০৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ডা. সাবিরা হত্যার নেপথ্যে কী?

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
  • / ৪১৯৫ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সোমবার (৩১ মে) সকালে আগুনের খবরে প্রথমে ফায়ার সার্ভিস আসে, পরে কলাবাগান থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) নামে এক নারী চিকিৎসকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক গভীর ক্ষতের চিহ্ন দেখে পুলিশ জানায়, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এই নারী চিকিৎসককে।

পুলিশ ধারণা করছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে। আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি বিষয়টি দেখে হতবাক পুলিশও। সাবিরাকে খুন করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা নিয়ে চলছে তদন্ত।

রাজধানীর কলাবাগান ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি। তার প্রথম স্বামী ছিলেন চিকিৎসক। ২০০৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে শামসুর আজাদ নামের একজন ব্যাংকারকে বিয়ে করেন লিপি। দুই সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম সংসারের ছেলের বয়স ২১ বছর। তিনি গত কয়েক মাস ধরে কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র মেয়ের বয়স ১০ বছর। মেয়েটি কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ডা. সাবিরা আলাদা থাকতেন বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউ মার্কেট যেতে কলাবাগান সড়কের হাতের বাম পাশে ফার্স্ট লেনের গলি। মূল সড়ক থেকে কয়েকশ গজ গেলেই হাতের বাম পাশে ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভবন। সাততলা ভবনটির তৃতীয় তলায় তিন কক্ষের একটি ফ্ল্যাটের প্রথম কক্ষটিতে থাকতেন নিহত চিকিৎসক ডা. সাবিরা। দ্বিতীয় কক্ষে থাকতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী। আর তৃতীয় কক্ষে থাকতেন আরও একজন শিক্ষার্থী, তবে তিনি মডেল হিসেবে পরিচিত বলে জানান স্থানীয়রা। অর্থাৎ ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে ডা. সাবিরা একাই থাকতেন এবং বাকি দুইটি কক্ষ সাবলেট হিসেবে বাড়ির মালিকের অজান্তেই ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।

ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকা একজন ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে ফেরেননি। অপরজন ভোরে বাসা থেকে বের হন শরীর চর্চা করতে। তার নাম কানিজ সুবর্ণা। তিনি সকাল পৌনে ১০টায় ঘরে ফিরে দেখেন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই তরুণী একজন মডেল। স্নাতক পাস করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ওই ভবনের নিচতলায় দারোয়ান থাকেন। তার নাম রমজান আলী। সকালে কেউ বাসায় ঢুকেছেন, এমনটি দেখেননি বলে দাবি করেছেন তিনি। তাকেও নিয়ে গেছে ডিবি। সেই মডেলের এক ছেলেবন্ধু যার নাম মাহাথির মোহাম্মদ স্পন্দন তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাবিরা তার কর্মস্থল গ্রিন লাইফ হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন একজন স্বজন। তবে কাদের সঙ্গে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, তা এখনো জানা যায়নি। সাবিরা আট থেকে নয় বছর ধরে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চাকরি করছেন। বছর পাঁচেক আগে তার চাকরি স্থায়ী হয়। কাজ করতেন রেডিওলজি বিভাগে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে ঢাকায় এসে কয়েকটি হাসপাতালে চাকরির পর তিনি যোগ দেন গ্রিন লাইফ হাসপাতালে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় রোগী দেখার কথা ছিল ডা. সাবিরার
গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ডা. সাবিরা রোববার রাতে বলে এসেছিলেন তিনি সোমবার সকাল ৯টার দিকে আসবেন। হাসপাতালের আয়া সাথি বেগম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ম্যাডামকে ফোন দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাডাম ফোন রিসিভ করেননি। সকাল সাড়ে ৯টায় রোগী দেখার টাইম দেয়া ছিল। ম্যাডাম বলে গিয়েছিলেন- তিনি ৯টায় হাসপাতালে আসবেন।’

ভবনে নেই সিসিটিভি, মিথ্যে বলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন সাবিরা
ওই ভবনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই বলে জানিয়েছেন ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুব ইসলাম। ফলে কে বা কারা ঘরে ঢুকেছেন সেটি দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘খুনি সেই ফ্ল্যাটেও অবস্থান করতে পারেন, তবে আপাতত কাউকে সন্দেহও করতে পারতে পারছি না।’

মাহবুব বলেন, ‘স্বামী বিদেশে থাকেন, দুই সন্তান নিয়ে থাকবেন বলে ২৩ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন ডা. সাবিরা। তবে সোমবার ঘটনার পরে জেনেছি, ফ্ল্যাটের তিন কক্ষের মধ্যে দুই কক্ষ দুই নারীকে ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।’

বাড়ির দারোয়ান রমজান আলীকে উদ্ধৃত করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাহবুব বলেন, ‘সাবলেট দেয়া দুই কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষের নারী ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে এখনো ফেরেননি। অন্য কক্ষের নারী কানিজ সুবর্ণা প্রতিদিনের মতো শরীর চর্চা শেষে বাসায় ফিরে সাবিরার কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। পরে ডাকাডাকি করে ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় দৌঁড়ে নিচে নেমে দারোয়ানসহ কয়েকজনকে নিয়ে উপরে ওঠেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের টিম এসে কিছুক্ষণ পানি ছিটিয়ে ধোঁয়া নিভিয়ে চলে যায়। এরপরেই পুলিশ আসে।’

দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন না ডা. সাবিরা
বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ডা. সাবিরা আলাদা থাকতেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন সাবিরার একজন স্বজন। দ্বিতীয় স্বামী শামসুর আজাদের বাসা রাজধানীর শান্তিনগরে। সাবিরা খুনের সংবাদ পেয়ে তিনি কলাবাগানের বাসায় আসেন।

তিনি বলেন, ‘শাশুড়ি ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেন, লিপি হয়তো বেঁচে নেই, তুমি একটু ঘটনাস্থলে যাও। এরপর বাসায় ছুটে আসি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।’

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

শামসুর আজাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে নিঃসন্দেহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। এখানে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আমি মনে করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও দোষীদের বিচার হবে।’

স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে কেন তিনি আলাদা বাসায় থাকতেন- জানতে চাইলে আজাদ বলেন, ‘আমার ১০ বছরের মেয়ে কলাবাগানের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকে দেখভালের সুবিধার্থে লিপি কলাবাগানের এই বাসায় থাকতেন।’

সাবিরার ঘাড়ে ও পেছনে কোপের দাগ, এটি পরিকল্পিত হত্যা
ডা. সাবিরার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর তার মামা হারুন অর রশীদ মৃধা অভিযোগ করেছেন, তিনি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

বিকেলে ওই বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হারুন অর রশীদ মৃধা বলেন, ‘আজ (সোমবার) সকালে ফোনে জানতে পারি আমার ভাগ্নি কাজী সাবিরা রহমান লিপি মারা গেছে। এরপর এই বাসায় এসে দেখি লিপির রুমে ছাই পড়ে আছে। এটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে যাতে করে মানুষ মনে করে, সে আগুনে মারা গেছে। কিন্তু এটা সত্য নয়।লিপির ঘাড়ে ও পেছনে কোপের দাগ, এটি পরিকল্পিত হত্যা।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্নির দুই ভাই আছে অস্ট্রেলিয়াতে। চট্টগ্রাম থেকে ডাক্তারি পাস করার পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছে লিপি। সবশেষ গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিল লিপি।’

পারিবারিক কলহের কোনো ঘটনা ছিল কি-না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমার জানা মতে তার পরিবারে কোনো কলহ ছিল না।’ প্রশাসনের বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের আসল সত্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিহত চিকিৎসকের খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার মমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সে আমার মেজো খালার মেয়ে। বয়স ৪৭ এর মতো। গ্রিন লাইফ হাসপাতালে বেশ কয়েক বছর ধরে চাকরি করছে। তার স্বামী সাবেক ব্যাংকার। আজকে সাবিরার অফিস ছিল এবং বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। আমার মনে হয় আশেপাশের কেউ শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করেছে।’

সাবিরার মরদেহে গভীর ক্ষত, কাটা হয় শ্বাসনালী
সাবিরার মরদেহে গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পিঠে ও কোমরের উপরে এবং গলার ক্ষতগুলো লক্ষ্য করা যায়। ওই কক্ষে আগুনের সূত্রপাতও হয়। কিন্তু এসব বিষয়ে তদন্ত না করে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি নিউ মার্কেট-কলাবাগান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘কলাবাগানের এই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দুইজনকে সাবলেট দিয়েছিলেন সাবিরা। সকালের দিকে তার কক্ষের বাইরে থেকে ধোঁয়া দেখেন পাশের সাবলেটে থাকা এক নারী। পরে তিনি ভবনের দারোয়ানসহ কয়েকজনকে এনে দরজা ভেঙে ভেতরে যান। তারা ঢুকে দেখতে পান, লিপি বিছানায় পড়ে আছেন এবং ঘরে ধোঁয়া। পরে ফায়ার ব্রিগেড এসে পানি ছিটিয়ে চলে যায়। পুলিশ বেলা ১২টার দিকে এসে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।’

এরপর বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে একজন নারী এসআই এবং নারী কনস্টেবলের সহায়তায় মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় বলে জানান এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

যেভাবে ঘটনা জানতে পারে পুলিশ
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র পাল বলেন, ‘ডা. সাবিরার পাশের রুমে একজন মডেল থাকতেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মেয়েটি এই বাসায় সাবলেটে ওঠেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, সেই মডেল সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি লেকে শরীর চর্চা করতে যান। সকাল আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে বাসার প্রধান গেট খুলে ভেতরে ঢুকে ধোঁয়া ও পোড়া গন্ধ পান। তিনি তখন বাসার দারোয়ানকে জানান। এরপরে ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আরেক নারীকে জানান।’

তিনি বলেন, ‘লোক জানাজানি হলে বাসার পাশের এক মিস্ত্রিকে এনে রুমের দরজার লক খুলে ভেতরে গিয়ে তারা দেখেন ধোঁয়াচ্ছন্ন। যারা আসছিল তখন তারা আগুন মনে করে পানি মারে। এরপরে তারা ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেয় বলে জানায়। এরপর পুলিশ খবর পায়। প্রথমে বাসায় যায় কলাবাগান থানা-পুলিশ। পরে তারা খবর দেয় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটকে। এরপরে ঘটনাস্থলে আসে ডিবি, র‌্যাব, তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের সদস্যরা।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। তবে কী কী আলামত পাওয়া গেছে, সেটি জানানো হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস কী বলছে
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ‘সোমবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে ওই বাসায় আগুনের সংবাদ পাই। সেখানে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সেখান থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করেন।’

ফায়ার সার্ভিস জানায়, মরদেহটির গলা ও পায়ের সামনের কিছু অংশ দগ্ধ ছিল। ঘরের তোশক পুড়ে গিয়েছিল। এসব দেখে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুলিশে খবর দিতে বলেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

সাবলেটের মডেল নারীসহ ডিবি হেফাজতে চার
সাবিরার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটের সাবলেটে থাকা মডেল কানিজ সুবর্ণা, তার ছেলেবন্ধু মাহাথির মোহাম্মদ স্পন্দন, বাসার দারোয়ান রমজান আলী ও বাসার কাজের বুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, ‘সবাই ভেবেছিলেন ডা. সাবিরা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি পুলিশ এসে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত রহস্য উদঘাটন করতে পারব।’

সূত্র:জাগোনিউজ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

ডা. সাবিরা হত্যার নেপথ্যে কী?

আপডেট: ১২:৪৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সোমবার (৩১ মে) সকালে আগুনের খবরে প্রথমে ফায়ার সার্ভিস আসে, পরে কলাবাগান থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) নামে এক নারী চিকিৎসকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক গভীর ক্ষতের চিহ্ন দেখে পুলিশ জানায়, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এই নারী চিকিৎসককে।

পুলিশ ধারণা করছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে। আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি বিষয়টি দেখে হতবাক পুলিশও। সাবিরাকে খুন করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা নিয়ে চলছে তদন্ত।

রাজধানীর কলাবাগান ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি। তার প্রথম স্বামী ছিলেন চিকিৎসক। ২০০৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে শামসুর আজাদ নামের একজন ব্যাংকারকে বিয়ে করেন লিপি। দুই সংসারে তার দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম সংসারের ছেলের বয়স ২১ বছর। তিনি গত কয়েক মাস ধরে কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র মেয়ের বয়স ১০ বছর। মেয়েটি কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ডা. সাবিরা আলাদা থাকতেন বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউ মার্কেট যেতে কলাবাগান সড়কের হাতের বাম পাশে ফার্স্ট লেনের গলি। মূল সড়ক থেকে কয়েকশ গজ গেলেই হাতের বাম পাশে ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভবন। সাততলা ভবনটির তৃতীয় তলায় তিন কক্ষের একটি ফ্ল্যাটের প্রথম কক্ষটিতে থাকতেন নিহত চিকিৎসক ডা. সাবিরা। দ্বিতীয় কক্ষে থাকতেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী। আর তৃতীয় কক্ষে থাকতেন আরও একজন শিক্ষার্থী, তবে তিনি মডেল হিসেবে পরিচিত বলে জানান স্থানীয়রা। অর্থাৎ ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে ডা. সাবিরা একাই থাকতেন এবং বাকি দুইটি কক্ষ সাবলেট হিসেবে বাড়ির মালিকের অজান্তেই ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।

ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকা একজন ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে ফেরেননি। অপরজন ভোরে বাসা থেকে বের হন শরীর চর্চা করতে। তার নাম কানিজ সুবর্ণা। তিনি সকাল পৌনে ১০টায় ঘরে ফিরে দেখেন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই তরুণী একজন মডেল। স্নাতক পাস করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ওই ভবনের নিচতলায় দারোয়ান থাকেন। তার নাম রমজান আলী। সকালে কেউ বাসায় ঢুকেছেন, এমনটি দেখেননি বলে দাবি করেছেন তিনি। তাকেও নিয়ে গেছে ডিবি। সেই মডেলের এক ছেলেবন্ধু যার নাম মাহাথির মোহাম্মদ স্পন্দন তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।

ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাবিরা তার কর্মস্থল গ্রিন লাইফ হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন একজন স্বজন। তবে কাদের সঙ্গে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, তা এখনো জানা যায়নি। সাবিরা আট থেকে নয় বছর ধরে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চাকরি করছেন। বছর পাঁচেক আগে তার চাকরি স্থায়ী হয়। কাজ করতেন রেডিওলজি বিভাগে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে ঢাকায় এসে কয়েকটি হাসপাতালে চাকরির পর তিনি যোগ দেন গ্রিন লাইফ হাসপাতালে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় রোগী দেখার কথা ছিল ডা. সাবিরার
গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ডা. সাবিরা রোববার রাতে বলে এসেছিলেন তিনি সোমবার সকাল ৯টার দিকে আসবেন। হাসপাতালের আয়া সাথি বেগম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ম্যাডামকে ফোন দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ম্যাডাম ফোন রিসিভ করেননি। সকাল সাড়ে ৯টায় রোগী দেখার টাইম দেয়া ছিল। ম্যাডাম বলে গিয়েছিলেন- তিনি ৯টায় হাসপাতালে আসবেন।’

ভবনে নেই সিসিটিভি, মিথ্যে বলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন সাবিরা
ওই ভবনে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই বলে জানিয়েছেন ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুব ইসলাম। ফলে কে বা কারা ঘরে ঢুকেছেন সেটি দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘খুনি সেই ফ্ল্যাটেও অবস্থান করতে পারেন, তবে আপাতত কাউকে সন্দেহও করতে পারতে পারছি না।’

মাহবুব বলেন, ‘স্বামী বিদেশে থাকেন, দুই সন্তান নিয়ে থাকবেন বলে ২৩ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন ডা. সাবিরা। তবে সোমবার ঘটনার পরে জেনেছি, ফ্ল্যাটের তিন কক্ষের মধ্যে দুই কক্ষ দুই নারীকে ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।’

বাড়ির দারোয়ান রমজান আলীকে উদ্ধৃত করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাহবুব বলেন, ‘সাবলেট দেয়া দুই কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষের নারী ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে এখনো ফেরেননি। অন্য কক্ষের নারী কানিজ সুবর্ণা প্রতিদিনের মতো শরীর চর্চা শেষে বাসায় ফিরে সাবিরার কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। পরে ডাকাডাকি করে ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় দৌঁড়ে নিচে নেমে দারোয়ানসহ কয়েকজনকে নিয়ে উপরে ওঠেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের টিম এসে কিছুক্ষণ পানি ছিটিয়ে ধোঁয়া নিভিয়ে চলে যায়। এরপরেই পুলিশ আসে।’

দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে থাকতেন না ডা. সাবিরা
বর্তমান স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ডা. সাবিরা আলাদা থাকতেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন সাবিরার একজন স্বজন। দ্বিতীয় স্বামী শামসুর আজাদের বাসা রাজধানীর শান্তিনগরে। সাবিরা খুনের সংবাদ পেয়ে তিনি কলাবাগানের বাসায় আসেন।

তিনি বলেন, ‘শাশুড়ি ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেন, লিপি হয়তো বেঁচে নেই, তুমি একটু ঘটনাস্থলে যাও। এরপর বাসায় ছুটে আসি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।’

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

শামসুর আজাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে নিঃসন্দেহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। এখানে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আমি মনে করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও দোষীদের বিচার হবে।’

স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে কেন তিনি আলাদা বাসায় থাকতেন- জানতে চাইলে আজাদ বলেন, ‘আমার ১০ বছরের মেয়ে কলাবাগানের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকে দেখভালের সুবিধার্থে লিপি কলাবাগানের এই বাসায় থাকতেন।’

সাবিরার ঘাড়ে ও পেছনে কোপের দাগ, এটি পরিকল্পিত হত্যা
ডা. সাবিরার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর তার মামা হারুন অর রশীদ মৃধা অভিযোগ করেছেন, তিনি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

বিকেলে ওই বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হারুন অর রশীদ মৃধা বলেন, ‘আজ (সোমবার) সকালে ফোনে জানতে পারি আমার ভাগ্নি কাজী সাবিরা রহমান লিপি মারা গেছে। এরপর এই বাসায় এসে দেখি লিপির রুমে ছাই পড়ে আছে। এটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে যাতে করে মানুষ মনে করে, সে আগুনে মারা গেছে। কিন্তু এটা সত্য নয়।লিপির ঘাড়ে ও পেছনে কোপের দাগ, এটি পরিকল্পিত হত্যা।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্নির দুই ভাই আছে অস্ট্রেলিয়াতে। চট্টগ্রাম থেকে ডাক্তারি পাস করার পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছে লিপি। সবশেষ গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিল লিপি।’

পারিবারিক কলহের কোনো ঘটনা ছিল কি-না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমার জানা মতে তার পরিবারে কোনো কলহ ছিল না।’ প্রশাসনের বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের আসল সত্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিহত চিকিৎসকের খালাতো বোন জাকিয়া খন্দকার মমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সে আমার মেজো খালার মেয়ে। বয়স ৪৭ এর মতো। গ্রিন লাইফ হাসপাতালে বেশ কয়েক বছর ধরে চাকরি করছে। তার স্বামী সাবেক ব্যাংকার। আজকে সাবিরার অফিস ছিল এবং বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। আমার মনে হয় আশেপাশের কেউ শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করেছে।’

সাবিরার মরদেহে গভীর ক্ষত, কাটা হয় শ্বাসনালী
সাবিরার মরদেহে গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পিঠে ও কোমরের উপরে এবং গলার ক্ষতগুলো লক্ষ্য করা যায়। ওই কক্ষে আগুনের সূত্রপাতও হয়। কিন্তু এসব বিষয়ে তদন্ত না করে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি নিউ মার্কেট-কলাবাগান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘কলাবাগানের এই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দুইজনকে সাবলেট দিয়েছিলেন সাবিরা। সকালের দিকে তার কক্ষের বাইরে থেকে ধোঁয়া দেখেন পাশের সাবলেটে থাকা এক নারী। পরে তিনি ভবনের দারোয়ানসহ কয়েকজনকে এনে দরজা ভেঙে ভেতরে যান। তারা ঢুকে দেখতে পান, লিপি বিছানায় পড়ে আছেন এবং ঘরে ধোঁয়া। পরে ফায়ার ব্রিগেড এসে পানি ছিটিয়ে চলে যায়। পুলিশ বেলা ১২টার দিকে এসে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।’

এরপর বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে একজন নারী এসআই এবং নারী কনস্টেবলের সহায়তায় মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় বলে জানান এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

যেভাবে ঘটনা জানতে পারে পুলিশ
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র পাল বলেন, ‘ডা. সাবিরার পাশের রুমে একজন মডেল থাকতেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মেয়েটি এই বাসায় সাবলেটে ওঠেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, সেই মডেল সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি লেকে শরীর চর্চা করতে যান। সকাল আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে বাসার প্রধান গেট খুলে ভেতরে ঢুকে ধোঁয়া ও পোড়া গন্ধ পান। তিনি তখন বাসার দারোয়ানকে জানান। এরপরে ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আরেক নারীকে জানান।’

তিনি বলেন, ‘লোক জানাজানি হলে বাসার পাশের এক মিস্ত্রিকে এনে রুমের দরজার লক খুলে ভেতরে গিয়ে তারা দেখেন ধোঁয়াচ্ছন্ন। যারা আসছিল তখন তারা আগুন মনে করে পানি মারে। এরপরে তারা ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেয় বলে জানায়। এরপর পুলিশ খবর পায়। প্রথমে বাসায় যায় কলাবাগান থানা-পুলিশ। পরে তারা খবর দেয় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটকে। এরপরে ঘটনাস্থলে আসে ডিবি, র‌্যাব, তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের সদস্যরা।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। তবে কী কী আলামত পাওয়া গেছে, সেটি জানানো হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস কী বলছে
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ‘সোমবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে ওই বাসায় আগুনের সংবাদ পাই। সেখানে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সেখান থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করেন।’

ফায়ার সার্ভিস জানায়, মরদেহটির গলা ও পায়ের সামনের কিছু অংশ দগ্ধ ছিল। ঘরের তোশক পুড়ে গিয়েছিল। এসব দেখে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুলিশে খবর দিতে বলেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

সাবলেটের মডেল নারীসহ ডিবি হেফাজতে চার
সাবিরার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটের সাবলেটে থাকা মডেল কানিজ সুবর্ণা, তার ছেলেবন্ধু মাহাথির মোহাম্মদ স্পন্দন, বাসার দারোয়ান রমজান আলী ও বাসার কাজের বুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, ‘সবাই ভেবেছিলেন ডা. সাবিরা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি পুলিশ এসে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত রহস্য উদঘাটন করতে পারব।’

সূত্র:জাগোনিউজ

আরও পড়ুন: