০৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

লবণ ডেকে আনতে পারে যেসব জটিল রোগ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৪৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪১৯২ বার দেখা হয়েছে

লবণ সাধারণত খাবারের স্বাদ বর্ধক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। একই সঙ্গে খাবার সংরক্ষণেও এর ব্যবহার রয়েছে। কারণ, লবণ থাকলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। লবণের একটি উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম। যেটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

খাবার লবণ হিসেবে আমরা যে লবণ খাই, সেটি মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ সোডিয়াম এবং বাকি ৬০ শতাংশ ক্লোরাইড থাকে। আমরা যে পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করি, তার বেশিরভাগই আসে খাবার লবণ থেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় সব মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষ দিনে প্রায় ৪৩১০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করে। যা ডব্লিউএইচও নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সংস্থাটির সোডিয়াম গ্রহণের নির্ধারিত মাত্রা হচ্ছে, দিনে ২০০০ মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম গ্রহণ করা যা প্রায় ৫ গ্রাম লবণের সমান।

সোডিয়ামের প্রয়োজন

লবণের একটি উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোষের প্লাজমা ঠিক রাখতে, দেহের ক্ষারের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষায়, স্নায়ুর সঞ্চালন এবং কোষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই উপাদানটি দরকারি। তবে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সাধারণত প্রাকৃতিক কিছু খাবার যেমন দুধ, মাংস এবং খোলসযুক্ত মাছ যেমন চিংড়ি, ঝিনুক ইত্যাদিতে সোডিয়াম থাকে। তবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকে।

বেশি লবণ খেলে কী হয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে। এছাড়া হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, স্থূলতা, অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয়, মেনিয়ার ডিজিজ নামে এক ধরনের কানের রোগ, এবং কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। সংস্থাটি বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে ১৮ লাখ ৯০ হাজার মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ দায়ী। কেননা অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

রান্নায় কম লবণ ব্যবহারের পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মানবদেহে স্নায়ুতে সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখা, মাংসপেশি সংকোচন ও শিথিল করতে এবং দেহে পানি ও খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অল্প পরিমাণ সোডিয়াম দরকার। এই কাজগুলো ঠিকঠাক রাখতে আমাদের দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম দরকার।

আরও পড়ুন: বিমানে যে কারণে ফোনকে ফ্লাইট মোডে রাখতে বলা হয়

তবে খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া এর কারণে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি হাড় থেকেও ক্যালসিয়াম শুষে নিতে পারে সোডিয়াম। পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্য সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ দরকারি এবং অবশ্যই এটা আয়োডিন যুক্ত হতে হবে।

তবে মানুষের জীবনে ব্যস্ততা বাড়ার কারণে এখন অনেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে থাকেন যেগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ থাকে। আর অতিরিক্ত লবণ দেহের জন্য ক্ষতিকর কারণ এতে সোডিয়ামের মাত্রাও বেশি থাকে। তাদের মতে, এ ধরনের খাবার হার্টের রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

লবণ খাওয়ার পরিমাণ 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম বা ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়া উচিত। ২-১৫ বছর বয়সীদের জন্য এই মাত্রা প্রয়োজন অনুযায়ী আরো কমিয়ে আনতে হবে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ বছরের বেশি বয়সী এবং গর্ভবতী নারীরা প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করতে পারে। যে লবণই খাওয়া হোক না কেন, সেটি অবশ্যই আয়োডিন যুক্ত হতে হবে। কারণ এটি শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে ভূমিকা রাখে এবং বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়।

লবণ খাওয়ার পরিমাণ বয়স ভেদে ভিন্ন। এনএইচএস এর তথ্য অনুযায়ী, ১১ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়স্করা দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম, ৭-১০ বছর বয়সীরা ৫ গ্রাম, ৪-৬ বছর বয়সীরা ৩গ্রাম, ১-৩ বছর বয়সীরা ২গ্রাম এবং এক বছরের কম বয়সীরা দিনে এক গ্রামের কম লবণ খেতে পারবেন। শিশুদের লবণ খাওয়া ঠিক নয়, কারণ তাদের কিডনি পুনর্গঠিত থাকে না বিধায় তারা লবণ হজম ও শোষণ করতে পারে না।

পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, একজন মানুষের প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। প্রতিদিনের খাবার যেমন তরকারি থেকে এই পরিমাণ লবণ মানুষ খুব স্বাভাবিক ভাবেই পেয়ে থাকে। এর বাইরে প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ার কারণে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা হচ্ছে।

ঢাকা/এসএইচ

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

লবণ ডেকে আনতে পারে যেসব জটিল রোগ

আপডেট: ০৪:৪৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৪

লবণ সাধারণত খাবারের স্বাদ বর্ধক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। একই সঙ্গে খাবার সংরক্ষণেও এর ব্যবহার রয়েছে। কারণ, লবণ থাকলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। লবণের একটি উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম। যেটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

খাবার লবণ হিসেবে আমরা যে লবণ খাই, সেটি মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ সোডিয়াম এবং বাকি ৬০ শতাংশ ক্লোরাইড থাকে। আমরা যে পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করি, তার বেশিরভাগই আসে খাবার লবণ থেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় সব মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষ দিনে প্রায় ৪৩১০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করে। যা ডব্লিউএইচও নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সংস্থাটির সোডিয়াম গ্রহণের নির্ধারিত মাত্রা হচ্ছে, দিনে ২০০০ মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম গ্রহণ করা যা প্রায় ৫ গ্রাম লবণের সমান।

সোডিয়ামের প্রয়োজন

লবণের একটি উপাদান হচ্ছে সোডিয়াম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোষের প্লাজমা ঠিক রাখতে, দেহের ক্ষারের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষায়, স্নায়ুর সঞ্চালন এবং কোষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই উপাদানটি দরকারি। তবে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সাধারণত প্রাকৃতিক কিছু খাবার যেমন দুধ, মাংস এবং খোলসযুক্ত মাছ যেমন চিংড়ি, ঝিনুক ইত্যাদিতে সোডিয়াম থাকে। তবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকে।

বেশি লবণ খেলে কী হয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে। এছাড়া হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, স্থূলতা, অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয়, মেনিয়ার ডিজিজ নামে এক ধরনের কানের রোগ, এবং কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। সংস্থাটি বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে ১৮ লাখ ৯০ হাজার মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ দায়ী। কেননা অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

রান্নায় কম লবণ ব্যবহারের পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মানবদেহে স্নায়ুতে সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখা, মাংসপেশি সংকোচন ও শিথিল করতে এবং দেহে পানি ও খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অল্প পরিমাণ সোডিয়াম দরকার। এই কাজগুলো ঠিকঠাক রাখতে আমাদের দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম দরকার।

আরও পড়ুন: বিমানে যে কারণে ফোনকে ফ্লাইট মোডে রাখতে বলা হয়

তবে খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া এর কারণে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি হাড় থেকেও ক্যালসিয়াম শুষে নিতে পারে সোডিয়াম। পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্য সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ দরকারি এবং অবশ্যই এটা আয়োডিন যুক্ত হতে হবে।

তবে মানুষের জীবনে ব্যস্ততা বাড়ার কারণে এখন অনেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে থাকেন যেগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ থাকে। আর অতিরিক্ত লবণ দেহের জন্য ক্ষতিকর কারণ এতে সোডিয়ামের মাত্রাও বেশি থাকে। তাদের মতে, এ ধরনের খাবার হার্টের রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

লবণ খাওয়ার পরিমাণ 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম বা ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়া উচিত। ২-১৫ বছর বয়সীদের জন্য এই মাত্রা প্রয়োজন অনুযায়ী আরো কমিয়ে আনতে হবে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ বছরের বেশি বয়সী এবং গর্ভবতী নারীরা প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করতে পারে। যে লবণই খাওয়া হোক না কেন, সেটি অবশ্যই আয়োডিন যুক্ত হতে হবে। কারণ এটি শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে ভূমিকা রাখে এবং বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়।

লবণ খাওয়ার পরিমাণ বয়স ভেদে ভিন্ন। এনএইচএস এর তথ্য অনুযায়ী, ১১ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়স্করা দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম, ৭-১০ বছর বয়সীরা ৫ গ্রাম, ৪-৬ বছর বয়সীরা ৩গ্রাম, ১-৩ বছর বয়সীরা ২গ্রাম এবং এক বছরের কম বয়সীরা দিনে এক গ্রামের কম লবণ খেতে পারবেন। শিশুদের লবণ খাওয়া ঠিক নয়, কারণ তাদের কিডনি পুনর্গঠিত থাকে না বিধায় তারা লবণ হজম ও শোষণ করতে পারে না।

পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, একজন মানুষের প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। প্রতিদিনের খাবার যেমন তরকারি থেকে এই পরিমাণ লবণ মানুষ খুব স্বাভাবিক ভাবেই পেয়ে থাকে। এর বাইরে প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ার কারণে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা হচ্ছে।

ঢাকা/এসএইচ