০৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

করোনায় ‘প্লাস্টিক মানি’তে ঝুঁকছেন গ্রাহকরা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৫৫:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৯৬ বার দেখা হয়েছে

করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহক এখন নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল লেনদেনে বেশি ঝুঁকছেন। ফলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বছরের ব্যবধানে দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, টাকার অংকে যার পরিমাণ এক হাজার ৫৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ হাবীব। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় যখন বাইরে বের হওয়া যেত না। তখন প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অনলাইনে কিনতে হয়েছে। কেনাকাটার পেমেন্ট করার জন্য বাধ্য হয়ে কার্ড নিয়েছি। কারণ ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্টে অনেক ছাড় পাওয়া যায়, পাশাপাশি প্রায় সব জায়গা থেকে পণ্য কেনা যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিভিন্ন মেয়াদে কিস্তিতে বিনা সুদে কেনার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জরুরি টাকার দরকার হলে মানুষের কাছ থেকে ধার না করে সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায়। এসব বিবেচনায় ক্রেডিট কার্ড নিয়েছি। হাবীবের মত অনেক গ্রাহক এখন ‘প্লাস্টিক মানি’র সুবিধা নিচ্ছেন। ফলে কার্ড ভিত্তিক লেনদেনের সঙ্গে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে ক্রেডিট কার্ডভিত্তিক লেনদেন হয়েছে আট হাজার ৪০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত বছরের (২০১৯) একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক সর্বোচ্চ লেনদেন করেছেন। ২০২০-এর ডিসেম্বরে গ্রাহক ২৬ লাখ ২৬ হাজার বার লেনদেন করেছেন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে, আগের বছরে (২০১৯) একই মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২৫ লাখ ৪২ হাজার বার লেনদেন হয়েছিল। বছরের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে  ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) কার্ড ডি‌ভিশনের প্রধান নেহাল এ হুদা ঢাকা পোস্টকে ব‌লেন, করোনার  কারণে মানুষ এখন অনলাইন লেনদেন বা কেনাকাটার উপর বেশি ঝুঁকছেন। ফলে কার্ডে লেনদেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ক্রেডিট কার্ডের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া মানুষের এখন চাহিদা বেশি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আয় কম। ফলে ক্রেডিট কার্ডে বাড়তি চাহিদার খরচ মেটাচ্ছেন। মোট কথা কার্ডের ব্যবহার বাড়ার দুটি কারণ। এক, করোনার কারণে মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনে বেশি আগ্রহী। দুই, ইনকাম কমে গেছে ফলে ক্রেডিট কার্ডে নির্ভরশীলতা বেড়েছে।

গত বছরের তুলনায় নতুন করে কার্ডধারীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত বছরের (২০১৯) একই সময়ের তুলনায় ডিসেম্বরে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর হার বেড়েছে ৯ দশমিক শন্য ৮ শতাংশ, সংখ্যায় যার পরিমাণ এক লাখ ৩৯ হাজার ৬১৪টি। একই সঙ্গে বেড়েছে কার্ডধারীর সংখ্যা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডধারী গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৭ হাজারে। যা আগের বছরের একই মাসে ক্রেডিট কার্ডধারী গ্রাহক ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার।

ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও বেড়েছে।  ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ডেবিট কার্ড ভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ, সংখ্যায় পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

ক্রেডিট কার্ড কী?

আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় ‘প্লাস্টিক মানি’।  হাতে নগদ টাকা না থাকলেও  ক্রেডিট  কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ডের সেবা দিয়ে থাকে। একজন গ্রাহক তার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যবহার বা খরচ করা বা উত্তোলন করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় পর তাকে ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ সেবার বিনিময়ে ব্যাংকগুলো  সুদ ও চার্জ নিয়ে থাকে।

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

করোনায় ‘প্লাস্টিক মানি’তে ঝুঁকছেন গ্রাহকরা

আপডেট: ১১:৫৫:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহক এখন নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল লেনদেনে বেশি ঝুঁকছেন। ফলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বছরের ব্যবধানে দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, টাকার অংকে যার পরিমাণ এক হাজার ৫৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ হাবীব। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় যখন বাইরে বের হওয়া যেত না। তখন প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য অনলাইনে কিনতে হয়েছে। কেনাকাটার পেমেন্ট করার জন্য বাধ্য হয়ে কার্ড নিয়েছি। কারণ ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্টে অনেক ছাড় পাওয়া যায়, পাশাপাশি প্রায় সব জায়গা থেকে পণ্য কেনা যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিভিন্ন মেয়াদে কিস্তিতে বিনা সুদে কেনার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জরুরি টাকার দরকার হলে মানুষের কাছ থেকে ধার না করে সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায়। এসব বিবেচনায় ক্রেডিট কার্ড নিয়েছি। হাবীবের মত অনেক গ্রাহক এখন ‘প্লাস্টিক মানি’র সুবিধা নিচ্ছেন। ফলে কার্ড ভিত্তিক লেনদেনের সঙ্গে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে ক্রেডিট কার্ডভিত্তিক লেনদেন হয়েছে আট হাজার ৪০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত বছরের (২০১৯) একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক সর্বোচ্চ লেনদেন করেছেন। ২০২০-এর ডিসেম্বরে গ্রাহক ২৬ লাখ ২৬ হাজার বার লেনদেন করেছেন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে, আগের বছরে (২০১৯) একই মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২৫ লাখ ৪২ হাজার বার লেনদেন হয়েছিল। বছরের ব্যবধানে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে  ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) কার্ড ডি‌ভিশনের প্রধান নেহাল এ হুদা ঢাকা পোস্টকে ব‌লেন, করোনার  কারণে মানুষ এখন অনলাইন লেনদেন বা কেনাকাটার উপর বেশি ঝুঁকছেন। ফলে কার্ডে লেনদেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ক্রেডিট কার্ডের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া মানুষের এখন চাহিদা বেশি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আয় কম। ফলে ক্রেডিট কার্ডে বাড়তি চাহিদার খরচ মেটাচ্ছেন। মোট কথা কার্ডের ব্যবহার বাড়ার দুটি কারণ। এক, করোনার কারণে মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনে বেশি আগ্রহী। দুই, ইনকাম কমে গেছে ফলে ক্রেডিট কার্ডে নির্ভরশীলতা বেড়েছে।

গত বছরের তুলনায় নতুন করে কার্ডধারীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত বছরের (২০১৯) একই সময়ের তুলনায় ডিসেম্বরে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর হার বেড়েছে ৯ দশমিক শন্য ৮ শতাংশ, সংখ্যায় যার পরিমাণ এক লাখ ৩৯ হাজার ৬১৪টি। একই সঙ্গে বেড়েছে কার্ডধারীর সংখ্যা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডধারী গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৭ হাজারে। যা আগের বছরের একই মাসে ক্রেডিট কার্ডধারী গ্রাহক ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার।

ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও বেড়েছে।  ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ডেবিট কার্ড ভিত্তিক লেনদেন বেড়েছে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ, সংখ্যায় পরিমাণ ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

ক্রেডিট কার্ড কী?

আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় ‘প্লাস্টিক মানি’।  হাতে নগদ টাকা না থাকলেও  ক্রেডিট  কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ডের সেবা দিয়ে থাকে। একজন গ্রাহক তার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যবহার বা খরচ করা বা উত্তোলন করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় পর তাকে ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ সেবার বিনিময়ে ব্যাংকগুলো  সুদ ও চার্জ নিয়ে থাকে।

 

আরও পড়ুন: