০৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের পরিচালকের শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:১৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩
  • / ৪২৪১ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রফিকুল আলমের নামের শেয়ার বিক্রি করে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক এই পরিচালকের নামের শেয়ার বিক্রি করে এক কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে উঠেছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেনসহ কোম্পানিটির বেশ কিছু কর্মকর্তার ওপর। এছাড়াও এক নারীকে রফিকুলের স্ত্রী বানিয়ে তার নামে থাকা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গত ২০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ লিখিতভাবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) জানানো হয়। লিখিত এ অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাউসার আল মামুন।

অভিযোগপত্রে কাউসার আল মামুন জানিয়েছেন, চক্রটি রফিকুল আলমের নামে বরাদ্দকৃত ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার (যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা) আত্মসাৎ করেছে। সাড়ে ৭০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তার স্ত্রীর। আর বাকি ৭৫ শতাংশের মালিক তারা রফিকুল আলমের বাবা।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, চক্রটি উম্মে হাবিবা নামের এক নারীকে রফিকুল আলমের স্ত্রী বানিয়ে তার মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেসব শেয়ার থেকে ১৫ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে ১ কোটিও বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন তারা। এছাড়া আরেক জনকে বাবা বানিয়ে তার কাছে রফিকুল আলমের ৭০ শতাংশ শেয়ার ইতোমধ্যে হস্তান্তর করেছে। এই চক্রের পেছনে রয়েছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেন এবং কোম্পানি সচিবসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

কাউসার আল মামুনের অভিযোগটি আমলে নিয়েছে বিএসইসি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে ডিএসইর পক্ষ থেকে একটি পরিদর্শন টিম গঠন করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসিকে পাঠানো কাউসার আল মামুনের অভিযোগপত্রে যা ছিল-

উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন আমার অফিসে বেনিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী। চলতি বছরের ৫ মার্চ মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের বিও থেকে উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের বিও অ্যাকাউন্টে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার জমা হয়। এর প্রায় এক মাস পর ৪ মে থেকে ২৩ মে- এ সময়ের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৮টি শেয়ার বিক্রি করে। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রি করে তিন দফায় ১ কোটি ১৮ লাখ তুলে নেন। বাকি শেয়ার বর্তমানে বিও হিসাবে সংরক্ষিত আছে। পরপর বড় বড় অ্যামাউন্টের টাকা উত্তোলন করায় বিষয়টি আমার নজরে আসায় CAMLCO হিসাবে আমি বিও অ্যাকাউন্টের সকল তথ্য যাচাই করতে শুরু করি।

দেখা যায়, উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টে তার স্বামীর নাম মোকাদ্দেস হোসাইন। এখন তিনি তার স্বামী দাবি করছেন রফিকুল আলমকে। কোম্পানির ঠিকানা অনুসারে রফিকুল আলমের বাসা উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে। কিন্তু ওই বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন- রফিকুল আলম নামে কেউ এখানে থাকে না, কখনো ছিল না। আর উম্মে হাবিবার বাসার ঠিকানা ১৭৯, কাওলা মসজিদ রোড, রোড নং-৩, খিলক্ষেত, দক্ষিণ খান।

বিও অ্যাকাউন্টের দেওয়া মোবাইল নম্বরটিতে ফোন করলে আমার সন্দেহ আরও বাড়তে শুরু করে। এই ফোনটিও হাবিবা ইয়াসমিনের না। তার বোন ইভা আকতারের। আর আশ্চর্য হই যখন উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টের পাওয়ার অফ অ্যাটোর্নি আবুল বাশার। আর নমিনি পিয়ার উদ্দিন তাদেরকে চেনেন না। অথচ বিও অ্যাকাউন্টের নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন চাচাতো ভাই।

পরে জানতে পারি- আবুল বাশার হচ্ছেন মাস্টার ফিডের কোম্পানি সচিব আর পিয়ার উদ্দিন হচ্ছেন কোম্পানি কর্মকর্তা। আমার সন্দেহ যখন আরও বাড়ে তখন উম্মে হাবিবাকে বলি- আপনি পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। ডিএসইতে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তা দেবেন কিন্তু কিছু আনেনি, নিয়ে আসেনি।

আরও পড়ুন: সিইসই’র উদ্যোগে সরকারি বন্ডের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম

তার প্রায় ২ মাস পর গত ১৬ জুলাই হঠাৎ করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন একজন নারীসহ ৪-৫ জন লোকসহ অফিসে আসেন। তিনি বলেন- ইনি উম্মে হাবিবা, উনাকে এনআইডির সঙ্গে ভেরিফাই করেন। তবে অন্য কোনো বিষয় জিজ্ঞেস করতে পারবেন না। আমি তার দাখিলকৃত বিও অ্যাকাউন্ট ডকুমেন্টসের উপরে প্রশ্ন করতেই তারা সবাই আমার উপর ক্ষেপে যায় এবং মারমুখী আচরণ করে এবং আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে অফিস থেকে চলে যায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি (যার নাম্বার ১০৯৭, তাং ১৮/০৭/২০২৩)।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কবির হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ব্যবহার এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ গুলিস্থানের হকারদেরকেও হার মানিয়েছে।

উল্লেখ্য, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রফিকুল আলম ২০২২ সালের ১৫ জুলাই মারা গেছেন। তার নামে কোম্পানির ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার রয়েছে। ওই শেয়ারগুলোর তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত উত্তরাধিকার সনদ অনুযায়ী স্থানান্তর করা হবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের পরিচালকের শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট: ০৮:১৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩

পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রফিকুল আলমের নামের শেয়ার বিক্রি করে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক এই পরিচালকের নামের শেয়ার বিক্রি করে এক কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে উঠেছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেনসহ কোম্পানিটির বেশ কিছু কর্মকর্তার ওপর। এছাড়াও এক নারীকে রফিকুলের স্ত্রী বানিয়ে তার নামে থাকা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গত ২০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ লিখিতভাবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) জানানো হয়। লিখিত এ অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাউসার আল মামুন।

অভিযোগপত্রে কাউসার আল মামুন জানিয়েছেন, চক্রটি রফিকুল আলমের নামে বরাদ্দকৃত ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার (যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা) আত্মসাৎ করেছে। সাড়ে ৭০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তার স্ত্রীর। আর বাকি ৭৫ শতাংশের মালিক তারা রফিকুল আলমের বাবা।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, চক্রটি উম্মে হাবিবা নামের এক নারীকে রফিকুল আলমের স্ত্রী বানিয়ে তার মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেসব শেয়ার থেকে ১৫ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে ১ কোটিও বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন তারা। এছাড়া আরেক জনকে বাবা বানিয়ে তার কাছে রফিকুল আলমের ৭০ শতাংশ শেয়ার ইতোমধ্যে হস্তান্তর করেছে। এই চক্রের পেছনে রয়েছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেন এবং কোম্পানি সচিবসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

কাউসার আল মামুনের অভিযোগটি আমলে নিয়েছে বিএসইসি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে ডিএসইর পক্ষ থেকে একটি পরিদর্শন টিম গঠন করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসিকে পাঠানো কাউসার আল মামুনের অভিযোগপত্রে যা ছিল-

উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন আমার অফিসে বেনিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী। চলতি বছরের ৫ মার্চ মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের বিও থেকে উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের বিও অ্যাকাউন্টে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার জমা হয়। এর প্রায় এক মাস পর ৪ মে থেকে ২৩ মে- এ সময়ের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৮টি শেয়ার বিক্রি করে। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রি করে তিন দফায় ১ কোটি ১৮ লাখ তুলে নেন। বাকি শেয়ার বর্তমানে বিও হিসাবে সংরক্ষিত আছে। পরপর বড় বড় অ্যামাউন্টের টাকা উত্তোলন করায় বিষয়টি আমার নজরে আসায় CAMLCO হিসাবে আমি বিও অ্যাকাউন্টের সকল তথ্য যাচাই করতে শুরু করি।

দেখা যায়, উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টে তার স্বামীর নাম মোকাদ্দেস হোসাইন। এখন তিনি তার স্বামী দাবি করছেন রফিকুল আলমকে। কোম্পানির ঠিকানা অনুসারে রফিকুল আলমের বাসা উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে। কিন্তু ওই বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন- রফিকুল আলম নামে কেউ এখানে থাকে না, কখনো ছিল না। আর উম্মে হাবিবার বাসার ঠিকানা ১৭৯, কাওলা মসজিদ রোড, রোড নং-৩, খিলক্ষেত, দক্ষিণ খান।

বিও অ্যাকাউন্টের দেওয়া মোবাইল নম্বরটিতে ফোন করলে আমার সন্দেহ আরও বাড়তে শুরু করে। এই ফোনটিও হাবিবা ইয়াসমিনের না। তার বোন ইভা আকতারের। আর আশ্চর্য হই যখন উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টের পাওয়ার অফ অ্যাটোর্নি আবুল বাশার। আর নমিনি পিয়ার উদ্দিন তাদেরকে চেনেন না। অথচ বিও অ্যাকাউন্টের নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন চাচাতো ভাই।

পরে জানতে পারি- আবুল বাশার হচ্ছেন মাস্টার ফিডের কোম্পানি সচিব আর পিয়ার উদ্দিন হচ্ছেন কোম্পানি কর্মকর্তা। আমার সন্দেহ যখন আরও বাড়ে তখন উম্মে হাবিবাকে বলি- আপনি পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। ডিএসইতে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তা দেবেন কিন্তু কিছু আনেনি, নিয়ে আসেনি।

আরও পড়ুন: সিইসই’র উদ্যোগে সরকারি বন্ডের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম

তার প্রায় ২ মাস পর গত ১৬ জুলাই হঠাৎ করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন একজন নারীসহ ৪-৫ জন লোকসহ অফিসে আসেন। তিনি বলেন- ইনি উম্মে হাবিবা, উনাকে এনআইডির সঙ্গে ভেরিফাই করেন। তবে অন্য কোনো বিষয় জিজ্ঞেস করতে পারবেন না। আমি তার দাখিলকৃত বিও অ্যাকাউন্ট ডকুমেন্টসের উপরে প্রশ্ন করতেই তারা সবাই আমার উপর ক্ষেপে যায় এবং মারমুখী আচরণ করে এবং আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে অফিস থেকে চলে যায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি (যার নাম্বার ১০৯৭, তাং ১৮/০৭/২০২৩)।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কবির হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ব্যবহার এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ গুলিস্থানের হকারদেরকেও হার মানিয়েছে।

উল্লেখ্য, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রফিকুল আলম ২০২২ সালের ১৫ জুলাই মারা গেছেন। তার নামে কোম্পানির ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার রয়েছে। ওই শেয়ারগুলোর তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত উত্তরাধিকার সনদ অনুযায়ী স্থানান্তর করা হবে।

ঢাকা/এসএ