০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বিনিয়োগ ছাড়াই কোম্পানির শেয়ারের মালিক রিংশাইনের ১১ উদ্যোক্তা!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২১:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১
  • / ৪৪৭৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বহুল আলোচিত বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের ১১ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক টাকা ছাড়াই নিজেদের নামে কোম্পানিটির শেয়ার ইস্যু করেছেন। পাশাপাশি ৩৩ জন বাইরের শেয়ারহোল্ডারও একইভাবে টাকা ছাড়াই নিজেদের অনুকূলে শেয়ার ইস্যু করেছেন। গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭৭৯তম কমিশন সভায় রিং শাইন টেক্সটাইলসের তদন্ত প্রতিবেদনের উপাত্ত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারে সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে কমিশন তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু বিষয় সবার জন্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রিং শাইন টেক্সটাইল প্রাইভেট অফারের মাধ্যমে বিদ্যমান উদ্যোক্তা-পরিচালক এবং ৭৩ জন বাইরের স্থানীয় শেয়ারহোল্ডারদের অনুকূলে ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করেছে। এর মধ্যে কোম্পানিটির ১১ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক ও ৩৩ জন বাইরের স্থানীয় শেয়ারহোল্ডার তাদের অনুকূলে ইস্যু করা শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিকে কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি।

কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক পারফরম্যান্সের বিষয়ে ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে সঠিক ও প্রকৃত তথ্য প্রতিফলিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন এবং মুদ্রা পাচার আইন লঙ্ঘনের দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিশন আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। রিং শাইন টেক্সটাইল বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে এবং এর সক্ষমতার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, রিং শাইন টেক্সটাইলসের উদ্যোক্তা/পরিচালক এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরা কোম্পানিটির প্রাক-আইপিও শেয়ার বরাদ্দ নিয়ে এর বিপরীতে কোনো অর্থ পরিশোধ করেননি। এদের সঙ্গে যোগসাজশে দেশীয় ৩৩ জন শেয়ারহোল্ডারও শেয়ারের বিপরীতে কোনো অর্থ দেননি। আরো ৪০ জন দেশীয় শেয়ারহোল্ডার, যারা শেয়ারের বিপরীতে টাকা পরিশোধ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তাও করপোরেট হিসাবে আসেনি। এ বিষয়ে আইপিও প্রসপেক্টাসে জাল ব্যাংক বিবরণীর ভিত্তিতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে কোম্পানিটি।

কোম্পানিটি প্রাক-আইপিও মূলধনের ব্যবহার বিষয়েও প্রসপেক্টাসে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির আগে এবং পরে বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এসব কার্যকলাপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা-পরিচালক, নিরীক্ষক, ইস্যু ম্যানেজার, ব্যবস্থাপনার কর্তৃপক্ষ এবং আরো কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কমিশন একটি তদন্ত সম্পন্ন করেছে এবং একটি বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান। রিং শাইন টেক্সটাইল মিলস কোম্পানির প্রাক-আইপিও ও আইপিও-পরবর্তী সময়ে অবৈধ অর্থ পাচারের বিষয়টিও তদন্তাধীন। যারাই এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৯ সালে খায়রুল কমিশনের আমলে দেশের পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করে রিং শাইন টেক্সটাইলস। প্রাইভেট অফার, আইপিও ও বোনাস লভ্যাংশ মিলিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। অথচ দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বিদেশী ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, কাঁচামালস্বল্পতা ও তহবিল সংকটের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় রিং শাইন টেক্সটাইলস। এরপর দফায় দফায় কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শেষ পর্যন্ত রিং শাইন টেক্সটাইলসের অবস্থা পরিবর্তনে হস্তক্ষেপ করে শিবলী কমিশন। এ বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে এর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানিটির সার্বিক বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয় কমিশন।

শেয়ার করুন

x
English Version

বিনিয়োগ ছাড়াই কোম্পানির শেয়ারের মালিক রিংশাইনের ১১ উদ্যোক্তা!

আপডেট: ০১:২১:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বহুল আলোচিত বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের ১১ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক টাকা ছাড়াই নিজেদের নামে কোম্পানিটির শেয়ার ইস্যু করেছেন। পাশাপাশি ৩৩ জন বাইরের শেয়ারহোল্ডারও একইভাবে টাকা ছাড়াই নিজেদের অনুকূলে শেয়ার ইস্যু করেছেন। গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭৭৯তম কমিশন সভায় রিং শাইন টেক্সটাইলসের তদন্ত প্রতিবেদনের উপাত্ত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারে সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে কমিশন তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু বিষয় সবার জন্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রিং শাইন টেক্সটাইল প্রাইভেট অফারের মাধ্যমে বিদ্যমান উদ্যোক্তা-পরিচালক এবং ৭৩ জন বাইরের স্থানীয় শেয়ারহোল্ডারদের অনুকূলে ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকার সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করেছে। এর মধ্যে কোম্পানিটির ১১ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক ও ৩৩ জন বাইরের স্থানীয় শেয়ারহোল্ডার তাদের অনুকূলে ইস্যু করা শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিকে কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি।

কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক পারফরম্যান্সের বিষয়ে ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে সঠিক ও প্রকৃত তথ্য প্রতিফলিত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন এবং মুদ্রা পাচার আইন লঙ্ঘনের দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিশন আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। রিং শাইন টেক্সটাইল বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে এবং এর সক্ষমতার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, রিং শাইন টেক্সটাইলসের উদ্যোক্তা/পরিচালক এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরা কোম্পানিটির প্রাক-আইপিও শেয়ার বরাদ্দ নিয়ে এর বিপরীতে কোনো অর্থ পরিশোধ করেননি। এদের সঙ্গে যোগসাজশে দেশীয় ৩৩ জন শেয়ারহোল্ডারও শেয়ারের বিপরীতে কোনো অর্থ দেননি। আরো ৪০ জন দেশীয় শেয়ারহোল্ডার, যারা শেয়ারের বিপরীতে টাকা পরিশোধ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তাও করপোরেট হিসাবে আসেনি। এ বিষয়ে আইপিও প্রসপেক্টাসে জাল ব্যাংক বিবরণীর ভিত্তিতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে কোম্পানিটি।

কোম্পানিটি প্রাক-আইপিও মূলধনের ব্যবহার বিষয়েও প্রসপেক্টাসে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির আগে এবং পরে বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এসব কার্যকলাপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা-পরিচালক, নিরীক্ষক, ইস্যু ম্যানেজার, ব্যবস্থাপনার কর্তৃপক্ষ এবং আরো কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কমিশন একটি তদন্ত সম্পন্ন করেছে এবং একটি বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান। রিং শাইন টেক্সটাইল মিলস কোম্পানির প্রাক-আইপিও ও আইপিও-পরবর্তী সময়ে অবৈধ অর্থ পাচারের বিষয়টিও তদন্তাধীন। যারাই এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৯ সালে খায়রুল কমিশনের আমলে দেশের পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করে রিং শাইন টেক্সটাইলস। প্রাইভেট অফার, আইপিও ও বোনাস লভ্যাংশ মিলিয়ে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। অথচ দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বিদেশী ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, কাঁচামালস্বল্পতা ও তহবিল সংকটের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় রিং শাইন টেক্সটাইলস। এরপর দফায় দফায় কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় শেষ পর্যন্ত রিং শাইন টেক্সটাইলসের অবস্থা পরিবর্তনে হস্তক্ষেপ করে শিবলী কমিশন। এ বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে এর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানিটির সার্বিক বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয় কমিশন।