০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিটি ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আদেশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:৫৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৮৪ বার দেখা হয়েছে

১২ মার্চ, ১৯৭১। এদিন প্রদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আদেশ দেয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আজগর খান করাচীতে বলেন, শেখ মুজিব হচ্ছেন পূর্ব আর পশ্চিমের ক্ষীয়মাণ সম্পর্কের শেষ সংলাপ। তিনি ঢাকায় পাকিস্তানের কোনো পতাকা দেখেননি বলে জানান।

এদিন শেখ মুজিব ঘোষিত চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো হয়।

লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ করা হলো লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।

লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সি.আর. আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভূট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভূট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।

এদিন জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। এছাড়া রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।

এদিন চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচী পাঠানোর ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

এদিন বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদী পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদী নিহত ও ১৫ জন আহত হয়।

লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শক্তি প্রয়োগ নিষ্ফল ও বিপজ্জনক হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক। এছাড়া এদিন জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের পরিবারকে নিজ দেশে পাঠানো হয়।

এদিন সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে সারা আলীর তোপখানা রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত মহিলা পরিষদের এক সভায় পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

তথ্যসূত্র : ১৯৭১ সালের মার্চ ১৩ এর ইত্তেফাক ও সংবাদ, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য

বিজনেসজার্নাল/ঢাকা

শেয়ার করুন

x
English Version

প্রতিটি ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আদেশ

আপডেট: ০৯:৫৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১

১২ মার্চ, ১৯৭১। এদিন প্রদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আদেশ দেয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আজগর খান করাচীতে বলেন, শেখ মুজিব হচ্ছেন পূর্ব আর পশ্চিমের ক্ষীয়মাণ সম্পর্কের শেষ সংলাপ। তিনি ঢাকায় পাকিস্তানের কোনো পতাকা দেখেননি বলে জানান।

এদিন শেখ মুজিব ঘোষিত চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো হয়।

লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ করা হলো লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।

লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সি.আর. আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভূট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভূট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।

এদিন জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। এছাড়া রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।

এদিন চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচী পাঠানোর ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

এদিন বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদী পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদী নিহত ও ১৫ জন আহত হয়।

লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শক্তি প্রয়োগ নিষ্ফল ও বিপজ্জনক হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক। এছাড়া এদিন জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের পরিবারকে নিজ দেশে পাঠানো হয়।

এদিন সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে সারা আলীর তোপখানা রোডের বাসায় অনুষ্ঠিত মহিলা পরিষদের এক সভায় পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

তথ্যসূত্র : ১৯৭১ সালের মার্চ ১৩ এর ইত্তেফাক ও সংবাদ, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য

বিজনেসজার্নাল/ঢাকা