০৪:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রফতানি আদেশ বাতিলের শঙ্কা পোশাক মালিকদের

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
  • / ৪৪০৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: রফতানি পণ্য পরিবহনে কনটেইনার সংকট দেখে দিয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বুকিং মিলছে না যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রগামী বড় জাহাজের। এতে তৈরি পোশাক পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। যথাসময়ে রফতানি পণ্য পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় অনেকের রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, পণ্য রফতানি করতে না পারায় বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটগুলোয় (আইসিডি) কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ৬ জুলাই এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সংকটের কারণে বিজিএমইএর অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠানের রফতানি পণ্যের চালান আইসিডিতে এক মাস থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পড়ে থাকায় তারা রফতানি আয় পাননি। বিদেশী ক্রেতার কাছে পণ্য পাঠাতে এখন দুই থেকে চার সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় লাগছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে বিশেষ ছাড় দিতে হতে পারে। এতে উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এমনিতেই কভিড পরিস্থিতির কারণে পোশাক শিল্প কঠিন সংকটের মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছানোয় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় উদ্যোক্তারা নতুন করে বিপাকে পড়েছেন। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তিনি উপস্থিত সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

আলোচনা সভায় সংকট সমাধানে একাধিক প্রস্তাবনা উঠে আসে। এর মধ্যে আছে খালি কনটেইনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা। জাহাজ ও কনটেইনারের স্বল্পতার সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষকে কনটেইনার ফিডার ভেসেল বার্থিং সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা। সংকট মোকাবেলার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও নতুন জাহাজ কোম্পানিকে নতুন কনটেইনার জাহাজ পোর্টে বার্থিংয়ের সুযোগ দেয়া। ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে যদি নির্ধারিত কোনো ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার/শিপিং লাইন রফতানি কার্যসম্পাদন করতে সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে অন্য ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার/শিপিং লাইনকে কাজে সহযোগিতা করার জন্য সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া, অস্থায়ী ভিত্তিতে এক্সপোর্ট ইয়ার্ডের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি। সভায় রফতানি পণ্য চালান হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়াকে আরো সময়সাশ্রয়ী করার জন্য বিএফএফএকে অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে বেআইনি চার্জ ও বর্ধিত হারে ডিও/এনওসি চার্জ আদায় বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কনটেইনার সংকট সুরাহার বিষয়ে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো গতকাল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে। পূর্বনির্ধারিত গতকালের ওই সভাটি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। সভায় জানানো হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে জাহাজ এবং খালি কনটেইনারের সংকট নেই। গত ১৫ দিনে বাংলাদেশ থেকে ২৬টি জাহাজ ছেড়ে গেছে। সেগুলোর ক্যাপাসিটি ছিল ৩৮ হাজার টিইইউএস (২০ ফুটের কনটেইনার)। কিন্তু জাহাজগুলো পণ্য পরিবহন করেছে ২৭ হাজার টিইইউএস। অর্থাৎ ১১ হাজার টিইইউএস স্পেস অব্যবহূত থেকেছে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিভিন্ন অফডকে প্রায় ৪০ হাজার টিইইউএস খালি কনটেইনার রয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ থেকে রফতানিবোঝাই কনটেইনার দ্রুত রফতানির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করা হয়, যার মধ্যে আছে শিপিং এজন্ট ও মেইন লাইন অপারেটরদের (এমএলও) মধ্যে ‘কমন ক্যারিয়ার এগ্রিমেন্ট’ করা। ডাইরেক্ট কলিং অব শিপ টু ফাইনাল ডেস্টিনেশন। এমএলওদের মধ্যে কনটেইনার সরাসরি ইন্টারচেঞ্জ। ফ্রেইট ফরওয়ার্ডদের মাধ্যমে অফডকগুলোকে বিলম্বে কার্গো লোডিং প্ল্যান প্রদান না করা। অফডকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। সভায় বলা হয়, এগুলো বাস্তবায়ন হলে জাহাজ ও কনটেইনার জট কমে আসবে।

সভায় আরো জানানো হয়, পণ্য ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কভিড-১৯ সংক্রমণজনিত লকডাউনের সময়েও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য এবং কনটেইনার আনলোডিং, আমদানিকারক বরাবর ডেলিভারি ও রফতানি কনটেইনার জাহাজে বোঝাই কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কনটেইনার, ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন কার্গো এবং ৪ হাজার ৬২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস কনটেইনার, ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৭৬৪টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। সেই হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে কার্গো, কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x
English Version

রফতানি আদেশ বাতিলের শঙ্কা পোশাক মালিকদের

আপডেট: ০৯:০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: রফতানি পণ্য পরিবহনে কনটেইনার সংকট দেখে দিয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বুকিং মিলছে না যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রগামী বড় জাহাজের। এতে তৈরি পোশাক পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। যথাসময়ে রফতানি পণ্য পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় অনেকের রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, পণ্য রফতানি করতে না পারায় বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটগুলোয় (আইসিডি) কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ৬ জুলাই এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সংকটের কারণে বিজিএমইএর অনেক সদস্য প্রতিষ্ঠানের রফতানি পণ্যের চালান আইসিডিতে এক মাস থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত পড়ে থাকায় তারা রফতানি আয় পাননি। বিদেশী ক্রেতার কাছে পণ্য পাঠাতে এখন দুই থেকে চার সপ্তাহ অতিরিক্ত সময় লাগছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে বিশেষ ছাড় দিতে হতে পারে। এতে উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এমনিতেই কভিড পরিস্থিতির কারণে পোশাক শিল্প কঠিন সংকটের মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছানোয় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় উদ্যোক্তারা নতুন করে বিপাকে পড়েছেন। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তিনি উপস্থিত সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

আলোচনা সভায় সংকট সমাধানে একাধিক প্রস্তাবনা উঠে আসে। এর মধ্যে আছে খালি কনটেইনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা। জাহাজ ও কনটেইনারের স্বল্পতার সমস্যা সমাধানে বন্দর কর্তৃপক্ষকে কনটেইনার ফিডার ভেসেল বার্থিং সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা। সংকট মোকাবেলার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও নতুন জাহাজ কোম্পানিকে নতুন কনটেইনার জাহাজ পোর্টে বার্থিংয়ের সুযোগ দেয়া। ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে যদি নির্ধারিত কোনো ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার/শিপিং লাইন রফতানি কার্যসম্পাদন করতে সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে অন্য ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার/শিপিং লাইনকে কাজে সহযোগিতা করার জন্য সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া, অস্থায়ী ভিত্তিতে এক্সপোর্ট ইয়ার্ডের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি। সভায় রফতানি পণ্য চালান হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়াকে আরো সময়সাশ্রয়ী করার জন্য বিএফএফএকে অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে বেআইনি চার্জ ও বর্ধিত হারে ডিও/এনওসি চার্জ আদায় বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কনটেইনার সংকট সুরাহার বিষয়ে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো গতকাল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে। পূর্বনির্ধারিত গতকালের ওই সভাটি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। সভায় জানানো হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে জাহাজ এবং খালি কনটেইনারের সংকট নেই। গত ১৫ দিনে বাংলাদেশ থেকে ২৬টি জাহাজ ছেড়ে গেছে। সেগুলোর ক্যাপাসিটি ছিল ৩৮ হাজার টিইইউএস (২০ ফুটের কনটেইনার)। কিন্তু জাহাজগুলো পণ্য পরিবহন করেছে ২৭ হাজার টিইইউএস। অর্থাৎ ১১ হাজার টিইইউএস স্পেস অব্যবহূত থেকেছে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিভিন্ন অফডকে প্রায় ৪০ হাজার টিইইউএস খালি কনটেইনার রয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ থেকে রফতানিবোঝাই কনটেইনার দ্রুত রফতানির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করা হয়, যার মধ্যে আছে শিপিং এজন্ট ও মেইন লাইন অপারেটরদের (এমএলও) মধ্যে ‘কমন ক্যারিয়ার এগ্রিমেন্ট’ করা। ডাইরেক্ট কলিং অব শিপ টু ফাইনাল ডেস্টিনেশন। এমএলওদের মধ্যে কনটেইনার সরাসরি ইন্টারচেঞ্জ। ফ্রেইট ফরওয়ার্ডদের মাধ্যমে অফডকগুলোকে বিলম্বে কার্গো লোডিং প্ল্যান প্রদান না করা। অফডকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। সভায় বলা হয়, এগুলো বাস্তবায়ন হলে জাহাজ ও কনটেইনার জট কমে আসবে।

সভায় আরো জানানো হয়, পণ্য ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কভিড-১৯ সংক্রমণজনিত লকডাউনের সময়েও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য এবং কনটেইনার আনলোডিং, আমদানিকারক বরাবর ডেলিভারি ও রফতানি কনটেইনার জাহাজে বোঝাই কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কনটেইনার, ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন কার্গো এবং ৪ হাজার ৬২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস কনটেইনার, ১০ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৭২ টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৭৬৪টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। সেই হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে কার্গো, কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ঢাকা/এসআর