০৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

সৌদি যুবরাজ: প্রভাব ধরে রাখতেই নিষেধাজ্ঞায় অনীহা যুক্তরাষ্ট্রের

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৫০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৩৫ বার দেখা হয়েছে

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দেওয়ায় অভিযুক্ত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও দেশটির প্রকৃত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

এর আগে যুবরাজ বিন সালমান নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘হত্যার অনুমোদন’ দিয়েছিলেন বলে শুক্রবার প্রকাশিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের মিত্র এই দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। তবে যুবরাজ সালমানের অনুমোদনে খাশোগিকে হত্যা করা হয় বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি দেশটি।

অভিযোগ থাকার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় সোমবার (১ মার্চ) ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা।’

তিনি বলেন, সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে বিচ্ছেদ নয়, পুনরুদ্ধারের কাজ করছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন।

তার মতে, বাইডেন প্রশাসন যদি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো নাটকীয় এবং কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা (নিষেধাজ্ঞা) রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেবে।

এদিকে নির্দোষ ও নিরাপরাধ সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার আদেশ দেওয়ার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশক ফ্রেড রিয়ান। এই পত্রিকাতেই কলাম লেখক হিসেবে কাজ করতেন খাশোগি।

তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণা সময় এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সৌদি আরবকে ‘চরম মূল্য পরিশোধ’ করতে হবে বলে বাইডেন মন্তব্য করলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র আসলে দেশটির যুবরাজকে ‘ওয়ান ফ্রি মার্ডার পাস’ দিচ্ছে।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফ্রেড রিয়ান বলেছিলেন, ‘নিরাপরাধ সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার দিন থেকেই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। একটি হচ্ছে- সত্য সামনে তুলে ধরা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।’

সেসময় তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে সত্য প্রকাশিত হয়েছে। এখন, যে লোকটা এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন; তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

অবশ্য যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও খাশোগি ইস্যুতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। দেশটির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া দেশটির রাজকীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। তবে খাশোগি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই বাহিনী।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া সৌদি আরবের এসব ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং আমেরিকানরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। সৌদির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ৭৬ জন সৌদি নাগরিকের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।  সীমানার বাইরে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় করায় শায়েস্তা করতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, যেসব সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শুধু তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে দেশটির এজেন্টদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। নিজের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ছিলেন সৌদি সরকারের বিভিন্ন নীতি ও রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক।

সূত্র: আলজাজিরা

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

সৌদি যুবরাজ: প্রভাব ধরে রাখতেই নিষেধাজ্ঞায় অনীহা যুক্তরাষ্ট্রের

আপডেট: ১১:৫০:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দেওয়ায় অভিযুক্ত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও দেশটির প্রকৃত নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

এর আগে যুবরাজ বিন সালমান নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘হত্যার অনুমোদন’ দিয়েছিলেন বলে শুক্রবার প্রকাশিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের মিত্র এই দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। তবে যুবরাজ সালমানের অনুমোদনে খাশোগিকে হত্যা করা হয় বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি দেশটি।

অভিযোগ থাকার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় সোমবার (১ মার্চ) ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা।’

তিনি বলেন, সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে বিচ্ছেদ নয়, পুনরুদ্ধারের কাজ করছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন।

তার মতে, বাইডেন প্রশাসন যদি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো নাটকীয় এবং কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটা (নিষেধাজ্ঞা) রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেবে।

এদিকে নির্দোষ ও নিরাপরাধ সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার আদেশ দেওয়ার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশক ফ্রেড রিয়ান। এই পত্রিকাতেই কলাম লেখক হিসেবে কাজ করতেন খাশোগি।

তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণা সময় এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সৌদি আরবকে ‘চরম মূল্য পরিশোধ’ করতে হবে বলে বাইডেন মন্তব্য করলেও এখন যুক্তরাষ্ট্র আসলে দেশটির যুবরাজকে ‘ওয়ান ফ্রি মার্ডার পাস’ দিচ্ছে।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফ্রেড রিয়ান বলেছিলেন, ‘নিরাপরাধ সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার দিন থেকেই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। একটি হচ্ছে- সত্য সামনে তুলে ধরা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।’

সেসময় তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে সত্য প্রকাশিত হয়েছে। এখন, যে লোকটা এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন; তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

অবশ্য যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও খাশোগি ইস্যুতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন প্রশাসন। দেশটির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া দেশটির রাজকীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। তবে খাশোগি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই বাহিনী।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া সৌদি আরবের এসব ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং আমেরিকানরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। সৌদির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ৭৬ জন সৌদি নাগরিকের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।  সীমানার বাইরে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় করায় শায়েস্তা করতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, যেসব সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শুধু তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে দেশটির এজেন্টদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। নিজের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ছিলেন সৌদি সরকারের বিভিন্ন নীতি ও রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক।

সূত্র: আলজাজিরা

 

আরও পড়ুন: