১১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফ্লোর প্রাইস ও চেক নগদায়নের শর্তে কি আদৌ সুফল মিলেছে!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:১১:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪২০১ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের দরপতন রোধে ফ্লোর প্রাইস বেধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে ব্রোকারদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চেক নগদায়নের পূর্বে শেয়ার ক্রয় করা যাবে না মর্মেও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তবে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিএসইসির এ দুই নির্দেশনায় কতোটুকু সুফল মেলেছে- তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। যদিও অর্থনীতিবিদ ও ব্রোকারদের ভাষ্য অনুযায়ী এ দুই নির্দেশনার কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে সামান্য উত্থান হলেও পতনেই যাচ্ছে অধিকাংশ কার্যদিবস। একদিকে বাজারের পতন রোধে ফ্লোর প্রাইসের চপেটাঘাত, তার ওপর চেক নগদায়নের পর ক্রয়াদেশ বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে চেক নগদায়নের পর ক্রয়াদেশ সংক্রান্ত বিএসইসির নির্দেশনার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

যদিও এ নির্দেশনা প্রত্যাহারে ঢাকা ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), সিইও ফোরাম এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসিতে চিঠি দিয়েছে। তবে চিঠির পরও টানা দুই কার্যদিবস বাজার পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খেলেও সিদ্ধান্তে অনঢ় অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা না থাকার পাশাপাশি গত প্রায় তিন মাসে অস্বাভাবিক উত্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর এখন উল্টো দৌড়ের কারণে বাজারে রীতিমতো আতঙ্ক। দর পড়তে থাকার পর চাহিদা কমে গেছে সেগুলোরও। এতে দুই হাজার কোটি থেকে লেনদেন নেমে এসেছে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে এবং তা আরও নিম্নমুখী।

আগের সপ্তাহে ১০১.৯৫ পয়েন্ট পতনের পর নতুন সপ্তাহের শুরুতেও বিনিয়োগকারীদের হতাশ করল পুঁজিবাজার। যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমা সম্ভব, সেগুলোর মধ্যে ১৮টি ছাড়া সবগুলোর দামই কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর, যেগুলো ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছিল।

সব মিলিয়ে এদিন সূচক কমেছে ৪৭.৯৮ পয়েন্ট। দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার কারণে এই দরপতন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দরপতনের কাছাকাছি।

আরও পড়ুন: আজ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেসব কোম্পানি

শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের বেশি আছে এমন ১৩৭টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১১৯টি কোম্পানি। বাকিগুলোর মধ্যে ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে কেবল ৭টি কোম্পানির দর।

বাজারে শেয়ারের ক্রেতা নেই বললেই চলে। লেনদেন নেমে এসেছে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে, যা কিছুদিন আগেও নিয়মিত ২ হাজার কোটি টাকার ওপর ছিল।

এদিন হাতবদল হয়েছে মোট ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৯৭৫ কোটি ৬২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

সবশেষ এর চেয়ে কম লেনদেন ছিল গত ১৪ আগস্ট। ৪৬ কর্মদিবস আগে সেদিন হাতবদল হয় ৬৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার। তবে সে সময় পুঁজিবাজার তলানি থেকে উঠে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিল বলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহের শুরুতে দেখা গেল তার উল্টো চিত্র।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এতে করে ফান্ড রিলিজ না হওয়ার কারণে সেক্টরাল মুভমেন্ট হচ্ছে না।

চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না- এমন নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজার আরও নড়বড়ে হবে বলে মনে করছেন সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এটি আসলে নতুন করে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১০ সালের পর তুলে দেয়া হয়েছিল। আর এখন বাস্তবায়ন করতে গেলে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কারণে সেটা সম্ভব নয়।

গত ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। নির্দেশনাটি আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সেটি পুঁজিবাজারে বড় চাপ তৈরি করেছে। এর পরের কার্যদিবস থেকে বাজারের লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। দর হারাতে থাকে বিপুল সংখ্যক কোম্পানি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর একবার নির্দেশনা এসেছিল, গ্রাহক থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে চেক পাবে, তা আগে নগদ টাকায় পরিণত করতে হবে। অর্থাৎ চেকের টাকা যখন ব্রোকারেজ হাউসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তখন তারা সেই টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীকে শেয়ার কিনে দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই নির্দেশনা তুলে দেয়া হয়। এখন আবার নতুন করে নগদ টাকায় শেয়ার কেনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটির প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারের ওপরে ভালো হবে না। তাই এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছে ডিবিএ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ফলে কখনো কখনো দেখা যায় যে গ্রাহক আগে চেক জমা দেন। সেই চেকের বিপরীতে গ্রাহককে শেয়ার কিনে দেয় ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এই নিয়মে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া সব গ্রাহক এই সুবিধা পান না। যারা ভালো গ্রাহক, তারাই শুধু এই সুবিধা পান। যেহেতু এর ঝুঁকি ব্রোকারেজকে নিতে হয়।

আরও পড়ুন: ‘অথোরাইজড ট্রেডারদের দক্ষতার উপর বিনিয়োগকারীর সফলতা নির্ভর করে’

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে যাবে। বাজারে সূচক কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে ফেলতে পারেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই এই আইনের বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া দরকার।

এছাড়া সিইও ফোরামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যখনই কোনও ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী যথাযথ নথি-প্রমাণ বা সত্যতা ছাড়া ডিএসই বা বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেন, তখনই ডিএসই বা বিএসইসি অবিলম্বে প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করে। এ ছাড়া খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বিএসইসি বা ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়ক নথি-প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়ার পরই প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তবে বিএসইসি বলছে, এটি এটি নতুন কোনো কিছু নয়। পুঁজিবাজারের মূল আইনে প্রথম থেকেই ছিল। এই আইনের আওতায় অনেক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: চেক নগদায়নের শর্তে টালমাটাল পুঁজিবাজার: নির্দেশনা বাতিলে বিএসইসিতে চিঠি

বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আগে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেকের বিপরীতে শেয়ার কেনা যেত। এতে করে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়তো। পাশাপাশি শেয়ারের চাহিদা ও যোগান ঠিক থাকতো। কিন্তু নতুন নির্দেশনার ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি শেয়ারের চাহিদা কমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, বুধবার শুরুতে চাপের আভাস ছিল না। লেনদেনের শুরু থেকে সূচক বাড়ছিল। ৪০ মিনিটে ৬২ পয়েন্ট সূচক বেড়ে তা ক্রমাগত ওপরের দিকে উঠছিল। হঠাৎ শুরু হয় দরপতন। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। ফলে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে দিন শেষের সূচকের অবস্থান কমে ৭২ পয়েন্ট।

এদিন যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি আছে হাতে গোনা। যেসব কোম্পানির মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম, সেগুলোর মধ্যে দুই-একটি ছাড়া বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে।

আরও পড়ুন: চেক নগদায়নের পূর্বে শেয়ার ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা

অন্যদিকে, ফ্লোর প্রাইস ইস্যুতেও একটি চাপ আছে। বিশেষ করে গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এরপর দুই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ৬০০ পয়েন্টের বেশি বাড়লেও বাজারে গতি ফেরেনি। অল্প কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকাই এই সূচক বৃদ্ধির কারণ। অন্যদিকে শক্তিশালী মৌলভিত্তির প্রায় ২৫০ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। পরিণতিতে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে আটকে গেছে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য।

বাজার সংশ্নিষ্টদের মতে, বর্তমান পুঁজিবাজারের লেনদেন ও সূচকের ওঠানামার সিংহভাগ গুটিকয়েক শেয়ারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। সূচক বাড়ছে। কিন্তু অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো বেশিরভাগ শেয়ার দর হারানোয় তারা আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন।

আরও পড়ুনঃ ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে ২৩০ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য!

অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই মনে করছেন, সূচক একদিকে আর বেশিরভাগ শেয়ারদর অন্যদিকে, যা সুষ্ঠু বাজারের চিত্র নয়। এ বাজারে অল্প কিছু মানুষ ব্যবসা করছেন। রাতারাতি কয়েকটি শেয়ারের দর হু-হু করে বাড়ছে। অথচ বেশিরভাগ শেয়ার দর হারাচ্ছে। সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত লেনদেনের মাধ্যমে এমন দরের উত্থান ঘটছে- এমন কেউই মনে করছেন না। তারপরও এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করছেন না।

এদিকে সিকিউরিটিজ হাউজ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারের কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিটে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে শেয়ারের প্রকৃত বাজার মূল্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। এছাড়া প্রত্যাশা অনুযায়ী শেয়ারের ক্রেতা বা বিক্রেতা না থাকায় বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনায় অনেক ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগে আসছে না। একইসঙ্গে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে শাখা বন্ধের পাশাপাশি কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিবে।

তবে ফ্লোর প্রাইস ইস্যুতেও অনড় রয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সেমিনারে তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস দেওয়া বিষয়টি আমিও পছন্দ করি না। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এটি আমাদের দিতে হয়েছে। তা না হলে বাজারের দরপতন হয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে সর্বনিম্ন বাজার মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর শেয়ার দাম বাড়ায়-কমায় ফ্লোর প্রাইসের নিচে থাকা কোম্পানির সংখ্যাও ওঠানামা করতে থাকে।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, শেষ ৫ কার্যদিবসের (রোববার-বৃহস্পতিবার) ক্লোজিং প্রাইসের গড় দর হবে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস। এর উপরে সিকিউরিটিজের দর স্বাভাবিক হারে ওঠানামা করতে পারবে। ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। তবে কোম্পানির বোনাস শেয়ার বা রাইট শেয়ারের কারণে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজের দর সমন্বয় হবে। নতুন শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রথম দিনের লেনদেনের ক্লোজিং প্রাইসকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন ডিএসই নির্ধারিত কোন কোম্পানির চূড়ান্ত ফ্লোর প্রাইস কতো!

অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনার বাইরে থাকবে এসএমই বোর্ড। অর্থাৎ এসএমইতে বিদ্যমান নিয়মে ওঠানামা করবে।

এর আগে ২০২০ সালে দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে ওই বছরের ১৯ মার্চ সেই সময়ের কমিশন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়।

এরপরে ৩ ধাপে বর্তমান কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল। প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন। এরপরে ওই বছরের ৩ জুন ফ্লোর প্রাইসে থাকা বাকি ৩০ কোম্পানি থেকে নির্দেশনাটি তুলে নেয় বিএসইসি। তৃতীয় ধাপে এসে ১৭ জুন পুঁজিবাজার থেকে পুরোপুরি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় কমিশন।

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

ফ্লোর প্রাইস ও চেক নগদায়নের শর্তে কি আদৌ সুফল মিলেছে!

আপডেট: ০৮:১১:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের দরপতন রোধে ফ্লোর প্রাইস বেধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে ব্রোকারদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চেক নগদায়নের পূর্বে শেয়ার ক্রয় করা যাবে না মর্মেও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তবে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিএসইসির এ দুই নির্দেশনায় কতোটুকু সুফল মেলেছে- তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। যদিও অর্থনীতিবিদ ও ব্রোকারদের ভাষ্য অনুযায়ী এ দুই নির্দেশনার কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে সামান্য উত্থান হলেও পতনেই যাচ্ছে অধিকাংশ কার্যদিবস। একদিকে বাজারের পতন রোধে ফ্লোর প্রাইসের চপেটাঘাত, তার ওপর চেক নগদায়নের পর ক্রয়াদেশ বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে চেক নগদায়নের পর ক্রয়াদেশ সংক্রান্ত বিএসইসির নির্দেশনার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

যদিও এ নির্দেশনা প্রত্যাহারে ঢাকা ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), সিইও ফোরাম এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসিতে চিঠি দিয়েছে। তবে চিঠির পরও টানা দুই কার্যদিবস বাজার পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খেলেও সিদ্ধান্তে অনঢ় অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা না থাকার পাশাপাশি গত প্রায় তিন মাসে অস্বাভাবিক উত্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর এখন উল্টো দৌড়ের কারণে বাজারে রীতিমতো আতঙ্ক। দর পড়তে থাকার পর চাহিদা কমে গেছে সেগুলোরও। এতে দুই হাজার কোটি থেকে লেনদেন নেমে এসেছে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে এবং তা আরও নিম্নমুখী।

আগের সপ্তাহে ১০১.৯৫ পয়েন্ট পতনের পর নতুন সপ্তাহের শুরুতেও বিনিয়োগকারীদের হতাশ করল পুঁজিবাজার। যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমা সম্ভব, সেগুলোর মধ্যে ১৮টি ছাড়া সবগুলোর দামই কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর, যেগুলো ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছিল।

সব মিলিয়ে এদিন সূচক কমেছে ৪৭.৯৮ পয়েন্ট। দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার কারণে এই দরপতন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দরপতনের কাছাকাছি।

আরও পড়ুন: আজ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেসব কোম্পানি

শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের বেশি আছে এমন ১৩৭টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১১৯টি কোম্পানি। বাকিগুলোর মধ্যে ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে কেবল ৭টি কোম্পানির দর।

বাজারে শেয়ারের ক্রেতা নেই বললেই চলে। লেনদেন নেমে এসেছে ৭০০ কোটি টাকার ঘরে, যা কিছুদিন আগেও নিয়মিত ২ হাজার কোটি টাকার ওপর ছিল।

এদিন হাতবদল হয়েছে মোট ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৯৭৫ কোটি ৬২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

সবশেষ এর চেয়ে কম লেনদেন ছিল গত ১৪ আগস্ট। ৪৬ কর্মদিবস আগে সেদিন হাতবদল হয় ৬৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার। তবে সে সময় পুঁজিবাজার তলানি থেকে উঠে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিল বলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহের শুরুতে দেখা গেল তার উল্টো চিত্র।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এতে করে ফান্ড রিলিজ না হওয়ার কারণে সেক্টরাল মুভমেন্ট হচ্ছে না।

চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না- এমন নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজার আরও নড়বড়ে হবে বলে মনে করছেন সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এটি আসলে নতুন করে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১০ সালের পর তুলে দেয়া হয়েছিল। আর এখন বাস্তবায়ন করতে গেলে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কারণে সেটা সম্ভব নয়।

গত ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। নির্দেশনাটি আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সেটি পুঁজিবাজারে বড় চাপ তৈরি করেছে। এর পরের কার্যদিবস থেকে বাজারের লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। দর হারাতে থাকে বিপুল সংখ্যক কোম্পানি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর একবার নির্দেশনা এসেছিল, গ্রাহক থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে চেক পাবে, তা আগে নগদ টাকায় পরিণত করতে হবে। অর্থাৎ চেকের টাকা যখন ব্রোকারেজ হাউসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তখন তারা সেই টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীকে শেয়ার কিনে দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই নির্দেশনা তুলে দেয়া হয়। এখন আবার নতুন করে নগদ টাকায় শেয়ার কেনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটির প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারের ওপরে ভালো হবে না। তাই এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছে ডিবিএ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ফলে কখনো কখনো দেখা যায় যে গ্রাহক আগে চেক জমা দেন। সেই চেকের বিপরীতে গ্রাহককে শেয়ার কিনে দেয় ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এই নিয়মে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া সব গ্রাহক এই সুবিধা পান না। যারা ভালো গ্রাহক, তারাই শুধু এই সুবিধা পান। যেহেতু এর ঝুঁকি ব্রোকারেজকে নিতে হয়।

আরও পড়ুন: ‘অথোরাইজড ট্রেডারদের দক্ষতার উপর বিনিয়োগকারীর সফলতা নির্ভর করে’

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে যাবে। বাজারে সূচক কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে ফেলতে পারেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই এই আইনের বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া দরকার।

এছাড়া সিইও ফোরামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যখনই কোনও ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী যথাযথ নথি-প্রমাণ বা সত্যতা ছাড়া ডিএসই বা বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেন, তখনই ডিএসই বা বিএসইসি অবিলম্বে প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করে। এ ছাড়া খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বিএসইসি বা ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়ক নথি-প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়ার পরই প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তবে বিএসইসি বলছে, এটি এটি নতুন কোনো কিছু নয়। পুঁজিবাজারের মূল আইনে প্রথম থেকেই ছিল। এই আইনের আওতায় অনেক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: চেক নগদায়নের শর্তে টালমাটাল পুঁজিবাজার: নির্দেশনা বাতিলে বিএসইসিতে চিঠি

বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আগে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেকের বিপরীতে শেয়ার কেনা যেত। এতে করে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়তো। পাশাপাশি শেয়ারের চাহিদা ও যোগান ঠিক থাকতো। কিন্তু নতুন নির্দেশনার ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি শেয়ারের চাহিদা কমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, বুধবার শুরুতে চাপের আভাস ছিল না। লেনদেনের শুরু থেকে সূচক বাড়ছিল। ৪০ মিনিটে ৬২ পয়েন্ট সূচক বেড়ে তা ক্রমাগত ওপরের দিকে উঠছিল। হঠাৎ শুরু হয় দরপতন। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। ফলে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে দিন শেষের সূচকের অবস্থান কমে ৭২ পয়েন্ট।

এদিন যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি আছে হাতে গোনা। যেসব কোম্পানির মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম, সেগুলোর মধ্যে দুই-একটি ছাড়া বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে।

আরও পড়ুন: চেক নগদায়নের পূর্বে শেয়ার ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা

অন্যদিকে, ফ্লোর প্রাইস ইস্যুতেও একটি চাপ আছে। বিশেষ করে গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এরপর দুই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ৬০০ পয়েন্টের বেশি বাড়লেও বাজারে গতি ফেরেনি। অল্প কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকাই এই সূচক বৃদ্ধির কারণ। অন্যদিকে শক্তিশালী মৌলভিত্তির প্রায় ২৫০ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। পরিণতিতে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে আটকে গেছে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য।

বাজার সংশ্নিষ্টদের মতে, বর্তমান পুঁজিবাজারের লেনদেন ও সূচকের ওঠানামার সিংহভাগ গুটিকয়েক শেয়ারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। সূচক বাড়ছে। কিন্তু অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো বেশিরভাগ শেয়ার দর হারানোয় তারা আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন।

আরও পড়ুনঃ ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে ২৩০ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য!

অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই মনে করছেন, সূচক একদিকে আর বেশিরভাগ শেয়ারদর অন্যদিকে, যা সুষ্ঠু বাজারের চিত্র নয়। এ বাজারে অল্প কিছু মানুষ ব্যবসা করছেন। রাতারাতি কয়েকটি শেয়ারের দর হু-হু করে বাড়ছে। অথচ বেশিরভাগ শেয়ার দর হারাচ্ছে। সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত লেনদেনের মাধ্যমে এমন দরের উত্থান ঘটছে- এমন কেউই মনে করছেন না। তারপরও এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করছেন না।

এদিকে সিকিউরিটিজ হাউজ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারের কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিটে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে শেয়ারের প্রকৃত বাজার মূল্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। এছাড়া প্রত্যাশা অনুযায়ী শেয়ারের ক্রেতা বা বিক্রেতা না থাকায় বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনায় অনেক ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগে আসছে না। একইসঙ্গে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে শাখা বন্ধের পাশাপাশি কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিবে।

তবে ফ্লোর প্রাইস ইস্যুতেও অনড় রয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সেমিনারে তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস দেওয়া বিষয়টি আমিও পছন্দ করি না। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এটি আমাদের দিতে হয়েছে। তা না হলে বাজারের দরপতন হয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে সর্বনিম্ন বাজার মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর শেয়ার দাম বাড়ায়-কমায় ফ্লোর প্রাইসের নিচে থাকা কোম্পানির সংখ্যাও ওঠানামা করতে থাকে।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, শেষ ৫ কার্যদিবসের (রোববার-বৃহস্পতিবার) ক্লোজিং প্রাইসের গড় দর হবে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস। এর উপরে সিকিউরিটিজের দর স্বাভাবিক হারে ওঠানামা করতে পারবে। ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। তবে কোম্পানির বোনাস শেয়ার বা রাইট শেয়ারের কারণে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজের দর সমন্বয় হবে। নতুন শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রথম দিনের লেনদেনের ক্লোজিং প্রাইসকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন ডিএসই নির্ধারিত কোন কোম্পানির চূড়ান্ত ফ্লোর প্রাইস কতো!

অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনার বাইরে থাকবে এসএমই বোর্ড। অর্থাৎ এসএমইতে বিদ্যমান নিয়মে ওঠানামা করবে।

এর আগে ২০২০ সালে দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে ওই বছরের ১৯ মার্চ সেই সময়ের কমিশন প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়।

এরপরে ৩ ধাপে বর্তমান কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছিল। প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ৬৬টি কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইসের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন। এরপরে ওই বছরের ৩ জুন ফ্লোর প্রাইসে থাকা বাকি ৩০ কোম্পানি থেকে নির্দেশনাটি তুলে নেয় বিএসইসি। তৃতীয় ধাপে এসে ১৭ জুন পুঁজিবাজার থেকে পুরোপুরি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় কমিশন।