০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
নয় ইস্যুতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঢিমেতাল

বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রকট আকার ধারণ করছে সঙ্কট

বিশেষ প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:২৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১০৬১৯ বার দেখা হয়েছে

নানাবিধ অনিশ্চয়তায় কেটেছে ২০২২ সালের পুরো সময়টি। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু করোনা সংক্রমনই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক উষ্ণতা, খাদ্য সঙ্কট। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে নয়টি সঙ্কটের জায়গা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২২ সালে যত অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার সম্মিলিত ফলাফল হলো প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া। বিশ্বব্যাংক বলছে, ১৯৭০-এর দশকের সংকটের পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন সবচেয়ে সংকটের মধ্যে আছে। মহামারির পর একবার ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবার খাড়া পতন হচ্ছে প্রবৃদ্ধির। উন্নত বিশ্বে মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস ইতিমধ্যে অনেকটা কমেছে। এর আগে মন্দাপূর্ব ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস যে পর্যায়ে ছিল, এখন তার চেয়ে অনেক কম।

বিশ্বের বৃহত্তম তিন অর্থনীতি- যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির গতি দ্রুত হারে কমছে। আর এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে সামান্য ধাক্কা লাগলেও সামনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

আরও পড়ুন: শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা জরিমানা

বিশ্বব্যাপি দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমও থমকে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়। এরপর করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে সবাই একইভাবে ঘুরে দাঁড়াতেও পারল না। ২০২২ সালের শেষে বিশ্বের প্রায় ৬৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে। ফলে ২০২২ সাল হবে গত দুই দশকের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ সময় – ২০২০ সালের পর।

মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের পর যুদ্ধজনিত খাদ্য ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ৫৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্য পীড়িত থাকবে, অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে, ২০৩০ সালে বৈশ্বিক চরম দারিদ্র্যের হার থাকার কথা ছিল ৩ শতাংশ।

এছাড়া ২০২২ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে গত এক দশকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ বেড়েছে। বিশ্বের দরিদ্রতম ৬০ শতাংশ দেশ ঋণের চাপে পড়েছে বা চাপে পড়ার ঝুঁকিতে আছে। ঋণের চাপে থাকার কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো অর্থনৈতিক সংস্কার, স্বাস্থ্য, জলবায়ু ও শিক্ষা খাতে জরুরি বিনিয়োগ করতে পারছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০১০ সালের পর থেকে ঋণের ধরনও বদলে যাচ্ছে, বেসরকারি খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ অনেকাংশে বেড়েছে। ২০২২ সালের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ৬১ শতাংশ ঋণ বেসরকারি খাত নেওয়া হয়েছে। এদিকে যেসব দেশ প্যারিস ডিক্লারেশন অন এইড ইফেকটিভনেসে সই করেনি, তাদের ভূমিকা ক্রমে বাড়ছে। যেমন চীন, ভারত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত। এরাই এখন দ্বিপক্ষীয় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

আরও পড়ুন: আইপিও ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে বিএসইসি: কমেছে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ

মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের দেশগুলো মানুষকে টিকা দিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এই টিকা কেনায় বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার দিয়েছে। এখনো বিশ্বের সব মানুষ টিকার আওতায় আসেনি। সেই সঙ্গে চীনের মতো দেশে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ আবার বাড়ছে। ফলে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এই লড়াই চলবে।

২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথগতি- এসব কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছে। রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে সারের দাম বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক গত মাসে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা

যুদ্ধ ও কোভিড মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন খাবি খাচ্ছে, তখন ২০২২ সালে জলবায়ুও চরম আকার ধারণ করে। পাকিস্তানে অতিবন্যায় শত শত মানুষ মারা গেছে, চীন ও হর্ন অব আফ্রিকায় খরার কারণে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ইউরোপও ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরার সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক ২০২২ সালে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করেছে- ৩১.৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১৭০ কোটি ডলার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি সঙ্কট তীব্র হয়। জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ডলারের বিনিময় হার। এ কারণে বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ- সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সেসব দেশের বেসরকারি খাত ডলারের উচ্চ দর মিটিয়েও বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ৯ হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে ২২ কোম্পানি

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য হলো, কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করা। কিন্তু করোনা মহামারি ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে, তাতে অনেক মানুষ পিছিয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে দেশে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের সাহায্য করে যাচ্ছে।

কোভিডের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই শিশু-কিশোরেরা শিখনক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে এই প্রবণতা কেবল কোভিডের সময় শুরু হয়েছে তা নয়, কোভিডের আগে থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে শিখনদারিদ্র্য ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ১০ জন বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। তাদের মধ্যে ৪৭ জন মহামারির আগে শিখনবঞ্চিত হয়েছে। মহামারির সময় এই সংখ্যা ৬০-এ উন্নীত হয়েছে। এ ক্ষতি না পোষানো গেলে এই শিশুদের ভবিষ্যৎ কর্মদক্ষতা ও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যাবে। এতে সমাজে বৈষম্য বাড়বে।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

নয় ইস্যুতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঢিমেতাল

বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রকট আকার ধারণ করছে সঙ্কট

আপডেট: ০৪:২৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

নানাবিধ অনিশ্চয়তায় কেটেছে ২০২২ সালের পুরো সময়টি। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু করোনা সংক্রমনই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক উষ্ণতা, খাদ্য সঙ্কট। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে নয়টি সঙ্কটের জায়গা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২২ সালে যত অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার সম্মিলিত ফলাফল হলো প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া। বিশ্বব্যাংক বলছে, ১৯৭০-এর দশকের সংকটের পর বিশ্ব অর্থনীতি এখন সবচেয়ে সংকটের মধ্যে আছে। মহামারির পর একবার ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবার খাড়া পতন হচ্ছে প্রবৃদ্ধির। উন্নত বিশ্বে মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস ইতিমধ্যে অনেকটা কমেছে। এর আগে মন্দাপূর্ব ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস যে পর্যায়ে ছিল, এখন তার চেয়ে অনেক কম।

বিশ্বের বৃহত্তম তিন অর্থনীতি- যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির গতি দ্রুত হারে কমছে। আর এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে সামান্য ধাক্কা লাগলেও সামনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

আরও পড়ুন: শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা জরিমানা

বিশ্বব্যাপি দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমও থমকে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়। এরপর করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে সবাই একইভাবে ঘুরে দাঁড়াতেও পারল না। ২০২২ সালের শেষে বিশ্বের প্রায় ৬৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে। ফলে ২০২২ সাল হবে গত দুই দশকের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ সময় – ২০২০ সালের পর।

মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের পর যুদ্ধজনিত খাদ্য ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ৫৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্য পীড়িত থাকবে, অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে, ২০৩০ সালে বৈশ্বিক চরম দারিদ্র্যের হার থাকার কথা ছিল ৩ শতাংশ।

এছাড়া ২০২২ সালে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে গত এক দশকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ বেড়েছে। বিশ্বের দরিদ্রতম ৬০ শতাংশ দেশ ঋণের চাপে পড়েছে বা চাপে পড়ার ঝুঁকিতে আছে। ঋণের চাপে থাকার কারণে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো অর্থনৈতিক সংস্কার, স্বাস্থ্য, জলবায়ু ও শিক্ষা খাতে জরুরি বিনিয়োগ করতে পারছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০১০ সালের পর থেকে ঋণের ধরনও বদলে যাচ্ছে, বেসরকারি খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ অনেকাংশে বেড়েছে। ২০২২ সালের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ৬১ শতাংশ ঋণ বেসরকারি খাত নেওয়া হয়েছে। এদিকে যেসব দেশ প্যারিস ডিক্লারেশন অন এইড ইফেকটিভনেসে সই করেনি, তাদের ভূমিকা ক্রমে বাড়ছে। যেমন চীন, ভারত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত। এরাই এখন দ্বিপক্ষীয় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

আরও পড়ুন: আইপিও ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে বিএসইসি: কমেছে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ

মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের দেশগুলো মানুষকে টিকা দিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এই টিকা কেনায় বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার দিয়েছে। এখনো বিশ্বের সব মানুষ টিকার আওতায় আসেনি। সেই সঙ্গে চীনের মতো দেশে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ আবার বাড়ছে। ফলে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এই লড়াই চলবে।

২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথগতি- এসব কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছে। রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে সারের দাম বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক গত মাসে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা

যুদ্ধ ও কোভিড মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন খাবি খাচ্ছে, তখন ২০২২ সালে জলবায়ুও চরম আকার ধারণ করে। পাকিস্তানে অতিবন্যায় শত শত মানুষ মারা গেছে, চীন ও হর্ন অব আফ্রিকায় খরার কারণে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ইউরোপও ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরার সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক ২০২২ সালে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করেছে- ৩১.৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১৭০ কোটি ডলার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি সঙ্কট তীব্র হয়। জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ডলারের বিনিময় হার। এ কারণে বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ- সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সেসব দেশের বেসরকারি খাত ডলারের উচ্চ দর মিটিয়েও বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ৯ হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে ২২ কোম্পানি

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য হলো, কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করা। কিন্তু করোনা মহামারি ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন যেভাবে পিছিয়ে পড়েছে, তাতে অনেক মানুষ পিছিয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশে দেশে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের সাহায্য করে যাচ্ছে।

কোভিডের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই শিশু-কিশোরেরা শিখনক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে এই প্রবণতা কেবল কোভিডের সময় শুরু হয়েছে তা নয়, কোভিডের আগে থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে শিখনদারিদ্র্য ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ১০ জন বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। তাদের মধ্যে ৪৭ জন মহামারির আগে শিখনবঞ্চিত হয়েছে। মহামারির সময় এই সংখ্যা ৬০-এ উন্নীত হয়েছে। এ ক্ষতি না পোষানো গেলে এই শিশুদের ভবিষ্যৎ কর্মদক্ষতা ও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যাবে। এতে সমাজে বৈষম্য বাড়বে।

ঢাকা/এসআর