজানে তাদের ওজন যেন না কমে।

রোজায় রোজাদারগণের মধ্যে কতোগুলো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য: খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ না থাকলে বা প্রচুর পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সুতরাং রমজানে আঁশযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।

বদহজম ও বায়ু: অতিভোজন, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার ইত্যাদি খেলে এমন হতে পারে। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে। যেমন ডিম। অতএব, এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এ ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে।

বুক জ্বালা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা করা: রমজান মাসে প্রায়শই পাকস্থলির এসিড বেড়ে যায়। পাকস্থলির এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে বুক জ্বলা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা হতে পারে। অতিভোজন, বেশি মশলাযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার এসিডের মাত্রা বাড়ায়। ধূমপানও এসিডিটি বাড়ায়। খাদ্যের আঁশ পাকস্থলির এসিড হওয়া কমায়। খাবার গ্রহণে সংযত হতে হবে। পাকস্থলির এসিড উৎপাদন কমায়, এমন ওষুধ আছে। ডাক্তারের পরামর্শে এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

অতিরিক্ত দুর্বলতা: রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে গেলে এমন হতে পারে। রক্তচাপ কমে গেলেও এমন হতে পারে। রাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। খাবার হতে হবে সুষম। সেহেরি অবশ্যই খেতে হবে।

যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন, রোজা রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।

রোজায় মেনে চলুন কিছু বিষয়:

. ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়া

. শীতল স্থানে অবস্থান করা

. ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

. পর্যাপ্ত ঘুম

. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

. ভারী কাজ বর্জন

. ধীরে ধীরে খাবার খান