০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান আসছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:২১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুন ২০২১
  • / ৪৪৯৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান আসছে। এ দুই খাতে টাকা বিনিয়োগ করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশে সংশোধনী আনা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কালোটাকা মূলধারার অর্থনীতিতে আনতে চলতি বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজার বা আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়, যা ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগের মেয়াদ না বাড়ানোয় আইনগতভাবে তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

এ সুযোগ বাতিল করার কারণ হচ্ছে- দেশে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ। এ সুযোগ অব্যাহত রাখা হলে করদাতারা নিয়মিত কর না দিয়ে তা লুকিয়ে রেখে পরে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে টাকা বৈধ করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে রাজস্ব আদায় কমার পাশাপাশি সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতকে চাঙা করতে কালোটাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান করা হচ্ছে। এ দুই খাতে কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করদাতা যে হারে কর দেবেন, তাকে এর অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এতে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

এ বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ কোনো পদ্ধতিতেই বৈধ করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। এটি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক এবং অনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু তাই নয়, এ সিদ্ধান্ত সরকারের দুর্নীতিবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পরিপন্থি। 

চলতি বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়। ১৯এএএএ ধারায় ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক, শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্য সিকিউরিটিজ এবং শেয়ারবাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য সব সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে এ সুযোগ দেওয়া হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, ঘোষণা দেওয়ার পর এক বছর বিনিয়োগকৃত অর্থ শেয়ারবাজার থেকে ওঠানো যাবে না। একইভাবে একই হারে কর দিয়ে ১৯এএএএএ ধারায় জমি-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় একে ‘বিশেষ সুবিধা’ বলা হচ্ছে। 

এর বাইরেও আরও ৩ পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ (কালোটাকা সাদা) করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালোটাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধু আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে।

এ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়। 

সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে বিশেষ সুবিধা বাতিল হচ্ছে। কিন্তু আগের ৩ পদ্ধতিতে টাকা সাদা করা যাবে। এ জন্য কোনো সংস্থা যাতে আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে না পারে সে জন্য আয়কর অধ্যাদেশে প্রভিশন রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজার বা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। 

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলে, আয়ের উৎসের ব্যাপারে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না, এটি ইতিবাচক। তবে করের হার বাড়লে, বিনিয়োগের জন্য সেটি আকর্ষণীয় থাকে না। তার মতে, চলতি অর্থবছরে যে সুযোগ রয়েছে, সেভাবে ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত। 

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এত বেশি ট্যাক্স দিয়ে কেউ কালোটাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তখন দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিনা প্রশ্ন চলতি বাজেটে মতো আগামীতেও এ খাতে টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আবাসন খাতের ১৭০টির বেশি খাত এবং ৩৫ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এ খাতের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে-চিন্তে নেওয়া উচিত। কারও উপদেশ বা সমালোচনার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলে দেশ ও দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

কালোটাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে এ সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ এর বিরোধিতা করে আসছে। ’৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে।

তৎকালীন সময়ে এ থেকে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। পরে এ সুবিধা বহাল থাকায় প্রতি বছরই কালোটাকা সাদা করার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ’৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়, সরকার আয়কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ’৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার আয়কর পায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ’৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা। 

এরপর ধারাবাহিকভাবে কালোটাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত এক লাফে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

 

শেয়ার করুন

x
English Version

পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান আসছে

আপডেট: ০৬:২১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান আসছে। এ দুই খাতে টাকা বিনিয়োগ করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশে সংশোধনী আনা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কালোটাকা মূলধারার অর্থনীতিতে আনতে চলতি বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজার বা আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়, যা ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগের মেয়াদ না বাড়ানোয় আইনগতভাবে তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

এ সুযোগ বাতিল করার কারণ হচ্ছে- দেশে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ। এ সুযোগ অব্যাহত রাখা হলে করদাতারা নিয়মিত কর না দিয়ে তা লুকিয়ে রেখে পরে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে টাকা বৈধ করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে রাজস্ব আদায় কমার পাশাপাশি সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতকে চাঙা করতে কালোটাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান করা হচ্ছে। এ দুই খাতে কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করদাতা যে হারে কর দেবেন, তাকে এর অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এতে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

এ বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ কোনো পদ্ধতিতেই বৈধ করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। এটি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক এবং অনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু তাই নয়, এ সিদ্ধান্ত সরকারের দুর্নীতিবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পরিপন্থি। 

চলতি বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়। ১৯এএএএ ধারায় ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক, শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্য সিকিউরিটিজ এবং শেয়ারবাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য সব সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে এ সুযোগ দেওয়া হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, ঘোষণা দেওয়ার পর এক বছর বিনিয়োগকৃত অর্থ শেয়ারবাজার থেকে ওঠানো যাবে না। একইভাবে একই হারে কর দিয়ে ১৯এএএএএ ধারায় জমি-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় একে ‘বিশেষ সুবিধা’ বলা হচ্ছে। 

এর বাইরেও আরও ৩ পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ (কালোটাকা সাদা) করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালোটাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধু আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে।

এ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়। 

সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে বিশেষ সুবিধা বাতিল হচ্ছে। কিন্তু আগের ৩ পদ্ধতিতে টাকা সাদা করা যাবে। এ জন্য কোনো সংস্থা যাতে আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে না পারে সে জন্য আয়কর অধ্যাদেশে প্রভিশন রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজার বা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। 

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলে, আয়ের উৎসের ব্যাপারে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না, এটি ইতিবাচক। তবে করের হার বাড়লে, বিনিয়োগের জন্য সেটি আকর্ষণীয় থাকে না। তার মতে, চলতি অর্থবছরে যে সুযোগ রয়েছে, সেভাবে ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত। 

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এত বেশি ট্যাক্স দিয়ে কেউ কালোটাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তখন দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিনা প্রশ্ন চলতি বাজেটে মতো আগামীতেও এ খাতে টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আবাসন খাতের ১৭০টির বেশি খাত এবং ৩৫ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এ খাতের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে-চিন্তে নেওয়া উচিত। কারও উপদেশ বা সমালোচনার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলে দেশ ও দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

কালোটাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে এ সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ এর বিরোধিতা করে আসছে। ’৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে।

তৎকালীন সময়ে এ থেকে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। পরে এ সুবিধা বহাল থাকায় প্রতি বছরই কালোটাকা সাদা করার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ’৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়, সরকার আয়কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ’৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার আয়কর পায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ’৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা। 

এরপর ধারাবাহিকভাবে কালোটাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত এক লাফে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: