০৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

১০ বছর মেয়াদে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪১৩৫ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ঋণের শর্ত নিয়ে টানা ১৫ দিন সরকারি বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার সঙ্গে দর-কষাকষির পর বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ১০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। 

বুধবার (৯ নভেম্বর) এক বিবৃতি এ তথ্য জানিয়েছে সফররত আইএমএফ মিশন। এর আগে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন আইএমএফ কর্মকর্তারা। সরকারের সঙ্গে আলোচনাকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমাপনী বৈঠকে। আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এই বিবৃতি দেয় আইএমএফ মিশন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। মিশন বাংলাদেশের ঋণের বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করবে। আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ( ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে তারা একমত হয়েছেন। এ ঋণের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং অসুবিধাগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করে শক্তিশালী, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং সবুজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা। ৪২ মাস ধরে বিভিন্ন কিস্তিতে এ ঋণ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয় সরকার। এরপর নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ের জন্য দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসে আইএমএফ মিশন। ঢাকায় আইএমএফ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। গত ২৬ অক্টোবর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। মিশনকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের।

অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল বলেন, মোট সাত কিস্তিতে ২০২৬ সালের মধ্যে এই ঋণের পুরো টাকা পেয়ে যাবো। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের পক্ষ থেকে কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি। আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব বিষয় সংস্কারের কথা ভাবছি, তারাও একই কথা বলেছে।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ঋণ পেতে আইএমএফের কিছু শর্তে নমনীয় হয়েছে সরকার। যদিও শর্তগুলো অর্থনীতির জন্য ভালো হলেও তা সরকারের জন্য বেশ স্পর্শকাতর। বিশেষ করে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ যেখানে বিপাকে পড়েছেন, এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে ভর্তুকি খাতে সংস্কার আনতে হবে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। আইএমএফের এই সিদ্ধান্ত মানতে গেলে জিনিস পত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ডলার

অবশ্য রাজধানীর পল্টনে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সংলাপ অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আইএমএফের ঋণ না নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। যদিও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সংকটের সময়ে ঋণ পেলে সরকারের আর্থিক চাপ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।

এদিকে বুধবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের এখানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। টাকার তো প্রয়োজন। আইএমএফের ঋণ আমরা গ্রহণ করবো। তবে কঠিন শর্ত আমরা মেনে নেব না। টাকার জন্য খুব হার্ড প্রি-কন্ডিশন মেনে নেওয়া সহজ নয়। আলাপ-আলোচনা চলছে। কথাবার্তা চলছে, যেটা যৌক্তিক সেটাই হবে। এই মুহূর্তে টাকা নিতে হবে, বিকল্প নেই। অর্থ আমরা নেব, তবে কঠিন শর্তে নয়।

কঠির শর্ত কী- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অ্যাপ্লাই ইয়োর কমনসেন্স। কঠিন শর্ত যেটা লাগবে, সেটা দিয়ে কেন? আপনি একজন সাধারণ মানুষ, আপনি বুঝেন যে শর্তটা কী? আইএমএফের অতীতের ব্যাপারেও আমরা জানি। আইএমএফের শর্তগুলো কী হতে পারে, কোন শর্তটা মানলে দেশের আরও ক্ষতি হতে পারে, এমন শর্ত আমরা মানব না।’

বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে না আইএমএফ। তবে যেভাবে কমছে তা অব্যাহত থাকলে উদ্বেগজনক পর্যায়ে যেতে পারে। এ বাস্তবতায় রিজার্ভ সুরক্ষায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর শেষে প্রধান কার্যালয়ে একটি রিপোর্ট দেবে। এর পরই মূলত কী কী শর্ত থাকবে চূড়ান্তভাবে তা জানা যাবে। দু’পক্ষের সম্মতির পর ঋণ প্রস্তাব উঠবে আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদে।

আরও পড়ুন: আইএমএফর কঠিন শর্ত মেনে নেব না: ওবায়দুল কাদের

গত দু’সপ্তাহে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে মিশন। এসব বৈঠকে ডলারের দর নির্ধারণ, সুদহারের বিদ্যমান সীমা এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হিসাবায়ন পদ্ধতি, রাজস্ব, মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সফররত মিশনকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডলারের দর বৃদ্ধির এ সময়ে অসম প্রতিযোগিতা চলছিল। যে কারণে ব্যাংকগুলো নিজেরাই বাজারভিত্তিক একটি দর ঠিক করেছে। চলতি বছরের শুরুতেও আমদানিতে ৮৬ টাকার নিচে থাকা ডলার এখন ১০৬ টাকা। রেমিট্যান্সে ৮৫ টাকার নিচে থাকা ডলারের দর পাচ্ছে ১০৭ টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের এ অবস্থানকে আইএমএফ মিশন যৌক্তিক মনে করে। সুদহারের সীমার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এমনিতেই চাপে বাংলাদেশ। একবারে সীমা তুলে দিলে সুদহার অনেক বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান সীমা তুলে দিলে ব্যাংকের আয় বাড়বে। যার বড় সুবিধাভোগী হবে ব্যাংকের মালিকপক্ষ। যে কারণে এখনই সীমা পুরোপুরি তুলতে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সীমা বাড়ানো বা আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সহজ শর্তে আইএমএফের ঋণ প্রদানে সম্মতি: অর্থমন্ত্রী

আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের মন্দ ঋণের বড় অংশই যে ১০টি ব্যাংকে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আলাদাভাবে তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কম দেখানোর ক্ষেত্রে যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা ছিল করোনার কারণে সাময়িক ব্যবস্থা। ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি নেওয়াসহ ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজস্ব আইন সংশোধনেও বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলমান আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কর ছাড় আছে, ধীরে ধীরে তা কমানো হবে।

আমদানিতে খরচ অনেক বাড়লেও রফতানি এবং রেমিট্যান্স সে হারে বাড়ছে না। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রফতানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রফতানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক চাপে পড়েছে। গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরোনো রিজার্ভ কমে ৮ নভেম্বর ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আইএমএফের মানদণ্ডের আলোকে হিসাব করলে নিট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

১০ বছর মেয়াদে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ

আপডেট: ০৫:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ঋণের শর্ত নিয়ে টানা ১৫ দিন সরকারি বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার সঙ্গে দর-কষাকষির পর বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ১০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। 

বুধবার (৯ নভেম্বর) এক বিবৃতি এ তথ্য জানিয়েছে সফররত আইএমএফ মিশন। এর আগে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন আইএমএফ কর্মকর্তারা। সরকারের সঙ্গে আলোচনাকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমাপনী বৈঠকে। আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এই বিবৃতি দেয় আইএমএফ মিশন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। মিশন বাংলাদেশের ঋণের বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করবে। আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ( ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে তারা একমত হয়েছেন। এ ঋণের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং অসুবিধাগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করে শক্তিশালী, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং সবুজ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা। ৪২ মাস ধরে বিভিন্ন কিস্তিতে এ ঋণ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয় সরকার। এরপর নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ের জন্য দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় আসে আইএমএফ মিশন। ঢাকায় আইএমএফ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। গত ২৬ অক্টোবর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। মিশনকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের।

অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল বলেন, মোট সাত কিস্তিতে ২০২৬ সালের মধ্যে এই ঋণের পুরো টাকা পেয়ে যাবো। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের পক্ষ থেকে কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি। আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব বিষয় সংস্কারের কথা ভাবছি, তারাও একই কথা বলেছে।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ঋণ পেতে আইএমএফের কিছু শর্তে নমনীয় হয়েছে সরকার। যদিও শর্তগুলো অর্থনীতির জন্য ভালো হলেও তা সরকারের জন্য বেশ স্পর্শকাতর। বিশেষ করে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ যেখানে বিপাকে পড়েছেন, এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে ভর্তুকি খাতে সংস্কার আনতে হবে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। আইএমএফের এই সিদ্ধান্ত মানতে গেলে জিনিস পত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ডলার

অবশ্য রাজধানীর পল্টনে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সংলাপ অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আইএমএফের ঋণ না নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। যদিও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সংকটের সময়ে ঋণ পেলে সরকারের আর্থিক চাপ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।

এদিকে বুধবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের এখানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। টাকার তো প্রয়োজন। আইএমএফের ঋণ আমরা গ্রহণ করবো। তবে কঠিন শর্ত আমরা মেনে নেব না। টাকার জন্য খুব হার্ড প্রি-কন্ডিশন মেনে নেওয়া সহজ নয়। আলাপ-আলোচনা চলছে। কথাবার্তা চলছে, যেটা যৌক্তিক সেটাই হবে। এই মুহূর্তে টাকা নিতে হবে, বিকল্প নেই। অর্থ আমরা নেব, তবে কঠিন শর্তে নয়।

কঠির শর্ত কী- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অ্যাপ্লাই ইয়োর কমনসেন্স। কঠিন শর্ত যেটা লাগবে, সেটা দিয়ে কেন? আপনি একজন সাধারণ মানুষ, আপনি বুঝেন যে শর্তটা কী? আইএমএফের অতীতের ব্যাপারেও আমরা জানি। আইএমএফের শর্তগুলো কী হতে পারে, কোন শর্তটা মানলে দেশের আরও ক্ষতি হতে পারে, এমন শর্ত আমরা মানব না।’

বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে না আইএমএফ। তবে যেভাবে কমছে তা অব্যাহত থাকলে উদ্বেগজনক পর্যায়ে যেতে পারে। এ বাস্তবতায় রিজার্ভ সুরক্ষায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর শেষে প্রধান কার্যালয়ে একটি রিপোর্ট দেবে। এর পরই মূলত কী কী শর্ত থাকবে চূড়ান্তভাবে তা জানা যাবে। দু’পক্ষের সম্মতির পর ঋণ প্রস্তাব উঠবে আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদে।

আরও পড়ুন: আইএমএফর কঠিন শর্ত মেনে নেব না: ওবায়দুল কাদের

গত দু’সপ্তাহে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে মিশন। এসব বৈঠকে ডলারের দর নির্ধারণ, সুদহারের বিদ্যমান সীমা এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হিসাবায়ন পদ্ধতি, রাজস্ব, মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সফররত মিশনকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডলারের দর বৃদ্ধির এ সময়ে অসম প্রতিযোগিতা চলছিল। যে কারণে ব্যাংকগুলো নিজেরাই বাজারভিত্তিক একটি দর ঠিক করেছে। চলতি বছরের শুরুতেও আমদানিতে ৮৬ টাকার নিচে থাকা ডলার এখন ১০৬ টাকা। রেমিট্যান্সে ৮৫ টাকার নিচে থাকা ডলারের দর পাচ্ছে ১০৭ টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের এ অবস্থানকে আইএমএফ মিশন যৌক্তিক মনে করে। সুদহারের সীমার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এমনিতেই চাপে বাংলাদেশ। একবারে সীমা তুলে দিলে সুদহার অনেক বাড়বে। তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান সীমা তুলে দিলে ব্যাংকের আয় বাড়বে। যার বড় সুবিধাভোগী হবে ব্যাংকের মালিকপক্ষ। যে কারণে এখনই সীমা পুরোপুরি তুলতে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সীমা বাড়ানো বা আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সহজ শর্তে আইএমএফের ঋণ প্রদানে সম্মতি: অর্থমন্ত্রী

আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের মন্দ ঋণের বড় অংশই যে ১০টি ব্যাংকে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আলাদাভাবে তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কম দেখানোর ক্ষেত্রে যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা ছিল করোনার কারণে সাময়িক ব্যবস্থা। ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি নেওয়াসহ ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজস্ব আইন সংশোধনেও বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলমান আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কর ছাড় আছে, ধীরে ধীরে তা কমানো হবে।

আমদানিতে খরচ অনেক বাড়লেও রফতানি এবং রেমিট্যান্স সে হারে বাড়ছে না। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রফতানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রফতানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক চাপে পড়েছে। গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরোনো রিজার্ভ কমে ৮ নভেম্বর ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আইএমএফের মানদণ্ডের আলোকে হিসাব করলে নিট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

ঢাকা/এসএ