০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটুক বাজেটে: আবু আহমেদ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩
  • / ৪৫৪১ বার দেখা হয়েছে

গত কয়েক বছর বাজেটের আগে পুঁজিবাজার নিয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বাজেটে তা প্রতিফলিত হয় না। এমনকি পাঁচ বছর আগে থেকে যে সুবিধাগুলো শেয়ারবাজারের জন্য চলে আসছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন কিছু দেয়নি।

এটা দুঃখজনক। যেমন—একসময় এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ট ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি ছিল । অর্থাৎ ব্যক্তি পর্যায়ে যখন ডিভিডেন্ট দেওয়া হয়, তখন কিন্তু এক লাখ টাকা পর্যন্ত বাদ রেখে বাকিটার পর ধরা হতো। ব্যক্তি যখন ইনকাম ট্যাক্স ফাইল রিটার্ন সাবমিট করে, সে সর্বমোট ইনকাম থেকে এক লাখ টাকা বাদ দিতে পারত।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

কিন্তু সেটা একটা পর্যায়ে কমাতে কমাতে ২৫ হাজার করা হয়। গত বছর সেটা ৫০ হাজার করা হয়েছে। অর্থাৎ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তারপর বহুদিন ধরে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সে লিস্টেড কম্পানি এবং ননলিস্টেড কম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ পার্থক্য ছিল।

লিস্টেড হলে ননলিস্টেডগুলো থেকে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স ১০ শতাংশ কম দিত। তিন বছর আগে বাজেটে লিস্টেড কম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে না কমিয়ে ননলিস্টেড কম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমানো হয়েছে। সেটা সাড়ে ৭ শতাংশ। ফলে ১০ শতাংশের পার্থক্যটা আর থাকল না।

১০ শতাংশ দেওয়া হয়েছিল প্রণোদনা হিসেবে—ভালো কম্পানি যেন লিস্টিংয়ে আসে।

কমিয়ে দেওয়ার অর্থ কী? ভালো কম্পানিগুলো লিস্টিংয়ে আসুক, এটা কি অর্থ মন্ত্রণালয় চায় না? এবারও একটা দাবি আছে সবার—ডিএসই দিয়েছে, সিএসই দিয়েছে। আমরাও বলছি, এটাকে কমপক্ষে ১০ শতাংশে রাখা হোক। পার্থক্য রাখুক। আর অন্য পরামর্শ হলো পার্থক্য ১৫ শতাংশ করা। মানে ননলিস্টেডের তুলনায় লিস্টেড কম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কম দেবে। ওটা কয়েক বছরের জন্য হলেও গ্রহণ করা উচিত। কারণ ভালো কম্পানিগুলো লিস্টেডে আনার জন্য আর কোনো ভালো পন্থা নেই।

বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার কিনলে একটা ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স পেত। কথাটা স্পষ্ট করে বলি, ইনকাম ট্যাক্সের রিবেট পেত। তাঁদের যে ট্যাক্সেবল ইনকাম, তার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করলে অ্যাসেস করা যে ইনকাম ট্যাক্স, সেটার ১৫ শতাংশ রিবেট পেত—সেটা নাকি তুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২৩ বছর ধরে শেয়ারবাজরের পক্ষে এ সুযোগটা ছিল। এবার যদি তুলে দেয়, তাহলে একটা হতাশা দেখা দেবে। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হবে। এরই মধ্যে এটার সমালোচনা করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে।

আমার যতটুকু মনে পড়ে, এখন থেকে ২৩ বছর আগে ওই সুযোগটা দেওয়া হয়েছিল সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে এবং পুঁজিবাজারে। বলা হয়েছিল, সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার কিনলে তাঁরাও ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স তথা সুবিধাটা পাবেন। এখন এটা যদি তুলে দেওয়া হয়, তাহলে একটা হতাশা দেখে দেবে। ধীরে ধীরে সবই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১০ শতাংশ করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কম ছিল লিস্টেডগুলোর, সেটাও কমিয়ে দেওয়া হলো। তারপর একসময় এক লাখ টাকা ডিভিডেন্ড ইনকাম ট্যাক্স মওকুফ ছিল, সেটাও উঠিয়ে দেওয়া হলো। এখন শুনছি যে ইনভেস্টমেন্ট করলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের কোনো সুবিধা থাকবে না।

১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে বিপর্যয় হলো, তখন ওই কম্পানিগুলো যদি ২০ শতাংশের বেশি ডিভিডেন্ড দিত, তখন কম্পানিগুলোকে তাদের সর্বমোট ইনকামের ওপর একটা ট্যাক্স রিবেট দেওয়া হতো। তাদের প্রগ্রেসিভওয়েতে কিছু সুবিধা দেওয়া হতো। ওটা দেওয়া হতো, যাতে কম্পানিগুলো বেশি বেশি ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের দেয়। এটা ৮-১০ বছর চলছিল। কিন্তু পরে এটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

একসময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেণ্ড ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি ছিল, সেটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কম্পানিগুলো ভালো ট্যাক্স দিলে তারাও একটা সুবিধা পেত, সেটাও তুলে নেওয়া হয়েছে। এ বছর শুনছি, সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার কিনলে ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স যেটা পেত, সেটাও নাকি তুলে নেবে। তাহলে শেয়ারবাজারের জন্য কিছু করছে; এটা তারা বলে কিভাবে। সবই তো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হয়েছে। আশা করি এগুলো তারা দেখবে। শেয়ারবাজারের জন্য কিছু বাস্তব প্রণোদনা না থাকে, তাহলে ওটা বলে লাভ নেই।

আরও পড়ুন: তিন মাসের মধ্যে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার মেহমুদ ইক্যুইটিজকে ক্রয়ের নির্দেশ

এখন একটা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এটা যদি গ্রহণ করত, তাহলে একটা যুগান্তরকারী পরিবর্তন আসত। সেটা হচ্ছে, এখন কম্পানিগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যখন কোনো ব্যক্তিকে ডিভিডেন্ড দেয়, সেখানে ১০ শতাংশ উৎস কর কেটে রাখে। ওটাকে ফাইনাল ট্যাক্স হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের অ্যাসোসিয়েশন থেকে। ওরাও পরামর্শ দিয়েছে, ১০ শতাংশ যেটা কাটে, সেটাই ফাইনাল ট্যাক্স হিসেবে গ্রহণ করা হোক। এরপর যেই টাকাটা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়, সেটা যেন পরে আবার ট্যাক্সবল না করে। এখন যেটা করছে ওই ১০ শতাংশ তো নিচ্ছেই, ব্যক্তির হাতে যখন বাকি টাকাটা যায়, ওই ইনকাম ট্যাক্সের সময় আবার অ্যাসেস করে কারো আরো ১৫ শতাংশ দিতে হয়। মনে করেন, আপনি একজনকে ১০ শতাংশ দিয়ে দিলেন। আমাদের ইনকাম ট্যাক্স রেট সর্বোচ্চ হচ্ছে ২৫ শতাংশ। এখন আপনার ইনকাম যদি বেশি হয়, ২৫ শতাংশে যদি অ্যাসেস হয়, ফ্ল্যাপগুলো বাদ দিয়ে আপনাকে আরো ১৫ শতাংশ দিতে হবে; ওই ইনকামের ওপর, যে ইনকাম আপনি পেয়েছেন। এখন পরামর্শ হচ্ছে, ১০ শতাংশকে আপনারা ফাইনালে নেন, আর বাকিটা ট্যাক্সের বাইরে রাখেন।

শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা অনেকভাবেই দেওয়া যায়। এমনি বলা হয়, আমি অনেক শুনি যে পলিসিমেকারদের থেকে এত কিছু করা হলো। আসলে কিছুই করা হয় না। সত্যি কথা বলতে কী, শেয়ারবাজারের জন্য যে উৎসাহগুলো ছিল, প্রণোদনাগুলো ছিল, পর্যায়ক্রমে প্রণোদনাগুলো উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এখানে তেমন কিছু নেই এখন।

এখানে একটা কথা বলা ভালো, বাংলাদেশে কিন্তু করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। মানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স বেশি। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স হচ্ছে কম্পানির আয়ের ওপর ট্যাক্স। এটা কিন্তু অন্য দেশে আরো কম। আমাদের এখানে হচ্ছে সর্বনিম্ন সাড়ে ২২ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ। ৪৫ শতাংশ দিচ্ছে সিগারেট কম্পানি। টেলিফোন কম্পানিগুলো দিচ্ছে ৪০ শতাংশ। ৩৭.৫ শতাংশ দিচ্ছে ব্যাংকিং কম্পানিগুলো। আর ছোট ছোট কিছু কম্পানির ২২.৫ শতাংশ। কিন্তু অন্য দেশে এত ক্যাটাগরি নেই। মোটামুটি এটা ২৫ শতাংশের নিচে। ভারতে এটা এখন ২০ শতাংশের নিচে চলে গেছে। অন্য উন্নত দেশেও করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে ফেলা হয়েছে। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমালে ইনভেস্টমেন্ট বাড়ে। আর শেয়ারহোল্ডাররা উপকৃত হন, বিনিয়োগও বাড়ে। কারণ কম্পানির হাতে টাকা বেশি থাকে তখন। আর এটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে কম্পানির হাতে টাকা থাকলে বা শেয়ারহোল্ডারদের হাতে যখন টাকা থাকে, তখন সেটা বিনিয়োগ হয়। সেটা ভোগে যায় না; বিনিয়োগে যায়।

আমাদের মতো দেশে কম্পানির যদি রিটেইল আর্নিংস বৃদ্ধি পায়, তাহলে পুনর্বিনিয়োগ হয়। অর্থনীতি উপকৃত হয়। অর্থনীতি উপকৃত হলে সরকারের ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ ট্যাক্স বেশি পাবে। কম্পানিগুলো যদি বেশি বিনিয়োগ করে, ভ্যাট কালেকশনও বাড়বে। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কিন্তু কম রেটে বেশি বাড়ে; ইনকামটা তখন বেশি করবে তারা। সে জন্য অন্য অনেক দেশ—ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত গত এক দশকে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকা উচিত। বাংলাদেশ গ্লোবালি সংযুক্ত। অন্যান্য দেশের করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সের অবস্থা দেখা উচিত। আমাদের দেশে কি এটাও দেখা উচিত। আমি মনে করি যে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমানোর পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। বাজেটে তার প্রতিফলন হওয়া উচিত।

এখন শেয়ারবাজারের অবস্থা খুব করুণ। ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বেচাকেনা হয়। যেটা হওয়া উচিত ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস একটা দেওয়া হয়েছে। আমরা পছন্দ করি বা না করি—সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন দিয়েছে, যার কারণে খুবই খারাপ অবস্থা। এই অবস্থায় যদি কিছুটা বাজেটারি প্রণোদনার মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে সমর্থন দেওয়া হয়, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন এবং দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

গত তিন-চার বছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের প্রতি কোনো রকম মনোযোগ না দিয়ে যেসব বাজেট পেশ করা হয়েছে, এবারেরটা আশা করি সে রকম হবে না। গত তিন-চারটা বাজেটে শেয়ারবাজারের প্রতি কোনো রকম মনোযোগই দেওয়া হয়নি। এবারের বাজেটে যদি কিছু দেয়, দিতে পারে। সরকারের হাতে অনেক কিছু আছে। আমরা তো সরাসরি অর্থ চাই না। শেয়ারবাজারে সরাসরি কেউ অর্থ চাইবে না। ট্যাক্স কমানোর মাধ্যমে কিছু প্রণোদনা চাওয়া হচ্ছে। সেটা ব্যক্তির ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, কম্পানির ইনকাম ট্যাক্স, করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও সত্য। যদি এই দুই ক্ষেত্রে সুবিধাটুকু দেওয়া যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। অর্থনীতি উপকৃত হবে। এবং অর্থনীতিতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে। সুতরাং ট্যাক্স এক্সপ্লোরাইজেশন করা উচিত।

আরও পড়ুন: এমকে ফুটওয়্যারের কিউআইও আবেদনের তারিখ নির্ধারণ

সরকার যদি ট্যাক্সের কালেকশনের একটা অনেক বড় লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়, সেটা কিন্তু ভালো হবে না। সেটা ভালো না হওয়ার কারণ হলো, অর্থনীতি যদি গ্রো না করে; ৭ শতাংশের বেশি গ্রো করলে বেশি ট্যাক্স পাবে। অর্থনীতি ৬ বা ৫ শতাংশ গ্রো করলে কম ট্যাক্স পাবে—এটা স্বাভাবিক। অর্থনীতি গ্রো করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট দরকার। ইনভেস্টমেন্ট আসবে কম্পানির ইনকাম থেকে। কম্পানির ইনকাম ট্যাক্স থেকে সরকার যদি বেশি নিয়ে যায়, তাহলে তো ইনভেস্টমেন্ট কম হবে।

এখানে একটা কথা বলা ভালো, যেসব কম্পানি লিস্টেড, তারা কিন্তু হিসাবকিতাবে স্বচ্ছ। যারা লিস্টেড না, তাদের সুবিধা দিয়েও লাভ নেই। কারণ তারা তো ইনকাম ট্যাক্স শো করে না। যারা লিস্টেট তাদের বছরে চারবার ইনকাম ডিসক্লোজ করতে হয়। তারা এ জন্য ইনকাম লুকাতে পারে না, ট্যাক্সও বেশি দেয়। ইনকাম হাইড করলে তো ট্যাক্স কম দেবে। এরা ইনকাম হাইড করে না, এদের থেকে ট্যাক্স বেশি পায়। টোটাল কম্পানি সার্কেলে যে ট্যাক্স কালেক্ট করে তার ৮০ শতাংশ আসছে তালিকাভুক্ত কম্পানি থেকে। তাহলে তো পলিসিতে তালিকাভুক্তির জন্য প্রণোদনা থাকা উচিত।

টোব্যাকো কম্পানি ৩০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে। একটি মোবাইল কম্পানি ১০০ টাকা ইনকাম করে সরকারকে ৬০ টাকা দিচ্ছে। ট্যাক্স তো পাচ্ছে এগুলো থেকে। এখন এদের ওপর যদি বেশি চাপাচাপি করা হয়, তাহলে এদের ব্যবসা মন্দা যাবে। এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি অনুরোধ করব, যেসব কম্পানি লিস্টেড আছে, এদের ওপর আর চাপ না দেওয়ার জন্য। বড় যারা লিস্টিংয়ে আসছে না, তাদের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। লিস্টিংয়ে এলে ট্রান্সপারেন্সি হয়। স্বচ্ছতা আসে। তারা তখন ট্যাক্সও বেশি দেয়। হাজার হাজার কম্পানি লিস্টিংয়ের বাইরে আছে, এরা ট্যাক্স তো দেয় না বললেই চলে। এ জন্য আমাদের পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা বাজেট যখন পেশ করে, সেটা পলিসির ফর্মুলেশন বা পলিসিতে পরিবর্তনের সময়—এটাকে বলা হয় ফিন্যান্স ভ্যালি। ফিন্যান্স ভ্যালি ট্যাক্স প্রপোজালগুলো এমনভাবে করা উচিত, যেটা শেয়ারবাজারের পক্ষে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের পক্ষে যায়। এবং কম্পানিগুলো যাতে অর্থনীতিতে আরো ভালো বিনিয়োগ করতে পারে, এ লক্ষ্যে প্রণোদনামূলক সুবিধা বা রিলিফ কিছু হওয়া উচিত। সূত্র: কালের কণ্ঠ

শেয়ার করুন

x
English Version

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটুক বাজেটে: আবু আহমেদ

আপডেট: ০৬:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩

গত কয়েক বছর বাজেটের আগে পুঁজিবাজার নিয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বাজেটে তা প্রতিফলিত হয় না। এমনকি পাঁচ বছর আগে থেকে যে সুবিধাগুলো শেয়ারবাজারের জন্য চলে আসছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন কিছু দেয়নি।

এটা দুঃখজনক। যেমন—একসময় এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ট ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি ছিল । অর্থাৎ ব্যক্তি পর্যায়ে যখন ডিভিডেন্ট দেওয়া হয়, তখন কিন্তু এক লাখ টাকা পর্যন্ত বাদ রেখে বাকিটার পর ধরা হতো। ব্যক্তি যখন ইনকাম ট্যাক্স ফাইল রিটার্ন সাবমিট করে, সে সর্বমোট ইনকাম থেকে এক লাখ টাকা বাদ দিতে পারত।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

কিন্তু সেটা একটা পর্যায়ে কমাতে কমাতে ২৫ হাজার করা হয়। গত বছর সেটা ৫০ হাজার করা হয়েছে। অর্থাৎ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তারপর বহুদিন ধরে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সে লিস্টেড কম্পানি এবং ননলিস্টেড কম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ পার্থক্য ছিল।

লিস্টেড হলে ননলিস্টেডগুলো থেকে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স ১০ শতাংশ কম দিত। তিন বছর আগে বাজেটে লিস্টেড কম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে না কমিয়ে ননলিস্টেড কম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমানো হয়েছে। সেটা সাড়ে ৭ শতাংশ। ফলে ১০ শতাংশের পার্থক্যটা আর থাকল না।

১০ শতাংশ দেওয়া হয়েছিল প্রণোদনা হিসেবে—ভালো কম্পানি যেন লিস্টিংয়ে আসে।

কমিয়ে দেওয়ার অর্থ কী? ভালো কম্পানিগুলো লিস্টিংয়ে আসুক, এটা কি অর্থ মন্ত্রণালয় চায় না? এবারও একটা দাবি আছে সবার—ডিএসই দিয়েছে, সিএসই দিয়েছে। আমরাও বলছি, এটাকে কমপক্ষে ১০ শতাংশে রাখা হোক। পার্থক্য রাখুক। আর অন্য পরামর্শ হলো পার্থক্য ১৫ শতাংশ করা। মানে ননলিস্টেডের তুলনায় লিস্টেড কম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কম দেবে। ওটা কয়েক বছরের জন্য হলেও গ্রহণ করা উচিত। কারণ ভালো কম্পানিগুলো লিস্টেডে আনার জন্য আর কোনো ভালো পন্থা নেই।

বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার কিনলে একটা ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স পেত। কথাটা স্পষ্ট করে বলি, ইনকাম ট্যাক্সের রিবেট পেত। তাঁদের যে ট্যাক্সেবল ইনকাম, তার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করলে অ্যাসেস করা যে ইনকাম ট্যাক্স, সেটার ১৫ শতাংশ রিবেট পেত—সেটা নাকি তুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২৩ বছর ধরে শেয়ারবাজরের পক্ষে এ সুযোগটা ছিল। এবার যদি তুলে দেয়, তাহলে একটা হতাশা দেখা দেবে। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হবে। এরই মধ্যে এটার সমালোচনা করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে।

আমার যতটুকু মনে পড়ে, এখন থেকে ২৩ বছর আগে ওই সুযোগটা দেওয়া হয়েছিল সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে এবং পুঁজিবাজারে। বলা হয়েছিল, সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার কিনলে তাঁরাও ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স তথা সুবিধাটা পাবেন। এখন এটা যদি তুলে দেওয়া হয়, তাহলে একটা হতাশা দেখে দেবে। ধীরে ধীরে সবই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১০ শতাংশ করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কম ছিল লিস্টেডগুলোর, সেটাও কমিয়ে দেওয়া হলো। তারপর একসময় এক লাখ টাকা ডিভিডেন্ড ইনকাম ট্যাক্স মওকুফ ছিল, সেটাও উঠিয়ে দেওয়া হলো। এখন শুনছি যে ইনভেস্টমেন্ট করলে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের কোনো সুবিধা থাকবে না।

১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে বিপর্যয় হলো, তখন ওই কম্পানিগুলো যদি ২০ শতাংশের বেশি ডিভিডেন্ড দিত, তখন কম্পানিগুলোকে তাদের সর্বমোট ইনকামের ওপর একটা ট্যাক্স রিবেট দেওয়া হতো। তাদের প্রগ্রেসিভওয়েতে কিছু সুবিধা দেওয়া হতো। ওটা দেওয়া হতো, যাতে কম্পানিগুলো বেশি বেশি ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের দেয়। এটা ৮-১০ বছর চলছিল। কিন্তু পরে এটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

একসময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেণ্ড ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি ছিল, সেটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কম্পানিগুলো ভালো ট্যাক্স দিলে তারাও একটা সুবিধা পেত, সেটাও তুলে নেওয়া হয়েছে। এ বছর শুনছি, সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার কিনলে ইনভেস্টমেন্ট অ্যালাউন্স যেটা পেত, সেটাও নাকি তুলে নেবে। তাহলে শেয়ারবাজারের জন্য কিছু করছে; এটা তারা বলে কিভাবে। সবই তো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হয়েছে। আশা করি এগুলো তারা দেখবে। শেয়ারবাজারের জন্য কিছু বাস্তব প্রণোদনা না থাকে, তাহলে ওটা বলে লাভ নেই।

আরও পড়ুন: তিন মাসের মধ্যে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার মেহমুদ ইক্যুইটিজকে ক্রয়ের নির্দেশ

এখন একটা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এটা যদি গ্রহণ করত, তাহলে একটা যুগান্তরকারী পরিবর্তন আসত। সেটা হচ্ছে, এখন কম্পানিগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যখন কোনো ব্যক্তিকে ডিভিডেন্ড দেয়, সেখানে ১০ শতাংশ উৎস কর কেটে রাখে। ওটাকে ফাইনাল ট্যাক্স হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের অ্যাসোসিয়েশন থেকে। ওরাও পরামর্শ দিয়েছে, ১০ শতাংশ যেটা কাটে, সেটাই ফাইনাল ট্যাক্স হিসেবে গ্রহণ করা হোক। এরপর যেই টাকাটা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়, সেটা যেন পরে আবার ট্যাক্সবল না করে। এখন যেটা করছে ওই ১০ শতাংশ তো নিচ্ছেই, ব্যক্তির হাতে যখন বাকি টাকাটা যায়, ওই ইনকাম ট্যাক্সের সময় আবার অ্যাসেস করে কারো আরো ১৫ শতাংশ দিতে হয়। মনে করেন, আপনি একজনকে ১০ শতাংশ দিয়ে দিলেন। আমাদের ইনকাম ট্যাক্স রেট সর্বোচ্চ হচ্ছে ২৫ শতাংশ। এখন আপনার ইনকাম যদি বেশি হয়, ২৫ শতাংশে যদি অ্যাসেস হয়, ফ্ল্যাপগুলো বাদ দিয়ে আপনাকে আরো ১৫ শতাংশ দিতে হবে; ওই ইনকামের ওপর, যে ইনকাম আপনি পেয়েছেন। এখন পরামর্শ হচ্ছে, ১০ শতাংশকে আপনারা ফাইনালে নেন, আর বাকিটা ট্যাক্সের বাইরে রাখেন।

শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা অনেকভাবেই দেওয়া যায়। এমনি বলা হয়, আমি অনেক শুনি যে পলিসিমেকারদের থেকে এত কিছু করা হলো। আসলে কিছুই করা হয় না। সত্যি কথা বলতে কী, শেয়ারবাজারের জন্য যে উৎসাহগুলো ছিল, প্রণোদনাগুলো ছিল, পর্যায়ক্রমে প্রণোদনাগুলো উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এখানে তেমন কিছু নেই এখন।

এখানে একটা কথা বলা ভালো, বাংলাদেশে কিন্তু করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। মানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স বেশি। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স হচ্ছে কম্পানির আয়ের ওপর ট্যাক্স। এটা কিন্তু অন্য দেশে আরো কম। আমাদের এখানে হচ্ছে সর্বনিম্ন সাড়ে ২২ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ। ৪৫ শতাংশ দিচ্ছে সিগারেট কম্পানি। টেলিফোন কম্পানিগুলো দিচ্ছে ৪০ শতাংশ। ৩৭.৫ শতাংশ দিচ্ছে ব্যাংকিং কম্পানিগুলো। আর ছোট ছোট কিছু কম্পানির ২২.৫ শতাংশ। কিন্তু অন্য দেশে এত ক্যাটাগরি নেই। মোটামুটি এটা ২৫ শতাংশের নিচে। ভারতে এটা এখন ২০ শতাংশের নিচে চলে গেছে। অন্য উন্নত দেশেও করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে ফেলা হয়েছে। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমালে ইনভেস্টমেন্ট বাড়ে। আর শেয়ারহোল্ডাররা উপকৃত হন, বিনিয়োগও বাড়ে। কারণ কম্পানির হাতে টাকা বেশি থাকে তখন। আর এটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে কম্পানির হাতে টাকা থাকলে বা শেয়ারহোল্ডারদের হাতে যখন টাকা থাকে, তখন সেটা বিনিয়োগ হয়। সেটা ভোগে যায় না; বিনিয়োগে যায়।

আমাদের মতো দেশে কম্পানির যদি রিটেইল আর্নিংস বৃদ্ধি পায়, তাহলে পুনর্বিনিয়োগ হয়। অর্থনীতি উপকৃত হয়। অর্থনীতি উপকৃত হলে সরকারের ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ ট্যাক্স বেশি পাবে। কম্পানিগুলো যদি বেশি বিনিয়োগ করে, ভ্যাট কালেকশনও বাড়বে। করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কিন্তু কম রেটে বেশি বাড়ে; ইনকামটা তখন বেশি করবে তারা। সে জন্য অন্য অনেক দেশ—ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত গত এক দশকে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকা উচিত। বাংলাদেশ গ্লোবালি সংযুক্ত। অন্যান্য দেশের করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সের অবস্থা দেখা উচিত। আমাদের দেশে কি এটাও দেখা উচিত। আমি মনে করি যে করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স কমানোর পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। বাজেটে তার প্রতিফলন হওয়া উচিত।

এখন শেয়ারবাজারের অবস্থা খুব করুণ। ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা বেচাকেনা হয়। যেটা হওয়া উচিত ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস একটা দেওয়া হয়েছে। আমরা পছন্দ করি বা না করি—সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন দিয়েছে, যার কারণে খুবই খারাপ অবস্থা। এই অবস্থায় যদি কিছুটা বাজেটারি প্রণোদনার মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে সমর্থন দেওয়া হয়, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন এবং দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

গত তিন-চার বছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের প্রতি কোনো রকম মনোযোগ না দিয়ে যেসব বাজেট পেশ করা হয়েছে, এবারেরটা আশা করি সে রকম হবে না। গত তিন-চারটা বাজেটে শেয়ারবাজারের প্রতি কোনো রকম মনোযোগই দেওয়া হয়নি। এবারের বাজেটে যদি কিছু দেয়, দিতে পারে। সরকারের হাতে অনেক কিছু আছে। আমরা তো সরাসরি অর্থ চাই না। শেয়ারবাজারে সরাসরি কেউ অর্থ চাইবে না। ট্যাক্স কমানোর মাধ্যমে কিছু প্রণোদনা চাওয়া হচ্ছে। সেটা ব্যক্তির ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, কম্পানির ইনকাম ট্যাক্স, করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও সত্য। যদি এই দুই ক্ষেত্রে সুবিধাটুকু দেওয়া যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। অর্থনীতি উপকৃত হবে। এবং অর্থনীতিতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে। সুতরাং ট্যাক্স এক্সপ্লোরাইজেশন করা উচিত।

আরও পড়ুন: এমকে ফুটওয়্যারের কিউআইও আবেদনের তারিখ নির্ধারণ

সরকার যদি ট্যাক্সের কালেকশনের একটা অনেক বড় লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়, সেটা কিন্তু ভালো হবে না। সেটা ভালো না হওয়ার কারণ হলো, অর্থনীতি যদি গ্রো না করে; ৭ শতাংশের বেশি গ্রো করলে বেশি ট্যাক্স পাবে। অর্থনীতি ৬ বা ৫ শতাংশ গ্রো করলে কম ট্যাক্স পাবে—এটা স্বাভাবিক। অর্থনীতি গ্রো করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট দরকার। ইনভেস্টমেন্ট আসবে কম্পানির ইনকাম থেকে। কম্পানির ইনকাম ট্যাক্স থেকে সরকার যদি বেশি নিয়ে যায়, তাহলে তো ইনভেস্টমেন্ট কম হবে।

এখানে একটা কথা বলা ভালো, যেসব কম্পানি লিস্টেড, তারা কিন্তু হিসাবকিতাবে স্বচ্ছ। যারা লিস্টেড না, তাদের সুবিধা দিয়েও লাভ নেই। কারণ তারা তো ইনকাম ট্যাক্স শো করে না। যারা লিস্টেট তাদের বছরে চারবার ইনকাম ডিসক্লোজ করতে হয়। তারা এ জন্য ইনকাম লুকাতে পারে না, ট্যাক্সও বেশি দেয়। ইনকাম হাইড করলে তো ট্যাক্স কম দেবে। এরা ইনকাম হাইড করে না, এদের থেকে ট্যাক্স বেশি পায়। টোটাল কম্পানি সার্কেলে যে ট্যাক্স কালেক্ট করে তার ৮০ শতাংশ আসছে তালিকাভুক্ত কম্পানি থেকে। তাহলে তো পলিসিতে তালিকাভুক্তির জন্য প্রণোদনা থাকা উচিত।

টোব্যাকো কম্পানি ৩০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে। একটি মোবাইল কম্পানি ১০০ টাকা ইনকাম করে সরকারকে ৬০ টাকা দিচ্ছে। ট্যাক্স তো পাচ্ছে এগুলো থেকে। এখন এদের ওপর যদি বেশি চাপাচাপি করা হয়, তাহলে এদের ব্যবসা মন্দা যাবে। এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি অনুরোধ করব, যেসব কম্পানি লিস্টেড আছে, এদের ওপর আর চাপ না দেওয়ার জন্য। বড় যারা লিস্টিংয়ে আসছে না, তাদের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। লিস্টিংয়ে এলে ট্রান্সপারেন্সি হয়। স্বচ্ছতা আসে। তারা তখন ট্যাক্সও বেশি দেয়। হাজার হাজার কম্পানি লিস্টিংয়ের বাইরে আছে, এরা ট্যাক্স তো দেয় না বললেই চলে। এ জন্য আমাদের পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা বাজেট যখন পেশ করে, সেটা পলিসির ফর্মুলেশন বা পলিসিতে পরিবর্তনের সময়—এটাকে বলা হয় ফিন্যান্স ভ্যালি। ফিন্যান্স ভ্যালি ট্যাক্স প্রপোজালগুলো এমনভাবে করা উচিত, যেটা শেয়ারবাজারের পক্ষে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের পক্ষে যায়। এবং কম্পানিগুলো যাতে অর্থনীতিতে আরো ভালো বিনিয়োগ করতে পারে, এ লক্ষ্যে প্রণোদনামূলক সুবিধা বা রিলিফ কিছু হওয়া উচিত। সূত্র: কালের কণ্ঠ