০৫:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

যেভাবে ৭ই মার্চের ভাষণ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৪৫ বার দেখা হয়েছে

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের সেই মহাকাব্যিক ভাষণ দেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। একদিকে ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা; অন্যদিকে স্বাধীনতাকামী এ দেশের আপামর জনগণের যেন স্বপ্নভঙ্গ না হয়, সেদিকটা রক্ষা করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে দুই বিপরীতমুখী চাওয়ার এক বিস্ময়কর সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হন। ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতা, বুদ্ধিদীপ্ত অবস্থান রাজনীতিতে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এমনটাই মনে করেন দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ ও গবেষকরা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মূল্যায়ন করতে গিয়ে কালের কণ্ঠ’র কাছে তাঁরা এমন অভিমত জানিয়েছেন।

তাঁরা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণের আগে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের সঙ্গেও কথা বলেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন। সবার সঙ্গে কথা বলে বঙ্গবন্ধু নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভাষণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি তাঁর ভাষণে এ দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে নিজের অবস্থান যেমন জানান, তেমনি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার দরজাও খোলা রাখেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, “বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ভাষণের মধ্য দিয়ে একদিকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অন্যদিকে শোষণের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তির পথনির্দেশনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও গেরিলা যুদ্ধের রূপরেখা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণেই বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ তিনি পাড়া, মহল্লা, থানা ও জেলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ভাষণে বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা।’ এমন দৃঢ়চেতা মনোবল ও ঘোষণার কারণেই পাকিস্তানি শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধে যাওয়ার প্রেরণা পায়।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহভাজন ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষিত নিয়ে বিভিন্ন লেখায় স্মৃতিচারণা করেছেন। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো একটি লেখায় তোফায়েল আহমেদ বলেন, “১৯৭১-এর ১ মার্চ ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নের জন্য হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক চলাকালে পূর্বাহ্নে ডাকা ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন। তৎক্ষণাৎ দাবানলের মতো আগুন জ্বলে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা পল্টন ময়দানে যাই। সেখানে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ ও ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ) সমন্বয়ে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন। ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠ করা হয়। এরপর আসে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ৭ই মার্চ এক দিনে আসেনি। ধাপে ধাপে এসেছে। এই ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। সব সময় সতর্ক ছিলেন, যাতে তিনি আক্রমণকারী না হয়ে আক্রান্ত হন। আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাহায্য-সহযোগিতা ও স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে যত্নবান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে কেউ যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত করতে না পারে, সে জন্য তিনি সতর্কতার সঙ্গে বক্তৃতা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এখানে শ্রদ্ধাভরে বঙ্গমাতাকে মনে পড়ে। ৬ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় পায়চারী করে আগামীকালের বক্তৃতা নিয়ে ভাবছিলেন। শ্রদ্ধেয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার ভাববার কী আছে। সারাজীবন তুমি একটা লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছ। জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছ। বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছ। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছ। বিশ্বাসী আত্মা থেকে তুমি যা বিশ্বাস করো, তাই বলবা।’ ঠিকই বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসী অন্তর থেকে ৭ই মার্চের বক্তৃতা করেছিলেন। এটি দুনিয়া কাঁপানো বক্তৃতা। পৃথিবীর কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। একটি অলিখিত বক্তৃতা তিনি দিলেন বিশ্বাসী অন্তর থেকে, যা তিনি বিশ্বাস করতেন তা-ই বলতেন। শত্রুপক্ষ গোলা-বারুদ, মেশিনগান, কামান, হেলিকপ্টার-গানশিপ, ট্যাংকসহ সব কিছু নিয়ে প্রস্তুত। সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর। অনেকেই তো বঙ্গবন্ধুকে বলতে চেয়েছেন, আজকেই যেন বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কারো দ্বারা প্ররোচিত হননি। ৭ই মার্চ সকাল থেকেই রেসকোর্স ময়দানে জনস্রোত আসতে থাকে। তখন সব মানুষের মুখে মুখে স্বাধীনতা।”

স্মৃতিচারণা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে। ৭ই মার্চ দুপুরে আমি এবং আমারই আরেক প্রিয় নেতা-নাম উল্লেখ করলাম না। আমরা দুজন বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের দুজনের কাঁধে হাত রেখে কথা বলছিলেন। আমাদের সেই নেতা যখন বঙ্গবন্ধুকে বললেন, (তিনি তাঁকে লিডার বলে সম্বোধন করতেন) ‘লিডার, আজকে কিন্তু পরিপূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া মানুষ মানবে না।’ আমাদের কাঁধে রাখা হাত নামিয়ে তাঁর নাম উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে বললেন, ‘আই অ্যাম দ্য লিডার অব দ্য পিপল। আই উইল লিড দেম। দি উইল নট লিড মি। গো অ্যান্ড ডু ইউর ডিউটি।’ এই বলে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওপরে চলে গেলেন।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আমরা ধানমণ্ডি থেকে রওনা করি পৌনে ৩টায়। রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাই সোয়া ৩টায়। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা আরম্ভ করেন সাড়ে ৩টায়। ১০ লক্ষাধিক জনতার গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত রেসকোর্স ময়দান। সেদিনের সভামঞ্চে জাতীয় চার নেতা সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন, চারদিকে তাকালেন। মাউথপিসের সামনে পোডিয়ামের ওপর চশমাটি রাখলেন। হৃদয়ের গভীরতা থেকে যা তিনি বিশ্বাস করতেন, যার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, সেই বিশ্বাসী আত্মা দিয়ে, বাংলার মানুষকে ডাক দিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’। তারপর একটানা ১৯ মিনিট ধরে বলে গেলেন দুনিয়া কাঁপানো মহাকাব্য। বক্তৃতায় তিনি মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর সামনে ছিল দুটি পথ। এক. স্বাধীনতা ঘোষণা করা। দুই. পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব না নিয়ে, বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত না হয়ে, সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদান করা। তিনি দুটিই করলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন সেদিনের পরিস্থিতি। যেটা তিনি আমাদের বলেছিলেন। সেনাবাহিনী তখন প্রস্তুত। মাথার ওপর বোমারু বিমান ও হেলিকপ্টার গানশিপ টহল দিচ্ছে। যখনই বঙ্গবন্ধু এই ভাষায় বলবেন যে আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, তখনই তারা গোলাবর্ষণ শুরু করবে। সে জন্য বঙ্গবন্ধু সব কিছু জেনেই বক্তৃতা করেছেন। এত বিচক্ষণ নেতা ছিলেন যে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সামরিক শাসকের উদ্দেশে চারটি শর্ত আরোপ করলেন-মার্শাল ল’ প্রত্যাহার করো, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নাও, এ কয়দিনে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করো এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করো। এই চারটি শর্ত আরোপ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত হলেন না। পাকিস্তানিরা তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন সদাসতর্ক ও সচেতন। অন্যদিকে পুরো বক্তৃতাটি জুড়ে ছিল আসন্ন জনযুদ্ধের রণকৌশল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।”

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের সঙ্গে স্বাধীনতার একটা ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এই ভাষণের মধ্য দিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছি।’ তিনি বলেন, “সেই ভাষণের আগে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘তুমি মনে রাখবা, তোমার পেছনে বন্দুক তাক করা রয়েছে, আর সামনে রয়েছে জনগণ। তুমি ঠিক করবা তুমি কী বলবা।’ পরে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তা মানুষকে দারুণভাবে উদ্দীপিত করেছিল।”

লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের আগে ১ মার্চেই জনতা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষে মাঠ প্রস্তুত ছিল। বিভিন্ন মহল থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য একটা চাপ ছিল। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান তখন জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে গেছেন। তিনি তখন বিরোধীদলীয় নেতাও। তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখানোর জন্য বরাবরই চেষ্টা চালানো হতো। তিনি এই দায় নিতে চান নাই। ফলে ৭ই মার্চের ভাষণে কী বলবেন এটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, এম মনসুর আলী প্রমুখের সঙ্গে আলোচনা করেন। আওয়ামী লীগের মধ্যেও একটি রক্ষণশীল অংশ ছিল পাকিস্তানপন্থী। ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানও শেখ মুজিবুর রহমানকে ফোন করে বলেন, এমন কিছু বলবেন না যেখান থেকে আর ফেরার উপায় না থাকে। এমন পরিপ্রেক্ষিতেই ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন, একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা হবে অসময়োচিত। ফলে তিনি সব পক্ষের মনমতো একটি ভাষণ দেন। তিনি জাতীয় অধিবেশনে যোগ দিতে চার দফা শর্ত যোগ করে দিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখেন। আবার জনতাকে একটি প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বললেন। ভাষণের মধ্যে তিনি দুইবার বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি ভাতে মারব, পানিতে মারব, এমন কথা বলে জনতাকে উদ্দীপিত করলেন। জনতা সন্তুষ্ট হলো। পাকিস্তানি শাসকরাও বুঝল শেখ মুজিব আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। ৭ই মার্চের ভাষণে দুই দিক সামলে নেওয়ার যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা তিনি ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছিলেন।”

 

আরও পড়ু্ন:

শেয়ার করুন

x
English Version

যেভাবে ৭ই মার্চের ভাষণ

আপডেট: ০৪:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মার্চ ২০২১

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের সেই মহাকাব্যিক ভাষণ দেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। একদিকে ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা; অন্যদিকে স্বাধীনতাকামী এ দেশের আপামর জনগণের যেন স্বপ্নভঙ্গ না হয়, সেদিকটা রক্ষা করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে দুই বিপরীতমুখী চাওয়ার এক বিস্ময়কর সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হন। ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতা, বুদ্ধিদীপ্ত অবস্থান রাজনীতিতে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এমনটাই মনে করেন দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ ও গবেষকরা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মূল্যায়ন করতে গিয়ে কালের কণ্ঠ’র কাছে তাঁরা এমন অভিমত জানিয়েছেন।

তাঁরা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণের আগে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের সঙ্গেও কথা বলেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন। সবার সঙ্গে কথা বলে বঙ্গবন্ধু নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভাষণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি তাঁর ভাষণে এ দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে নিজের অবস্থান যেমন জানান, তেমনি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার দরজাও খোলা রাখেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, “বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ভাষণের মধ্য দিয়ে একদিকে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অন্যদিকে শোষণের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তির পথনির্দেশনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও গেরিলা যুদ্ধের রূপরেখা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণেই বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ তিনি পাড়া, মহল্লা, থানা ও জেলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ভাষণে বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা।’ এমন দৃঢ়চেতা মনোবল ও ঘোষণার কারণেই পাকিস্তানি শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধে যাওয়ার প্রেরণা পায়।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহভাজন ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষিত নিয়ে বিভিন্ন লেখায় স্মৃতিচারণা করেছেন। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো একটি লেখায় তোফায়েল আহমেদ বলেন, “১৯৭১-এর ১ মার্চ ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নের জন্য হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক চলাকালে পূর্বাহ্নে ডাকা ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন। তৎক্ষণাৎ দাবানলের মতো আগুন জ্বলে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা পল্টন ময়দানে যাই। সেখানে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ ও ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ) সমন্বয়ে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন। ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ পাঠ করা হয়। এরপর আসে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ৭ই মার্চ এক দিনে আসেনি। ধাপে ধাপে এসেছে। এই ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। সব সময় সতর্ক ছিলেন, যাতে তিনি আক্রমণকারী না হয়ে আক্রান্ত হন। আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাহায্য-সহযোগিতা ও স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে যত্নবান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে কেউ যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত করতে না পারে, সে জন্য তিনি সতর্কতার সঙ্গে বক্তৃতা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এখানে শ্রদ্ধাভরে বঙ্গমাতাকে মনে পড়ে। ৬ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় পায়চারী করে আগামীকালের বক্তৃতা নিয়ে ভাবছিলেন। শ্রদ্ধেয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার ভাববার কী আছে। সারাজীবন তুমি একটা লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছ। জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছ। বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছ। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছ। বিশ্বাসী আত্মা থেকে তুমি যা বিশ্বাস করো, তাই বলবা।’ ঠিকই বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসী অন্তর থেকে ৭ই মার্চের বক্তৃতা করেছিলেন। এটি দুনিয়া কাঁপানো বক্তৃতা। পৃথিবীর কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। একটি অলিখিত বক্তৃতা তিনি দিলেন বিশ্বাসী অন্তর থেকে, যা তিনি বিশ্বাস করতেন তা-ই বলতেন। শত্রুপক্ষ গোলা-বারুদ, মেশিনগান, কামান, হেলিকপ্টার-গানশিপ, ট্যাংকসহ সব কিছু নিয়ে প্রস্তুত। সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর। অনেকেই তো বঙ্গবন্ধুকে বলতে চেয়েছেন, আজকেই যেন বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কারো দ্বারা প্ররোচিত হননি। ৭ই মার্চ সকাল থেকেই রেসকোর্স ময়দানে জনস্রোত আসতে থাকে। তখন সব মানুষের মুখে মুখে স্বাধীনতা।”

স্মৃতিচারণা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে। ৭ই মার্চ দুপুরে আমি এবং আমারই আরেক প্রিয় নেতা-নাম উল্লেখ করলাম না। আমরা দুজন বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের দুজনের কাঁধে হাত রেখে কথা বলছিলেন। আমাদের সেই নেতা যখন বঙ্গবন্ধুকে বললেন, (তিনি তাঁকে লিডার বলে সম্বোধন করতেন) ‘লিডার, আজকে কিন্তু পরিপূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া মানুষ মানবে না।’ আমাদের কাঁধে রাখা হাত নামিয়ে তাঁর নাম উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে বললেন, ‘আই অ্যাম দ্য লিডার অব দ্য পিপল। আই উইল লিড দেম। দি উইল নট লিড মি। গো অ্যান্ড ডু ইউর ডিউটি।’ এই বলে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওপরে চলে গেলেন।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আমরা ধানমণ্ডি থেকে রওনা করি পৌনে ৩টায়। রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাই সোয়া ৩টায়। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা আরম্ভ করেন সাড়ে ৩টায়। ১০ লক্ষাধিক জনতার গগনবিদারী স্লোগানে মুখরিত রেসকোর্স ময়দান। সেদিনের সভামঞ্চে জাতীয় চার নেতা সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন, চারদিকে তাকালেন। মাউথপিসের সামনে পোডিয়ামের ওপর চশমাটি রাখলেন। হৃদয়ের গভীরতা থেকে যা তিনি বিশ্বাস করতেন, যার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন, সেই বিশ্বাসী আত্মা দিয়ে, বাংলার মানুষকে ডাক দিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’। তারপর একটানা ১৯ মিনিট ধরে বলে গেলেন দুনিয়া কাঁপানো মহাকাব্য। বক্তৃতায় তিনি মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর সামনে ছিল দুটি পথ। এক. স্বাধীনতা ঘোষণা করা। দুই. পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব না নিয়ে, বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত না হয়ে, সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদান করা। তিনি দুটিই করলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন সেদিনের পরিস্থিতি। যেটা তিনি আমাদের বলেছিলেন। সেনাবাহিনী তখন প্রস্তুত। মাথার ওপর বোমারু বিমান ও হেলিকপ্টার গানশিপ টহল দিচ্ছে। যখনই বঙ্গবন্ধু এই ভাষায় বলবেন যে আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, তখনই তারা গোলাবর্ষণ শুরু করবে। সে জন্য বঙ্গবন্ধু সব কিছু জেনেই বক্তৃতা করেছেন। এত বিচক্ষণ নেতা ছিলেন যে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সামরিক শাসকের উদ্দেশে চারটি শর্ত আরোপ করলেন-মার্শাল ল’ প্রত্যাহার করো, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নাও, এ কয়দিনে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করো এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করো। এই চারটি শর্ত আরোপ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত হলেন না। পাকিস্তানিরা তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন সদাসতর্ক ও সচেতন। অন্যদিকে পুরো বক্তৃতাটি জুড়ে ছিল আসন্ন জনযুদ্ধের রণকৌশল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।”

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের সঙ্গে স্বাধীনতার একটা ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এই ভাষণের মধ্য দিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছি।’ তিনি বলেন, “সেই ভাষণের আগে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘তুমি মনে রাখবা, তোমার পেছনে বন্দুক তাক করা রয়েছে, আর সামনে রয়েছে জনগণ। তুমি ঠিক করবা তুমি কী বলবা।’ পরে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তা মানুষকে দারুণভাবে উদ্দীপিত করেছিল।”

লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের আগে ১ মার্চেই জনতা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষে মাঠ প্রস্তুত ছিল। বিভিন্ন মহল থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য একটা চাপ ছিল। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান তখন জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে গেছেন। তিনি তখন বিরোধীদলীয় নেতাও। তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখানোর জন্য বরাবরই চেষ্টা চালানো হতো। তিনি এই দায় নিতে চান নাই। ফলে ৭ই মার্চের ভাষণে কী বলবেন এটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, এম মনসুর আলী প্রমুখের সঙ্গে আলোচনা করেন। আওয়ামী লীগের মধ্যেও একটি রক্ষণশীল অংশ ছিল পাকিস্তানপন্থী। ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানও শেখ মুজিবুর রহমানকে ফোন করে বলেন, এমন কিছু বলবেন না যেখান থেকে আর ফেরার উপায় না থাকে। এমন পরিপ্রেক্ষিতেই ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন, একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা হবে অসময়োচিত। ফলে তিনি সব পক্ষের মনমতো একটি ভাষণ দেন। তিনি জাতীয় অধিবেশনে যোগ দিতে চার দফা শর্ত যোগ করে দিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখেন। আবার জনতাকে একটি প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বললেন। ভাষণের মধ্যে তিনি দুইবার বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি ভাতে মারব, পানিতে মারব, এমন কথা বলে জনতাকে উদ্দীপিত করলেন। জনতা সন্তুষ্ট হলো। পাকিস্তানি শাসকরাও বুঝল শেখ মুজিব আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন। ৭ই মার্চের ভাষণে দুই দিক সামলে নেওয়ার যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা তিনি ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছিলেন।”

 

আরও পড়ু্ন: