০৬:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কালো টাকা প্রবেশে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪ গুণ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:০৬:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১
  • / ৪১৯২ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিক থেকে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের হিড়িক পড়ে। প্রাক-বাজেট আলোচনার পর ব্যবসায়ীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে জানতে পারে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা সাদা করার) বিনিয়োগের বিধান থাকছে না। এরপর থেকে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ আরও বেশি বিনিয়োগ শুরু করে বিনিয়োগকারীরা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ৩শ কোটি টাকার কম লেনদেন হতে দেখা গেছে। তবে ১৫ দিনের ব্যবধানে সেই লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এরপর থেকে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে লেনদেন, যা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত দেড় মাসে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৪-৫ গুণ।

গত ৫ এপ্রিল লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। এরপর ১৫ দিনে বেড়ে দেড়গুণ হয়েছে। অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৯৭ কেটি ২৯ লাখ টাকা। সেই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্ট, সেখান থেকে মাসের ব্যবধানে প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট বেড়ে ৩ জুন পর্যন্ত সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার পয়েন্টে। আর লেনদেন ছাড়িয়েছে দৈনিক ২ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছে ৫৮ হাজার ১৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা।

মূলত আসন্ন বাজেটে কালোটাকা বিনা শর্তে সাদা করার সুযোগ থাকছে না- এমন খবরে গত দেড় মাস পুঁজিবাজার থাকে চাঙ্গা। সর্বশেষ মে মাস জুড়ে পুঁজিবাজারে দেড় হাজার থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত একদিনে লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরের মধ্যে চলতি অর্থ বছরের সবচেয়ে বেশি কালো টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। সর্বশেষ দেড় থেকে ২ মাস আগেও দিনে ৪শ কোটি লেনদেন হতো দেশের পুঁজিবাজারে। এখন প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লেনেদেন হচ্ছে। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৫-৬ গুণ। এটা হয়েছে পুঁজিবাজারে প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ায়। পাশাপাশি কালো টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে বেশি। বাজারে স্বার্থে আগামী অর্থবছরের কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা জরুরি বলেও মত বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষকদের।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন আগের তুলনায় ভালো। এখানে অনেক কালো টাকা ঢুকছে। এ টাকাগুলো পুঁজিবাজারেই বেশ কিছুদিন থাকবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এবছর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে আমার মনে হয়। আগামী বাজাটেও (২০২১-২২) বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের বিধান রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীসহ সরকাররের কাছে প্রস্তাব রাখছি।

ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখার ফলে এ বছর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আশা করছি কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে অব্যাহত থাকবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে উত্থানের পেছনে কালো টাকার বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রাখছে। প্রতিনিয়তই লেনদেন বাড়ছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার লক্ষ্যে এক বছর লক-ইনসহ শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগ নিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১১ জন করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৮ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে বিনিয়োগকারীরা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত ফেব্রুয়ারি (২০২১) মোট ৮ মাসে ১০ হাজার করদাতা কালো টাকা সাদা করেছে। যা স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তাদের কাছ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

১০ শতাংশ কর দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে পুঁজিবাজার বাজারে কালো টাকা সাদা করেছে ৩১১ জন বিনিয়োগকারী। তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ৪৩০ কোটি টাকা। এরপরই মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন্:

শেয়ার করুন

x
English Version

কালো টাকা প্রবেশে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪ গুণ

আপডেট: ১২:০৬:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিক থেকে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের হিড়িক পড়ে। প্রাক-বাজেট আলোচনার পর ব্যবসায়ীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে জানতে পারে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা সাদা করার) বিনিয়োগের বিধান থাকছে না। এরপর থেকে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ আরও বেশি বিনিয়োগ শুরু করে বিনিয়োগকারীরা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ৩শ কোটি টাকার কম লেনদেন হতে দেখা গেছে। তবে ১৫ দিনের ব্যবধানে সেই লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এরপর থেকে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে লেনদেন, যা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত দেড় মাসে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৪-৫ গুণ।

গত ৫ এপ্রিল লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। এরপর ১৫ দিনে বেড়ে দেড়গুণ হয়েছে। অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৯৭ কেটি ২৯ লাখ টাকা। সেই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্ট, সেখান থেকে মাসের ব্যবধানে প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট বেড়ে ৩ জুন পর্যন্ত সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার পয়েন্টে। আর লেনদেন ছাড়িয়েছে দৈনিক ২ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছে ৫৮ হাজার ১৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা।

মূলত আসন্ন বাজেটে কালোটাকা বিনা শর্তে সাদা করার সুযোগ থাকছে না- এমন খবরে গত দেড় মাস পুঁজিবাজার থাকে চাঙ্গা। সর্বশেষ মে মাস জুড়ে পুঁজিবাজারে দেড় হাজার থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত একদিনে লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরের মধ্যে চলতি অর্থ বছরের সবচেয়ে বেশি কালো টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। সর্বশেষ দেড় থেকে ২ মাস আগেও দিনে ৪শ কোটি লেনদেন হতো দেশের পুঁজিবাজারে। এখন প্রতিদিন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লেনেদেন হচ্ছে। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৫-৬ গুণ। এটা হয়েছে পুঁজিবাজারে প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ায়। পাশাপাশি কালো টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে বেশি। বাজারে স্বার্থে আগামী অর্থবছরের কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা জরুরি বলেও মত বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষকদের।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন আগের তুলনায় ভালো। এখানে অনেক কালো টাকা ঢুকছে। এ টাকাগুলো পুঁজিবাজারেই বেশ কিছুদিন থাকবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এবছর পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে আমার মনে হয়। আগামী বাজাটেও (২০২১-২২) বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের বিধান রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীসহ সরকাররের কাছে প্রস্তাব রাখছি।

ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখার ফলে এ বছর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আশা করছি কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে অব্যাহত থাকবে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে উত্থানের পেছনে কালো টাকার বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রাখছে। প্রতিনিয়তই লেনদেন বাড়ছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার লক্ষ্যে এক বছর লক-ইনসহ শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগ নিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১১ জন করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৮ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে বিনিয়োগকারীরা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত ফেব্রুয়ারি (২০২১) মোট ৮ মাসে ১০ হাজার করদাতা কালো টাকা সাদা করেছে। যা স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তাদের কাছ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

১০ শতাংশ কর দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে পুঁজিবাজার বাজারে কালো টাকা সাদা করেছে ৩১১ জন বিনিয়োগকারী। তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ৪৩০ কোটি টাকা। এরপরই মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন্: