১১:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

পাট চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৫৪:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১
  • / ৪১৭৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: এক বছরের বেশি সময় হলো দেশের ২৫টি পাটকল বন্ধ করেছে সরকার। এর মধ্যে বিশ্বে বিপর্যয় নামিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে পাটের দাম নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন কৃষকরা। দুশ্চিন্তার কিছু ঘটেনি। বরং পাটের দামে সুখবর মিলেছে কৃষকদের জন্য।তাতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।

করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় পাটের বেশ ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। এ বছরও কেনা-বেচা শুরু হয়েছে চড়া দামেই। বিভিন্ন এলাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। 

দেশে পাটকল বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাপী এ প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বাড়ছে। এ করণে রফতানি বাড়ছে। পাশাপাশি দেশেও পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।  দেশের সব জেলায়ই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়। সেখানকার সালথা সদর উপজেলার কৃষক লিয়াকত সিকদার পাটের বেশি দাম পেয়ে বেজায় খুশি।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এবার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন পেয়েছি বিঘাপ্রতি ১২ মণ। টাকার দরকার থাকায় শুরুতে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এর আগে কখনোই এত দামে পাট বিক্রি করিনি।’

শুধু তিনিই নন, ওই জেলার প্রতিটি চাষি এ বছর পাট চাষে খুশি। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এবারের মৌসুমে জেলার আবাদি জমির অধিকাংশেই পাটের চাষ করেন তারা। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষে বিশেষ উপযোগী। এ কারণে ফরিদপুরের পাট ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তার সুফলও মিলছে এ বছর। পাটের যে ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছে, সেটা অন্য বিভিন্ন পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। পলিথিন ও সিনথেটিক দ্রব্য পচনশীল নয়। পরিবেশের জন্য এগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যদিকে পাট পরিবেশবান্ধব। তাই এর চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে 

 

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি (২০২১-২২) মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। এ উৎপাদন আরও বাড়তে পারে।

এ জেলায় গত এক মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২১ মৌসুমে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল, যার বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আইয়ুব খান বলেন, ‘দেশে পাটকল বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাপী এ প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে রফতানি বাড়ছে। পাশাপাশি দেশেও পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।’ এবার পাটের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত দাম দীর্ঘসময়ে ছিল না। গত দুই বছর থেকে পাটের দাম খুব ভালো যাচ্ছে। এতে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এ বছর পাটের উৎপাদন ৮০ লাখ বেল ছাড়িয়ে যাবে। পাটের উৎপাদনশীলতা বেশ বেড়েছে। যদিও গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পাটের বেশ ক্ষতি হয়। এ বছর প্রথমে খরার কারণে সমস্যা হলেও পরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া প্রতি বছরই নতুন নতুন চাষি যুক্ত হচ্ছেন পাটের সঙ্গে।’

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের হাট-বাজারে এখন প্রতি মণ ভালো মানের পাট তিন হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খারাপ মানের পাটের দরও আড়াই হাজার টাকার ওপর। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এত দামে পাট বিক্রি হয়নি। যদিও কাঁচা পাটের দাম ‘অস্বাভাবিক’ বেড়ে যাওয়ায় খুশি নন বেসরকারি পাটকল মালিকরা। তারা বলছেন, এত বেশি দামে পাট কিনে পণ্য উৎপাদন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এতে দেশে পাটপণ্যের উৎপাদন কমে যাবে।

বিভিন্ন জেলায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট মূলত বৃষ্টিনির্ভর ফসল। মৌসুমের শুরুতে এবার বৃষ্টি হয়নি, খরা ছিল। তখন পাটগাছের বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। পরে নিয়মিত বৃষ্টি হয়েছে। পাট কাটার সময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দিতে তেমন সমস্যা হয়নি, যা বিগত কয়েক বছর থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পাট কেটে ক্ষেতেই জাগ দেয়া হয়েছে। এতে পরিবহন ব্যয় ও শ্রমিক সাশ্রয় হয়েছে। সবমিলিয়ে এবার পাট চাষে খরচ কম।

দেশের সার্বিক উৎপাদন পরিস্থিতি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, এ বছর সারাদেশে সাত লাখ ২৬ হাজার জমিতে ৮২ লাখ টন পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। সেখান থেকে ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার টন পাট উৎপাদন হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ছয় লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, সেখান থেকে ৮০ লাখ টন পাট পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছয় লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। সেখান থেকে ৮০ লাখ টন পাট উৎপাদিত হয়।

রফতানি পরিস্থিতি
গত অর্থবছর (২০২০-২১) দেশ থেকে ১১৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী অর্থবছর পাট ও পাটজাত পণ্য ভালো করলেও আবার এখন কিছুটা রফতানি কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ছয় কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুম না হওয়ার কারণে অর্থবছরের শুরুতে রফতানি কমেছে। মৌসুম শুরুর পর থেকে বাড়বে।

পাটের বাজারে বাংলাদেশের অধিপত্য
পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে এখনো বাংলাদেশের আধিপত্য বিরাজমান। বিশ্বের মোট পাট রফতানির ৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ। এর বাইরে ভারত ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং তানজানিয়া, বেলজিয়াম, কেনিয়া ও মালয়েশিয়া মিলে ১৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতে পাটের উৎপাদন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হলেও তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের হার বেশি।

কাঁচা পাট রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৯৭ শতাংশ এবং পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশি কাঁচা পাট প্রধানত রফতানি করা হয় ভারত, পাকিস্তান, চীন, আইভরি কোস্ট, থাইল্যান্ড এবং ইউরোপের দেশে।পাটজাত পণ্য রফতানি করা হয় ইউরোপ, তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, জাপান, সুদান, ঘানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বর্তমানে পাটের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে পৃথিবীর আরও অনেক দেশে। তার কারণ পলিথিন এবং সিনথেটিকের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী এখন নিরুৎসাহী করছেন পরিবেশবাদীরা।’ তিনি বলেন, ‘পাটের যে ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছে, সেটা অন্য বিভিন্ন পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। পলিথিন ও সিনথেটিক দ্রব্য পচনশীল নয়। পরিবেশের জন্য এগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যদিকে পাট পরিবেশবান্ধব। তাই এর চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে।’

শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য ২০২০ সালের ১ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ওই বছরের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।’

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

পাট চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে

আপডেট: ১২:৫৪:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: এক বছরের বেশি সময় হলো দেশের ২৫টি পাটকল বন্ধ করেছে সরকার। এর মধ্যে বিশ্বে বিপর্যয় নামিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে পাটের দাম নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন কৃষকরা। দুশ্চিন্তার কিছু ঘটেনি। বরং পাটের দামে সুখবর মিলেছে কৃষকদের জন্য।তাতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।

করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় পাটের বেশ ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। এ বছরও কেনা-বেচা শুরু হয়েছে চড়া দামেই। বিভিন্ন এলাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। 

দেশে পাটকল বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাপী এ প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বাড়ছে। এ করণে রফতানি বাড়ছে। পাশাপাশি দেশেও পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।  দেশের সব জেলায়ই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়। সেখানকার সালথা সদর উপজেলার কৃষক লিয়াকত সিকদার পাটের বেশি দাম পেয়ে বেজায় খুশি।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এবার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন পেয়েছি বিঘাপ্রতি ১২ মণ। টাকার দরকার থাকায় শুরুতে দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এর আগে কখনোই এত দামে পাট বিক্রি করিনি।’

শুধু তিনিই নন, ওই জেলার প্রতিটি চাষি এ বছর পাট চাষে খুশি। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এবারের মৌসুমে জেলার আবাদি জমির অধিকাংশেই পাটের চাষ করেন তারা। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষে বিশেষ উপযোগী। এ কারণে ফরিদপুরের পাট ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তার সুফলও মিলছে এ বছর। পাটের যে ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছে, সেটা অন্য বিভিন্ন পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। পলিথিন ও সিনথেটিক দ্রব্য পচনশীল নয়। পরিবেশের জন্য এগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যদিকে পাট পরিবেশবান্ধব। তাই এর চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে 

 

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি (২০২১-২২) মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। এ উৎপাদন আরও বাড়তে পারে।

এ জেলায় গত এক মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২১ মৌসুমে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল, যার বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আইয়ুব খান বলেন, ‘দেশে পাটকল বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাপী এ প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে রফতানি বাড়ছে। পাশাপাশি দেশেও পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।’ এবার পাটের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এত দাম দীর্ঘসময়ে ছিল না। গত দুই বছর থেকে পাটের দাম খুব ভালো যাচ্ছে। এতে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এ বছর পাটের উৎপাদন ৮০ লাখ বেল ছাড়িয়ে যাবে। পাটের উৎপাদনশীলতা বেশ বেড়েছে। যদিও গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পাটের বেশ ক্ষতি হয়। এ বছর প্রথমে খরার কারণে সমস্যা হলেও পরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া প্রতি বছরই নতুন নতুন চাষি যুক্ত হচ্ছেন পাটের সঙ্গে।’

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের হাট-বাজারে এখন প্রতি মণ ভালো মানের পাট তিন হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খারাপ মানের পাটের দরও আড়াই হাজার টাকার ওপর। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এত দামে পাট বিক্রি হয়নি। যদিও কাঁচা পাটের দাম ‘অস্বাভাবিক’ বেড়ে যাওয়ায় খুশি নন বেসরকারি পাটকল মালিকরা। তারা বলছেন, এত বেশি দামে পাট কিনে পণ্য উৎপাদন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এতে দেশে পাটপণ্যের উৎপাদন কমে যাবে।

বিভিন্ন জেলায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট মূলত বৃষ্টিনির্ভর ফসল। মৌসুমের শুরুতে এবার বৃষ্টি হয়নি, খরা ছিল। তখন পাটগাছের বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। পরে নিয়মিত বৃষ্টি হয়েছে। পাট কাটার সময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দিতে তেমন সমস্যা হয়নি, যা বিগত কয়েক বছর থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পাট কেটে ক্ষেতেই জাগ দেয়া হয়েছে। এতে পরিবহন ব্যয় ও শ্রমিক সাশ্রয় হয়েছে। সবমিলিয়ে এবার পাট চাষে খরচ কম।

দেশের সার্বিক উৎপাদন পরিস্থিতি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, এ বছর সারাদেশে সাত লাখ ২৬ হাজার জমিতে ৮২ লাখ টন পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। সেখান থেকে ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার টন পাট উৎপাদন হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ছয় লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, সেখান থেকে ৮০ লাখ টন পাট পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছয় লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। সেখান থেকে ৮০ লাখ টন পাট উৎপাদিত হয়।

রফতানি পরিস্থিতি
গত অর্থবছর (২০২০-২১) দেশ থেকে ১১৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী অর্থবছর পাট ও পাটজাত পণ্য ভালো করলেও আবার এখন কিছুটা রফতানি কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ছয় কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুম না হওয়ার কারণে অর্থবছরের শুরুতে রফতানি কমেছে। মৌসুম শুরুর পর থেকে বাড়বে।

পাটের বাজারে বাংলাদেশের অধিপত্য
পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে এখনো বাংলাদেশের আধিপত্য বিরাজমান। বিশ্বের মোট পাট রফতানির ৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ। এর বাইরে ভারত ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং তানজানিয়া, বেলজিয়াম, কেনিয়া ও মালয়েশিয়া মিলে ১৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতে পাটের উৎপাদন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হলেও তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের হার বেশি।

কাঁচা পাট রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৯৭ শতাংশ এবং পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশি কাঁচা পাট প্রধানত রফতানি করা হয় ভারত, পাকিস্তান, চীন, আইভরি কোস্ট, থাইল্যান্ড এবং ইউরোপের দেশে।পাটজাত পণ্য রফতানি করা হয় ইউরোপ, তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, জাপান, সুদান, ঘানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বর্তমানে পাটের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে পৃথিবীর আরও অনেক দেশে। তার কারণ পলিথিন এবং সিনথেটিকের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী এখন নিরুৎসাহী করছেন পরিবেশবাদীরা।’ তিনি বলেন, ‘পাটের যে ভবিষ্যৎ তৈরি হচ্ছে, সেটা অন্য বিভিন্ন পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। পলিথিন ও সিনথেটিক দ্রব্য পচনশীল নয়। পরিবেশের জন্য এগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যদিকে পাট পরিবেশবান্ধব। তাই এর চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে।’

শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য ২০২০ সালের ১ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ওই বছরের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।’

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: