০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

৩০ বছরের বইয়ের সংগ্রহ ভেসে গেল বন্যায়

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৪৫:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২
  • / ৪১২৮ বার দেখা হয়েছে

শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা ‘সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থের লেখক ও গবেষক কল্লোল তালুকদারেরও (৪৭) বন্যায় অনেক বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিজের কষ্ট বুকে চেপে গতকাল রোববার খোঁজ নিতে কবি ইকবাল কাগজীর বাড়িতে যান তিনি। কাগজীর সর্বনাশ দেখে খুব কষ্ট পেয়েছেন তিনি।

নিজের ফেসবুকে কল্লোল তালুকদার লিখেছেন, ‘জীবনে কখনো টাকাপয়সার পেছনে ছোটেননি। নিদারুণ অভাব-অনটনের মধ্যেই যাপিত জীবন। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যেটুকু প্রয়োজন, ততটুকু পেলেই যেন তিনি খুশি। জীবনের মানেই হয়তো তাঁর কাছে অন্য রকম! তবে কাগজীর ঘরে যে ধন আছে, অনেক উচ্চশিক্ষিত উচ্চবিত্তের ঘরেও তা নেই। তাঁর ঘরভর্তি কেবল বই আর বই। সারা জীবন তিলে তিলে গড়েছেন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর ঘরটি যেন এক জ্ঞানমন্দির।’

ইকবাল কাগজীর বিস্ময়কর ও বিচিত্র সংগ্রহের কথা উল্লেখ করে কল্লোল তালুকদার লেখেন, ‘কোনো রেফারেন্স বইয়ের দরকার হলে লাইব্রেরিতে না গিয়ে প্রথমেই কাগজী ভাইয়ের দ্বারস্থ হই। আমাদের শহরের কোনো ব্যক্তি কেন, কোনো লাইব্রেরিতেও এত দুর্লভ সংগ্রহ নেই। ১৪-১৫ বছর আগে হাওরের ভেষজ উদ্ভিদের লোক-ঐতিহ্যগত ব্যবহার নিয়ে যখন কাজ করছিলাম, তখন এক দিন কথা প্রসঙ্গে কাগজী ভাইকে বলি, সুনামগঞ্জে গাছপালার ওপরে নির্ভরযোগ্য কোনো বইপত্র পাচ্ছি না। তিনি আমাকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন। একদিন গেলাম। তিনি প্রথমে বের করে দিলেন আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্যের “চিরঞ্জীব বনৌষধি”র ১১ খণ্ড বই। বললেন, “কাজে লাগে কি না দেখেন।” এরপর ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়।’

কল্লোল তালুকদার আরও লেখেন, ‘বহু লেখক-গবেষক তাঁর কাছ থেকে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। অনেকেই বইপত্র নিয়ে ফেরতও দেননি। খোয়া গেছে বহু বই। কিন্তু তাতে তিনি মোটেও বিচলিত নন। কিন্তু এবারের সর্বগ্রাসী বন্যা কাগজী ভাইয়ের সারা জীবনের সঞ্চয় গ্রাস করে নিল, ভাসিয়ে নিল—যা আর কোনো দিন ফেরত পাওয়া যাবে না। ঘরের ভেতর ছিল সাঁতার পানি। কোনো কিছুই রক্ষা করা যায়নি। অন্য সব জিনিস যায় যাক। কিন্তু দুর্লভ বই-পত্রপত্রিকা-সাময়িকী প্রভৃতির ক্ষতি অপূরণীয়। সেই সঙ্গে তাঁর লেখালেখির কম্পিউটারটিও ডুবে যায়।’

কল্লোল তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, কবি ইকবাল কাগজীর সুবিশাল সংগ্রহের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি আসলেই পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর মনটা ভেঙে গেছে। অন্য সব ক্ষতির চেয়ে বইপত্র হারানোটাই তাঁকে বেশি বিচলিত করেছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

৩০ বছরের বইয়ের সংগ্রহ ভেসে গেল বন্যায়

আপডেট: ১১:৪৫:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২

শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা ‘সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থের লেখক ও গবেষক কল্লোল তালুকদারেরও (৪৭) বন্যায় অনেক বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিজের কষ্ট বুকে চেপে গতকাল রোববার খোঁজ নিতে কবি ইকবাল কাগজীর বাড়িতে যান তিনি। কাগজীর সর্বনাশ দেখে খুব কষ্ট পেয়েছেন তিনি।

নিজের ফেসবুকে কল্লোল তালুকদার লিখেছেন, ‘জীবনে কখনো টাকাপয়সার পেছনে ছোটেননি। নিদারুণ অভাব-অনটনের মধ্যেই যাপিত জীবন। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যেটুকু প্রয়োজন, ততটুকু পেলেই যেন তিনি খুশি। জীবনের মানেই হয়তো তাঁর কাছে অন্য রকম! তবে কাগজীর ঘরে যে ধন আছে, অনেক উচ্চশিক্ষিত উচ্চবিত্তের ঘরেও তা নেই। তাঁর ঘরভর্তি কেবল বই আর বই। সারা জীবন তিলে তিলে গড়েছেন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর ঘরটি যেন এক জ্ঞানমন্দির।’

ইকবাল কাগজীর বিস্ময়কর ও বিচিত্র সংগ্রহের কথা উল্লেখ করে কল্লোল তালুকদার লেখেন, ‘কোনো রেফারেন্স বইয়ের দরকার হলে লাইব্রেরিতে না গিয়ে প্রথমেই কাগজী ভাইয়ের দ্বারস্থ হই। আমাদের শহরের কোনো ব্যক্তি কেন, কোনো লাইব্রেরিতেও এত দুর্লভ সংগ্রহ নেই। ১৪-১৫ বছর আগে হাওরের ভেষজ উদ্ভিদের লোক-ঐতিহ্যগত ব্যবহার নিয়ে যখন কাজ করছিলাম, তখন এক দিন কথা প্রসঙ্গে কাগজী ভাইকে বলি, সুনামগঞ্জে গাছপালার ওপরে নির্ভরযোগ্য কোনো বইপত্র পাচ্ছি না। তিনি আমাকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন। একদিন গেলাম। তিনি প্রথমে বের করে দিলেন আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্যের “চিরঞ্জীব বনৌষধি”র ১১ খণ্ড বই। বললেন, “কাজে লাগে কি না দেখেন।” এরপর ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়।’

কল্লোল তালুকদার আরও লেখেন, ‘বহু লেখক-গবেষক তাঁর কাছ থেকে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। অনেকেই বইপত্র নিয়ে ফেরতও দেননি। খোয়া গেছে বহু বই। কিন্তু তাতে তিনি মোটেও বিচলিত নন। কিন্তু এবারের সর্বগ্রাসী বন্যা কাগজী ভাইয়ের সারা জীবনের সঞ্চয় গ্রাস করে নিল, ভাসিয়ে নিল—যা আর কোনো দিন ফেরত পাওয়া যাবে না। ঘরের ভেতর ছিল সাঁতার পানি। কোনো কিছুই রক্ষা করা যায়নি। অন্য সব জিনিস যায় যাক। কিন্তু দুর্লভ বই-পত্রপত্রিকা-সাময়িকী প্রভৃতির ক্ষতি অপূরণীয়। সেই সঙ্গে তাঁর লেখালেখির কম্পিউটারটিও ডুবে যায়।’

কল্লোল তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, কবি ইকবাল কাগজীর সুবিশাল সংগ্রহের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি আসলেই পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর মনটা ভেঙে গেছে। অন্য সব ক্ষতির চেয়ে বইপত্র হারানোটাই তাঁকে বেশি বিচলিত করেছে।

ঢাকা/এসএ