১২:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে দুদকের জালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উদ্যোক্তারা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ৪৫৯০ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারির কারণে আলোচিত কোম্পানিগুলোগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেড অন্যতম। চার বছর আগে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার কিনে নিঃস্ব হয়েছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে এক থেকে দেড় টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ঋণ দিয়ে বিপদে আছে একাধিক ব্যাংকও। কিন্তু যাদের কারণে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ দেউলিয়া হয়েছে, বরাবরই তারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কেলেঙ্কারির নেপথ্য নায়কদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের (নাসির) ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে মাহতাবুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ ওলীউর রহমান, ছেলে মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, বন্ধু ড. নাসিম আহমেদের ব্যাংক হিসাবও তলব করেছে বিএফআইইউ। তলবকৃত ব্যাংক হিসাবের মধ্যে দেউলিয়ার পথে থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী, তার স্ত্রী খন্দকার তাসলিমা চৌধুরী ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডও রয়েছে।

বিএফআইইউ থেকে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দেশের সবক’টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে চিঠি পাঠানো হয়। পাঁচদিনের মধ্যে তাদের সবার ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউ সূত্র বলছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিংসহ বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাহতাবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী একাধিক কর্তৃপক্ষের অনুরোধও রয়েছে। ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবে বিএফআইইউ।

বিএফআইইউ’র চিঠেতে ছয়জন ব্যক্তি ও একটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়। এতে এক নম্বর ক্রমিকে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তার পিতার নাম কাজী আব্দুল হক, মাতা রোকেয়া বেগম, জন্ম তারিখ ১৯৫৮ সালের ৭ মার্চ। চিঠিতে মাহতাবুর রহমানের তিনটি পাসপোর্ট নম্বরও (১১২৩৩৬৭৭৩৬, ৪২২০৪৬২৮৩ ও ৫০৫৭০২৫৪৫) উল্লেখ করা হয়। তার ঠিকানা সম্পর্কে বলা হয়, কাজী ভবন, পূরবী আর/এ, ইসলামপুর, কোতোয়ালি, সিলেট এবং আল হারামাইন পারফিউমার এলএলসি, পিও বক্স-১৮৮৫, আজমান, আরব আমিরাত। মাহতাবুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ ওলীউর রহমান, ছেলে মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, বন্ধু ড. নাসিম আহমেদের পিতা-মাতার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম তারিখ এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সিইও তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ব্যাংক হিসাব তলব ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিষয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পতন হয়েছে মাহতাবুর রহমান ও তার সহযোগীদের কারণে। এ বিষয়ে এর আগেও বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করেছে। নতুন করে বিএফআইইউ কী তদন্ত করবে, তা বুঝে আসছে না। কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে চার বছরের বেশি সময় ধরে। এখনো আমাদের কাছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনসহ যেসব সম্পদ আছে, তা বিক্রি করে কোম্পানির দায়দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তবে আমি এখনো এয়ারলাইনসটি চালু করার স্বপ্ন দেখছি।

জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৩০০ কোটি টাকার দেনা রয়েছে। কোম্পানিটির অন্যান্য দায়-দেনার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেও অর্থ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ব্যাংকঋণ পরিশোধের বিষয়ে তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী জানান, ইসলামী ব্যাংকের কাছে আমাদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ঋণ ছিল। এর মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। এখন ব্যাংকটির কাছে যে ঋণ আছে তার সুদ বাদ দিয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি হবে না। আবার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঋণও বেশি নয়।

সূত্রঃ শেয়ারনিউজ

শেয়ার করুন

x
English Version

অবশেষে দুদকের জালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উদ্যোক্তারা

আপডেট: ১১:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারির কারণে আলোচিত কোম্পানিগুলোগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেড অন্যতম। চার বছর আগে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার কিনে নিঃস্ব হয়েছে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে এক থেকে দেড় টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ঋণ দিয়ে বিপদে আছে একাধিক ব্যাংকও। কিন্তু যাদের কারণে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ দেউলিয়া হয়েছে, বরাবরই তারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কেলেঙ্কারির নেপথ্য নায়কদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের (নাসির) ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে মাহতাবুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ ওলীউর রহমান, ছেলে মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, বন্ধু ড. নাসিম আহমেদের ব্যাংক হিসাবও তলব করেছে বিএফআইইউ। তলবকৃত ব্যাংক হিসাবের মধ্যে দেউলিয়ার পথে থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী, তার স্ত্রী খন্দকার তাসলিমা চৌধুরী ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডও রয়েছে।

বিএফআইইউ থেকে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দেশের সবক’টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে চিঠি পাঠানো হয়। পাঁচদিনের মধ্যে তাদের সবার ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউ সূত্র বলছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিংসহ বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাহতাবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী একাধিক কর্তৃপক্ষের অনুরোধও রয়েছে। ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবে বিএফআইইউ।

বিএফআইইউ’র চিঠেতে ছয়জন ব্যক্তি ও একটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়। এতে এক নম্বর ক্রমিকে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তার পিতার নাম কাজী আব্দুল হক, মাতা রোকেয়া বেগম, জন্ম তারিখ ১৯৫৮ সালের ৭ মার্চ। চিঠিতে মাহতাবুর রহমানের তিনটি পাসপোর্ট নম্বরও (১১২৩৩৬৭৭৩৬, ৪২২০৪৬২৮৩ ও ৫০৫৭০২৫৪৫) উল্লেখ করা হয়। তার ঠিকানা সম্পর্কে বলা হয়, কাজী ভবন, পূরবী আর/এ, ইসলামপুর, কোতোয়ালি, সিলেট এবং আল হারামাইন পারফিউমার এলএলসি, পিও বক্স-১৮৮৫, আজমান, আরব আমিরাত। মাহতাবুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ ওলীউর রহমান, ছেলে মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, বন্ধু ড. নাসিম আহমেদের পিতা-মাতার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম তারিখ এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সিইও তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ব্যাংক হিসাব তলব ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিষয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পতন হয়েছে মাহতাবুর রহমান ও তার সহযোগীদের কারণে। এ বিষয়ে এর আগেও বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করেছে। নতুন করে বিএফআইইউ কী তদন্ত করবে, তা বুঝে আসছে না। কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে চার বছরের বেশি সময় ধরে। এখনো আমাদের কাছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনসহ যেসব সম্পদ আছে, তা বিক্রি করে কোম্পানির দায়দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তবে আমি এখনো এয়ারলাইনসটি চালু করার স্বপ্ন দেখছি।

জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৩০০ কোটি টাকার দেনা রয়েছে। কোম্পানিটির অন্যান্য দায়-দেনার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেও অর্থ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ব্যাংকঋণ পরিশোধের বিষয়ে তাজবিরুল আহমেদ চৌধুরী জানান, ইসলামী ব্যাংকের কাছে আমাদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ঋণ ছিল। এর মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা এরই মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। এখন ব্যাংকটির কাছে যে ঋণ আছে তার সুদ বাদ দিয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি হবে না। আবার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঋণও বেশি নয়।

সূত্রঃ শেয়ারনিউজ