০৪:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:৪৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৬৮ বার দেখা হয়েছে

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার দায়ে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অনুমোদনে খাশোগিকে হত্যা করা হয় বলে শুক্রবার গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া দেশটির রয়্যাল নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে ওই বাহিনী খাশোগি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

খাশোগিকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতে প্রত্যেককে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া সৌদি আরবের এসব নাগরিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং আমেরিকানরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। 

সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, ‘খাশোগিকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতে প্রত্যেককে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’ 

সৌদির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ৭৬ জন সৌদি নাগরিকের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সীমানার বাইরে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা দেশগুলোকে শায়েস্তা করতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ করা হতে পারে।

মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, যেসব সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শুধু তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ করা হতে পারে।

পূর্বসূরি ট্রাম্পের নীতি বদলে বাইডেন প্রশাসন খাশোগি হত্যার দায়ে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের অন্যতম ঘনিষ্ট মিত্র সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কাজের সম্পর্কের কারণে যুবরাজ সালমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। 

কী আছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে?

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘আমরা ধারণা করছি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে আটক বা হত্যার জন্য একটি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন।’

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ হলেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর তার সৌদি আরবের  বাদশাহ হওয়ার কথা থাকলেও গত কয়েক বছর যাবত তিনি রাজতন্ত্রে পরিচালিত দেশটির শাসনভার তার একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খাশোগি হত্যায় যুবরাজ বিন সালমানের অনুমোদন দেওয়ার নেপথ্যে তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়, যা এটা পরিষ্কার করে যে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদই ওই ‘কিলিং মিশনের’ অনুমোদন দিয়েছিলেন। কারণ তিনটি হলো—

১. ২০১৭ সাল থেকে সৌদি আরবের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার অর্থাৎ যুবরাজ সালমানের একক নিয়ন্ত্রণ।

২. ওই অভিযানে মোহাম্মদের এক উপদেষ্টা সেইসঙ্গে তার প্রতিরক্ষা দলের সদস্যের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা।

৩. বিদেশে নির্বাসনে থাকা ব্যক্তিদের মুখবন্ধ রাখতে সহিংস পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে যুবরাজের সমর্থন দেওয়া।

এই প্রতিবেদনে খাসোগি হত্যার সাথে জড়িত বা দায়ী ব্যক্তিদের নাম দেওয়া হয়েছে। তবে এতে বলা হয়েছে, ‘খাসোগির ক্ষতি করার পরিকল্পনায় আর কারা কারা সামিল ছিল সেটা এখনও আমরা পুরোপুরি জানি না।’

সৌদি কর্তৃপক্ষ এই হত্যার পেছনে, একদল এজেন্টকে দোষারোপ করছে, যারা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল। এছাড়া সৌদি আদালত প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলেও গত সেপ্টেম্বরে তা বিশ বছর কারাদণ্ডে কমানো হয়।

২০১৯ সালে, জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের অভিযোগ, সৌদি আরব ইচ্ছাকৃতভাবে এবং আগে থেকে পরিকল্পনা করেই খাসোগিকে হত্যা করেছে। সৌদি আদালত যে রায় দিয়েছে তা ‘ন্যায়বিচারের পরিপন্থী’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

আপডেট: ০২:৪৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার দায়ে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অনুমোদনে খাশোগিকে হত্যা করা হয় বলে শুক্রবার গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া দেশটির রয়্যাল নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে ওই বাহিনী খাশোগি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

খাশোগিকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতে প্রত্যেককে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া সৌদি আরবের এসব নাগরিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং আমেরিকানরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না। 

সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, ‘খাশোগিকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতে প্রত্যেককে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’ 

সৌদির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ৭৬ জন সৌদি নাগরিকের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সীমানার বাইরে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা দেশগুলোকে শায়েস্তা করতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ করা হতে পারে।

মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, যেসব সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শুধু তারাই নন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ করা হতে পারে।

পূর্বসূরি ট্রাম্পের নীতি বদলে বাইডেন প্রশাসন খাশোগি হত্যার দায়ে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের অন্যতম ঘনিষ্ট মিত্র সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কাজের সম্পর্কের কারণে যুবরাজ সালমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। 

কী আছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে?

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘আমরা ধারণা করছি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে আটক বা হত্যার জন্য একটি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন।’

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ হলেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর তার সৌদি আরবের  বাদশাহ হওয়ার কথা থাকলেও গত কয়েক বছর যাবত তিনি রাজতন্ত্রে পরিচালিত দেশটির শাসনভার তার একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খাশোগি হত্যায় যুবরাজ বিন সালমানের অনুমোদন দেওয়ার নেপথ্যে তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়, যা এটা পরিষ্কার করে যে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদই ওই ‘কিলিং মিশনের’ অনুমোদন দিয়েছিলেন। কারণ তিনটি হলো—

১. ২০১৭ সাল থেকে সৌদি আরবের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার অর্থাৎ যুবরাজ সালমানের একক নিয়ন্ত্রণ।

২. ওই অভিযানে মোহাম্মদের এক উপদেষ্টা সেইসঙ্গে তার প্রতিরক্ষা দলের সদস্যের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা।

৩. বিদেশে নির্বাসনে থাকা ব্যক্তিদের মুখবন্ধ রাখতে সহিংস পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে যুবরাজের সমর্থন দেওয়া।

এই প্রতিবেদনে খাসোগি হত্যার সাথে জড়িত বা দায়ী ব্যক্তিদের নাম দেওয়া হয়েছে। তবে এতে বলা হয়েছে, ‘খাসোগির ক্ষতি করার পরিকল্পনায় আর কারা কারা সামিল ছিল সেটা এখনও আমরা পুরোপুরি জানি না।’

সৌদি কর্তৃপক্ষ এই হত্যার পেছনে, একদল এজেন্টকে দোষারোপ করছে, যারা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল। এছাড়া সৌদি আদালত প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলেও গত সেপ্টেম্বরে তা বিশ বছর কারাদণ্ডে কমানো হয়।

২০১৯ সালে, জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের অভিযোগ, সৌদি আরব ইচ্ছাকৃতভাবে এবং আগে থেকে পরিকল্পনা করেই খাসোগিকে হত্যা করেছে। সৌদি আদালত যে রায় দিয়েছে তা ‘ন্যায়বিচারের পরিপন্থী’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: