০৮:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিনিয়োগকারীদের ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:৫১:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
  • / ৪২৯৭ বার দেখা হয়েছে

জাল ব্যাংক প্রতিবেদন ও ভুয়া এফডিআরের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তদন্ত প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, মূলত ইউএফএস এর ১৫৮ কোটি আত্মসাৎ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বিএসইসির কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। তার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পায় বিএসইসি। এর মধ্যে ১৭০ কোটি টাকারও বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ইউএফএস নিয়ন্ত্রিত চারটি মিউচুয়াল ফান্ড হলো— ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট, ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড। ২০১৮ সাল থেকে ইউএফএসএলের ফান্ড থেকে অর্থ সরানোর শুরু করে এমডির চক্রটি। এই চার ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিয়ে এমডি বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন।

এমডির চক্রটি ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআরের (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) মাধ্যমে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ জেনে-বুঝেও চার বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। এ অপকর্মকে বৈধতা দিয়েছে দুই অডিট কোম্পানি আহমেদ জাকের অ্যান্ড কো. এবং রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কো. লিমিটেড। অপরদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছুই জানত না।

বিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ইউএফএসের এমডি আট লাখ টাকার চারটি ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করেন। এরপর ব্যাংকের নথিগুলোয় কারসাজি করে আমানতের অংক দেখিয়েছেন ৪৯ কোটি। এমডির চক্রটি নিজের অথবা নিজের আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিষ্ঠানে টাকা স্থানান্তর করেন। এছাড়াও ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার ব্যবস্থাপক ফি নিয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: ফের শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম

২০১০ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপকের সনদ পাওয়া ইউএফএস ৪৩০ কোটি টাকার সাতটি মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা করত। লোপাটের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অডিট ফার্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অডিট ফার্মটি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড তদারকির দায়িত্বে ছিল। এছাড়াও ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশন্সের অধীন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোয় তাদের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বিএসইসি।

বিএসইসির তদন্তে দেখা যায়, ইউএফএস বিনিয়োগের কাগজপত্রে জালিয়াতি করে ২০১৬ এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এই ছয় প্রতিষ্ঠানই ইউএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার সহযোগীদের মালিকানাধীন।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএফএসের ২৩৫ কোটি টাকা আত্নসাৎ করে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা টাকার পাচার করেছে ইউএফএসএলের এমডি। এর মধ্যে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা পাচার করেছে বিনিয়োগের নামে বাণিজ্যিক নথিপত্র জাল করে আর ৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাচার করেছে ভুয়া এফডিআরের মাধ্যমে। এছাড়াও ৬৩ কোটি টাকা নিবন্ধিত সিকিউরিটিজের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভুয়া বিনিয়োগ ও ভুয়া এফডিআর থেকে ফান্ডগুলোকে ‍সুদ দেওয়া হয়নি। তাতে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, উল্টো ফান্ডগুলোর নেট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেশি দেখিয়ে ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের থেকে আরও ৫ কোটি ৮২ কোটি টাকা রিফান্ড নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত চার্জ হিসেবে। ইউএফএস প্রত্যেক প্রান্তিকে কমিশন, ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের কাছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বছর শেষে ভুয়া ব্যাংক ব্যালেন্স জমা দিয়েছে। কিন্তু অডিটর সেটা যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনও মনে করেনি।

আরও পড়ুন: আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোংয়ের অপেশাদারীত্বে চার ফান্ডের ১৫৮ কোটি টাকা খোয়া

এমডি আলমগীর প্রাথমিকভাবে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ইউএফএসের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি নিজের সহযোগী ও তাদের কোম্পানিতে কিছু তহবিল স্থানান্তর করার সময় স্থানান্তরিত অর্থের বড় অংশ তুলে নেন।

ইউএফএসের ফান্ডের অর্থ ভ্যানগার্ড ট্রেডার্স, তানজিনা ফ্যাশন, আরআই এন্টারপ্রাইজ, নেত্রকোনা এক্সেসরিজ, মাল্টিম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল, স্কেপটার কমোডিটিস, নিটওয়্যার ক্রিয়েটর, ম্যাক্স সিকিউর এবং মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইউএফএস কী পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করেছে বা সিকিউরিটিজ কেনা-বেচা থেকে কী পরিমাণ প্রকৃত লাভ তুলে নিয়েছে— তা নির্ধারণ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এ তথ্য উদঘাটনের জন্য একটি বিশেষ নিরীক্ষা (স্পেশাল অডিট) করার পরামর্শ দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

আরও পড়ুন: ইউএফএসের মালিকসহ ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিবির মামলা

এছাড়াও, ফান্ড থেকে স্থানান্তরিত অর্থের কারসাজির পদ্ধতি আরও ভালোভাবে জানতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে আরও তদন্ত করা যেতে পারে। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে মোট ২২৩ কোটি ৫৬ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর এর ব্যালান্স ছিল মাত্র ৪ হাজার ১৭৮ টাকা। এসময়ে এর ইক্যুইটি মূলধন ছিল মাত্র ১১ কোটি ১৮ লাখ কোটি টাকা।

এ ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ প্রতিষ্ঠানে আইসিবির বিনিয়োগ ছিল ৪৮ কোটি টাকা, যা উদ্ধার এখন অনিশ্চিত। চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি এবং তত্ত্বাবধায়ক ইউএফএসএলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। এর মধ্যে একটি মামলা অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিশন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে কাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যখন যা প্রয়োজন আইন অনুসারে তাই করা হবে। যারা এর পেছনে রয়েছে সবাইকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

বিনিয়োগকারীদের ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস

আপডেট: ০২:৫১:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩

জাল ব্যাংক প্রতিবেদন ও ভুয়া এফডিআরের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তদন্ত প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, মূলত ইউএফএস এর ১৫৮ কোটি আত্মসাৎ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বিএসইসির কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। তার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পায় বিএসইসি। এর মধ্যে ১৭০ কোটি টাকারও বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ইউএফএস নিয়ন্ত্রিত চারটি মিউচুয়াল ফান্ড হলো— ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট, ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড। ২০১৮ সাল থেকে ইউএফএসএলের ফান্ড থেকে অর্থ সরানোর শুরু করে এমডির চক্রটি। এই চার ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিয়ে এমডি বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন।

এমডির চক্রটি ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআরের (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) মাধ্যমে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ জেনে-বুঝেও চার বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। এ অপকর্মকে বৈধতা দিয়েছে দুই অডিট কোম্পানি আহমেদ জাকের অ্যান্ড কো. এবং রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কো. লিমিটেড। অপরদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছুই জানত না।

বিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ইউএফএসের এমডি আট লাখ টাকার চারটি ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করেন। এরপর ব্যাংকের নথিগুলোয় কারসাজি করে আমানতের অংক দেখিয়েছেন ৪৯ কোটি। এমডির চক্রটি নিজের অথবা নিজের আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিষ্ঠানে টাকা স্থানান্তর করেন। এছাড়াও ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার ব্যবস্থাপক ফি নিয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: ফের শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম

২০১০ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপকের সনদ পাওয়া ইউএফএস ৪৩০ কোটি টাকার সাতটি মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা করত। লোপাটের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অডিট ফার্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অডিট ফার্মটি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড তদারকির দায়িত্বে ছিল। এছাড়াও ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশন্সের অধীন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোয় তাদের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বিএসইসি।

বিএসইসির তদন্তে দেখা যায়, ইউএফএস বিনিয়োগের কাগজপত্রে জালিয়াতি করে ২০১৬ এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এই ছয় প্রতিষ্ঠানই ইউএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার সহযোগীদের মালিকানাধীন।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএফএসের ২৩৫ কোটি টাকা আত্নসাৎ করে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা টাকার পাচার করেছে ইউএফএসএলের এমডি। এর মধ্যে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা পাচার করেছে বিনিয়োগের নামে বাণিজ্যিক নথিপত্র জাল করে আর ৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাচার করেছে ভুয়া এফডিআরের মাধ্যমে। এছাড়াও ৬৩ কোটি টাকা নিবন্ধিত সিকিউরিটিজের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভুয়া বিনিয়োগ ও ভুয়া এফডিআর থেকে ফান্ডগুলোকে ‍সুদ দেওয়া হয়নি। তাতে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, উল্টো ফান্ডগুলোর নেট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেশি দেখিয়ে ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের থেকে আরও ৫ কোটি ৮২ কোটি টাকা রিফান্ড নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত চার্জ হিসেবে। ইউএফএস প্রত্যেক প্রান্তিকে কমিশন, ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের কাছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বছর শেষে ভুয়া ব্যাংক ব্যালেন্স জমা দিয়েছে। কিন্তু অডিটর সেটা যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনও মনে করেনি।

আরও পড়ুন: আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোংয়ের অপেশাদারীত্বে চার ফান্ডের ১৫৮ কোটি টাকা খোয়া

এমডি আলমগীর প্রাথমিকভাবে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ইউএফএসের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি নিজের সহযোগী ও তাদের কোম্পানিতে কিছু তহবিল স্থানান্তর করার সময় স্থানান্তরিত অর্থের বড় অংশ তুলে নেন।

ইউএফএসের ফান্ডের অর্থ ভ্যানগার্ড ট্রেডার্স, তানজিনা ফ্যাশন, আরআই এন্টারপ্রাইজ, নেত্রকোনা এক্সেসরিজ, মাল্টিম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল, স্কেপটার কমোডিটিস, নিটওয়্যার ক্রিয়েটর, ম্যাক্স সিকিউর এবং মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইউএফএস কী পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করেছে বা সিকিউরিটিজ কেনা-বেচা থেকে কী পরিমাণ প্রকৃত লাভ তুলে নিয়েছে— তা নির্ধারণ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এ তথ্য উদঘাটনের জন্য একটি বিশেষ নিরীক্ষা (স্পেশাল অডিট) করার পরামর্শ দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

আরও পড়ুন: ইউএফএসের মালিকসহ ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিবির মামলা

এছাড়াও, ফান্ড থেকে স্থানান্তরিত অর্থের কারসাজির পদ্ধতি আরও ভালোভাবে জানতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে আরও তদন্ত করা যেতে পারে। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে মোট ২২৩ কোটি ৫৬ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর এর ব্যালান্স ছিল মাত্র ৪ হাজার ১৭৮ টাকা। এসময়ে এর ইক্যুইটি মূলধন ছিল মাত্র ১১ কোটি ১৮ লাখ কোটি টাকা।

এ ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ প্রতিষ্ঠানে আইসিবির বিনিয়োগ ছিল ৪৮ কোটি টাকা, যা উদ্ধার এখন অনিশ্চিত। চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি এবং তত্ত্বাবধায়ক ইউএফএসএলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। এর মধ্যে একটি মামলা অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিশন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে কাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যখন যা প্রয়োজন আইন অনুসারে তাই করা হবে। যারা এর পেছনে রয়েছে সবাইকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/এসএ