০১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় কেউ দোষী হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা: র‍্যাব

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৩৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩
  • / ৪১৭৭ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সদরদপ্তর। এ ঘটনায় এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন যুগ্ম সচিব এনামুল হক। তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। তারা এনামুলের নামে বিপুল অর্থ আদায় করে আসছিল। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে এনামুল ২০২২ সালের মার্চে একটি জিডি করেন।

এমনকি একজন মহিলা তার নামে আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন মর্মে আদালতে একটি মামলাও করেন এনামুল। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন এবং বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের ফেসবুক পেজ হ্যাকড

গত ১৯ ও ২০ মার্চ এনামুলের নাম-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন এ প্রতারণায় আলামিন নামে একজন রয়েছেন এবং তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন জেসমিন নামে একজন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ অফিস যাওয়ার সময় র‍্যাবের টহল টিম দেখে এনামুল এ বিষয়ে অভিযোগ করে সহায়তা চান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের টিম এনামুলসহ গিয়ে তার সামনে সুলতানা জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্য আরো ২ জন সাক্ষীর সামনে র‌্যাবের নারী সদস্যরা জেসমিনকে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন সাক্ষীদের সামনে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন। তার মোবাইলে এনামুলের ফেক আইডি ওপেন ছিলো। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন টেক্সট ও লাখ লাখ টাকা লেনদেনের বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়। জেসমিন সুলতানাও তার প্রতারণার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন।

সাড়ে ১১টার দিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আলামতসহ জেসমিনকে একটি কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব সেখানে তার মোবাইলের বিভিন্ন আলামত প্রিন্ট করে। সব আলামত সংগ্রহের পর তাকে নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য থানায় যাওয়ার পথে জেসমিন অসুস্থ বোধ করেন।

এ অবস্থায় তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। পরে তার স্বজন ও সহকর্মীদের ডাকা হয়। সবার সান্নিধ্যেই তিনি সেখানে চিকিৎনা নেন।

সন্ধ্যার দিকে তিনি ‘স্ট্রোক করতে পারেন’ এমন ধারনা করে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর র‌্যাব সদস্যরা তাকে রামেকে নিয়ে যায়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের আলামত দেখতে পান চিকিৎসকরা। এরপর সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তার মৃত্যু হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছেন। ময়নাতদন্তেও বিষয়টি বের হয়ে আসবে।

জেসমিনের কাছ থেকে প্রতারণার বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী এনামুল নিয়মতান্ত্রিকভাবে থানায় যান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, হেফাজতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে, কমিটি কাজ করছে। আমাদের কোনো সদস্যের কোনো গাফিলতি আছে কি-না, কারো অনৈতিক কোনো ইনভলভ আছে কি না কমিটি খতিয়ে দেখবে।

তদন্ত যেহেতু সময় সাপেক্ষ, গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে গেছেন, অপারেশনের কোনো দুর্বলতা আছে কি-না এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো আলামত পাইনি। তদন্ত কমিটি কাজ করবে, কারো গাফিলতি পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

আদালত আমাদেরকে কিছু কোয়ারিজ দিয়েছেন। আমরা আমাদের বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করবো।

তিনি বলেন, নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয় দুপুর ১টার দিকে। তাকে সাড়ে ১১টার সময় ভুক্তভোগীসহ সাক্ষীদের সামনে প্রাথমিকভাবে আটক করা হয়। আটকের পর আলামত যা পাওয়া যায় তা কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্টআউট করা হয়। এরপর থানায় যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। আমাদের ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল রয়েছে, সেই সেলকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ নেই। আমরা ডেথ সর্টিফিকেট দেখেছি, ডাক্তারের বক্তব্য শুনেছি। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখবো। এমন কোন ইনভলভমেন্ট পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/টি

শেয়ার করুন

x
English Version

সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় কেউ দোষী হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা: র‍্যাব

আপডেট: ০৪:৩৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সদরদপ্তর। এ ঘটনায় এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন যুগ্ম সচিব এনামুল হক। তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। তারা এনামুলের নামে বিপুল অর্থ আদায় করে আসছিল। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে এনামুল ২০২২ সালের মার্চে একটি জিডি করেন।

এমনকি একজন মহিলা তার নামে আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন মর্মে আদালতে একটি মামলাও করেন এনামুল। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন এবং বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের ফেসবুক পেজ হ্যাকড

গত ১৯ ও ২০ মার্চ এনামুলের নাম-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন এ প্রতারণায় আলামিন নামে একজন রয়েছেন এবং তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন জেসমিন নামে একজন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মার্চ অফিস যাওয়ার সময় র‍্যাবের টহল টিম দেখে এনামুল এ বিষয়ে অভিযোগ করে সহায়তা চান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের টিম এনামুলসহ গিয়ে তার সামনে সুলতানা জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্য আরো ২ জন সাক্ষীর সামনে র‌্যাবের নারী সদস্যরা জেসমিনকে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন সাক্ষীদের সামনে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন। তার মোবাইলে এনামুলের ফেক আইডি ওপেন ছিলো। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন টেক্সট ও লাখ লাখ টাকা লেনদেনের বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়। জেসমিন সুলতানাও তার প্রতারণার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন।

সাড়ে ১১টার দিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আলামতসহ জেসমিনকে একটি কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব সেখানে তার মোবাইলের বিভিন্ন আলামত প্রিন্ট করে। সব আলামত সংগ্রহের পর তাকে নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য থানায় যাওয়ার পথে জেসমিন অসুস্থ বোধ করেন।

এ অবস্থায় তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই হাসপাতালে প্রবেশ করেন। পরে তার স্বজন ও সহকর্মীদের ডাকা হয়। সবার সান্নিধ্যেই তিনি সেখানে চিকিৎনা নেন।

সন্ধ্যার দিকে তিনি ‘স্ট্রোক করতে পারেন’ এমন ধারনা করে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর র‌্যাব সদস্যরা তাকে রামেকে নিয়ে যায়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের আলামত দেখতে পান চিকিৎসকরা। এরপর সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তার মৃত্যু হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছেন। ময়নাতদন্তেও বিষয়টি বের হয়ে আসবে।

জেসমিনের কাছ থেকে প্রতারণার বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের পর ভুক্তভোগী এনামুল নিয়মতান্ত্রিকভাবে থানায় যান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি নিজে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে, হেফাজতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে, কমিটি কাজ করছে। আমাদের কোনো সদস্যের কোনো গাফিলতি আছে কি-না, কারো অনৈতিক কোনো ইনভলভ আছে কি না কমিটি খতিয়ে দেখবে।

তদন্ত যেহেতু সময় সাপেক্ষ, গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হয়ে গেছেন, অপারেশনের কোনো দুর্বলতা আছে কি-না এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো আলামত পাইনি। তদন্ত কমিটি কাজ করবে, কারো গাফিলতি পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

আদালত আমাদেরকে কিছু কোয়ারিজ দিয়েছেন। আমরা আমাদের বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করবো।

তিনি বলেন, নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয় দুপুর ১টার দিকে। তাকে সাড়ে ১১টার সময় ভুক্তভোগীসহ সাক্ষীদের সামনে প্রাথমিকভাবে আটক করা হয়। আটকের পর আলামত যা পাওয়া যায় তা কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্টআউট করা হয়। এরপর থানায় যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। আমাদের ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল রয়েছে, সেই সেলকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেথ সার্টিফিকেটে আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ নেই। আমরা ডেথ সর্টিফিকেট দেখেছি, ডাক্তারের বক্তব্য শুনেছি। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখবো। এমন কোন ইনভলভমেন্ট পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/টি