০৫:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৪১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
  • / ৪২৪৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: গত এক যুগ ধরে প্রতি বছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। করোনাকালীন অর্থপ্রবাহ বাড়াতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এবার কালো টাকা সাদা করায় লাগাম টানছে সরকার। অর্থনীতিবিদ, সৎ করদাতাদের দাবির মুখে বন্ধ হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ। এছাড়া দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় কর ছাড়ের পাশাপাশি দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্য আমদানিতে করারোপ করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ নিয়েছেন অনেক করদাতা। এর থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে প্রায় ৮৮০ কোটি টাকা। আর অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ অর্থনীতিতে যোগ হলেও সৎ করদাতারা এর বিরোধিতা করে আসছে। অর্থনীতিবিদরাও বারবার এই বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে সাময়িক সুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। সবকিছু বিবেচনায় কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যদি ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকে, তাহলে যারা ২৫ শতাংশ কর দেন তারাও এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কালো টাকা সাদা করা বিষয়ে কথা হয় এনবিআরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। তবে কীভাবে বন্ধ হচ্ছে বা অপ্রদর্শিত অর্থ রিটার্নে যোগ করার ক্ষেত্রে কত শতাংশ করে দিতে হবে তা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে রাজস্ব আহরণের সুবিধার্থে এই সুযোগ বন্ধ হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া উচিত। নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগের সুযোগও বন্ধ না করলে এর সুফল মিলবে না। বন্ধ করা না গেলে ২০০৮ সালের মতো নির্ধারিত কর পরিশোধ করার পর আরো নির্ধারিত হারে জরিমানা দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া উচিত। তাহলে করদাতাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছে এনবিআর। আগামী বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে। নতুন অর্থবছরে করহার না বাড়ালে কর আদায় নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সামর্থ্যবান টিআইএনধারীরা রিটার্ন না দিলে কর অফিস নথি খুলবে করদাতার। ভ্যাট আহরণ নিশ্চিত করতে জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এনবিআর।

আগামী বাজেটে ভ্যাটের সরল সুদ ও জরিমানার হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হবে। সেই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় উৎপাদন পর্যায়ে এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরে ভ্যাট সুবিধা অব্যাহত থাকছে আগামী বাজেটে। বাজেটে দেশীয় ই-কমার্স খাত প্রসারে কর ছাড় আসছে। বাজেটে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হয় এমন কৃষিপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করার ক্ষেত্রে করারোপ করা হচ্ছে। এছাড়া শুল্কায়ন কার্যক্রম সহজ ও ঝামেলামুক্ত করতে কাস্টম কমিশনারদের শুল্কায়নের লিমিট বাড়ছে। অর্থাৎ আগে ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব হলে কমিশনাররা পণ্য ছাড় করতে পারেন। এর বেশি হলে এনবিআরের অনুমোদন নিতে হতো। আগামী বাজেটে এর সীমা বাড়ানো হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঙ্গে। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি বরাবরই কালো টাকার বিপক্ষে। অপ্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে কালো টাকাকে মিশিয়ে সাদা করা হচ্ছে। এটা ঠিক না। যতদিন কালো টাকা থাকবে ততদিন সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন। কারণ হিসেবে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, একজন করদাতাকে ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়।

এ বছর রিটার্ন না দিয়ে যদি পরবর্তী বছর ১০ শতাংশ কর দিয়ে হয়ে যায়, তাহলে কেন সাধারণ করদাতারা কর দিবেন। এনবিআর বারবার ৬৫ লাখ টিআইএনধারীর কথা বলে আসছে, কিন্তু রিটার্ন দেন ২৪ লাখ করদাতা এই কথা কম প্রচার হয়। প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে মানে যারা প্রতি বছর রিটার্ন দিচ্ছেন তাদের ওপর করের চাপ বাড়ছে। তাই এনবিআরের উচিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করজাল বাড়ানো। আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

বন্ধ হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ

আপডেট: ১১:৪১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: গত এক যুগ ধরে প্রতি বছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। করোনাকালীন অর্থপ্রবাহ বাড়াতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এবার কালো টাকা সাদা করায় লাগাম টানছে সরকার। অর্থনীতিবিদ, সৎ করদাতাদের দাবির মুখে বন্ধ হচ্ছে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ। এছাড়া দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় কর ছাড়ের পাশাপাশি দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্য আমদানিতে করারোপ করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ নিয়েছেন অনেক করদাতা। এর থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে প্রায় ৮৮০ কোটি টাকা। আর অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ অর্থনীতিতে যোগ হলেও সৎ করদাতারা এর বিরোধিতা করে আসছে। অর্থনীতিবিদরাও বারবার এই বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে সাময়িক সুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। সবকিছু বিবেচনায় কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যদি ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকে, তাহলে যারা ২৫ শতাংশ কর দেন তারাও এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কালো টাকা সাদা করা বিষয়ে কথা হয় এনবিআরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। তবে কীভাবে বন্ধ হচ্ছে বা অপ্রদর্শিত অর্থ রিটার্নে যোগ করার ক্ষেত্রে কত শতাংশ করে দিতে হবে তা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে রাজস্ব আহরণের সুবিধার্থে এই সুযোগ বন্ধ হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া উচিত। নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগের সুযোগও বন্ধ না করলে এর সুফল মিলবে না। বন্ধ করা না গেলে ২০০৮ সালের মতো নির্ধারিত কর পরিশোধ করার পর আরো নির্ধারিত হারে জরিমানা দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া উচিত। তাহলে করদাতাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছে এনবিআর। আগামী বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে। নতুন অর্থবছরে করহার না বাড়ালে কর আদায় নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সামর্থ্যবান টিআইএনধারীরা রিটার্ন না দিলে কর অফিস নথি খুলবে করদাতার। ভ্যাট আহরণ নিশ্চিত করতে জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এনবিআর।

আগামী বাজেটে ভ্যাটের সরল সুদ ও জরিমানার হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হবে। সেই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় উৎপাদন পর্যায়ে এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরে ভ্যাট সুবিধা অব্যাহত থাকছে আগামী বাজেটে। বাজেটে দেশীয় ই-কমার্স খাত প্রসারে কর ছাড় আসছে। বাজেটে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হয় এমন কৃষিপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করার ক্ষেত্রে করারোপ করা হচ্ছে। এছাড়া শুল্কায়ন কার্যক্রম সহজ ও ঝামেলামুক্ত করতে কাস্টম কমিশনারদের শুল্কায়নের লিমিট বাড়ছে। অর্থাৎ আগে ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব হলে কমিশনাররা পণ্য ছাড় করতে পারেন। এর বেশি হলে এনবিআরের অনুমোদন নিতে হতো। আগামী বাজেটে এর সীমা বাড়ানো হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঙ্গে। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি বরাবরই কালো টাকার বিপক্ষে। অপ্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে কালো টাকাকে মিশিয়ে সাদা করা হচ্ছে। এটা ঠিক না। যতদিন কালো টাকা থাকবে ততদিন সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন। কারণ হিসেবে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, একজন করদাতাকে ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়।

এ বছর রিটার্ন না দিয়ে যদি পরবর্তী বছর ১০ শতাংশ কর দিয়ে হয়ে যায়, তাহলে কেন সাধারণ করদাতারা কর দিবেন। এনবিআর বারবার ৬৫ লাখ টিআইএনধারীর কথা বলে আসছে, কিন্তু রিটার্ন দেন ২৪ লাখ করদাতা এই কথা কম প্রচার হয়। প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে মানে যারা প্রতি বছর রিটার্ন দিচ্ছেন তাদের ওপর করের চাপ বাড়ছে। তাই এনবিআরের উচিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করজাল বাড়ানো। আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: