০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

২১ বছর আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হুজিবি’র মুফতি শফিক গ্রেফতার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৫৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ৪১১৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: নাম পরিবর্তন করে ২১ বছর আত্মগোপনে বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে শফিক (৬১)। বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শফিকুর রহমান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি সংগঠনটির আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন। শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানায়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

র‌্যাবের মুখপাত্র মঈন জানায়, ২১ বছর আগে রমনার বটমূলে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলো শফিকুর রহমান। এ ছাড়া ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০০১ সালে রমনার বটমূলে হামলার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত  আত্মগোপনে থেকে হুজিবি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। আব্দুল করিম নাম ধারণ করে ২০০৮ থেকে নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় আত্মগোপন করে তিনি। নরসিংদীর চর এলাকায় অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকুরি নেয় শফিক। ইমামতির আড়ালে তিনি মানুষের মাঝে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা প্রচার করতো। কৌশলে মাঝে মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতো তিনি। তিনি জানায়, চাঞ্চল্যকর সব মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতার গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‌্যাব। এরই মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে র‌্যাব-২ কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে। একমাত্র ছেলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতো তিনি। তবে দেখা করতো নরসিংদীর বাইরে। নিরাপত্তার জন্য তিনি নিজের নাম-পরিচয় বদলায়। ছেলের সঙ্গে সাক্ষাত ছাড়া তিনি নরসিংদীর বাইরে যেতো না। ছেলেকেই অনুসরণ করে র‌্যাব। দীর্ঘ সময় নজরদারি রাখে র‌্যাবের দল।

তিনি নরসিংদীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসার মসজিদে ঈমামতি করতেন আব্দুল করিম নামে। সোমবার সন্ধ্যায় র‌্যাব খবর পায় তিনি নরসিংদীর বাইরে আছেন। ছেলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেছেন এমন তথ্য পেয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। র‌্যাব চেষ্টা করেছে মাদ্রাসা নয়, রাস্তায় বা প্রত্যন্ত এলাকার বাইরে গ্রেফতার করতে। কারণ চরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসামি বা জঙ্গি অভিযানে ইতোপূর্বে হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সুযোগটি গতকাল রাতেই এসে যায়। ছেলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সড়ক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত শফিকুর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নিজ গ্রামে ৫ম শ্রেণী পাস করার পর মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করে তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা চকবাজারের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তিনি। ১৯৮৩ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে বাংলাদেশে ফেরত আসে তিনি।

পাকিস্তানে পড়তে গিয়ে মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় ॥ ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নুরি মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করে। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন তিনি আফগানিস্তানে চলে যায়। সেখানে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে। অতঃপর ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসে। দেশে আসার পর ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মাদ্রাসায় খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করে। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউনে পড়ার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তান গেলে সেখানে জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি) নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের আমির ও ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত হরকাতুল জিহাদের সুরা সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় সম্পৃক্ত মুফতি শফিকুর। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রমনা বটমূলে হামলার পর তিনি আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। ২০০৮ থেকে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। এ ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদন্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৪ আসামি এখনো পলাতক।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টার সহযোগিতাসহ দুটি পৃথক মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং মুফতি শফিকুর রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। গ্রেফতারকৃত শফিকুর রহমান ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা অপর মামলারও পলাতক আসামি ছিলেন তিনি।

এছাড়াও ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়। ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত শফিকুর কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। শফিকুরের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মোট ছয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

২১ বছর আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হুজিবি’র মুফতি শফিক গ্রেফতার

আপডেট: ০১:৫৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: নাম পরিবর্তন করে ২১ বছর আত্মগোপনে বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে শফিক (৬১)। বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শফিকুর রহমান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি সংগঠনটির আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন। শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানায়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

র‌্যাবের মুখপাত্র মঈন জানায়, ২১ বছর আগে রমনার বটমূলে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলো শফিকুর রহমান। এ ছাড়া ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০০১ সালে রমনার বটমূলে হামলার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত  আত্মগোপনে থেকে হুজিবি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। আব্দুল করিম নাম ধারণ করে ২০০৮ থেকে নরসিংদীর একটি মাদ্রাসায় আত্মগোপন করে তিনি। নরসিংদীর চর এলাকায় অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকুরি নেয় শফিক। ইমামতির আড়ালে তিনি মানুষের মাঝে ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা প্রচার করতো। কৌশলে মাঝে মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতো তিনি। তিনি জানায়, চাঞ্চল্যকর সব মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতার গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‌্যাব। এরই মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে র‌্যাব-২ কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে। একমাত্র ছেলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতো তিনি। তবে দেখা করতো নরসিংদীর বাইরে। নিরাপত্তার জন্য তিনি নিজের নাম-পরিচয় বদলায়। ছেলের সঙ্গে সাক্ষাত ছাড়া তিনি নরসিংদীর বাইরে যেতো না। ছেলেকেই অনুসরণ করে র‌্যাব। দীর্ঘ সময় নজরদারি রাখে র‌্যাবের দল।

তিনি নরসিংদীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসার মসজিদে ঈমামতি করতেন আব্দুল করিম নামে। সোমবার সন্ধ্যায় র‌্যাব খবর পায় তিনি নরসিংদীর বাইরে আছেন। ছেলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেছেন এমন তথ্য পেয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। র‌্যাব চেষ্টা করেছে মাদ্রাসা নয়, রাস্তায় বা প্রত্যন্ত এলাকার বাইরে গ্রেফতার করতে। কারণ চরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসামি বা জঙ্গি অভিযানে ইতোপূর্বে হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সুযোগটি গতকাল রাতেই এসে যায়। ছেলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সড়ক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত শফিকুর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের নিজ গ্রামে ৫ম শ্রেণী পাস করার পর মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করে তিনি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা চকবাজারের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তিনি। ১৯৮৩ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে বাংলাদেশে ফেরত আসে তিনি।

পাকিস্তানে পড়তে গিয়ে মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় ॥ ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ বিন নুরি মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করে। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন তিনি আফগানিস্তানে চলে যায়। সেখানে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে। অতঃপর ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে আসে। দেশে আসার পর ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মাদ্রাসায় খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করে। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউনে পড়ার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তান গেলে সেখানে জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজিবি) নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের আমির ও ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত হরকাতুল জিহাদের সুরা সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় সম্পৃক্ত মুফতি শফিকুর। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রমনা বটমূলে হামলার পর তিনি আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। ২০০৮ থেকে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। এ ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। মামলার ১৩ বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদন্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৪ আসামি এখনো পলাতক।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে একটি জনসভা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় একটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টার সহযোগিতাসহ দুটি পৃথক মামলা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং মুফতি শফিকুর রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। গ্রেফতারকৃত শফিকুর রহমান ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। একই ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা অপর মামলারও পলাতক আসামি ছিলেন তিনি।

এছাড়াও ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়। ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত শফিকুর কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। শফিকুরের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মোট ছয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

ঢাকা/এসএ