১০:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সমুদ্রভীতি কাটিয়ে মনোযোগ এখন ক্রিকেটে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:১৯:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • / ৪১৪৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শেষ খবর, সবাই ভালো আছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে দেওয়া বার্তায় বর্ষার এই ভ্যাপসা গরমেও স্বস্তির হাওয়া জুড়িয়ে দিয়েছে বিসিবি কর্মকর্তাদের শরীর-মন। ক্রিকেটারদের মন থেকেও বিভীষিকাময় সমুদ্র ভ্রমণের ক্লান্তি কেটে গেছে অনেকটাই। গতকাল রাতের নিদ্রায় পুরো দলই এখন স্বাভাবিক। উত্তাল আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যে উদ্দেশ্যে ডমিনিকায় যাওয়া, মাহমুদউল্লাহদের মনোযোগ এখন সেই মাঠের ক্রিকেটে। কারণ মাত্র এক বেলার অনুশীলন সঙ্গী করে আজই টি২০ ম্যাচে নেমে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তাই ফেলে আসা ঘটনা নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই। পেশাদার ক্রিকেটারদের সব পরিস্থিতিকেই মানিয়ে নিতে হয়। সমুদ্রপথের উদ্বেগ ভুলে গিয়ে খেলোয়াড়রা ডুব দিচ্ছেন ক্রিকেটেই।

টেস্ট সিরিজ শেষ করার এক দিন পরই টি২০ ভেন্যু ডমিনিকায় যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এক দিন পিছিয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ফেরিতে রওনা দেয় উভয় দল। সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেক হয়ে ডমিনিকা প্রায় পাঁচ ঘণ্টার পথ। ক্যাস্ট্রিস ফেরিঘাট থেকে ক্রুজ শিপে উচ্ছ্বাস নিয়েই উঠেছিলেন সবাই। আটলান্টিকের নীল জল চোখ জুড়িয়ে দিয়েছিল সবার। শুরুতে ফটোসেশনের ধুম পড়ে। কিন্তু ক্রুজ শিপ সেন্ট লুসিয়াকে পেছনে ফেলে কিছু পথ এগিয়ে যেতেই অল্পসংখ্যক ক্রিকেটারের মুখে ধরা দেয় আতঙ্কের ছবি। ঢেউয়ের তোড় বাড়তে থাকায় শিপের দুলুনিতে ‘মোশন সিকনেস’-এ কাবু হন কেউ কেউ। দলের ম্যাসিউর সোহেল বমি করে শিপের পাটাতনে ঘুমিয়ে পড়েন। ছোঁয়াচে রোগের মতো ভীতি ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেটারদের মধ্যেও। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম কয়েকবার বমি করেন। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ঝিম মেরে বসে থাকেন ডেকে। সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেকে পৌঁছাতে ডলফিন চ্যানেলের দেড় ঘণ্টার পথ হরিষে বিষাদে পরিণত হয় কারও কারও জন্য। ফেরি বাতিল করে মার্টিনেক থেকে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার দাবি ওঠে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে। কিন্তু মার্টিনেকের ভিসা জটিলতা এবং সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ম্যানেজার নাফিস ইকবালের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার পরই বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও উপায় বের করতে ব্যর্থ হন। অগত্যা বাকি পথটুকুও ক্রুজ শিপেই পাড়ি দিতে হয় বাংলাদেশ দলকে।

শরিফুলদের জন্য এই সমুদ্র ভ্রমণ বিভীষিকাময় হলেও সাকিব আল হাসানদের কাছে দারুণ উপভোগ্য ছিল। মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন, ‘মাশাআল্লাহ মহান রব্বুল আলামিনের সৃষ্টি অনেক সুন্দর! সেই ছোটবেলায় আটলান্টিক মহাসাগরের কথা বইয়ে পড়েছি; আজকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে খুবই ভালো লাগছে। নতুন একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করতেছিল এবং আমরা যখন পাড়ি দিচ্ছিলাম তখন অনেক আনন্দ করছিলাম আবার অনেকে ভয়ও পাচ্ছিলাম। আজকের দিনটা অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এই প্রথম সমুদ্র পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিল। তাই উত্তাল আটলান্টিকের ঢেউ দেখে ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিমানের পরিবর্তে ক্রিকেটারদের ক্রুজ শিপে ডমিনিকায় পাঠানো নিয়ে সমালোচনা হলেও বিসিবি অতটা বিচলিত না। সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কাউকেই দোষ দেওয়ার কিছু নেই- ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডকেও না বিসিবিকেও না। আমাদের যখন এটা জানায় তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড সিইওর সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা জানায়, কভিডের কারণে বেশিরভাগ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট কিছু ফ্লাইট চলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। ২০-২৫ জন যাত্রী নিতে পারে। এখন নিয়মিত ক্রুজ যাত্রা হয়। আমরা জানতে চেয়েছিলাম তাদের দল কীভাবে যাবে। তারা জানায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, বাংলাদেশ দল, আইসিসি অফিসিয়াল, টিভি ক্রু, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল সবাই ক্রুজ শিপে ট্রাভেল করবে। এটা বলার পরে আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি করার সুযোগ ছিল না।’ তবে সিইও নিজামউদ্দিন মনে করেন, সমুদ্র উত্তাল না থাকলে ভ্রমণের গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত। ক্রিকেটারদের মতো বিসিবি কর্তারাও পেছনের ঘটনা নিয়ে পড়ে নেই। টেস্টের বিভীষিকা ভুলে টি২০-তে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখার অপেক্ষায় তাঁরাও।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x
English Version

সমুদ্রভীতি কাটিয়ে মনোযোগ এখন ক্রিকেটে

আপডেট: ১২:১৯:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শেষ খবর, সবাই ভালো আছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে দেওয়া বার্তায় বর্ষার এই ভ্যাপসা গরমেও স্বস্তির হাওয়া জুড়িয়ে দিয়েছে বিসিবি কর্মকর্তাদের শরীর-মন। ক্রিকেটারদের মন থেকেও বিভীষিকাময় সমুদ্র ভ্রমণের ক্লান্তি কেটে গেছে অনেকটাই। গতকাল রাতের নিদ্রায় পুরো দলই এখন স্বাভাবিক। উত্তাল আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যে উদ্দেশ্যে ডমিনিকায় যাওয়া, মাহমুদউল্লাহদের মনোযোগ এখন সেই মাঠের ক্রিকেটে। কারণ মাত্র এক বেলার অনুশীলন সঙ্গী করে আজই টি২০ ম্যাচে নেমে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তাই ফেলে আসা ঘটনা নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই। পেশাদার ক্রিকেটারদের সব পরিস্থিতিকেই মানিয়ে নিতে হয়। সমুদ্রপথের উদ্বেগ ভুলে গিয়ে খেলোয়াড়রা ডুব দিচ্ছেন ক্রিকেটেই।

টেস্ট সিরিজ শেষ করার এক দিন পরই টি২০ ভেন্যু ডমিনিকায় যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এক দিন পিছিয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ফেরিতে রওনা দেয় উভয় দল। সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেক হয়ে ডমিনিকা প্রায় পাঁচ ঘণ্টার পথ। ক্যাস্ট্রিস ফেরিঘাট থেকে ক্রুজ শিপে উচ্ছ্বাস নিয়েই উঠেছিলেন সবাই। আটলান্টিকের নীল জল চোখ জুড়িয়ে দিয়েছিল সবার। শুরুতে ফটোসেশনের ধুম পড়ে। কিন্তু ক্রুজ শিপ সেন্ট লুসিয়াকে পেছনে ফেলে কিছু পথ এগিয়ে যেতেই অল্পসংখ্যক ক্রিকেটারের মুখে ধরা দেয় আতঙ্কের ছবি। ঢেউয়ের তোড় বাড়তে থাকায় শিপের দুলুনিতে ‘মোশন সিকনেস’-এ কাবু হন কেউ কেউ। দলের ম্যাসিউর সোহেল বমি করে শিপের পাটাতনে ঘুমিয়ে পড়েন। ছোঁয়াচে রোগের মতো ভীতি ছড়িয়ে পড়ে ক্রিকেটারদের মধ্যেও। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম কয়েকবার বমি করেন। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ঝিম মেরে বসে থাকেন ডেকে। সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেকে পৌঁছাতে ডলফিন চ্যানেলের দেড় ঘণ্টার পথ হরিষে বিষাদে পরিণত হয় কারও কারও জন্য। ফেরি বাতিল করে মার্টিনেক থেকে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার দাবি ওঠে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে। কিন্তু মার্টিনেকের ভিসা জটিলতা এবং সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ম্যানেজার নাফিস ইকবালের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার পরই বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও উপায় বের করতে ব্যর্থ হন। অগত্যা বাকি পথটুকুও ক্রুজ শিপেই পাড়ি দিতে হয় বাংলাদেশ দলকে।

শরিফুলদের জন্য এই সমুদ্র ভ্রমণ বিভীষিকাময় হলেও সাকিব আল হাসানদের কাছে দারুণ উপভোগ্য ছিল। মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন, ‘মাশাআল্লাহ মহান রব্বুল আলামিনের সৃষ্টি অনেক সুন্দর! সেই ছোটবেলায় আটলান্টিক মহাসাগরের কথা বইয়ে পড়েছি; আজকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে খুবই ভালো লাগছে। নতুন একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করতেছিল এবং আমরা যখন পাড়ি দিচ্ছিলাম তখন অনেক আনন্দ করছিলাম আবার অনেকে ভয়ও পাচ্ছিলাম। আজকের দিনটা অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এই প্রথম সমুদ্র পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি দিল। তাই উত্তাল আটলান্টিকের ঢেউ দেখে ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিমানের পরিবর্তে ক্রিকেটারদের ক্রুজ শিপে ডমিনিকায় পাঠানো নিয়ে সমালোচনা হলেও বিসিবি অতটা বিচলিত না। সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কাউকেই দোষ দেওয়ার কিছু নেই- ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডকেও না বিসিবিকেও না। আমাদের যখন এটা জানায় তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড সিইওর সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা জানায়, কভিডের কারণে বেশিরভাগ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট কিছু ফ্লাইট চলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। ২০-২৫ জন যাত্রী নিতে পারে। এখন নিয়মিত ক্রুজ যাত্রা হয়। আমরা জানতে চেয়েছিলাম তাদের দল কীভাবে যাবে। তারা জানায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল, বাংলাদেশ দল, আইসিসি অফিসিয়াল, টিভি ক্রু, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল সবাই ক্রুজ শিপে ট্রাভেল করবে। এটা বলার পরে আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি করার সুযোগ ছিল না।’ তবে সিইও নিজামউদ্দিন মনে করেন, সমুদ্র উত্তাল না থাকলে ভ্রমণের গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত। ক্রিকেটারদের মতো বিসিবি কর্তারাও পেছনের ঘটনা নিয়ে পড়ে নেই। টেস্টের বিভীষিকা ভুলে টি২০-তে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখার অপেক্ষায় তাঁরাও।

ঢাকা/এসএম