১১:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কী আছে বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:৪৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১
  • / ৪৪১৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো লিমিটেড) সুকুক বা ইসলামী শরীয়াহসম্মত বন্ড ইস্যু করে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। কোম্পানিটি Beximco Green Sukuk Al Istisna নামের এই সুকুকের মোট ইউনিট/লটের একটি অংশ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগারীদের মধ্যে বরাদ্দ করবে। আইপিওর মাধ্যমে মোট আকারের ২৫ শতাংশ তথা ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি এই সুকুকের তথ্য কণিকা (Information Memorandum) প্রকাশ করেছে; ঘোষণা করেছে চাঁদা জমা নেওয়ার সময়সূচি।

দেশের পুঁজিবাজারে প্রথম সুকুক তালিকাভুক্ত হবে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক। স্বাভাবিক কারণেই এটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেক কৌতুহল, অনেক জিজ্ঞাসা, আশা ও উদ্বেগ। বেশ কিছু পাঠক ফোন করে এই সুকুক সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে উত্তর জানতে চেয়েছেন। পাঠকদের কৌতুহল মেটানোর চেষ্টা হিসেবে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত সব তথ্য বেক্সিমকো প্রকাশিত ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম থেকে নেওয়া হয়েছে। তাই এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে কোম্পানিটির। বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কোনোভাবেই অর্থসূচককে দায়ী করা যাবে না।

সুকুক কী?

সুকুক মূলত এক ধরনের ঋণপত্র বা বন্ড (Bond)। এই বন্ড ইসলামিক ধর্মীয় আইন, যা শরীয়াহ নামে পরিচিত-এর আলোকে পরিচালিত হয়। সাধারণ বন্ডের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বন্ডধারীদেরকে সুদ দেওয়া হয়, যার হার পূর্ব নির্ধারিত থাকে। কিন্তু সুকুক বা ইসলামী বন্ডে সুদ না দিয়ে ওই বন্ড ব্যবহার করে অর্জিত মুনাফার ভাগ দেওয়া হয়।

ইসলামে সুদ হারাম করা হয়েছে বলে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রচলিত বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। এদের বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যেই ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রোডাক্ট হিসেবে সুকুকের আবির্ভাব। মালয়েশিয়ায় ২০০০ সালে সুকুক নামের ওই প্রোডাক্টের যাত্রা শুরু হয়, যাতে শুধু মালয়েশিনরা নয়; সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিনিয়োগ করেন। মালয়েশিয়ান অর্থনীতির বাঁক পরিবর্তনে সুকুকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এই সুকুক বৈশিষ্টের দিক দিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুদারাবা বন্ডের মতো অনেকটা।

বন্ডের নাম গ্রিন সুকুক কেন?

আলোচিত বন্ডটি অনুমোদনের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুকুকের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ডিভিশনের সম্প্রসারণ এবং তিস্তা সোলার প্রকল্প ও করতোয়া সোলার প্রকল্পে ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে। প্রচলিত পদ্ধতির (ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা পুড়িয়ে) বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে করা হয়, কারণ এসব কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি পরিবেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস বাড়ায়। সৌর বিদ্যুত কোনো ধরনের দূষণ ঘটায় না বলে একে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ বলা হয়। বেক্সিমকোর সুকুকের অর্থের বড় অংশ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যয় হবে বলে সম্ভবত এর নাম গ্রিন সুকুক রাখা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের সাত-সতেরঃ

সুকুকের আকারঃ

বেক্মিমকো সুকুকের আকার ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আইপিওর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে ৭৫০ কোটি টাকা মূল্যের সুকুক। সুকুকের সখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখ। সুকুকের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। বাকী ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সুকুকের মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকার সুকুক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সুকুক প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

যেখানে ব্যয় হবে সুকুকের টাকাঃ

আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে কোম্পানির তিস্তা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ৪৬৭ কোটি টাকা, করতোয়া সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৭৮ কোটি টাকা এবং বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ডিভিশনের ব্যবসা সম্প্রসারণে ২০৫ কোটি ব্যয় করা হবে।

সুকুকে রিটার্নের হার যা হবেঃ

বেক্সিমকোর সুকুকের ভিত্তি হার (Base Rate) নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। এর পাশাপাশি বেক্সিমকো ঘোষিত লভ্যাংশের হার যদি ৯ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে বাড়তি লভ্যাংশের ১০ শতাংশ যুক্ত হবে সুকুকধারীদের রিটার্নে। ধরা যাক, বেক্সিমকো লিমিটেড ২০ লভ্যাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা সুকুকের বেজ রেটের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। এক্ষেত্রে সুকুকধারীরা ৯ শতাংশের সাথে আরও ১ দশমিক ১ শতাংশ মুনাফা পাবেন। তবে যদি বেক্সিমকো লিমিটেড ৯ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করে তাহলে সুকুকধারীরা ৯ শতাংশ হারেই মুনাফা পাবেন, তাদের মুনাফা কমবে না।

ষান্মাসিক ভিত্তিতে অর্থাৎ প্রতি ৬ মাস পর পর সুকুকধারীরা তাদের প্রাপ্য মুনাফা পাবেন।

সুকুকের মেয়াদঃ

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের মেয়াদ হবে ৫ বছর। অর্থাৎ এই মেয়াদের পর এর পূর্ণ অবসায়ন ঘটবে।

সুকুকের শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগঃ

ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম অনুসারে, সুকুকের শতভাগ বেক্সিমকোর শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে। প্রতি বছর সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুকুক শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে। তবে ৫ অথবা এর গুণিতক হারে রুপান্তর সম্ভব হবে। এই রূপান্তরের মূল্য হবে রেকর্ড তারিখের আগের ২০ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেক্সিমকোর শেয়ারের ভারিত গড় মূল্য। বাজারে সুকুকের মূল্য যা-ই থাকুক না কেন, অভিহিত মূল্যের হিসাবে এই রূপান্তর হবে। ২০০৯/১০ সালে বেক্সিমকোসহ কয়েকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ার যে পদ্ধতিতে সাধারণ শেয়ারে রুপান্তরিত হয়েছে, সেই পদ্ধতিতেই সুকুকের রুপান্তর হবে।

কোনো সুকুকধারী চাইলে তার সুকুক শেয়ারে রুপান্তর না করে তার মূল্য ফেরত নিতে পারবে।

কোম্পানি সুকুকের মুনাফা ফেরতে ব্যর্থ হলেঃ

বেক্সিমকো লিমিটেড যদি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ সুকুকের পর পর তিনটি কিস্তি অথবা টানা ১২ মাস কিস্তি প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে যেটি আগে আসে তার ভিত্তিতে এর ট্রাস্টি সুকুকের টাকায় কেনা সম্পদ অধিগ্রহণ করবে। ট্রাস্টি সুকুকের অবসায়ন ও আলোচিত সম্পদ বিক্রি করে সুকুকধারীদের প্রাপ্য শোধ করার উদ্যোগ নেবে।

আইপিওর সাবস্ক্রিপশনঃ

আগামী ১৬ আগস্ট বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকের আইপিওর চাঁদা জমা নেওয়া শুরু হবে। এটি ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

মার্কেট লটঃ

আইপিওতে ৫০টি সুকুক নিয়ে হবে এর মার্কেট লট। প্রতিটি সুকুকের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। তাই আইপিওতে ন্যুনতম ৫ হাজার টাকা লাগবে আবেদনের জন্য।

অন্যান্য তথ্যঃ 

আলোচিত সুকুকের লিড ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড। আর কো-ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আছে অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। সুকুকের ট্রাস্টির দায়িত্বে আছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সূত্র:অর্থসূচক

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

কী আছে বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকে

আপডেট: ০৭:৪৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো লিমিটেড) সুকুক বা ইসলামী শরীয়াহসম্মত বন্ড ইস্যু করে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। কোম্পানিটি Beximco Green Sukuk Al Istisna নামের এই সুকুকের মোট ইউনিট/লটের একটি অংশ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগারীদের মধ্যে বরাদ্দ করবে। আইপিওর মাধ্যমে মোট আকারের ২৫ শতাংশ তথা ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি এই সুকুকের তথ্য কণিকা (Information Memorandum) প্রকাশ করেছে; ঘোষণা করেছে চাঁদা জমা নেওয়ার সময়সূচি।

দেশের পুঁজিবাজারে প্রথম সুকুক তালিকাভুক্ত হবে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক। স্বাভাবিক কারণেই এটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেক কৌতুহল, অনেক জিজ্ঞাসা, আশা ও উদ্বেগ। বেশ কিছু পাঠক ফোন করে এই সুকুক সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে উত্তর জানতে চেয়েছেন। পাঠকদের কৌতুহল মেটানোর চেষ্টা হিসেবে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত সব তথ্য বেক্সিমকো প্রকাশিত ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম থেকে নেওয়া হয়েছে। তাই এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে কোম্পানিটির। বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কোনোভাবেই অর্থসূচককে দায়ী করা যাবে না।

সুকুক কী?

সুকুক মূলত এক ধরনের ঋণপত্র বা বন্ড (Bond)। এই বন্ড ইসলামিক ধর্মীয় আইন, যা শরীয়াহ নামে পরিচিত-এর আলোকে পরিচালিত হয়। সাধারণ বন্ডের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বন্ডধারীদেরকে সুদ দেওয়া হয়, যার হার পূর্ব নির্ধারিত থাকে। কিন্তু সুকুক বা ইসলামী বন্ডে সুদ না দিয়ে ওই বন্ড ব্যবহার করে অর্জিত মুনাফার ভাগ দেওয়া হয়।

ইসলামে সুদ হারাম করা হয়েছে বলে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রচলিত বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। এদের বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যেই ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রোডাক্ট হিসেবে সুকুকের আবির্ভাব। মালয়েশিয়ায় ২০০০ সালে সুকুক নামের ওই প্রোডাক্টের যাত্রা শুরু হয়, যাতে শুধু মালয়েশিনরা নয়; সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিনিয়োগ করেন। মালয়েশিয়ান অর্থনীতির বাঁক পরিবর্তনে সুকুকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এই সুকুক বৈশিষ্টের দিক দিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুদারাবা বন্ডের মতো অনেকটা।

বন্ডের নাম গ্রিন সুকুক কেন?

আলোচিত বন্ডটি অনুমোদনের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুকুকের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ডিভিশনের সম্প্রসারণ এবং তিস্তা সোলার প্রকল্প ও করতোয়া সোলার প্রকল্পে ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে। প্রচলিত পদ্ধতির (ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা পুড়িয়ে) বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে করা হয়, কারণ এসব কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি পরিবেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস বাড়ায়। সৌর বিদ্যুত কোনো ধরনের দূষণ ঘটায় না বলে একে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ বলা হয়। বেক্সিমকোর সুকুকের অর্থের বড় অংশ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যয় হবে বলে সম্ভবত এর নাম গ্রিন সুকুক রাখা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের সাত-সতেরঃ

সুকুকের আকারঃ

বেক্মিমকো সুকুকের আকার ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আইপিওর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে ৭৫০ কোটি টাকা মূল্যের সুকুক। সুকুকের সখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখ। সুকুকের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। বাকী ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সুকুকের মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকার সুকুক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সুকুক প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

যেখানে ব্যয় হবে সুকুকের টাকাঃ

আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে কোম্পানির তিস্তা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ৪৬৭ কোটি টাকা, করতোয়া সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৭৮ কোটি টাকা এবং বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ডিভিশনের ব্যবসা সম্প্রসারণে ২০৫ কোটি ব্যয় করা হবে।

সুকুকে রিটার্নের হার যা হবেঃ

বেক্সিমকোর সুকুকের ভিত্তি হার (Base Rate) নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। এর পাশাপাশি বেক্সিমকো ঘোষিত লভ্যাংশের হার যদি ৯ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে বাড়তি লভ্যাংশের ১০ শতাংশ যুক্ত হবে সুকুকধারীদের রিটার্নে। ধরা যাক, বেক্সিমকো লিমিটেড ২০ লভ্যাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা সুকুকের বেজ রেটের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। এক্ষেত্রে সুকুকধারীরা ৯ শতাংশের সাথে আরও ১ দশমিক ১ শতাংশ মুনাফা পাবেন। তবে যদি বেক্সিমকো লিমিটেড ৯ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করে তাহলে সুকুকধারীরা ৯ শতাংশ হারেই মুনাফা পাবেন, তাদের মুনাফা কমবে না।

ষান্মাসিক ভিত্তিতে অর্থাৎ প্রতি ৬ মাস পর পর সুকুকধারীরা তাদের প্রাপ্য মুনাফা পাবেন।

সুকুকের মেয়াদঃ

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের মেয়াদ হবে ৫ বছর। অর্থাৎ এই মেয়াদের পর এর পূর্ণ অবসায়ন ঘটবে।

সুকুকের শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগঃ

ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম অনুসারে, সুকুকের শতভাগ বেক্সিমকোর শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকবে। প্রতি বছর সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুকুক শেয়ারে রূপান্তর করা যাবে। তবে ৫ অথবা এর গুণিতক হারে রুপান্তর সম্ভব হবে। এই রূপান্তরের মূল্য হবে রেকর্ড তারিখের আগের ২০ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেক্সিমকোর শেয়ারের ভারিত গড় মূল্য। বাজারে সুকুকের মূল্য যা-ই থাকুক না কেন, অভিহিত মূল্যের হিসাবে এই রূপান্তর হবে। ২০০৯/১০ সালে বেক্সিমকোসহ কয়েকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ার যে পদ্ধতিতে সাধারণ শেয়ারে রুপান্তরিত হয়েছে, সেই পদ্ধতিতেই সুকুকের রুপান্তর হবে।

কোনো সুকুকধারী চাইলে তার সুকুক শেয়ারে রুপান্তর না করে তার মূল্য ফেরত নিতে পারবে।

কোম্পানি সুকুকের মুনাফা ফেরতে ব্যর্থ হলেঃ

বেক্সিমকো লিমিটেড যদি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ সুকুকের পর পর তিনটি কিস্তি অথবা টানা ১২ মাস কিস্তি প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে যেটি আগে আসে তার ভিত্তিতে এর ট্রাস্টি সুকুকের টাকায় কেনা সম্পদ অধিগ্রহণ করবে। ট্রাস্টি সুকুকের অবসায়ন ও আলোচিত সম্পদ বিক্রি করে সুকুকধারীদের প্রাপ্য শোধ করার উদ্যোগ নেবে।

আইপিওর সাবস্ক্রিপশনঃ

আগামী ১৬ আগস্ট বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকের আইপিওর চাঁদা জমা নেওয়া শুরু হবে। এটি ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

মার্কেট লটঃ

আইপিওতে ৫০টি সুকুক নিয়ে হবে এর মার্কেট লট। প্রতিটি সুকুকের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। তাই আইপিওতে ন্যুনতম ৫ হাজার টাকা লাগবে আবেদনের জন্য।

অন্যান্য তথ্যঃ 

আলোচিত সুকুকের লিড ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড। আর কো-ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আছে অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। সুকুকের ট্রাস্টির দায়িত্বে আছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সূত্র:অর্থসূচক

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: