১২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

মেঘনা পিইটিকে বাচাতে বিএসইসির নয়া উদ্যোগ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৩৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৩৩৭ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ থাকা তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বাচিয়ে তুলতে নয়া উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএসইসি কোম্পানিটিতে নতুন করে যে চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাঁরা হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাশরিক হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং এমএনএ অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নুরুল আলম।

মেঘনা পিইটি শেয়ারবাজারে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে কোম্পানিটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। নতুন নিয়োগ দেওয়া পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ার‌ম্যানের দায়িত্ব দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

কোম্পানিটি সর্বশেষ গত ডিসেম্বর শেষের যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই–ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সার বেশি লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১২ পয়সা।

শেয়ারবাজারে বর্তমানে লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩৫ টাকা। এক বছর আগেও এটির শেয়ারের দাম ছিল সাড়ে ২৮ টাকা। ২০০১ সালে এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

এদিকে মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে গত বছর আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায় বিএসইসি। সংস্থাটির গঠিত এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। এ জন্য কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ পরিচালককে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছিল বিএসইসি।

বিএসইসির তদন্ত কমিটি গত বছর সরেজমিনে কোম্পানিটির কারখানা ও কার্যালয় পরিদর্শনে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা ধরনের অনিয়ম ও অসংগতি খুঁজে পায়। এ জন্য কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া ও এমডি এম এফ কামালকে ১ কোটি টাকা করে ২ কোটি টাকা এবং পরিচালক কবির আহমেদ, আবু তাহের ও ওয়ালিউল্লাহকে ৫০ লাখ করে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

বিএসইসি জানিয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

দেড় যুগ ধরে কোম্পানিটি বন্ধ থাকলেও আইন অনুযায়ী মূল্য সংবেদশীল এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানায়নি।

আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সঙ্কটে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কোম্পানিটি তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে যন্ত্রপাতি ও জায়গাজমি মিলিয়ে মোট ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সম্পদমূল্য দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি বন্ধ থাকায় এ সম্পদমূল্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতিজনিত সম্পদ মূল্যায়নের দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি এ ধরনের কোনো মূল্যায়ন করেনি। ফলে সম্পদমূল্য আদৌ কত, সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই। আবার কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে গুদামে সোয়া দুই কোটি টাকার পণ্য মজুতের তথ্য উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিএসইসির তদন্ত দল কোম্পানিটিতে কোনো পণ্যের মজুত খুঁজে পায়নি। এমনকি পণ্য মজুতসংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও তদন্ত কমিটিকে দেখাতে পারেনি কোম্পানটি।

এ ছাড়া মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় দুই কোটি টাকা ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে দেখিয়েছে। বছরের পর বছর এ ঋণ ও অগ্রিমের তথ্য কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখিয়ে আসছে। বিএসইসির তদন্ত দল এ ঋণ ও অগ্রিমের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x

মেঘনা পিইটিকে বাচাতে বিএসইসির নয়া উদ্যোগ

আপডেট: ১২:৩৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ থাকা তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে বাচিয়ে তুলতে নয়া উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএসইসি কোম্পানিটিতে নতুন করে যে চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাঁরা হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাশরিক হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং এমএনএ অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নুরুল আলম।

মেঘনা পিইটি শেয়ারবাজারে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে কোম্পানিটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। নতুন নিয়োগ দেওয়া পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ার‌ম্যানের দায়িত্ব দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

কোম্পানিটি সর্বশেষ গত ডিসেম্বর শেষের যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই–ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সার বেশি লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১২ পয়সা।

শেয়ারবাজারে বর্তমানে লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩৫ টাকা। এক বছর আগেও এটির শেয়ারের দাম ছিল সাড়ে ২৮ টাকা। ২০০১ সালে এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

এদিকে মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে গত বছর আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায় বিএসইসি। সংস্থাটির গঠিত এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। এ জন্য কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ পরিচালককে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছিল বিএসইসি।

বিএসইসির তদন্ত কমিটি গত বছর সরেজমিনে কোম্পানিটির কারখানা ও কার্যালয় পরিদর্শনে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে নানা ধরনের অনিয়ম ও অসংগতি খুঁজে পায়। এ জন্য কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া ও এমডি এম এফ কামালকে ১ কোটি টাকা করে ২ কোটি টাকা এবং পরিচালক কবির আহমেদ, আবু তাহের ও ওয়ালিউল্লাহকে ৫০ লাখ করে দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

বিএসইসি জানিয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

দেড় যুগ ধরে কোম্পানিটি বন্ধ থাকলেও আইন অনুযায়ী মূল্য সংবেদশীল এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানায়নি।

আরও পড়ুন: অস্তিত্ব সঙ্কটে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কোম্পানিটি তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে যন্ত্রপাতি ও জায়গাজমি মিলিয়ে মোট ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সম্পদমূল্য দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটি বন্ধ থাকায় এ সম্পদমূল্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতিজনিত সম্পদ মূল্যায়নের দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি এ ধরনের কোনো মূল্যায়ন করেনি। ফলে সম্পদমূল্য আদৌ কত, সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই। আবার কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে গুদামে সোয়া দুই কোটি টাকার পণ্য মজুতের তথ্য উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিএসইসির তদন্ত দল কোম্পানিটিতে কোনো পণ্যের মজুত খুঁজে পায়নি। এমনকি পণ্য মজুতসংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও তদন্ত কমিটিকে দেখাতে পারেনি কোম্পানটি।

এ ছাড়া মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় দুই কোটি টাকা ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে দেখিয়েছে। বছরের পর বছর এ ঋণ ও অগ্রিমের তথ্য কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখিয়ে আসছে। বিএসইসির তদন্ত দল এ ঋণ ও অগ্রিমের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

ঢাকা/এসএম