০১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কী হচ্ছে ড. কামালের গণফোরামে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৩৪ বার দেখা হয়েছে

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও গণফোরামের ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রস্তুতি উপলক্ষে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) প্রেসক্লাবে সকাল ১০টায় বর্ধিত সভা ও দুপুর ১টায় একই জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে দলটির একাংশের নেতাদের। তবে এ সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দলের নাম ব্যবহার করে যারা এসব কর্মসূচি দেবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বর্ধিত সভা ও সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ড. কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ রকম কোনো সভা নেই গণফোরামের। কারা সভা ডেকেছে? আমি কোনো সভা ডাকিনি।’ যারা গণফোরামের নামে সভা ডেকেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেওয়াই উচিত।’

শনিবার গণফোরামের নামে বর্ধিত সভা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকরা হলেন- দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও অধ্যাপক আবু সাঈদ। দলটির এ পক্ষের দাবি, কামাল হোসেনের সম্মতিতে এবং তার অফিস থেকে টাকা দিয়েই বর্ধিত সভা ও সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রেসক্লাবের হল বুকিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ কোনো আলোচনা না করেই বর্ধিত সভা না ডাকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে একটি চক্র। তারা কামাল হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে গণফোরামের রাজনীতিকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগেও চক্রটি তাকে জিম্মি করে রেখেছিল। পরে তিনি আবার সবাইকে ডেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কামাল হোসেনের নির্দেশেই আমরা এ বর্ধিত সভার জন্য প্রেসক্লাবে হল বুকিং দিয়েছিলাম। তিনি এর জন্য টাকাও দিয়েছিলেন। এখন একটি চক্র উনাকে জিম্মি করে এসব করাচ্ছে। তারা গণফোরামের রাজনীতিকে শেষ করে দিচ্ছে। কোন চক্র কামাল হোসেনকে জিম্মি করে রেখেছে, জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোকাব্বির খান, শফিকউল্লাহ ও মুশতাক। তারা পার্টিকে শেষ করে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা এভাবে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না।

গণফোরামের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা তাদের সঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার সময় কামাল হোসেন পার্টি অফিসে একটি তালা লাগিয়ে দিয়ে বলেছেন, কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কিন্তু আমরা তো কোনো কিছু বন্ধ রাখিনি। আমরা সুরক্ষা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। ১৫টি জেলায় কম্বল পাঠিয়েছি। বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। সেসব কাজ যখন তাকে (কামাল হোসেনকে) দেখিয়েছি, তখন তিনি বললেন, তোমরা অনেক কাজ করেছ। আমাকে তো কিছু জানাওনি।

সুব্রত চৌধুরীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোকাব্বির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রেসক্লাবে গণফোরামের কোনো বর্ধিত সভা বা সংবাদ সম্মেলন নেই। কেউ যদি গণফোরামের নামে কিছু করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে স্যার (কামাল হোসেন) সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন। সুব্রত দাদারা আগেও ড. কামাল স্যারকে বাদ দিয়ে সভা করেছিলেন। তখন তাদের শোকজ করা হয়েছিল। এরপর তারা এসে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বলে শোকজ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

কামাল হোসেনের নির্দেশেই বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছিল- অন্যপক্ষের এ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করলে মোকাব্বির খান বলেন, তারা স্যারকে বলেছিলেন, আমার সঙ্গে নাকি পরামর্শ করে সভা ডাকা হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি। কিছুদিন আগে মন্টু সাহেবদের অংশ থেকে পাঁচ জন আর আমাদের অংশ থেকে পাঁচ জন নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি হয়েছিল। কথা ছিল গণফোরামের সব কর্মকাণ্ড এই ১১ জনের নেতৃত্বে হবে। কিন্তু তারা তা না করে নিজেদের ইচ্ছায় বর্ধিত সভা ডেকেছে।

সেই ১১ জনের কমিটিতে কে কে ছিল, জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, আমাদের অংশে আমি নিজে, শফিকউল্লাহ, মুশতাক, অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর ও অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম। আর তাদের অংশ থেকে ছিলেন- মন্টু সাহেব, সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাঈদ ও জগলুল আফ্রিক। আরেকজনের নাম এখন মনে আসছে না।

২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলের মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর দলটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি অংশ কামাল হোসেন কেন্দ্রিক ও দ্বিতীয় অংশটি মন্টু-সুব্রত চৌধুরী ও আবু সাঈদ কেন্দ্রিক। পরে দলের মধ্যে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগ করেন রেজা কিবরিয়া।   

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

কী হচ্ছে ড. কামালের গণফোরামে

আপডেট: ০২:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও গণফোরামের ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রস্তুতি উপলক্ষে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) প্রেসক্লাবে সকাল ১০টায় বর্ধিত সভা ও দুপুর ১টায় একই জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে দলটির একাংশের নেতাদের। তবে এ সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দলের নাম ব্যবহার করে যারা এসব কর্মসূচি দেবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বর্ধিত সভা ও সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ড. কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ রকম কোনো সভা নেই গণফোরামের। কারা সভা ডেকেছে? আমি কোনো সভা ডাকিনি।’ যারা গণফোরামের নামে সভা ডেকেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেওয়াই উচিত।’

শনিবার গণফোরামের নামে বর্ধিত সভা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকরা হলেন- দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও অধ্যাপক আবু সাঈদ। দলটির এ পক্ষের দাবি, কামাল হোসেনের সম্মতিতে এবং তার অফিস থেকে টাকা দিয়েই বর্ধিত সভা ও সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রেসক্লাবের হল বুকিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ কোনো আলোচনা না করেই বর্ধিত সভা না ডাকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে একটি চক্র। তারা কামাল হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে গণফোরামের রাজনীতিকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগেও চক্রটি তাকে জিম্মি করে রেখেছিল। পরে তিনি আবার সবাইকে ডেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কামাল হোসেনের নির্দেশেই আমরা এ বর্ধিত সভার জন্য প্রেসক্লাবে হল বুকিং দিয়েছিলাম। তিনি এর জন্য টাকাও দিয়েছিলেন। এখন একটি চক্র উনাকে জিম্মি করে এসব করাচ্ছে। তারা গণফোরামের রাজনীতিকে শেষ করে দিচ্ছে। কোন চক্র কামাল হোসেনকে জিম্মি করে রেখেছে, জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোকাব্বির খান, শফিকউল্লাহ ও মুশতাক। তারা পার্টিকে শেষ করে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা এভাবে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না।

গণফোরামের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা তাদের সঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার সময় কামাল হোসেন পার্টি অফিসে একটি তালা লাগিয়ে দিয়ে বলেছেন, কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কিন্তু আমরা তো কোনো কিছু বন্ধ রাখিনি। আমরা সুরক্ষা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। ১৫টি জেলায় কম্বল পাঠিয়েছি। বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। সেসব কাজ যখন তাকে (কামাল হোসেনকে) দেখিয়েছি, তখন তিনি বললেন, তোমরা অনেক কাজ করেছ। আমাকে তো কিছু জানাওনি।

সুব্রত চৌধুরীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোকাব্বির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রেসক্লাবে গণফোরামের কোনো বর্ধিত সভা বা সংবাদ সম্মেলন নেই। কেউ যদি গণফোরামের নামে কিছু করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে স্যার (কামাল হোসেন) সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন। সুব্রত দাদারা আগেও ড. কামাল স্যারকে বাদ দিয়ে সভা করেছিলেন। তখন তাদের শোকজ করা হয়েছিল। এরপর তারা এসে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বলে শোকজ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

কামাল হোসেনের নির্দেশেই বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছিল- অন্যপক্ষের এ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করলে মোকাব্বির খান বলেন, তারা স্যারকে বলেছিলেন, আমার সঙ্গে নাকি পরামর্শ করে সভা ডাকা হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি। কিছুদিন আগে মন্টু সাহেবদের অংশ থেকে পাঁচ জন আর আমাদের অংশ থেকে পাঁচ জন নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি হয়েছিল। কথা ছিল গণফোরামের সব কর্মকাণ্ড এই ১১ জনের নেতৃত্বে হবে। কিন্তু তারা তা না করে নিজেদের ইচ্ছায় বর্ধিত সভা ডেকেছে।

সেই ১১ জনের কমিটিতে কে কে ছিল, জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, আমাদের অংশে আমি নিজে, শফিকউল্লাহ, মুশতাক, অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর ও অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম। আর তাদের অংশ থেকে ছিলেন- মন্টু সাহেব, সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাঈদ ও জগলুল আফ্রিক। আরেকজনের নাম এখন মনে আসছে না।

২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলের মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর দলটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি অংশ কামাল হোসেন কেন্দ্রিক ও দ্বিতীয় অংশটি মন্টু-সুব্রত চৌধুরী ও আবু সাঈদ কেন্দ্রিক। পরে দলের মধ্যে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগ করেন রেজা কিবরিয়া।   

 

আরও পড়ুন: