০৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মেয়েকে বাঁচাতে ইরাকি মায়ের আকুতি, ১৮ কোটি টাকা দিলেন দুবাই শাসক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৮৫ বার দেখা হয়েছে

বিরল রোগে আক্রান্ত ১৯ মাস বয়সী মেয়ের জীবন বাঁচাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করে সহায়তার আকুতি জানিয়েছিলেন ইরাকি এক মা। সন্তানকে বাঁচানোর সেই আকুতির ভিডিওতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমকে ট্যাগ করেছিলেন তিনি। দুবাইয়ের শাসক এই ভিডিওতে সাড়া দেবেন; কখনও কল্পনা করতে পারেননি সেই মা। কিন্তু ভিডিওটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ইরাকি ওই শিশুকে দ্রুত দুবাইয়ে আনার ব্যবস্থা করেন শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ।

ইরাকি নাগরিক ইব্রাহিম জব্বার মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী মাসার মুন্ধার মেয়ে লাভেন ইব্রাহিম জব্বার আল কুতায়শি মেরুদণ্ডের পেশী অ্যাট্রোফি (এসএমএ) নামে একটি বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত। দুবাইয়ের আল-জলিলা হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১৮ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ৪৬২ টাকা।

বাবা-মা মেয়েটির চিকিৎসার এই অর্থ সংগ্রহ করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুমের উদ্দেশে একটি আবেগময় ভিডিও তৈরি করেন। দুবাই শাসকের দৃষ্টিগোচর হলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের দুবাই নিয়ে আসা হয়।

যখন তারা জানতে পারেন, তাদের মেয়ের চিকিত্সার জন্য ১৮ কোটির বেশি টাকা ব্যয় হবে; তখন তারা আশা লাভেনের জীবনের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন এবং হতাশায় ভেঙে পড়েন।

ভিডিওতে মেয়েকে জড়িয়ে মাসার মুন্ধারকে কাঁদতে দেখা যায়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, সম্মানিত শেখ মুহম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুম! আমার মেয়ের জন্য আপনার উদারতা প্রার্থনা করছি। আমার মেয়ের বিরল রোগে আক্রান্ত। যে রোগে নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে সে। আমাদের দেশে এই রোগের দক্ষ চিকিৎসক এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা না থাকায় তাকে দুবাইয়ের আল জলিলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে  আমরা তার চিকিত্সার ব্যয় বহন করতে পারছি না। সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ দুই বছর বয়সের মধ্যে এই রোগের চিকিৎসা করাতে হয়।

তিনি বলেন, ছোট লাভেনের দু’বছর পূর্ণ হতে মাত্র তিন মাস বাকি। আমি তাকে জীবনের নতুন আলো দেওয়ার জন্য আপনার সহায়তা চাই। আপনাকে অনুরোধ করছি আমার মেয়েকে আপনার দেশের কনিষ্ঠতম অতিথি হিসেবে বিবেচনা করুন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে করুণা প্রদর্শন করুন।

ভিডিওটি প্রায় ১০দিন আগে পোস্ট করা হয়েছিল এবং পরিবারটি সাহায্যের জন্য যে প্রার্থনা করেছিল তা সোমবার পেয়ে যায়। আল-জলিলা চিলড্রেনস স্পেশালিটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, শেখ মুহাম্মাদ ভিডিওটি দেখেছেন এবং বলেছেন যে তিনি আর্থিক সহায়তা দেবেন এবং চিকিত্সার ব্যয় বহন করবেন।

আগামী কয়েকদিনে আল-জলিলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল শিশুটির চিকিত্সা শুরু করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম এবং একমাত্র এই হাসপাতালে মেরুদণ্ডের পেশীবহুল অ্যাট্রোফির জন্য জিন থেরাপি দেয়া হয়। 

লাভেনের বাবা ইব্রাহিম দুবাই শাসকের উদারতায় আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, এই মহানুভবতা তাকে ও তার পরিবারকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা দুবাইয়ের শাসকের প্রতি এত কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের মেয়েকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার শঙ্কা ছিল। আমার মেয়েটি সাধারণ বাচ্চাদের মতো চলাফেরা করতে পারে না; তা দেখে কষ্ট হচ্ছিল। তার হাত-পায়ে শক্তি নেই। দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মাদ বিন রশিদকে ধন্যবাদ, আমাদের কন্যা এই জীবনরক্ষাকারী চিকিত্সাটি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। শাসক এবং আমিরাতের সব সহানুভূতিশীল মানুষের প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ; যারা এই মাধ্যমে আমাদের সহায়তা করেছেন। ইরাকি এই দম্পতির ঘরে ছয় বছরের আরও এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

আল বায়ান, আল ইত্তেহাদ ও আল আইন অবলম্বনে মুহাম্মাদ শোয়াইব

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

মেয়েকে বাঁচাতে ইরাকি মায়ের আকুতি, ১৮ কোটি টাকা দিলেন দুবাই শাসক

আপডেট: ০৪:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিরল রোগে আক্রান্ত ১৯ মাস বয়সী মেয়ের জীবন বাঁচাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করে সহায়তার আকুতি জানিয়েছিলেন ইরাকি এক মা। সন্তানকে বাঁচানোর সেই আকুতির ভিডিওতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমকে ট্যাগ করেছিলেন তিনি। দুবাইয়ের শাসক এই ভিডিওতে সাড়া দেবেন; কখনও কল্পনা করতে পারেননি সেই মা। কিন্তু ভিডিওটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ইরাকি ওই শিশুকে দ্রুত দুবাইয়ে আনার ব্যবস্থা করেন শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ।

ইরাকি নাগরিক ইব্রাহিম জব্বার মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রী মাসার মুন্ধার মেয়ে লাভেন ইব্রাহিম জব্বার আল কুতায়শি মেরুদণ্ডের পেশী অ্যাট্রোফি (এসএমএ) নামে একটি বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত। দুবাইয়ের আল-জলিলা হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১৮ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ৪৬২ টাকা।

বাবা-মা মেয়েটির চিকিৎসার এই অর্থ সংগ্রহ করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুমের উদ্দেশে একটি আবেগময় ভিডিও তৈরি করেন। দুবাই শাসকের দৃষ্টিগোচর হলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের দুবাই নিয়ে আসা হয়।

যখন তারা জানতে পারেন, তাদের মেয়ের চিকিত্সার জন্য ১৮ কোটির বেশি টাকা ব্যয় হবে; তখন তারা আশা লাভেনের জীবনের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন এবং হতাশায় ভেঙে পড়েন।

ভিডিওতে মেয়েকে জড়িয়ে মাসার মুন্ধারকে কাঁদতে দেখা যায়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, সম্মানিত শেখ মুহম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুম! আমার মেয়ের জন্য আপনার উদারতা প্রার্থনা করছি। আমার মেয়ের বিরল রোগে আক্রান্ত। যে রোগে নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে সে। আমাদের দেশে এই রোগের দক্ষ চিকিৎসক এবং চিকিত্সা ব্যবস্থা না থাকায় তাকে দুবাইয়ের আল জলিলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে  আমরা তার চিকিত্সার ব্যয় বহন করতে পারছি না। সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ দুই বছর বয়সের মধ্যে এই রোগের চিকিৎসা করাতে হয়।

তিনি বলেন, ছোট লাভেনের দু’বছর পূর্ণ হতে মাত্র তিন মাস বাকি। আমি তাকে জীবনের নতুন আলো দেওয়ার জন্য আপনার সহায়তা চাই। আপনাকে অনুরোধ করছি আমার মেয়েকে আপনার দেশের কনিষ্ঠতম অতিথি হিসেবে বিবেচনা করুন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে করুণা প্রদর্শন করুন।

ভিডিওটি প্রায় ১০দিন আগে পোস্ট করা হয়েছিল এবং পরিবারটি সাহায্যের জন্য যে প্রার্থনা করেছিল তা সোমবার পেয়ে যায়। আল-জলিলা চিলড্রেনস স্পেশালিটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, শেখ মুহাম্মাদ ভিডিওটি দেখেছেন এবং বলেছেন যে তিনি আর্থিক সহায়তা দেবেন এবং চিকিত্সার ব্যয় বহন করবেন।

আগামী কয়েকদিনে আল-জলিলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল শিশুটির চিকিত্সা শুরু করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম এবং একমাত্র এই হাসপাতালে মেরুদণ্ডের পেশীবহুল অ্যাট্রোফির জন্য জিন থেরাপি দেয়া হয়। 

লাভেনের বাবা ইব্রাহিম দুবাই শাসকের উদারতায় আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, এই মহানুভবতা তাকে ও তার পরিবারকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা দুবাইয়ের শাসকের প্রতি এত কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের মেয়েকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার শঙ্কা ছিল। আমার মেয়েটি সাধারণ বাচ্চাদের মতো চলাফেরা করতে পারে না; তা দেখে কষ্ট হচ্ছিল। তার হাত-পায়ে শক্তি নেই। দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মাদ বিন রশিদকে ধন্যবাদ, আমাদের কন্যা এই জীবনরক্ষাকারী চিকিত্সাটি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। শাসক এবং আমিরাতের সব সহানুভূতিশীল মানুষের প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ; যারা এই মাধ্যমে আমাদের সহায়তা করেছেন। ইরাকি এই দম্পতির ঘরে ছয় বছরের আরও এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

আল বায়ান, আল ইত্তেহাদ ও আল আইন অবলম্বনে মুহাম্মাদ শোয়াইব

 

আরও পড়ুন: