০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুজ্ব তালিকাভুক্ত ৫ ব্যাংক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:০৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৭৮১০ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রনী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ দুই প্রান্তিকে এ ৮ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। যা ব্যাংকিং খাতের রেকর্ড খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ৫৬.৮৮ শতাংশ।

গত ডিসেম্বর শেষে এই ৮ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৬৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। যা ছিলো তখনকার মোট ঋণের ৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে যা ছিলো ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫২ দশমিক ৫৫ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। আব্দুছ ছালাম আজাদ এই ব্যাংকটির এমডি থাকাকালে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিলো বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটি কিছু বড় ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায় করতে পারছে না, সেগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

জুন শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ডিসেম্বর শেষ মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি ছিলো। আলোচ্য এই সময়ে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে, যা এর ৬ মাস আগে (ডিসেম্বর’ ২০২৩) ছিলো ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।

জুন শেষে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৪৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটিতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে এ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ খেলাপি ছিলো। এছাড়া আলোচ্য এ সময়ে ব্যাংক এশিয়ার বিতরণ করা ঋণের ২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন: সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে ৯ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছে বিএসইসি

গত অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৮২ কোটি টাকা এবং পদ্মা ব্যাংকের বেড়েছে ৩ হাজার ১ কোটি টাকা।

বিগত সরকারের আমলে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এতদিন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে নানা সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেও গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিংখাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর এসময় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x

খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুজ্ব তালিকাভুক্ত ৫ ব্যাংক

আপডেট: ০৮:০৯:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রনী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ দুই প্রান্তিকে এ ৮ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। যা ব্যাংকিং খাতের রেকর্ড খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ৫৬.৮৮ শতাংশ।

গত ডিসেম্বর শেষে এই ৮ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৬৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। যা ছিলো তখনকার মোট ঋণের ৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে যা ছিলো ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫২ দশমিক ৫৫ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। আব্দুছ ছালাম আজাদ এই ব্যাংকটির এমডি থাকাকালে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিলো বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটি কিছু বড় ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায় করতে পারছে না, সেগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

জুন শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ডিসেম্বর শেষ মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি ছিলো। আলোচ্য এই সময়ে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে, যা এর ৬ মাস আগে (ডিসেম্বর’ ২০২৩) ছিলো ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।

জুন শেষে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৪৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটিতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে এ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ খেলাপি ছিলো। এছাড়া আলোচ্য এ সময়ে ব্যাংক এশিয়ার বিতরণ করা ঋণের ২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন: সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে ৯ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছে বিএসইসি

গত অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৮২ কোটি টাকা এবং পদ্মা ব্যাংকের বেড়েছে ৩ হাজার ১ কোটি টাকা।

বিগত সরকারের আমলে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এতদিন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে নানা সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেও গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিংখাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর এসময় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।

ঢাকা/এসআর