১২:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

একমাসে শেয়ার দর বেড়ে সাতগুণ, নজরদারিতে ডিএসই

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৫৪:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১
  • / ৪৪৪৫ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মাত্র এক মাসেই টানা বেড়ে সাতগুণে উন্নীত হয়েছে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লি. এবং তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লি. কোম্পানি দুইটির শেয়ারদর। এক মাস আগে যে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানির মোট মূল্য ছিল ৬ কোটি টাকার কম, আজ তার দাম ৪৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একইভাবে তমিজুদ্দিন টেক্সটাইলের বাজারমূল্য এক মাসের ব্যবধানে ৩৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৫৯ কোটি টাকা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে ওভ্যার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি খ্যাত অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারবাজার থেকে মূল শেয়ারবাজারে ফেরা এ দুই শেয়ারের দর আরও কতটা বাড়বে?

গত ১৩ জুন মাত্র ১৬ টাকা শেয়ারদর নিয়ে মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত হয়েছিল পেপার প্রসেসিং। এ কোম্পানিটির শেয়ারদর আজ উঠেছে ১১৫ টাকা ৮০ পয়সা।একই দিনে ফেরা তমজিদুদ্দিন টেক্সটাইল গত ১৩ জুন মাত্র ১২ টাকা দর নিয়ে ফিরেছিল। এক মাস পর এসে আজ শেয়ারটি ৮৬ টাকা ২০ পয়সা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

অস্বাভাবিক এ দরবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে কাজ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানি দুইটি পুনঃতালিকাভুক্তির দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিনই সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। সার্কিট ব্রেকার হলো- কোনো শেয়ার নির্দিষ্ট দিনে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কোন দর সীমার মধ্যে কেনাবেচা হতে পারবে।

পেপার প্রসেসিং কোম্পানির লেনদেনযোগ্য শেয়ার মাত্র ১৬ লাখ। টানা কয়েক গুণ দরবৃদ্ধির পরও আজ শেয়ারটির ৪ লাখ শেয়ারের ক্রয় আদেশ ছিল সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে।

ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা মনে করছেন- এর পেছনে সংঘবদ্ধ কারসাজি চক্র রয়েছে। কোম্পানি দুইটি স্বল্প মূলধনী। সংঘবদ্ধ চক্র এই সুযোটিই নিচ্ছে। হয়তো মূল বাজারে ফেরার আগে তারা শেয়ার হাতিয়ে নিয়েছিল। এ ধরনের ঘটনায় প্রায়ই মূল মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়। এক্ষেত্রেও মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

পেপার প্রসেসিং কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৬০০টি। যার ৪৩.৯৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে।

বর্তমান নিয়মানুযায়ী যেখানে, আইপিও পরবর্তী মূলধন ৪৫ কোটি টাকার কম হলে কোনো কোম্পানিকে আইপিও এবং তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয় না, সেখানে এত ছোট মূলধনী কোম্পানিকে কেনো মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির সুযোগ দিল বিএসইসি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পুনঃতালিকাভুক্তির আগে পেপার প্রসেসিং কোম্পানিটির মোট বাজার মূল্য ছিল মাত্র ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। কিন্তু এক মাস ব্যবধানে তা ৪৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়া এবং ঠিকমত এজিএম না করার কারণে ২০০৯ সালে এ কোম্পানিসহ প্রায় ৭০টি কোম্পানিকে শেয়ারবাজার তালিকাচ্যুত করেছিল তৎকালিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এক মাসে সোয়া সাতগুণ হওয়ার পর আরও কতটা দর বাড়বে- এ প্রশ্ন যখন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে, তখন অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর নয়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তদন্ত করে দেখছে, কোম্পানি দুইটির এভাবে দরবৃদ্ধির নেপথ্যের কারণ কী।

কর্মকর্তারা জানান, কেনো এতটা দরবৃদ্ধির পরও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ার বিক্রি করছেন না। আর কারাই বহু মূল্যে শেয়ার কিনতে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের ক্রয় আদেশ দিচ্ছেন- এ দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, এটা স্পষ্ট যে- এই দরবৃদ্ধির নেপথ্যে কেউ না কেউ সংঘবদ্ধভাবে কাজ করছেন। তারা নির্দিষ্ট কোনো বিও অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার কেনার অর্ডার না নিয়ে অসংখ্যক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন। এটা সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাজ হতে পারে না।

আবার লেনদেনের শুরুতে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে শেয়ার কেনার অর্ডার দেখলে কোম্পানি দুইটির সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা এখনই বিক্রি না করে আরও বেশি দরে শেয়ার বিক্রির আশায় নিজেদের শেয়ার ধরে রাখছেন। এতে বিক্রেতা সংকট দেখা দিচ্ছে।

তবে এক মাসে সাতগুণের বেশি দরবৃদ্ধির পরও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কেনো শেয়ার বিক্রি করছেন না, তাও খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এজন্য ওটিসি থেকে মূল বাজারে ফেরার সময় যাদের হাতে শেয়ার ছিল, তারা সংঘবদ্ধ চক্র কি-না, তাও খতিয়ে দেখছেন।

তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা। এর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩ কোটি ৬৪ হাজার ৭৬৭টি। যার ৫৬.২২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। 

পুনঃতালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটির সব শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ৩৬ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে ২৫৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x
English Version

একমাসে শেয়ার দর বেড়ে সাতগুণ, নজরদারিতে ডিএসই

আপডেট: ১২:৫৪:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মাত্র এক মাসেই টানা বেড়ে সাতগুণে উন্নীত হয়েছে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লি. এবং তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লি. কোম্পানি দুইটির শেয়ারদর। এক মাস আগে যে পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানির মোট মূল্য ছিল ৬ কোটি টাকার কম, আজ তার দাম ৪৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একইভাবে তমিজুদ্দিন টেক্সটাইলের বাজারমূল্য এক মাসের ব্যবধানে ৩৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৫৯ কোটি টাকা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে ওভ্যার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি খ্যাত অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারবাজার থেকে মূল শেয়ারবাজারে ফেরা এ দুই শেয়ারের দর আরও কতটা বাড়বে?

গত ১৩ জুন মাত্র ১৬ টাকা শেয়ারদর নিয়ে মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত হয়েছিল পেপার প্রসেসিং। এ কোম্পানিটির শেয়ারদর আজ উঠেছে ১১৫ টাকা ৮০ পয়সা।একই দিনে ফেরা তমজিদুদ্দিন টেক্সটাইল গত ১৩ জুন মাত্র ১২ টাকা দর নিয়ে ফিরেছিল। এক মাস পর এসে আজ শেয়ারটি ৮৬ টাকা ২০ পয়সা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

অস্বাভাবিক এ দরবৃদ্ধির কারণ খুঁজতে কাজ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানি দুইটি পুনঃতালিকাভুক্তির দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিনই সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। সার্কিট ব্রেকার হলো- কোনো শেয়ার নির্দিষ্ট দিনে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কোন দর সীমার মধ্যে কেনাবেচা হতে পারবে।

পেপার প্রসেসিং কোম্পানির লেনদেনযোগ্য শেয়ার মাত্র ১৬ লাখ। টানা কয়েক গুণ দরবৃদ্ধির পরও আজ শেয়ারটির ৪ লাখ শেয়ারের ক্রয় আদেশ ছিল সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে।

ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা মনে করছেন- এর পেছনে সংঘবদ্ধ কারসাজি চক্র রয়েছে। কোম্পানি দুইটি স্বল্প মূলধনী। সংঘবদ্ধ চক্র এই সুযোটিই নিচ্ছে। হয়তো মূল বাজারে ফেরার আগে তারা শেয়ার হাতিয়ে নিয়েছিল। এ ধরনের ঘটনায় প্রায়ই মূল মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়। এক্ষেত্রেও মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

পেপার প্রসেসিং কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৬০০টি। যার ৪৩.৯৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে।

বর্তমান নিয়মানুযায়ী যেখানে, আইপিও পরবর্তী মূলধন ৪৫ কোটি টাকার কম হলে কোনো কোম্পানিকে আইপিও এবং তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয় না, সেখানে এত ছোট মূলধনী কোম্পানিকে কেনো মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির সুযোগ দিল বিএসইসি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পুনঃতালিকাভুক্তির আগে পেপার প্রসেসিং কোম্পানিটির মোট বাজার মূল্য ছিল মাত্র ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। কিন্তু এক মাস ব্যবধানে তা ৪৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়া এবং ঠিকমত এজিএম না করার কারণে ২০০৯ সালে এ কোম্পানিসহ প্রায় ৭০টি কোম্পানিকে শেয়ারবাজার তালিকাচ্যুত করেছিল তৎকালিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এক মাসে সোয়া সাতগুণ হওয়ার পর আরও কতটা দর বাড়বে- এ প্রশ্ন যখন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে, তখন অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর নয়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তদন্ত করে দেখছে, কোম্পানি দুইটির এভাবে দরবৃদ্ধির নেপথ্যের কারণ কী।

কর্মকর্তারা জানান, কেনো এতটা দরবৃদ্ধির পরও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা তাদের শেয়ার বিক্রি করছেন না। আর কারাই বহু মূল্যে শেয়ার কিনতে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের ক্রয় আদেশ দিচ্ছেন- এ দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, এটা স্পষ্ট যে- এই দরবৃদ্ধির নেপথ্যে কেউ না কেউ সংঘবদ্ধভাবে কাজ করছেন। তারা নির্দিষ্ট কোনো বিও অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার কেনার অর্ডার না নিয়ে অসংখ্যক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন। এটা সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাজ হতে পারে না।

আবার লেনদেনের শুরুতে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে শেয়ার কেনার অর্ডার দেখলে কোম্পানি দুইটির সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা এখনই বিক্রি না করে আরও বেশি দরে শেয়ার বিক্রির আশায় নিজেদের শেয়ার ধরে রাখছেন। এতে বিক্রেতা সংকট দেখা দিচ্ছে।

তবে এক মাসে সাতগুণের বেশি দরবৃদ্ধির পরও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কেনো শেয়ার বিক্রি করছেন না, তাও খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এজন্য ওটিসি থেকে মূল বাজারে ফেরার সময় যাদের হাতে শেয়ার ছিল, তারা সংঘবদ্ধ চক্র কি-না, তাও খতিয়ে দেখছেন।

তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা। এর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩ কোটি ৬৪ হাজার ৭৬৭টি। যার ৫৬.২২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। 

পুনঃতালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটির সব শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ৩৬ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে ২৫৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

ঢাকা/এসআর