প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনিয়োগকারীদের ১৫ দাবি

- আপডেট: ০৭:১২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
- / ১০৮৪৪ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও শক্তিশালী করতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সোমবার ১২ মে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন (ক্যাপমিনাফ) এর পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারকে বাঁচাতে লিখিত দাবি পেশ করা হয়।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
বিনিয়োগকারীদের ১৫ দফা দাবীসমূহ:
০১. পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বাজারের তারল্য সঙ্কট থেকে উত্তরণে আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে কমপক্ষে ৫০,০০০ কোটি (পঞ্চাশ হাজার কোটি) টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।
০২. পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যাংক গুলোর সুদের হার ১০% এর নিচে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
০৩. বিনিয়োগকারীদের স্থায়ীভাবে আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, আইসিবি, সিডিবিএল এবং সিএমএসএফ ফান্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিশেষ করে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানকে দ্রুত অপসারণ করে যোগ্য ও পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে।
০৪.পুঁজিবাজারে বর্তমানে দ্রুত তারল্য সঙ্কট কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশীয় বড় বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য তাদেরকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের (ইনসেনটিভ) পদক্ষেপ নিতে হবে।
০৫. শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংক লুটকারী সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান এবং তার বিশেষ সহযোগী শেয়ার মার্কেট খেঁকো ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লুটকারী হাসান তাহের ইমামকে অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
০৬. বাজারে দ্রুত তারল্য প্রবাহের লক্ষ্যে বিএসইসির ২সিসি ধারা অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের এককভাবে ২% এবং সম্মিলিতভাবে ৩০% শেয়ার ধারণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটির সমন্বয়ে দুই শনিবার খোলা থাকবে পুঁজিবাজার
০৭. পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকার কর্তৃক আইসিবিকে দেয়া ৩,০০০ (তিন হাজার কোটি) কোটি টাকার ফান্ড পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের স্বচ্ছ প্রতিবেদন দ্রুত জন সম্মূখে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
০৮.মিউচ্যুয়াল ফান্ড হলো পুঁজিবাজারের প্রাণ। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো যাবতীয় সাপোর্ট অব্যাহত রাখে। কাজেই আমাদের দেশেও বাজারের বর্তমান ক্রান্তিকালে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর সার্বিক সাপোর্ট অতীব জরুরী। সুতরাং, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসিকে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
০৯.পুঁজিবাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ক্যাটগরি পরিবর্তনে সম্পূর্ণ দায় স্বরূপ ইস্যূ ম্যানেজার, নিরীক্ষক এবং কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের আইনের আওতায় আনা অতীব জরুরী। কেননা, কোম্পানির শেয়ার দর নিম্নমুখী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বিধায় এরূপে কোনক্রমেই ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের শাস্তি (ক্ষতিগ্রস্ত করা) দেয়া চলবেনা।
১০. পুঁজিবাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর কোয়ার্টারলী আর্থিক প্রতিবেদন অত্যন্ত স্বচ্ছ ও ম্যানিপুলেশন বিহীন করতে হবে এবং কোম্পানিগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড ডিভিডেন্ড প্রদানে উৎসাহিত করণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
১১. আসন্ন বাজেটে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর করমুক্ত আয়ের সীমা কমপক্ষে ৭ (সাত) লাখ টাকায় উন্নীত করতে হবে। এবং পুঁজিবাজারে প্রায় ২৫ (পঁচিশ) হাজার কোটি টাকার মার্জিন ঋণধারী অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এগুলোকে সচল করার লক্ষ্যে ১০০% সুদ সম্পূর্ণ নি:শর্তভাবে মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. বাজারের প্রতি আস্থা ফেরানোর জন্য বিনিয়োগকারীদের করবর্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকার অধিক অর্জিত মূলধনী মুনাফার উপর করের হার ১৫% এর পরিবর্তে ৫% করারোপের সুব্যবস্থা নিতে হবে।
১৩. পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভাল ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। কোনক্রমেই দুর্বল ও ঋণগ্রস্থ কোম্পানি তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়া যাবেনা এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে বাই-ব্যাক আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৪. বিনিয়োগকারীদের স্থায়ী আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ইনভেস্টরস ওয়েলফেয়ার প্রটেকশন ফান্ড দ্রুত গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে বার্ষিক এজিএমগুলো স্বশরীরে আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৫. পুঁজিবাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই, আইসিবি, বিনিয়োগকারীদের রেজিস্টার্ড সংগঠনের প্রতিনিধি, এবিবি, বিএবি, বিএমবিএ, ডিবিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএল, বিএপিএলসি ও সিএমএসএফ এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রহণযোগ্য সমন্বয় মিটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি রুহুল আমিন আকন্দ জানান, দীর্ঘ মন্দায় আমরা নি:স্ব হয়ে পড়েছি। এ মূহূর্ত্বে বাজারে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে এরকম মন্দায় সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বাজার ঠিক করেছে। আমাদের নতুন সরকারকেও সেরকম উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি।
ঢাকা/এসএইচ