০১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

মিডল্যান্ড ব্যাংকের আইপিও বাতিলে বিনিয়োগকারীদের মানববন্ধন

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:০৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৪২৯৬ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের আইপিও বাতিলসহ ১০ দফা  দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন। মিডল্যান্ড ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা খুবই দুর্বল আর ব্যাংকের এই দুরবস্থার মধ্যে বর্তমান কমিশনের আইপিও অনুমোদন দেয়া মিডল্যান্ড ব্যাংক অর্থ উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে বলে মনে করছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় মতিঝিলে বিডিবিএল ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটি।

মানব বন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এই দাবিসমূহ উপস্থাপন করা হয়। মানব বন্ধন শেষে এ ১০ দফা দাবিসমূহ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জমা দেয়া হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মানব বন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, ফ্লোর প্রাইসের ১০ শতাংশের নিচে ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রির অনুমতি দানে প্রজ্ঞাপন জারি করায় বিএসইসিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনি অবগত আছেন যে ২০১০-১১ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে মহাধ্বসের পর বিনিয়োগকারীরা এতোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যে, অনেকে পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে মানসিক যন্ত্রণায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি ফেরত পেতে নতুন বিনিয়োগ করলেও বারংবার অদৃশ্য চক্রের কাছে পরাজিত হয়েছে- যা বর্তমানেও চলমান। গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুন:গঠনপূর্ব্বক আপনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি অনেক আস্থা ফিরে পায়। কিন্তু সেই আস্থায় পুনরায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে। কারণ, প্রাইমারি মার্কেট ও এসএমই মার্কেট চাঙ্গা করতে ফিক্সড প্রাইস এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কমিশন যেসব কোম্পানির আইপিও এবং কিউআইও অনুমোদন দিচ্ছে সেগুলো পুঁজিবাজারে অত্যন্ত বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। একদিকে প্লেসমেন্ট কারসাজি, অন্যদিকে ইলিজিবল ইনভেস্টরদের সাজানো নাটকে বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব সেকেন্ডারি মার্কেটে পড়ছে।

বিএসইসির পাবলিক ইস্যু রুলস ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ না দেখে একটি বিশেষ শ্রেণীকে সুযোগ-সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, যে কারণে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলিজিবল ইনভেস্টরদের বিডিং কারসাজির কারণে অতি উচ্চ মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে শেয়ার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বর্তমান পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জরুরী মানববন্ধনে বিনিয়োগকারীদের ১০ (দশ) দফা দাবিসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো:

১. ইতিপূর্বে বিএসইসি কর্তৃক আইপিও অনুমোদন পাওয়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের আইপিও চাচ্ছেনা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। কারণ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা খুবই দুর্বল। ইপিএস এক টাকার নিচে অবস্থান করছে। ব্যাংকটির প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ইপিএস ৯০ পয়সা দেখানো হয়েছে, এটিও সাজানো এবং সন্দেহজনক মনে করছে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে ভবিষ্যতে উল্লেখিত ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতেও ব্যর্থ হবে। এছাড়া, বর্তমান পুঁজিবাজারে এমনিতেই ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। তার মধ্যে সর্বশেষ যেসব ব্যাংকের আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেগুলো খুবই বাজে অবস্থায় রয়েছে। কাজেই, ব্যাংকের এই দুরবস্থার মধ্যেই বর্তমান কমিশনের আইপিও অনুমোদন দেয়া মিডল্যান্ড ব্যাংক অর্থ উত্তোলনের পাঁয়তার করছে। এই অবস্থার মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ধরিয়ে দিতে ব্যস্ত মিডল্যান্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সূতরাং, পুঁজিবাজারের বর্তমান ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোরণে বাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংকের আইপিও অনুমোদন আপাতত: অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখতে হবে।

২. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে মার্কেট স্থায়ী স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার কোটি টাকার জরুরী ফান্ড গঠন করতে হবে। যেমন- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংকের সমন্বয়ে প্রত্যেক ব্যাংককে ১০ (দশ) হাজার কোটি টাকার করে একটি দ্রুত শক্তিশালী মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া, বর্তমান কমিশন বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কাজেই, পারফর্মেন্সবিহীন আইপিও আনয়ন ও অনুমোদনে যে সকল কর্মকর্তারা বিভিন্ন ম্যানুপুলেশনের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে দ্রুত সনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সকল আইপিও ফান্ড ইউটিলাইজেশনের গত ১০ বছরের স্পেশাল অডিট দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং এ বিষয়ে একটি জরুরী আইনও প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া, ফার্স্ট লিড সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত ২০ কোটি টাকা দ্রুত ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতকারী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আরও পড়ুন: ৯ মাসে কোটিপতি বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪৫৬

৪. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে বিএসইসিকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইতে শৃঙ্খলা আনয়ন অতীব জরুরী। এছাড়া, বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই‘র কর্মকর্তাদের স্বচ্ছ্ব পেশাদারিত্ব আচরণ দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বিএসইসি’র পাবলিক ইস্যূ রূলস এ বিনিয়োগকারীদের কল্যাণ ও উন্নয়নে কোন পদক্ষেপই নেই। অপরদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক গ্যামলারদের সুবিধা প্রদানে ব্যস্ত বিএসইসি। তাই পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের সূদ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, বাজার ম্যানুপুলেশনকারী এবং গুজব রটনাকারীদেরকে দ্রুত সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. আইসিবি একটি মর্যাদাশীল দেশের প্রথম সারির আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইসিবি তার জন্মলগ্ন থেকেই পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে সাপোর্ট অব্যাহত রেখেছে এবং এখনো তা নিয়মিতভাবে চলমান। তাই পুঁজিবাজারের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে বাজারকে স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আইসিবিকে ১০ (দশ) হাজার কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড অতি দ্রুত প্রদান করতে হবে। কেননা, এই টাকার মধ্যে থেকে ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা দিয়ে মার্কেট সাপোর্টের জন্য ইতিপূর্বে নেয়া তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। একই সঙ্গে বর্তমানে অব্যাহতভাবে পরন্ত মার্কেটে বাজারকে নিয়মিত সাপোর্ট দেয়ার লক্ষ্যে আইসিবির নেয়া লোন পরিশোধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাপ প্রয়োগ করা সমীচীন হবেনা- এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বাধীনভাবে লভ্যাংশ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অযাচিত ও অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, দেশের ব্যাংকগুলোর লিক্যুইডিটি ঘাটতি নেই, ডলার সঙ্কট নেই- এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ধোঁয়াশামুক্ত করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিএসইসিকে সহযোগিতা করছে, সেহেতু আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাল্লাহ্।

আরও পড়ুন: মিডল্যান্ড ব্যাংকের আইপিও আবেদন শুরু কাল

৮. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে বাজার স্থিতিশলতায় বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী দ্রুত বিনিয়োগে বাধ্যকরণ: তথা বিনিয়োগসীমা ২০০ কোটি থেকে ৫০০ কোটিতে উন্নীত করতে হবে।

৯. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে “ইনভেস্টরস ওয়েলফেয়ার প্রটেকশন ফান্ড” দ্রুত গঠন করতে হবে। কারণ, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাজেশন ফান্ডের সম্পূর্ণ অর্থই বিনিয়োগকারীদের কষ্টার্জিত অর্থায়নে গঠিত। এই ফান্ডের মালিক বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই। কাজেই, উল্লেখিত কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট “ইনভেস্টরস ওয়েলফেয়ার প্রটেকশন ফান্ড” অতিসত্বর গঠন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, বহুল আলোচিত ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাজেশন ফান্ডের ২২ (বাইশ) হাজার কোটি টাকা অদৃশ্যমান কেন? তা বিনিয়োগকারীরা জানতে চায়।

১০. পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন বন্ধ রাখতে হবে। পরবর্তীতে ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। যেমন- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স (আলিকো), সিটি ব্যাংক এনএ, বাংলা লিংক, ইউনিলিভার লিমিটেডের মূল কোম্পানি এবং নেস্লের মত বহুজাতিক কোম্পানি ইত্যাদি।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

মিডল্যান্ড ব্যাংকের আইপিও বাতিলে বিনিয়োগকারীদের মানববন্ধন

আপডেট: ০৩:০৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের আইপিও বাতিলসহ ১০ দফা  দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন। মিডল্যান্ড ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা খুবই দুর্বল আর ব্যাংকের এই দুরবস্থার মধ্যে বর্তমান কমিশনের আইপিও অনুমোদন দেয়া মিডল্যান্ড ব্যাংক অর্থ উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে বলে মনে করছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় মতিঝিলে বিডিবিএল ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনটি।

মানব বন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এই দাবিসমূহ উপস্থাপন করা হয়। মানব বন্ধন শেষে এ ১০ দফা দাবিসমূহ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জমা দেয়া হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মানব বন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, ফ্লোর প্রাইসের ১০ শতাংশের নিচে ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রির অনুমতি দানে প্রজ্ঞাপন জারি করায় বিএসইসিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনি অবগত আছেন যে ২০১০-১১ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে মহাধ্বসের পর বিনিয়োগকারীরা এতোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যে, অনেকে পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে মানসিক যন্ত্রণায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি ফেরত পেতে নতুন বিনিয়োগ করলেও বারংবার অদৃশ্য চক্রের কাছে পরাজিত হয়েছে- যা বর্তমানেও চলমান। গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুন:গঠনপূর্ব্বক আপনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি অনেক আস্থা ফিরে পায়। কিন্তু সেই আস্থায় পুনরায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে। কারণ, প্রাইমারি মার্কেট ও এসএমই মার্কেট চাঙ্গা করতে ফিক্সড প্রাইস এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কমিশন যেসব কোম্পানির আইপিও এবং কিউআইও অনুমোদন দিচ্ছে সেগুলো পুঁজিবাজারে অত্যন্ত বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। একদিকে প্লেসমেন্ট কারসাজি, অন্যদিকে ইলিজিবল ইনভেস্টরদের সাজানো নাটকে বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব সেকেন্ডারি মার্কেটে পড়ছে।

বিএসইসির পাবলিক ইস্যু রুলস ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ না দেখে একটি বিশেষ শ্রেণীকে সুযোগ-সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, যে কারণে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলিজিবল ইনভেস্টরদের বিডিং কারসাজির কারণে অতি উচ্চ মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে শেয়ার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বর্তমান পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জরুরী মানববন্ধনে বিনিয়োগকারীদের ১০ (দশ) দফা দাবিসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো:

১. ইতিপূর্বে বিএসইসি কর্তৃক আইপিও অনুমোদন পাওয়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের আইপিও চাচ্ছেনা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। কারণ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা খুবই দুর্বল। ইপিএস এক টাকার নিচে অবস্থান করছে। ব্যাংকটির প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ইপিএস ৯০ পয়সা দেখানো হয়েছে, এটিও সাজানো এবং সন্দেহজনক মনে করছে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে ভবিষ্যতে উল্লেখিত ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতেও ব্যর্থ হবে। এছাড়া, বর্তমান পুঁজিবাজারে এমনিতেই ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। তার মধ্যে সর্বশেষ যেসব ব্যাংকের আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেগুলো খুবই বাজে অবস্থায় রয়েছে। কাজেই, ব্যাংকের এই দুরবস্থার মধ্যেই বর্তমান কমিশনের আইপিও অনুমোদন দেয়া মিডল্যান্ড ব্যাংক অর্থ উত্তোলনের পাঁয়তার করছে। এই অবস্থার মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ধরিয়ে দিতে ব্যস্ত মিডল্যান্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সূতরাং, পুঁজিবাজারের বর্তমান ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোরণে বাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংকের আইপিও অনুমোদন আপাতত: অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখতে হবে।

২. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে মার্কেট স্থায়ী স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার কোটি টাকার জরুরী ফান্ড গঠন করতে হবে। যেমন- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংকের সমন্বয়ে প্রত্যেক ব্যাংককে ১০ (দশ) হাজার কোটি টাকার করে একটি দ্রুত শক্তিশালী মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া, বর্তমান কমিশন বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কাজেই, পারফর্মেন্সবিহীন আইপিও আনয়ন ও অনুমোদনে যে সকল কর্মকর্তারা বিভিন্ন ম্যানুপুলেশনের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে দ্রুত সনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সকল আইপিও ফান্ড ইউটিলাইজেশনের গত ১০ বছরের স্পেশাল অডিট দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং এ বিষয়ে একটি জরুরী আইনও প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া, ফার্স্ট লিড সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত ২০ কোটি টাকা দ্রুত ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতকারী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আরও পড়ুন: ৯ মাসে কোটিপতি বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪৫৬

৪. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে বিএসইসিকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইতে শৃঙ্খলা আনয়ন অতীব জরুরী। এছাড়া, বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই‘র কর্মকর্তাদের স্বচ্ছ্ব পেশাদারিত্ব আচরণ দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বিএসইসি’র পাবলিক ইস্যূ রূলস এ বিনিয়োগকারীদের কল্যাণ ও উন্নয়নে কোন পদক্ষেপই নেই। অপরদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক গ্যামলারদের সুবিধা প্রদানে ব্যস্ত বিএসইসি। তাই পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের সূদ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, বাজার ম্যানুপুলেশনকারী এবং গুজব রটনাকারীদেরকে দ্রুত সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. আইসিবি একটি মর্যাদাশীল দেশের প্রথম সারির আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আইসিবি তার জন্মলগ্ন থেকেই পুঁজিবাজারের ক্রান্তিকালে সাপোর্ট অব্যাহত রেখেছে এবং এখনো তা নিয়মিতভাবে চলমান। তাই পুঁজিবাজারের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে বাজারকে স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আইসিবিকে ১০ (দশ) হাজার কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড অতি দ্রুত প্রদান করতে হবে। কেননা, এই টাকার মধ্যে থেকে ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা দিয়ে মার্কেট সাপোর্টের জন্য ইতিপূর্বে নেয়া তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। একই সঙ্গে বর্তমানে অব্যাহতভাবে পরন্ত মার্কেটে বাজারকে নিয়মিত সাপোর্ট দেয়ার লক্ষ্যে আইসিবির নেয়া লোন পরিশোধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাপ প্রয়োগ করা সমীচীন হবেনা- এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বাধীনভাবে লভ্যাংশ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অযাচিত ও অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, দেশের ব্যাংকগুলোর লিক্যুইডিটি ঘাটতি নেই, ডলার সঙ্কট নেই- এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ধোঁয়াশামুক্ত করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিএসইসিকে সহযোগিতা করছে, সেহেতু আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাল্লাহ্।

আরও পড়ুন: মিডল্যান্ড ব্যাংকের আইপিও আবেদন শুরু কাল

৮. পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তোরণে বাজার স্থিতিশলতায় বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী দ্রুত বিনিয়োগে বাধ্যকরণ: তথা বিনিয়োগসীমা ২০০ কোটি থেকে ৫০০ কোটিতে উন্নীত করতে হবে।

৯. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে “ইনভেস্টরস ওয়েলফেয়ার প্রটেকশন ফান্ড” দ্রুত গঠন করতে হবে। কারণ, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাজেশন ফান্ডের সম্পূর্ণ অর্থই বিনিয়োগকারীদের কষ্টার্জিত অর্থায়নে গঠিত। এই ফান্ডের মালিক বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই। কাজেই, উল্লেখিত কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট “ইনভেস্টরস ওয়েলফেয়ার প্রটেকশন ফান্ড” অতিসত্বর গঠন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, বহুল আলোচিত ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাজেশন ফান্ডের ২২ (বাইশ) হাজার কোটি টাকা অদৃশ্যমান কেন? তা বিনিয়োগকারীরা জানতে চায়।

১০. পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন বন্ধ রাখতে হবে। পরবর্তীতে ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। যেমন- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স (আলিকো), সিটি ব্যাংক এনএ, বাংলা লিংক, ইউনিলিভার লিমিটেডের মূল কোম্পানি এবং নেস্লের মত বহুজাতিক কোম্পানি ইত্যাদি।

ঢাকা/এসএ