০৩:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

হরতাল-অবরোধে এক মাসে ২১৭ যানে আগুন

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৪১৭৫ বার দেখা হয়েছে

সরকার পতনের এক দফা এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১ মাস ধরে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াত। সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও এসময়ে ২১৭টি যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখান থেকেই শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও এবং হামলার ঘটনা। সমাবেশ ঘিরে বেপরোয়া বিএনপি কর্মীরা ওই দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। লম্বা সময় ধরে রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, রাজারবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, পল্টন, সেগুনবাগিচাসহ আশপাশের এলাকায় চলে বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডব। তাদের পিটুনিতে মারা যান পুলিশের কর্তব্যরত এক সদস্য। আহত হন অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক। বিএনপি কর্মীরা রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে।

পরের দিন দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। এক দিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর থেকে গত ১ মাসে শুক্র ও শনিবার এবং মঙ্গলবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি ৪ দিন অবরোধ ও হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সবমিলিয়ে তারা গত ১ মাসে আট দফায় মোট ১৫ দিন অবরোধ এবং ৩ দিন হরতাল পালন করেছে।

তাদের এই কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কার্যালয় ও সরকারি অফিসসহ ১১টি স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে দুটি স্কুলেও আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।  অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন বলছে, প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে পুড়িয়ে দেয়া যানবাহনের মধ্যে ১৩৫টি বাস, ৩৭টি ট্রাক, ১৬টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল এবং ২টি প্রাইভেট কার রয়েছে। এছাড়া ৩টি মাইক্রোবাস এবং ১টি করে পিকআপ, অটোরিকশা ও লেগুনায় আগুন দেয়া হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ড থেকে বাদ যায়নি ট্রেনও। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও সিলেটে স্টেশনে দাঁড়ানো তিনটি ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে দুটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন এবং একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় পুড়ে গেছে ট্রেনগুলোর অন্তত ৯টি কোচ।  এছাড়া ১১টি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিস, কাউন্সিলর অফিস,পুলিশ বক্স, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার ও শো-রুমে আগুন দেয়া হয়।

সরকার পতনের নামে বিএনপির এই আন্দোলনকে জনস্বার্থ বিরোধী বলে আখ্যায়িত করছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয়েছে ঈগল পরিবহনের চালক আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এসব হরতাল-অবরোধ কেউ মানে। রাস্তায় মানুষ নামে। কিন্তু এই আগুন দিয়ে একটা ভীতিকর ও আতঙ্কজনক অবস্থা তৈরি করা হয়। যাতে গাড়ি না চলতে পারে।’

মালেক আরও বলেন, ‘এর আগেও বিএনপি, জামায়াত ২০১৩, ‘১৪ ও ’১৫ সালে একইভাবে যানবাহনে আগুন দিয়ে আমাদের বড় ক্ষতি করেছে। এবারও তারা একই পথে হাঁটছে।’

আরো পড়ুন: দেশেজুড়ে র‍্যাবের ৪৪২ টহল দল মোতায়েন

হানিফ পরিবহনের সুমন বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। যারা হরতাল অবরোধের ডাক দেয় তারা আমাদের কথা ভাবে না। তারা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের পেটে লাথি দিচ্ছে। ’ মহাখালী বাস টার্মিনালে সোনার বাংলা পরিবহনের চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রথমদিকে গাড়ি না চালালেও এখন ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছি। এভাবে দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ আমাদের বন্দি করে রাখলে সংসার চলবে কিভাবে?’

ঢাকা/কেএ

শেয়ার করুন

x

হরতাল-অবরোধে এক মাসে ২১৭ যানে আগুন

আপডেট: ১০:০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

সরকার পতনের এক দফা এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১ মাস ধরে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াত। সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও এসময়ে ২১৭টি যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখান থেকেই শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও এবং হামলার ঘটনা। সমাবেশ ঘিরে বেপরোয়া বিএনপি কর্মীরা ওই দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। লম্বা সময় ধরে রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, রাজারবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, পল্টন, সেগুনবাগিচাসহ আশপাশের এলাকায় চলে বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডব। তাদের পিটুনিতে মারা যান পুলিশের কর্তব্যরত এক সদস্য। আহত হন অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক। বিএনপি কর্মীরা রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে।

পরের দিন দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। এক দিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর থেকে গত ১ মাসে শুক্র ও শনিবার এবং মঙ্গলবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি ৪ দিন অবরোধ ও হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সবমিলিয়ে তারা গত ১ মাসে আট দফায় মোট ১৫ দিন অবরোধ এবং ৩ দিন হরতাল পালন করেছে।

তাদের এই কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কার্যালয় ও সরকারি অফিসসহ ১১টি স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে দুটি স্কুলেও আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।  অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন বলছে, প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে পুড়িয়ে দেয়া যানবাহনের মধ্যে ১৩৫টি বাস, ৩৭টি ট্রাক, ১৬টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল এবং ২টি প্রাইভেট কার রয়েছে। এছাড়া ৩টি মাইক্রোবাস এবং ১টি করে পিকআপ, অটোরিকশা ও লেগুনায় আগুন দেয়া হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ড থেকে বাদ যায়নি ট্রেনও। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও সিলেটে স্টেশনে দাঁড়ানো তিনটি ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে দুটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন এবং একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় পুড়ে গেছে ট্রেনগুলোর অন্তত ৯টি কোচ।  এছাড়া ১১টি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিস, কাউন্সিলর অফিস,পুলিশ বক্স, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার ও শো-রুমে আগুন দেয়া হয়।

সরকার পতনের নামে বিএনপির এই আন্দোলনকে জনস্বার্থ বিরোধী বলে আখ্যায়িত করছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয়েছে ঈগল পরিবহনের চালক আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এসব হরতাল-অবরোধ কেউ মানে। রাস্তায় মানুষ নামে। কিন্তু এই আগুন দিয়ে একটা ভীতিকর ও আতঙ্কজনক অবস্থা তৈরি করা হয়। যাতে গাড়ি না চলতে পারে।’

মালেক আরও বলেন, ‘এর আগেও বিএনপি, জামায়াত ২০১৩, ‘১৪ ও ’১৫ সালে একইভাবে যানবাহনে আগুন দিয়ে আমাদের বড় ক্ষতি করেছে। এবারও তারা একই পথে হাঁটছে।’

আরো পড়ুন: দেশেজুড়ে র‍্যাবের ৪৪২ টহল দল মোতায়েন

হানিফ পরিবহনের সুমন বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। যারা হরতাল অবরোধের ডাক দেয় তারা আমাদের কথা ভাবে না। তারা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের পেটে লাথি দিচ্ছে। ’ মহাখালী বাস টার্মিনালে সোনার বাংলা পরিবহনের চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রথমদিকে গাড়ি না চালালেও এখন ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছি। এভাবে দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ আমাদের বন্দি করে রাখলে সংসার চলবে কিভাবে?’

ঢাকা/কেএ