১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য যত সুবিধা!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:১০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুন ২০২১
  • / ৪১৯০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: করোনা মহামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে না। বরং করপোরেট করসহ অনেক ক্ষেত্রে করহার ও ভ্যাটে ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সেলফোনে আর্থিক সেবা কোম্পানিগুলোর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) জন্য আগের চেয়ে বেশি করপোরেট করের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের সময় এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত হচ্ছে ২৩ শতাংশ। সরকার এ অনুপাত বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। করপোরেট করহার কমিয়ে আনলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হতে পারে। তাই বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও কভিড-১৯ চলমান পরিস্থিতিতে করহার পুনর্নির্ধারণ করা সময়ের দাবি। বর্তমানে বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক করহার দেশের বাণিজ্যের প্রসারে ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়, বর্তমানে যা ২৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে যা রয়েছে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। এক ব্যক্তি কোম্পানির করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়, বর্তমানে যা ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়া তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) এখনকার মতোই ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অপরিবর্তিত করপোরেট করহার ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বিদ্যমান হারে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির ৪৫ শতাংশ করপোরেট করের পাশাপাশি আড়াই শতাংশ সারচার্জ প্রস্তাব করা হয়। তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির করপোরেট করহার এখনকার মতোই ৪০ শতাংশ ও তালিকাভুক্ত নয় এমন মোবাইল ফোন কোম্পানির করহার ৪৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে তালিকাভুক্ত এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত নয় এমন এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যক্তি-সংঘের করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্য সত্তার করহার ব্যক্তি শ্রেণীর হারের পরিবর্তে ৩০ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে এখনকার মতোই ১৫ শতাংশ করহার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যমান ভ্যাট আইনটি আরো ব্যবসাবান্ধব ও যুগোপযোগী করতে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর (এটি) হার কমানো হচ্ছে। ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা ও সরল সুদ দুটোতেই ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। আগাম করহার ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান অতিরিক্ত কঠোর করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রায়োগিক জটিলতার সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এ জরিমানা ও সুদের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়। এজন্য ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ জড়িত রাজস্বের দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি বকেয়া ভ্যাটের ওপর মাসিক সুদের হার ২ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এক্ষেত্রে বার্ষিক সুদের হার ২৪ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া অর্থনীতি বিকাশের চলমান গতিশীলতা নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে বেশকিছু খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখাসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব আনা হয়েছে নতুন বাজেটে। এর অংশ হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বর্তমানে মূল্য সংযোজন করহার ৫ শতাংশ আছে, যা আরো এক বছরের জন্য বাড়ানো হবে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এর কম্প্রেশারের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা এক বছরের জন্য বাড়ানো হবে। পলিপ্রোপাইলিন স্টাপল ফাইবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তিন বছরের জন্য বাড়বে। এয়ারকন্ডিশনার ও এর কম্প্রেশারের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তিন বছরের জন্য বাড়ানো হবে এবং মোটর কার ও মোটর ভেহিকলের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হবে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে ২২ বছর পর্যন্ত পুরনো জাহাজ আমদানি করলে ভ্যাট দিতে হতো না। এর বেশি বয়সী জাহাজ আমদানি করলেই ভ্যাট ছিল। তবে সেটি এখন ২৫ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৫ বছরের পুরনো জাহাজ আমদানি করলেও ভ্যাটমুক্ত থাকা হবে। নতুন বাজেটে বলা হয়, সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতিসংক্রান্ত আদেশে পুরনো জাহাজের আয়ুষ্কাল ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর এবং আমদানি পরবর্তী সময়ে বিক্রয়ের সময়সীমা পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাটের ভার লাঘবের জন্য দেশে উৎপাদিত টাইলসের পরিবেশক ও ডিলারদের জন্য শুধু নিট কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে।

বিদেশী পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে গৃৃহস্থালি কাজে দৈনন্দিন ব্যবহার্য বেশকিছু পণ্য যাতে দেশে উৎপাদিত হয় সে উদ্দেশ্যে ১১ গৃহস্থালি ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার, প্রেশার কুকারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেনের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। লৌহজাত পণ্য তৈরিতে ব্যবহার্য কতিপয় কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল এবং পিভিসি ও পিইটি রেজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহূত ইথিলিন গ্লাইকল, টেরেপ্যাথালিক অ্যাসিড, ইথিলিন/ প্রোপাইলিন ইত্যাদি শিল্পের উপকরণের ওপর আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোগে মুড়ি উৎপাদন সম্প্রসারিত হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। দেশে এখন ফলের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টন। এতে সারা দেশে তাজা ফলের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। আর এ দুটি খাতে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বর্তমানে দেশে ব্যবহূত মোবাইলের সিংহভাগই এ দেশে উৎপাদন ও সংযোজন হয়ে থাকে। সে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা হিসেবে ই-লার্নিং ও ই-বুককে ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবল সার্ভিসেস (আইটিইএস) সেবার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে স্বল্পমূল্যে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের জন্য কৃষি খাতের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণের বেশকিছু ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উইডার (নিড়ানি) ও উইনোয়ারের (ঝাড়াইকল) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। থ্রেসার মেশিন, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন হারভেস্টার, রোটারি টিলার, উইডার, উইনোয়ার ইত্যাদির ওপর আমদানি পর্যায়ে আগাম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য যত সুবিধা!

আপডেট: ১২:১০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: করোনা মহামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে না। বরং করপোরেট করসহ অনেক ক্ষেত্রে করহার ও ভ্যাটে ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সেলফোনে আর্থিক সেবা কোম্পানিগুলোর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) জন্য আগের চেয়ে বেশি করপোরেট করের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের সময় এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত হচ্ছে ২৩ শতাংশ। সরকার এ অনুপাত বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। করপোরেট করহার কমিয়ে আনলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হতে পারে। তাই বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও কভিড-১৯ চলমান পরিস্থিতিতে করহার পুনর্নির্ধারণ করা সময়ের দাবি। বর্তমানে বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক করহার দেশের বাণিজ্যের প্রসারে ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়, বর্তমানে যা ২৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে যা রয়েছে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। এক ব্যক্তি কোম্পানির করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়, বর্তমানে যা ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়া তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) এখনকার মতোই ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অপরিবর্তিত করপোরেট করহার ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বিদ্যমান হারে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির ৪৫ শতাংশ করপোরেট করের পাশাপাশি আড়াই শতাংশ সারচার্জ প্রস্তাব করা হয়। তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির করপোরেট করহার এখনকার মতোই ৪০ শতাংশ ও তালিকাভুক্ত নয় এমন মোবাইল ফোন কোম্পানির করহার ৪৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে তালিকাভুক্ত এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত নয় এমন এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যক্তি-সংঘের করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্য সত্তার করহার ব্যক্তি শ্রেণীর হারের পরিবর্তে ৩০ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে এখনকার মতোই ১৫ শতাংশ করহার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যমান ভ্যাট আইনটি আরো ব্যবসাবান্ধব ও যুগোপযোগী করতে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের আগাম কর (এটি) হার কমানো হচ্ছে। ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা ও সরল সুদ দুটোতেই ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। আগাম করহার ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান অতিরিক্ত কঠোর করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রায়োগিক জটিলতার সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এ জরিমানা ও সুদের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়। এজন্য ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ জড়িত রাজস্বের দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি বকেয়া ভ্যাটের ওপর মাসিক সুদের হার ২ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এক্ষেত্রে বার্ষিক সুদের হার ২৪ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া অর্থনীতি বিকাশের চলমান গতিশীলতা নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে বেশকিছু খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখাসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব আনা হয়েছে নতুন বাজেটে। এর অংশ হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বর্তমানে মূল্য সংযোজন করহার ৫ শতাংশ আছে, যা আরো এক বছরের জন্য বাড়ানো হবে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এর কম্প্রেশারের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা এক বছরের জন্য বাড়ানো হবে। পলিপ্রোপাইলিন স্টাপল ফাইবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তিন বছরের জন্য বাড়বে। এয়ারকন্ডিশনার ও এর কম্প্রেশারের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তিন বছরের জন্য বাড়ানো হবে এবং মোটর কার ও মোটর ভেহিকলের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হবে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে ২২ বছর পর্যন্ত পুরনো জাহাজ আমদানি করলে ভ্যাট দিতে হতো না। এর বেশি বয়সী জাহাজ আমদানি করলেই ভ্যাট ছিল। তবে সেটি এখন ২৫ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৫ বছরের পুরনো জাহাজ আমদানি করলেও ভ্যাটমুক্ত থাকা হবে। নতুন বাজেটে বলা হয়, সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতিসংক্রান্ত আদেশে পুরনো জাহাজের আয়ুষ্কাল ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর এবং আমদানি পরবর্তী সময়ে বিক্রয়ের সময়সীমা পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাটের ভার লাঘবের জন্য দেশে উৎপাদিত টাইলসের পরিবেশক ও ডিলারদের জন্য শুধু নিট কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে।

বিদেশী পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে গৃৃহস্থালি কাজে দৈনন্দিন ব্যবহার্য বেশকিছু পণ্য যাতে দেশে উৎপাদিত হয় সে উদ্দেশ্যে ১১ গৃহস্থালি ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার, প্রেশার কুকারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেনের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। লৌহজাত পণ্য তৈরিতে ব্যবহার্য কতিপয় কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল এবং পিভিসি ও পিইটি রেজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহূত ইথিলিন গ্লাইকল, টেরেপ্যাথালিক অ্যাসিড, ইথিলিন/ প্রোপাইলিন ইত্যাদি শিল্পের উপকরণের ওপর আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোগে মুড়ি উৎপাদন সম্প্রসারিত হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। দেশে এখন ফলের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টন। এতে সারা দেশে তাজা ফলের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। আর এ দুটি খাতে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বর্তমানে দেশে ব্যবহূত মোবাইলের সিংহভাগই এ দেশে উৎপাদন ও সংযোজন হয়ে থাকে। সে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা হিসেবে ই-লার্নিং ও ই-বুককে ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবল সার্ভিসেস (আইটিইএস) সেবার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে স্বল্পমূল্যে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের জন্য কৃষি খাতের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণের বেশকিছু ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উইডার (নিড়ানি) ও উইনোয়ারের (ঝাড়াইকল) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। থ্রেসার মেশিন, পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন হারভেস্টার, রোটারি টিলার, উইডার, উইনোয়ার ইত্যাদির ওপর আমদানি পর্যায়ে আগাম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ঢাকা/এসএ