অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ
- আপডেট: ০৮:১৫:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০২২
- / ৪১৬৪ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির পারদ কিছুটা কমেছে; ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এর অর্থ হলো গত বছরের অক্টোবর মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছরের অক্টোবরে মাসে তা কিনতে ১০৮ টাকা ৯১ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আগের মাস সেপ্টেম্বরে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে তাদের লেগেছিল ১০৯ টাকা ১০ পয়সা। আগস্টে লেগেছিল ১০৯ টাকা ৫২ পয়সা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির অক্টোবর মাসের তথ্য প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী বলেন, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, আমরা বলেছিলাম আশা করছি মূল্যস্ফীতি কমবে। মূল্যস্ফীতি ভালোভাবে কমেছে। সেপ্টম্বরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১০ ছিল। এই মাসে নেমেছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে। এটাকে বলা যায় ভাল কমেছে। দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে মূল্যস্ফীতি। আমরা খুব খুশি। আমরা বেশি খুশি যে, আমাদের কথা ফলে গেছে।’
আরও পড়ুন: রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের ঋণের সুদ হার বাড়লো
‘আরেকটি মজার বিষয় হয়েছে আরো ভালো। শূধু মূল্যস্ফীতি কমেনি। মজুরি সূচক বেড়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তি আয়ের সূচক যেটা, সেটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।
মন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমেছে, আয় একটু বেড়েছে। সুতরাং জালার যায়গাটা কমেছে। নিম্ন আয়ের ভোক্তারা কিছুটা শস্তিতে ছিলেন।’
গত আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির পারদ এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছিল। যা ছিল ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে তা খানিকটা কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে।
২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর আর এই সূচক ৯ শতাংশের ওপরে ওঠেনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। ঠিক এ রকম একসময়ে গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা ও পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়ানো হয়নি।
আরও পড়ুন: ঋণ পাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান
এর পরপরই সব ধরনের পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়। এই দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। এরপর গত ২৯ আগস্ট খানিকটা মুখ রক্ষা করতে জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা কমায় সরকার। তবে তাতে বাজারে খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি; বরং এর সামগ্রিক প্রভাবে খাদ্যপণ্য ছাড়াও যাতায়াত, পোশাক-আশাক, শিক্ষাসামগ্রীসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেশ বেড়ে যায়। তখন থেকেই মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করা হচ্ছিল। একাধিক অর্থনীতিবিদের প্রাক্কলন ছিল মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কিন্তু সরকার বা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি নিম্নমূখী হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশের অর্থনীতির উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে ৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে সেটা আড়াই শতাংশ পয়েন্টের মতো বেড়ে আগস্টে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনে নতুন সময়সূচি
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগস্টে হয়েছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ডলার
অন্যদিকে অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা কমে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য আট শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। আগস্টে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ঞয় ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সবশেষ অক্টোবরে তা আরও বেড়ে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে উঠেছে।
ঢাকা/এসএ