প্রচারে থাকলেও ভোটে সক্রিয় ছিল না বিএনপি
- আপডেট: ১০:৫২:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১
- / ৪১৩৫ বার দেখা হয়েছে
বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, মারধর, এজেন্টদের কেন্দ্রে বাধা বা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যেও গতকাল বেশির ভাগ পৌরসভায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভার নির্বাচনে ৫৯টিতে অংশ নিয়ে বিএনপি ভালো ফল করেনি। দুই বিদ্রোহীসহ মাত্র ছয় পৌরসভায় জিতেছে বিএনপি। প্রায় অর্ধেকসংখ্যক পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন না।
জয়ী হওয়া বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা হলেন বগুড়ার সান্তাহারে তোফাজ্জল হোসেন, দিনাজপুরে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, নবীগঞ্জে ছাবির আহমদ চৌধুরী ও মাধবপুরে হাবিবুর রহমান। দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন শেরপুরে জানে আলম ও জগন্নাথপুরে আক্তার হোসেন। এর মধ্যে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে চারটি পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন। সেগুলো হলো ভবানীগঞ্জ, মোংলা, কুলিয়ারচর ও ঈশ্বরদী। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে একটি ভোটকেন্দ্র থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার পর আর ভবানীগঞ্জের প্রার্থী আবদুর রাজ্জাককে ভোট দিতে না দেওয়ায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা যতটা তৎপর ছিলেন, ভোটের দিন কেন্দ্রে শক্ত অবস্থান নেওয়া, এজেন্ট রাখা এবং কেন্দ্রে ভোটার আনার ক্ষেত্রে তাঁদের ততটা সক্রিয় দেখা যায়নি। অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ও দলের কর্মী-সমর্থকদের তৎপরতা ছিল ঢিলেঢালা। তবে এর ভিন্ন চিত্রও আছে। দেখা গেছে, যেসব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারণা থেকে ভোটের দিন কেন্দ্র পর্যন্ত লেগে ছিলেন, সেসব জায়গায় তুলনামূলক ভালো ফল এসেছে।
অবশ্য এই ফলাফল সম্পর্কে স্থানীয় পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এবার আড়ানী পৌরসভার ভোটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির চেয়ে রেললাইনের উত্তর ও দক্ষিণের আঞ্চলিকতার প্রভাব ছিল বেশি। মুক্তার ছিলেন দক্ষিণের প্রার্থী।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতারা যতটা মরিয়া মনোভাব দেখান, ভোটের মাঠে তাঁদের সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায় না। কেবল দলে অবস্থান ধরে রাখতে অনেকে প্রার্থী হন। যেমন মোংলা পোর্ট পৌরসভায়। সেখানে বিএনপির প্রার্থী জুলফিকার আলী মাত্র ৫৯২ ভোট পেয়েছেন। বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আবদুর রহমান পেয়েছেন ১২ হাজার ১২৫ ভোট।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে দলের কারও কারও ব্যাখ্যা হচ্ছে, বর্তমান সরকার নির্বাচনকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, তাতে সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে কারও আস্থা নেই। তাই মরিয়া হয়ে মাঠে থাকতে চান না অনেকে। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। একদিকে হামলা, অন্যদিকে আবার মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় থাকে। এসব কারণে নির্বাচনে টাকাপয়সাও খরচ করতে আগ্রহী হন না কোনো কোনো প্রার্থী।
শরীয়তপুরে পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কোনো তৎপরতা ছিল না। বিএনপি এজেন্টদের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে এজেন্ট দেখা যায়নি। তাদের কোনো অভিযোগও ছিল না। বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান ঢালীর গৎবাঁধা অভিযোগ, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের প্রচারণা চালাতে দেননি। তাঁদের বাধার কারণে অনেকে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি।’
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হয়। বাকি ৩২টিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়।
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভার মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হয়। বাকি ৩২টিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়।
গাইবান্ধা পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল। পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা বেশ সন্তোষজনক ছিল। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতির চেয়ে ভোট বেশি পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, এটা রহস্যজনক।
এখানে বিএনপির প্রার্থী জেতেননি। জিতেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ হোসেন প্রথম আলোতে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা ভালো ছিল। তিনি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আগামী দিনের নির্বাচনগুলোও যেন এ রকম হয়।’