০২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

অনন্য উচ্চতায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের রেকর্ড

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:০৪:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মে ২০২১
  • / ৪১৯৪ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ চলতি অর্থবছর শেষ হতে আরও দেড় মাস বাকি। এরই মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২২ বিলিয়ন (২ হাজার ২০০ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, রোজার ঈদের আগে চলতি মে মাসের ১২ দিনে (১-১২ মে) ১২২ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।

তার আগে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের (২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

সব মিলিয়ে এই অর্থবছরের ১০ মাস ১২ দিনে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১২ মে) ২ হাজার ১৮৯ কোটি (প্রায় ২২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত এপ্রিল মাসে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ (২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।

২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক বছরে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে জানান, ‘এই মহামারির মধ্যেও বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন প্রবাসীরা। এই কঠিন সময়েও আমাদের অর্থনীতি যে শক্ত অবস্থায় আছে তাতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে এই রেমিট্যান্স। সেজন্য আমি আবারও আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

‘সব মিলিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে’, বলেন অর্থমন্ত্রী।

গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে। ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

এই বছরের মার্চ মাসে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের মার্চের চেয়ে ৫০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার এসেছিল।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এক মাসের হিসাবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। মহামারির আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমলেও এরপর আবার বেড়েছে।

গত আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অক্টোবরে এসেছিল ২১১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে আসে ২০৫ কোটি ডলার।

এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে ১৭৮ কোটি ডলারে নেমে আসে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে দেখা গেছে, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

ঢাকা/জেএইচ 

শেয়ার করুন

x
English Version

অনন্য উচ্চতায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের রেকর্ড

আপডেট: ১১:০৪:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ চলতি অর্থবছর শেষ হতে আরও দেড় মাস বাকি। এরই মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২২ বিলিয়ন (২ হাজার ২০০ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, রোজার ঈদের আগে চলতি মে মাসের ১২ দিনে (১-১২ মে) ১২২ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।

তার আগে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের (২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

সব মিলিয়ে এই অর্থবছরের ১০ মাস ১২ দিনে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১২ মে) ২ হাজার ১৮৯ কোটি (প্রায় ২২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত এপ্রিল মাসে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ (২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।

২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক বছরে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে জানান, ‘এই মহামারির মধ্যেও বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন প্রবাসীরা। এই কঠিন সময়েও আমাদের অর্থনীতি যে শক্ত অবস্থায় আছে তাতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে এই রেমিট্যান্স। সেজন্য আমি আবারও আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

‘সব মিলিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে’, বলেন অর্থমন্ত্রী।

গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে। ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

এই বছরের মার্চ মাসে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের মার্চের চেয়ে ৫০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার এসেছিল।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এক মাসের হিসাবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। মহামারির আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমলেও এরপর আবার বেড়েছে।

গত আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অক্টোবরে এসেছিল ২১১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে আসে ২০৫ কোটি ডলার।

এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে ১৭৮ কোটি ডলারে নেমে আসে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে দেখা গেছে, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

ঢাকা/জেএইচ