০৩:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

ফাঁকির টাকা আদায়ে ফ্রিজ হচ্ছে ঢাকা ক্লাবের ব্যাংক হিসাব

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:২৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৫৬ বার দেখা হয়েছে

ঢাকা ক্লাব লিমিটেড বিভিন্ন সেবার বিপরীতে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। সাত বছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এনবিআরের চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করা হলেও এখনও মেলেনি সেই অর্থ। বারবার দাবিনামায় ফাঁকি দেওয়া অর্থ আদায়ে ঢাকা ক্লাবের যাবতীয় ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। এনবিআরের উর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২০১৭ ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্তে উদঘাটিত হয় রাজধানীর অভিজাত ঢাকা ক্লাবের এমন রাজস্ব ফাঁকির তথ্য। সংস্থাটির তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিস ওই বছরের ১৩ জুলাই প্রথম দাবিনামা জারি করে।

যদিও ভ্যাট গোয়েন্দা তদন্তে সুদসহ মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার রাজস্ব আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, যা ঢাকা ক্লাব ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সমঝোতায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা নির্ধারিত হয়। দীর্ঘদিনের অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি জানতে সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যাট গোয়েন্দা থেকে তাগিদপত্র দেওয়া হয়।

ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান স্বাক্ষরিত তাগিদপত্রে বলা হয়, ঢাকা ক্লাবের দফতরে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্ত দল ২০১৭ সালে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি উদঘাটন করে। তদন্তে ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পরিহার করা মূসক বাবদ ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ১৮৬ টাকা এবং প্রাথমিকভাবে সুদ বাবদ ৪০ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৬ টাকাসহ মোট ৬৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজর ৫৫৩ টাকার আপত্তি পাওয়া যায়। একইভাবে ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পরিহার করা মূসক বাবদ ৩১ কোটি  ২৯ লাখ ৫ হাজার ৪৫৪ টাকা এবং প্রাথমিকভাবে সুদ বাবদ ২০ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ১১৮ টাকাসহ ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের ওপর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা জানা প্রয়োজন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখিত সময়ে রাজস্ব আদায়ের সর্বশেষ অবস্থাসহ গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো জন্য অনুরোধ করা হলো।

জবাবে ভ্যাট গোয়েন্দা দফতরকে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা ক্লাবের কাছে সুদ ও জরিমানা বাদে অপরিশোধিত মূসক বাবদ মোট পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা এবং ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবাবদ সাত কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকা সরকারি পাওনাসহ মোট ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা অনাদায়ী আছে। সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি ক্লাব কর্তৃপক্ষ দুই মাসের সময় চেয়ে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি ১৫ দিনের সময় দিয়ে চূড়ান্ত দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। এরপর ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ না করতে অনুরোধ করেন। যদিও এনবিআরের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, শেষ পর্যন্ত যদি ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পাওয়া না যায়, তাহলে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে অর্থ আদায় করা হবে।

এ বিষয়ে মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর ২০১৪-১৫ থেকে এপর্যন্ত ৬৫২টি প্রতিষ্ঠানের ৫৮০৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। এখন এগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত আদায়ের খোঁজ নিচ্ছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অনেকে উদঘাটিত ভ্যাট স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এনবিআরের নির্দেশে সরকারের পাওনা আদায়ে এ অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

ঢাকা ক্লাব লিমিটেড ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সেবার বিপরীতে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আদায় করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি। যে কারণে গত ২৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে পৃথক দুইটি দাবিনামা ইস্যু করা হয়। ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার প্রমীলা সরকার স্বাক্ষরিত দাবিনামা ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই প্রথম দাবিনামা ইস্যু করে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এরপর বিভিন্ন সময়ে ১০ বার দাবিনামা জারি করলেও ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধ করেনি ঢাকা ক্লাব। এর মধ্যে পাঁচবার সময় চেয়ে আবেদন করেও শেষ পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিসের দাবি অনুযায়ী, ক্লাবটির অডিট রিপোর্ট যাচাই করে ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত মূসক বাবদ মোট পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা। এর মধ্যে সেবা বিক্রি খাতে সুদসহ আদায়যোগ্য সম্পূরক শুল্ক এবং সুদসহ উৎসে মূসক বাবদ পাওনা সাত কোটি ১০ লাখ পাঁচ হাজার ২৫৮ টাকা, সি.এ ফার্মের অডিট রিপোর্টে বিভিন্ন সেবা কেনার বিপরীতে সুদসহ কর্তনযোগ্য ভ্যাট ৫২ লাখ ৫১ হাজার ২৪১ টাকা ও নিরীক্ষা মেয়াদে স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণ খাতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে অপরিশোধিত মূসক বাবদ পাওনা এক লাখ দুই হাজার ১০৪ টাকা। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী, গত ২৫ জানুয়ারি অপরিশোধিত মূসক বাবদ ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকার দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়।

অন্যদিকে ঢাকা ক্লাবের ২০১৫-১৬ এর বার্ষিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বেকারি, বার, বিউটি পার্লার, গেস্ট হাউজ, হেলথ সার্ভিস, কার্ডরুম, লন্ড্রি সার্ভিসসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্যাটসহ বিবেচনা করে প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ নির্ধারণ করে। গত ২৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত দাবিনামায় সুদ ছাড়া মোট সাত কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকার সরকারি পাওনা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ করার চিঠি ইস্যু করা হয়। তা না হলে ১৯৯১ সালের মূসক আইনের ৫৬ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য করাসহ অন্যান্য আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে। 

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের আইন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আইনগতভাবেই ওই দাবিনামা ইস্যু করা হয়েছে।’ অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ক্লাব লিমিটেডে সারা বছরই সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যাতায়াত থাকায় বিভিন্ন ধরনের সেবা বিক্রিও ভালো হয়। ক্লাবটির প্রধান আয় আসে বার থেকে। এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি করা হয়। এছাড়া বুকিং চার্জ, সার্ভিস চার্জ, ভাড়া, বেকারি পণ্য বিক্রি, বিউটি পার্লার, গেস্ট হাউজ ভাড়া, হেলথ সার্ভিস, কার্ড রুম, লন্ড্রি সার্ভিসসহ বিভিন্ন খাত থেকেও আয় করে ঢাকা ক্লাব। পাওনার চেয়ে কম ভ্যাট পরিশোধ করছে- এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে ঢাকা ক্লাবের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। 

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

ফাঁকির টাকা আদায়ে ফ্রিজ হচ্ছে ঢাকা ক্লাবের ব্যাংক হিসাব

আপডেট: ১২:২৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মার্চ ২০২১

ঢাকা ক্লাব লিমিটেড বিভিন্ন সেবার বিপরীতে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। সাত বছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এনবিআরের চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করা হলেও এখনও মেলেনি সেই অর্থ। বারবার দাবিনামায় ফাঁকি দেওয়া অর্থ আদায়ে ঢাকা ক্লাবের যাবতীয় ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। এনবিআরের উর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২০১৭ ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্তে উদঘাটিত হয় রাজধানীর অভিজাত ঢাকা ক্লাবের এমন রাজস্ব ফাঁকির তথ্য। সংস্থাটির তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিস ওই বছরের ১৩ জুলাই প্রথম দাবিনামা জারি করে।

যদিও ভ্যাট গোয়েন্দা তদন্তে সুদসহ মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার রাজস্ব আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, যা ঢাকা ক্লাব ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সমঝোতায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা নির্ধারিত হয়। দীর্ঘদিনের অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি জানতে সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যাট গোয়েন্দা থেকে তাগিদপত্র দেওয়া হয়।

ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান স্বাক্ষরিত তাগিদপত্রে বলা হয়, ঢাকা ক্লাবের দফতরে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্ত দল ২০১৭ সালে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি উদঘাটন করে। তদন্তে ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পরিহার করা মূসক বাবদ ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ১৮৬ টাকা এবং প্রাথমিকভাবে সুদ বাবদ ৪০ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৬ টাকাসহ মোট ৬৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজর ৫৫৩ টাকার আপত্তি পাওয়া যায়। একইভাবে ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পরিহার করা মূসক বাবদ ৩১ কোটি  ২৯ লাখ ৫ হাজার ৪৫৪ টাকা এবং প্রাথমিকভাবে সুদ বাবদ ২০ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ১১৮ টাকাসহ ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের ওপর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা জানা প্রয়োজন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখিত সময়ে রাজস্ব আদায়ের সর্বশেষ অবস্থাসহ গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো জন্য অনুরোধ করা হলো।

জবাবে ভ্যাট গোয়েন্দা দফতরকে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা ক্লাবের কাছে সুদ ও জরিমানা বাদে অপরিশোধিত মূসক বাবদ মোট পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা এবং ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবাবদ সাত কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকা সরকারি পাওনাসহ মোট ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা অনাদায়ী আছে। সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি ক্লাব কর্তৃপক্ষ দুই মাসের সময় চেয়ে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি ১৫ দিনের সময় দিয়ে চূড়ান্ত দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। এরপর ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ না করতে অনুরোধ করেন। যদিও এনবিআরের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, শেষ পর্যন্ত যদি ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পাওয়া না যায়, তাহলে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে অর্থ আদায় করা হবে।

এ বিষয়ে মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর ২০১৪-১৫ থেকে এপর্যন্ত ৬৫২টি প্রতিষ্ঠানের ৫৮০৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। এখন এগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত আদায়ের খোঁজ নিচ্ছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অনেকে উদঘাটিত ভ্যাট স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এনবিআরের নির্দেশে সরকারের পাওনা আদায়ে এ অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

ঢাকা ক্লাব লিমিটেড ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সেবার বিপরীতে শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আদায় করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়নি। যে কারণে গত ২৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে পৃথক দুইটি দাবিনামা ইস্যু করা হয়। ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার প্রমীলা সরকার স্বাক্ষরিত দাবিনামা ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই প্রথম দাবিনামা ইস্যু করে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এরপর বিভিন্ন সময়ে ১০ বার দাবিনামা জারি করলেও ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধ করেনি ঢাকা ক্লাব। এর মধ্যে পাঁচবার সময় চেয়ে আবেদন করেও শেষ পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিসের দাবি অনুযায়ী, ক্লাবটির অডিট রিপোর্ট যাচাই করে ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত মূসক বাবদ মোট পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা। এর মধ্যে সেবা বিক্রি খাতে সুদসহ আদায়যোগ্য সম্পূরক শুল্ক এবং সুদসহ উৎসে মূসক বাবদ পাওনা সাত কোটি ১০ লাখ পাঁচ হাজার ২৫৮ টাকা, সি.এ ফার্মের অডিট রিপোর্টে বিভিন্ন সেবা কেনার বিপরীতে সুদসহ কর্তনযোগ্য ভ্যাট ৫২ লাখ ৫১ হাজার ২৪১ টাকা ও নিরীক্ষা মেয়াদে স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণ খাতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে অপরিশোধিত মূসক বাবদ পাওনা এক লাখ দুই হাজার ১০৪ টাকা। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী, গত ২৫ জানুয়ারি অপরিশোধিত মূসক বাবদ ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকার দাবিনামা সম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়।

অন্যদিকে ঢাকা ক্লাবের ২০১৫-১৬ এর বার্ষিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বেকারি, বার, বিউটি পার্লার, গেস্ট হাউজ, হেলথ সার্ভিস, কার্ডরুম, লন্ড্রি সার্ভিসসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্যাটসহ বিবেচনা করে প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ নির্ধারণ করে। গত ২৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত দাবিনামায় সুদ ছাড়া মোট সাত কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকার সরকারি পাওনা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ করার চিঠি ইস্যু করা হয়। তা না হলে ১৯৯১ সালের মূসক আইনের ৫৬ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য করাসহ অন্যান্য আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে। 

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের আইন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আইনগতভাবেই ওই দাবিনামা ইস্যু করা হয়েছে।’ অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ক্লাব লিমিটেডে সারা বছরই সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যাতায়াত থাকায় বিভিন্ন ধরনের সেবা বিক্রিও ভালো হয়। ক্লাবটির প্রধান আয় আসে বার থেকে। এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ বিক্রি করা হয়। এছাড়া বুকিং চার্জ, সার্ভিস চার্জ, ভাড়া, বেকারি পণ্য বিক্রি, বিউটি পার্লার, গেস্ট হাউজ ভাড়া, হেলথ সার্ভিস, কার্ড রুম, লন্ড্রি সার্ভিসসহ বিভিন্ন খাত থেকেও আয় করে ঢাকা ক্লাব। পাওনার চেয়ে কম ভ্যাট পরিশোধ করছে- এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে ঢাকা ক্লাবের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। 

 

আরও পড়ুন: